বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

ধূলিসাৎ টুইন টাওয়ার

হয়তো ২০২২-সালের দুর্গাপুজোয় সিডনীতে কোভিডের লক-ডাউন নেই। সুভদ্রা এসেছে বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েসনের পুজোতে। অন্যান্যবারে মেম্বারশিপ ফি বা পুজোর চাঁদা দেওয়ার কাজটা সুভদ্রার স্বামী কিরীটিই ক’রে থাকে, এবারে সুভদ্রা একা, এগিয়ে গেলো স্কুল হলের প্রবেশ-পথের পাশে পাতা দুটো টেবিলের দিকে; সেখানে কমিটি মেম্বাররা ব’সে আছেন অভ্যর্থনা করার জন্যে, তাঁরা নিচ্ছেন মেম্বারশিপ ফি আর পুজোর চাঁদা, হাতে তুলে দিচ্ছেন ‘প্রবাসী’ পত্রিকা।

‘এবারে কিরীটি নেই কেন?’ একথা সুভদ্রাকে জিগ্যেস ক’রতে গিয়েও থমকে গেলো কমিটি মেম্বার বিজয়; পাছে কোনো দুঃসংবাদ শুনতে হয়।

সুভদ্রা জিগ্যেস ক’রলো, ‘বিজয়দা, গত দু-বছরতো পুজো হয়নি। মেম্বারশিপ ফি কি দিতে হবে?’

বিজয় সসংকোচে ব’ললো, ‘না, এবারে আপনার কিছু দিতে লাগবেনা; ভিতরে গিয়ে বসুন আর পুজো দেখুন।‘

সুভদ্রা ব’ললো, ‘তা কি ক’রে হয়? প্রতিবারের মতো এবারেও নিন একশো ডলার পুজোর চাঁদা, আর পঞ্চাশ ডলার এক বছরের মেম্বারশিপ ফি।‘

বিজয় রসিদ লিখে দিল, সুভদ্রা ঢুকলো পুজোর হলঘরে। সুভদ্রাকে একা ঢুকতে দেখে অনেকেরই চোখ জিজ্ঞাসু হ’য়ে উঠলো। কোথা থেকে দৌড়ে এসে মন্দিরা সুভদ্রার হাত ধ’রে ব’ললো, ‘তুইতো ব’লেছিস্, কিরীটিদা পোল্যাণ্ডে গেছে একটা নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে।‘

সুভদ্রা দুর্গা-প্রতিমার কাছে, হাত জোড় ক’রে প্রার্থনা ক’রলো, ‘কিরীটি কোথায় আছে ব’লে দাও ঠাকুর। গভর্ণমেন্ট বা ব্যাঙ্কগুলোকে এখনও জানাইনি যে কিরীটি তিনমাস ধরে নিরুদ্দেশ। জানিনা ও এখন কোন্ দেশে, কী অবস্থায় আছে। ওকে ফিরিয়ে দাও আমার কাছে। এখনও অনলাইন ব্যাঙ্কিং ক’রতে হয়নি আমাকে; কিরীটির ব্যবস্থামতো ইলেক্ট্রিসিটি, গ্যাস, জল, ফোন, ইন্টারনেট, পে-টিভির বিল না-বলতেই মেটাচ্ছে ক্রেডিট কার্ড, আর ক্রেডিট কার্ড মাসে একবার ডাইরেক্ট ডেবিট ক’রছে আমাদের ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্টে। কিরীটি যে বাড়ীতে নেই, সেটা আমি ছাড়া কেউই বুঝতে পারেনি। এখন, সত্যি কথা ব’ললে হয়তো আর পেনশন জমা পড়বেনা জয়েন্ট অ্যকাউন্টে; অতর্কিতে চুরমার হ’য়ে যাবে নিশ্চিন্ত বিলাসবহুল জীবনযাত্রা। ঠাকুর বাঁচিয়ে রাখো কিরীটিকে, ওকে ফিরিয়ে দাও বাড়ীতে।‘

***  

রমেশ মিত্র রোডের লেডিস পার্কের দুর্গাপুজোর মণ্ডপে কিরীটি কোনো চেনা মুখ খুঁজছে; জীবনের প্রথম আঠের বছর কিরীটি এখানেই পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছে, তখন বাবা-মা, ভাইবোনেরা, স্কুলের-পাড়ার বন্ধুরা কেউ না কেউ থাকতো সঙ্গে, এক সঙ্গে মন খুলে হাসার জন্যে, কাঁদার জন্যে। এখন সাতাত্তর বছর বয়সে কিরীটি বড্ড একা। কিরীটি ওর আটাশ বছর বয়স থেকেই একা হ’য়ে গেছে – সুভদ্রার সঙ্গে বিয়ে হবার পর থেকেই। ফুলশষ্যার রাত্তিরে কাছে আসেনি সুভদ্রা। পরদিন, সুভদ্রার বাবা- বাবুমণি ব’লেছিলেন- সুভদ্রা ক’লকাতায় থেকে এম.এ. পড়বে, কিরীটির সঙ্গে জামসেদপুরে থাকবেনা, অর্থাৎ বিদেশে একাই থাকতে হবে কিরীটিকে। বিয়ের আগেও হয়তো একা ছিল কিরীটি, কিন্তু সকাল-দুপুর-রাত্তির শিফটের কাজ আর বাকী সময়টা বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় ক’রে একা থাকার কষ্ট বোঝেনি কিরীটি। একে একে ব্যাচিলর বন্ধুদের বিয়ে হ’য়ে যাওয়াতে ক্রমশঃই একা হ’য়ে যাচ্ছিল কিরীটি, তবু একটা স্বপ্ন ছিল বিয়ের পরে কেউ ওর কথা শুনবে, কেউ ওকে ব’লবে ওর মনের কথা; এখন সে স্বপ্নের জন্যেও অপেক্ষা।

সুভদ্রা জামসেদপুরে এলো এক সপ্তাহের জন্যে। এই সপ্তাহে কিরীটির শিফট ছিল দুটো-থেকে-দশটা; প্রতিদিনই সাড়ে দশটায় বাড়ী ফিরে কিরীটি দেখেছে- সুভদ্রা কিরীটির কোনো বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মারতে ব্যস্ত, অথচ কিরীটি বাড়ী ফিরলেই সুভদ্রা ঝিমিয়ে পড়তো, অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়তো। বিষ্টুপুর হোটেলের পার্টিতে পঞ্চাশজন বন্ধুকে ডাকলো কিরীটি; সকলের সঙ্গে খুব হৈ-হৈ ক’রলো সুভদ্রা, কেবল কিরীটির কাছাকাছি এলো না একবারও। সুভদ্রার ক’লকাতায় ফিরে যাওয়ার দিনে, কিরীটির কয়েকজন বন্ধু স্টেশনে এসেছিল বিদায় জানাবার জন্যে; এদের সকলের সঙ্গেই হ্যাণ্ডশেক ক’রলো সুভদ্রা, কেবল কিরীটিকে ফিরিয়ে দিল। স্টেশনে স্টীল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়েছিল; সুভদ্রাকে ট্রেনের সীটে বসিয়ে কিরীটি একটু কথাবার্ত্তা শুরু ক’রতে যাচ্ছিল, সুভদ্রা ব’ললো, ‘তুমি নেমে যাও। এদের সঙ্গে চার ঘন্টা যাবো; একটু আলাপ ক’রে নিই।‘ কিরীটি ভাবলো,- ট্রেণের চার ঘন্টা সুভদ্রার কাছে পুরো বিবাহিত জীবনের চেয়ে বেশী দামী।

 

দু-বছর পরে কিরীটির বাবা তখন জামসেদপুরের হাসপাতালে; সুভদ্রা দেখতে এসেছিল; কিন্তু ব্যস্ত ছিল রবীন্দরকে চিঠি লিখতে। রবীন্দরের এক চিঠিতে কিরীটি পড়লো সুভদ্রার সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতার বিবরণ: চেয়ারে বসা রবীন্দর কোলে চড়ালো সুভদ্রাকে; রবীন্দরের গর্ব্ব- ওর ঘোড়া জিতেছে, সুভদ্রা অন্তঃসত্ত্বা হবেই।

কিরীটি এবার খুললো রবীন্দরকে লেখা সুভদ্রার চিঠি: ধূলিসাৎ হ’লো কিরীটির স্বপ্নের টুইন টাওয়ার; রবীন্দরের সংসর্গের প্রতিটি মুহূর্ত্ত উপভোগ ক’রেছে সুভদ্রা; কিন্তু পিরিয়ড শুরু হ’য়েছে ব’লে একদিনে দুবার লিখতে হ’লো; ফিরে গিয়ে ইচ্ছে-পূরণের আশ্বাস দিয়েছে।

কিরীটি একথা জানাতে পারলোনা ওর অসুস্থ বাবাকে, উদ্বিগ্না মাকে, বা কোনো বন্ধুকে। ও লিখলো বাবুমণিকে, দুটো চিঠির সংক্ষিপ্তসার দিয়ে, রবীন্দরকে শাস্তি দেবার জন্যে অনুরোধ ক’রে।

বাবুমণি লিখলেন, উনি এখন বরোদা যাবেন, সুভদ্রা জামসেদপুরে থেকে যাক। কিরীটির অফিসের ঠিকানায় লিখলেন, সুভদ্রার চিঠিটা পোস্ট না ক’রে রেখে দেওয়া উচিৎ ছিল; রবীন্দরকে ধরা যায়নি; কিরীটি যেন সুভদ্রার লেখা বা সুভদ্রাকে লেখা সব চিঠি পড়ে। পড়েছিল কিরীটি, জানতে পেরেছিল রবীন্দর আর ললিতের সঙ্গে সুভদ্রার নিয়মিত যৌন সংসর্গের কথা।

 

বাবা হাসপাতাল থেকে ফিরলেন। বাবুমণি কিরীটিকে আগামী জামাইষষ্ঠীতে নিমন্ত্রণ জানালেন, তাই কিরীটি বসলো সুভদ্রার সঙ্গে আলোচনায়।

-‘সেদিন রবীন্দরকে সকালে চিঠি পাঠানোর পরে, আবার দুপুরে আর একটা পাঠানোর দরকার কেন হ’লো?’

-‘একটা জরুরী খবর তখনই দেবার ছিল’।

-‘খবরটা কী ব’লবে?’

-‘সেটা তোমাকে বলা যাবেনা’।

-‘আমি পড়েছি, লিখেছিলে- পিরিয়ড হ’য়েছে’।

সুভদ্রা ঝাঁপিয়ে পড়লো কিরীটির পায়ে,- ‘মাফ করো আমাকে। বাবুমণি জানলে মেরে ফেলবে আমাকে!

-‘জামাইষষ্ঠীতে তোমাকে বাঙ্গুরে নিয়ে যাবো; বাবুমণির কথামতো আমার সঙ্গেই ফিরিয়ে আনবো; তোমার এম-এ পরীক্ষা হবে পরের বছরের মাঝামাঝি, তখন যেও মা-বাবার অনুমতি নিয়ে’।

 

জামাইষষ্ঠীর দিনে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল কিরীটি, ‘সুভদ্রার কিছুই হয়নি, বাবুমণি; রবীন্দর সুভদ্রাকে ঠাট্টা ক’রেছিল, ও ভাবেনি চিঠিটা আমি পড়বো’।

বাবুমণি কিরীটিকে বুঝে উঠতে পারেনি; ঠাকুরের কাছে চেয়েছিলেন- কিরীটি আর সুভদ্রা যেন সুখে থাকে।

কিরীটি স্বপ্নেও ভাবেনি যে ওর একটা মিথ্যে কথার জোরে সুভদ্রা ওকে সারাজীবন একলা ক’রে রাখবে, কখনও ওর গায়ের গন্ধ সহ্য ক’রবেনা, কাছে আসতে দেবেনা।

 

ইণ্ডিয়ান টিউবের অফিসার্স ক্লাব, বলরুম ডান্সের তালিম শুরু হবে একটু পরেই।  সুভদ্রা ব’লেছিলো, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে নাচতে চাইনা; দরকার নেই আমার শেখার। আমি শুধু দেখবো তোমাদের।‘

ডান্স টিচার প্রথমে শেখাচ্ছিলেন কথা ব’লে আর তার নিজের হাত-পা-কোমর নাড়িয়ে অঙ্গভঙ্গী ক’রে; সুভদ্রা চুপচাপ ব’সেছিল চেয়ারে, বাকী সবাই ডান্স ফ্লোরে দাঁড়িয়ে শুনছিল ইন্সট্রাক্টরের কথা– পুরুষেরা যে যার স্ত্রীর সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল; কেবল চারজন পুরুষের সঙ্গিনী ছিল না; দুজনের বিয়ে হয়নি তখনো, একজনের স্ত্রী বাপের বাড়ীতে; আর শেষজন কিরীটি।

মৌখিক দীক্ষার শেষ,  যেই শুরু হ’লো ফক্সট্রটের টিউন, ঝাঁপ দিলো সুভদ্রা নাচের ফ্লোরে, কিরীটি ভাবলো সুভদ্রা জুটি বাঁধবে ওর সঙ্গে, দুরাশা ওর– সুভদ্রা জুটি বাঁধল ব্যাচিলর কল্যাণের সঙ্গে– কিরীটি রইলো একলা, প্রতীক্ষায়।

সেই যে সুভদ্রা শুরু ক’রলো কল্যাণের সঙ্গে, চালিয়েই গেলো। কিরীটি কোনোসময় নাচার সুযোগ পেতো নাচ-শিক্ষয়িত্রীর সঙ্গে। নাচ শেখানোর ক্লাস যখন শেষ হ’য়ে গেলো, কিরীটির নাচার সুযোগ রইলো না একেবারেই; ও থাকতো বিলিয়ার্ড রুমে আর সুভদ্রা কল্যাণের সঙ্গে নাচতো। এইভাবেই চললো তিন বছর– কল্যাণের বাঙ্গালোরে চ’লে যাওয়া পর্য্যন্ত। কিরীটি এখনও ভুলতে পারেনি কল্যাণকে ট্রেন-স্টেশনে বিদায় দেওয়ার কয়েকটা মিনিট– সব বন্ধুদের ঠেলে দূরে সরিয়ে সুভদ্রা গিয়ে দাঁড়ালো ট্রেণের জানলার পাশে, জোর ক’রে ধ’রে রইলো কল্যাণের হাত, ট্রেণ ছাড়ার আগে পর্য্যন্ত।….

 

সুভদ্রা কিরীটির সংস্রব যতটা সম্ভব কমাতে চাইতো, কারণ কিরীটির গায়ের গন্ধে ওর বিতৃষ্ণা। কিরীটি বারবার অনুরোধ ক’রেও সুভদ্রাকে পারস্পরিক ডিভোর্স করার জন্যে রাজী করাতে পারেনি।

ভারতবর্ষের নানা শহরে চাকরী বদল ক’রেছে কিরীটি, যাতে সুভদ্রাকে একা পাওয়া যায়; কিন্তু সুভদ্রার বাবা-মা, দাদা, দিদি সপরিবারে বেড়াতে এসেছে; কিরীটির নিজের বাড়ীই শ্বশুরবাড়ী হ’য়ে উঠেছে। অগত্যা কিরীটি অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে, এখানে অল্প পরিচিতা মহিলাকে চুমু খাওয়া সাধারণ সৌজন্যের মধ্যে পড়ে। তাই সুভদ্রা কিরীটি ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান পুরুষদের চুমুতে পুলকিত হ’লো; কিরীটির সামনে সুভদ্রা হঠাৎ ওর কোনো পরিচিত পুরুষকে চুমু খেলে অসহ্য লাগতো কিরীটির। মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছেন, দিনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে টিভি দেখে, ক্যারম খেলে, ভাগাভাগি ক’রে গাড়ী চালিয়ে, এক বিছানায় শুয়ে, পরস্পরকে চুমু খেয়ে অন্ততঃ চার ঘন্টা একসঙ্গে কাটানো দরকার। সুভদ্রা রাজী নয়। সুভদ্রা এখনকার প্রাসাদটি বিক্রী ক’রে দুটো আলাদা বাড়ী কিনতেও রাজী নয়। কিরীটি ভাবলো, সুভদ্রা এবাড়ীতেই থাকুক; ও বেরিয়ে যাবে এবাড়ী থেকে, থাকবে অন্য কোথাও- সিডনীতে, ক’লকাতায়।

সারা জীবন নানা দেশে কাজ ক’রেছে কিরীটি; সুভদ্রার সঙ্গে এতদিন এতটা সময় কাটাতে হয়নি, কাজের মধ্যে এতটা একা লাগেনি। একা লাগতে শুরু ক’রলো কাজ থেকে অবসর নেবার পর; কিন্তু চলাফেরা করার ক্ষমতা ক্রমশঃই কমে যাওয়ায়, নিজেকে বড় অসহায় নিরুপায় লাগলো। এইসময় বাম হাঁটু বদলানোর উপদেশ এলো ডাক্তারের কাছ থেকে।

২০২০ সালে শুরু হ’লো কোভিডের প্রকোপ; ইলেক্টিভ সার্জারী বন্ধ রইলো কিছুদিন; তারপরে হাঁটু বদলানো হ’লো; কিন্তু চলাফেরার গতিবেগ বাড়লোনা; নিউরোলজিস্টের উপদেশ: কিরীটিকে মেরুদণ্ডের পেছনে ব্যাকলোফেন পাম্প লাগাতে হবে। কোভিডের প্রকোপের মধ্যে নিউরোলজিস্টের কাছে যাওয়া যাচ্ছে না; বুঝতে পারা যাচ্ছে না, সিডনীর বাইরে থাকলে ব্যাকলোফেন পাম্প চালু রাখা যাবে কিনা। তাই কিরীটি ঠিক ক’রলো, চলাফেরার যেটুকু ক্ষমতা আছে তাই নিয়েই ও ফিরে যাবে জন্মভূমি ক’লকাতায়। আফশোষ লাগছে যে মাত্র ৫বছর আগে ওরা কলকাতার ফ্ল্যাটটা বিক্রি ক’রে দিয়েছে; তবুও অন্য কোনো ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বা পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকলে, যা খরচ পড়বে তা খুব বেশী হবে না। ওকে বেঁচে থাকার প্রমাণ নিয়মিত পাঠিয়ে যেতে হবে যাতে পেনশন বা সুপারের ডলার নিয়মিত সিডনীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে; ও যেখানে থাকবে, সেখানকার টাকা/ডলার এ.টি.এম.এ তুলতে পারবে আই-এন-জি কার্ড দিয়ে, ওর সিডনীর ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্ট থেকে।  

যখন কিরীটি শুনলো ২০২২সালে সিডনী থেকে কলকাতা যাওয়া যাবে, তখনই ও দেখলো পুজোর তারিখ- ১লা থেকে ৫ই অক্টোবর। ও ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার পয়েন্ট দিয়ে শুক্রবার ৮ই জুলাইয়ের টিকিট কাটলো, ফেরার দিন পরে ঠিক ক’রবে। সৌভাগ্যবশতঃ ভবানীপুরে একটা বাড়ীতে পেয়িং গেস্ট থাকার জন্যে টাকা পাঠানো যাবে। সোমবার ৪ঠা জুলাই থেকে শুক্রবার ১৫ই জুলাই পর্য্যন্ত স্কুলে শীতের ছুটি, মেয়ে-জামাইদের সঙ্গে সুভদ্রা বেড়াতে যাবে গোল্ডকোস্টে। চুপিসাড়ে বাড়ী থেকে বেরিয়ে ক’লকাতার ফ্লাইট ধরতে কিরীটির কোনো অসুবিধে হবেনা।

একদিকে একাকীত্ব থেকে মুক্তি পাবার আকুতি কিরীটিকে নিয়ে যেতে চায় কলকাতার শৈশবে, অন্যদিকে ওকে সিডনীতে ধরে রাখে ওর জীবনভর দেশে বিদেশে ঘুরে জমানো সঞ্চয়ের স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামের প্রলোভন,  শারীরিক দুর্বলতা, বিশেষতঃ চলচ্ছক্তিহীনতা আর সুভদ্রার নিঃস্পৃহ অবদমন। বারবার কিরীটির মনে হ’য়েছিল ও বাড়ীর আরাম ছাড়তে পারবে না, পারবেনা একা কলকাতায় গিয়ে আবার সংগ্রাম  ক'রতে, শরীর বাঁচিয়ে আবার কাজ ক’রে খেতে। তবু বিশ্বাস জেগেছে, ও আবার স্কুলের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেটে পড়াতে পারবে, লিখবে কোনো প্রকাশনী সংস্থার সঙ্গে।

হয়তো কিরীটির কবিতা মানুষের একাকীত্বকে দেবে বিদায়।

লিখবে সকলের কথা কিরীটি, মেটাবে একা হ’য়ে বাঁচার দায়,

কান পাতবে পাঠক নিজের মনে, কী তাকে হাসায় বা কাঁদায়।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু