বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

দম্পতি

গল্প_দাম্পত্য

তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

২৩/০৯/২১


কলিং বেলের আওয়াজে সকালে দরজা খুলে দেখি ঘরের কাজের সহায়িকা কুমু দাঁড়িয়ে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি চমকে চিৎকার করে বল্লাম, 'একি অবস্থা তোর!!' চিৎকারটা আর্তনাদের মতো শোনাল। ঘরে পা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে কুমু, 'গতকাল অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছে। অন্য এক মহিলার কাছে রোজ যায়  আমার বর শুনেছি। সেই নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই কিরকম মেরেছে দ্যাখো বৌদি'


১৮ কি ১৯ বছরের রোগা টিলটিলে মেয়ে। লোকের বাড়ি কাজ করতে করতেই রিকশাওয়ালা কানুর সাথে প্রেম এবং বিয়ে। এতটা জানতাম তবে ওর বরের পরকীয়া জানা ছিল না।

'তোর না প্রেমের বিয়ে?? এরমধ্যেই কানু অন্য মহিলাতে মজেছে?? তুই আজ এখুনি শাড়ি সিঁদুর খুলে জামা পরে আমার কাছে থাক, ও বিয়ের মাথায় লাথি মার'


চুপচাপ ঘরের কাজ করতে করতে খুব নীচু স্বরে বললো, 'সবাই বলে আমার শরীরে মাংস নেই, আমার বুক নেই, আর ঐ মহিলার খুব ভারী চেহারা। তাই ও ওর কাছে যায়। বৌদি, গলাকাটা মন্দিরে নতুন সিঁদুর নিয়ে গেলে বশীকরণ করে দেয়। তুমি যাবে আমার সাথে?'


তখন ই বুঝলাম দাম্পত্য কি.... আমি ওর একরকম ভালো চাইছি আর ও চাইছে ওর প্রেম বাঁচিয়ে রেখে সংসার করতে।


বশীকরণ দেখার ভীষণ আগ্রহ থাকলেও আমার যাওয়া হয়নি কুমু' র সাথে ঐ গলাকাটা মন্দির। আসলে নাম কলাকাটা মন্দির আমার হাসব্যান্ড এর আপত্তিতে। এরপর চলে বাসা বদল করে চলে আসি বর্তমান ঠিকানায়।

অনেক বছর পর ঐদিকে যাই। স্ট্যান্ডের চেনা রিকশাওয়ালারা দেখেই এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে। হেসে উত্তর দিই এবং ওদের খোঁজ খবর করি। এরপর কানু আর কুমু' র কথা জিজ্ঞেস করি। ওরা হৈ হৈ করে জানায় যে তিন ছেলেমেয়ে ওদের। ভীষণ ভালো আছে ওরা।


ভালোবাসলে এমনই আগলে রাখে সবাই নিজের প্রেম, সংসার, দাম্পত্য.... সময় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাকে। ভাগ্যিস সেদিন আমার কথায় রাজী হয় নি কুমু....

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু