বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

বিনিময়

       আজকেও কামাই!ভগবান!এরচাইতে তো না থাকাই ভালো!বিরক্ত হলে গেলাম!"


রাখীর গজগজানি শুনে ল্যাপটপ থেকে একবার মুখটা তুললো শাওন,তারপরই ব্যাপার বুঝে পুনঃ মনোনিবেশ করল নিজের কাজে।এ বিষয়ে তার  বলার বা করার কিছুই নেই। ডাই করা স্তুপাকৃত বাসন গুলোর দিকে তাকিয়ে কপালে হাত দিয়ে স্থির হয়ে রইলো কিছুক্ষন রাখী।তারপর তার চোখ গেলো ঘড়ির দিকে।আর মাত্র দেড় ঘণ্টা তার হাতে।রান্না,ছেলেকে তৈরি,গাড়িতে তোলা, বাসন মাজা,ঘর পরিষ্কার ,টিফিন গোছানো,নিজে তৈরী,সব এই সময়ের মধ্যে ই করতে হবে!এরকম দিশেহারা ওর অনেকদিন পর লাগলো।একঘন্টা ট্রাই করার পর নিভার ফোন এ জানতে পারলো সে আসবেনা। বেশী কিছু না শুনে ফোনটা কেটে দিয়েছিল রাখি।চিৎকার করে সময় নষ্ট করবে,তারও কোনো উপায় নেই।অগত্যা,কাজে হাত দিলো।এবং,যথারীতি বেরোতে দেরী হলো।


   শাওন দেখলো সবই,কিন্তু সে এসব মেয়েলী কাজে পটু নয়,তাই স্ক্রীন থেকে মুখ না তুলেই ল্যাপটপ টা নিয়ে ডাইনিং থেকে বেডরুমে চলে গেলো।রাখি একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেললো।কোনদিন কাজ থেকে আর ফিরবেনা,যে দিকে দুচোখ যায় চলে যাবে!আর পারছেনা,ক্লান্ত ও!


          ছুটতে ছুটতে বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে প্রায় ছোট হয়ে যাওয়া বাস টাকে দেখতে পেলো রাখি। ওড়না য় মুখ মুছে অটোর খোঁজে লেগে পরলো।তিনবার অটো পাল্টাতে হবে!কি আর করা যাবে!প্রথম অটো থেকে নেমে যখন দ্বিতীয় টায় চড়ল, তখনই অফিসের টাইম হতে আর পনেরো মিনিট বাকি!আর সেই সময় ফোনটা বেজে উঠলো।যে ভাবে ও বসেছে তাতে ফোন ধরা অসম্ভব!একবার,দুবার,তিনবার ফোনটা বেজে থেমে গেলো।তৃতীয় অটো য় উঠে একটা ঠিকঠাক বসার জায়গা পেয়ে ফোনটা খুলতেই চমকে উঠলো,দুটো কল তার বসের।একটা নিভার! বসকেই কল ব্যাক করলো, রিং হয়ে গেলো,ধরলনা কেউ।দ্বিতীয় বারও একই অবস্থা!এরপর সে ফোনটা করলো নিভাকে।


       নিভা ফোনটা ধরেই, হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলো।রাখি বেশ বিব্রত বোধ করছিল,ধমক দিয়ে বললো,"কি হয়েছে,বলবে তো"! আধো কান্নায় যা বললো,তাতে এই দাঁড়ালো যে নিভার ছেলেকে পুলিশে ধরেছে,সে কদিন ধরে স্থানীয় নেতার কিছু চ্যালা চামুণ্ডা দের সাথে ঘুরছিল,যদি কিছু গতি হয় সেই আশায়।গতকাল রাতে অপনেন্ট পার্টির একজন নেতা খুন হয়েছে,পুলিশ নেতার বাকি সঙ্গীদের সাথে নিভার পনের বছরের ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে।নিভা সকাল থেকে নেতাদের হতে পায়ে ধরে বেড়িয়েছে।এখন তার যে কোনো কারণেই হোক মনে হয়েছে রাখি হয়ত কিছু করতে পারে।"দেখছি" বলে ফোনটা কেটে চুপ করে থাকলো কিছুক্ষণ,বললো তো, কিন্তূ করবেই বা কি!ভাড়া মিটিয়ে অফিসে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেলো, সিকিউরিটি ঘড়ি দেখে জানালো, এন্ট্রান্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।রাখি বিরক্ত হয়ে বললো,"এ আবার কি!"যা জানলো তাতে তার ভয় পাবার পক্ষে যথেষ্ট!আজ হটাৎ ই হেড অফিস থেকে সারপ্রাইজ ভিজিট হয়েছে।টাইম এর পর কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবেনা।


         মাথা নিচু করে বেরিয়ে এসে,রাখি ফোন করলো নিভাকে।তারপর একটু এগিয়ে বাসষ্ট্যান্ড এ গিয়ে নির্দিষ্ট একটা বাসে চেপে বসলো।রাস্তায় বেশ কয়েকটা কল করলো কয়েকজনকে।বাস থেকে নেমে,একটু হেঁটে সোজা পৌঁছিয়ে গেলো থানায়।তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই  থানায় ঢুকলো রাখীর বাল্যবন্ধু তথা বর্তমানে দুঁদে উকিল পারিজাত সোম।থানায় ঢুকেই প্রথম যে দৃশ্য টা চোখে পরলো রাখীর, তা হলো,নিভা থানার ভিতর মেঝেতে বসে পড়ে হাত জোর করে কাদতে কাঁদতে কাকুতি মিনতি করছে।রাখি ঢুকতেই ও যেনো হাতে স্বর্গ পেলো।ভাবতেই পারেনি দিদিমণি আসবে!এরপর পারিজাত এসে চার্জশিট দেখে,জুনিয়ার কে নির্দেশ দিয়ে  কোর্ট বেল হাতে  নিয়ে আসতে আসতে বিকেল গড়িয়ে গেলো।ওয়ার্কিং ডে হওয়ায় সমস্যাই হয়নি।আর তাছাড়া ছেলেটি নাবালক হওয়ায় সুবিধা হয়েছে।পুলিশ ভাবতেও পারেনি একটা বস্তির ছেলের জন্য এতকিছু করারও লোক আছে!সব শেষ করে ওরা যখন থানার বাইরে পা দিলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।


       কারোর পেটে একফোঁটা দানাপানি পড়েনি।কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে খেলো সবাই।পারিজাত কে বিদায় জানিয়ে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করলো রাখি।নিভা দের ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে ফিরতে যাবে,এমন সময় নিভা ওর হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।রাখি ধীরে ধীরে বললো,

"নিভা আমি কিছুই করিনি,এটুকু তো করতেই হতো বলো।আমি কি করে ভুলি,মাতৃত্বে অক্ষম আমি 'মা 'ডাক শুনতে পারছি শুধু তোমার জন্য।"

নিভা জলভরা চোখে তাকায়,ধীরে ধীরে বলে," সে তো টাকার বিনিময় গো দিদি,তোমরা তো কম  করনি।আমি তো শুধু গর্ভ ভাড়া দিয়েছিলাম।"

হাসলো রাখি," কিন্তু পাপুর একটু শরীর খারাপ হলে,তুমি যে ভাবে ওকে আগলাও,সেকি আমি দেখিনি ভেবেছো।নিভা শুধু বলে ," আজকের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবোনা গো দিদি"।" হুম " বলে একটা চিলতে হাসি খেলে যায় রাখীর ঠোঁটে।" একটা জিনিস করলে শোধ হতে পারে।"চমকে তাকায় নিভা,চোখে ব্যাকুল জিজ্ঞাসা।" আর কখনো কামাই করে আমার অফিস দেরী না করলেই আমি জানবো ঋণ শোধ হয়েছে" বলে হাসতে হাসতে ট্যাক্সির দিকে পা বাড়ালো রাখি।

#সুণীপা

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু