বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

কোভিড বিজয়ার ইনসিউরান্স

হাজার হাজার লোকের অকাল মৃত্যু হচ্ছে কোভিডে, অথচ কোভিডের জন্যে লাইফ ইনসিউরান্স কেনা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ছয়টি দম্পতি ২০২১ সালের শুভ বিজয়ায় কোভিড ইনসিউরান্সের ব্যবস্থা ক’রলো এই টিমের বারোজন সদস্যের প্রত্যেকের জন্যে। এ এক অন্য ধরণের লাইফ ইনসিউরান্স, এর জন্যে কাউকে কোনো প্রিমিয়াম দিতে হবে না, কারুর মৃত্যু হ’লে লাখ লাখ টাকার প্রলোভন নেই, কিন্তু আছে এক বিরাট প্রতিশ্রুতি, এক আপনজনের মৃত্যুতে তার শূণ্যস্থান পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি হোলো:-

১) এই ছয় দম্পতির টিমে যদি কোনো পুরুষের মৃত্যু হয়, তবে এই টিমের বাকী পাঁচ পুরুষদের একজন মৃতের স্ত্রীকে নিজের অন্যতম পত্নী হিসেবে নিজের জীবনে ডেকে নেবে, আইনসঙ্গত পত্নী জীবিত থাকুক বা না থাকুক।

২) এই ছয় দম্পতির টিমে যদি কোনো মহিলার মৃত্যু হয়, তবে এই টিমের বাকী পাঁচ মহিলাদের একজন মৃতের স্বামীকে নিজের অন্যতম স্বামী হিসেবে নিজের জীবনে ডেকে নেবে, আইনসঙ্গত স্বামী জীবিত থাকুক বা না থাকুক।

এই প্রতিশ্রতির খসড়া ক’রার পরে প্রশ্ন উঠলো বাকী পাঁচজনের মধ্যে ঠিক কে এই দায়িত্ব নেবে? কে মৃতের পার্টনারকে নিজের অন্যতম পার্টনার হিসেবে নিজের জীবনে ডেকে নেবে? এই দায়িত্ব যদি কোনো একজনের উপর ন্যস্ত না থাকে, তবে কারুর মৃত্যু হ’লে বিভ্রান্ত হ’য়ে থাকবে ছয় দম্পতির এই টিম। কখনও মৃতের পার্টনারকে নিয়ে কাড়াকাড়ি প’ড়ে যাবে বাকী পাঁচ দম্পতির মধ্যে; কখনও আবার কোনো দম্পতিই মৃতের পার্টনারকে নিজের ঘরে তুলতে চাইবে ন।

এই প্রহেলিকার সমাধানের জন্যে পাঁচদিনের একটা ক্যাম্পের আয়োজন হোলো ২০২০ সালের দুর্গাপুজোর সময় ক’লকাতার এক হোটেলে। এই ক্যাম্পে, ছয় দম্পতির টিমের ১২জন সদস্যের প্রত্যেকের জন্য নির্দ্দিষ্ট করা হবে একজন বিকল্প পার্টনারকে যে আইনসঙ্গত পার্টনারের মৃত্যুতে একমাত্র পার্টনারের ভূমিকা নেবে।

ঠিক হ’লো এই বারোজন সদস্যকে নিয়ে একটা টিম বানানো দরকার, যাতে এর প্রতি সদস্য বাকী এগারোজন সদস্যকে আপন ক’রে নিতে পারে। এবারে পুজোর ছুটি আছে এদের সকলেরই, কিন্তু নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে পুজোমণ্ডপে ভিড় ক’রার উপায় নেই। তাই ঠিক হ’লো ক’লকাতার এক হোটেলে দল বাঁধার কর্মশালা হবে।

বৃহস্পতিবার ২২শে অক্টোবর ষষ্ঠী থেকে সোমবার ২৬শে অক্টোবর বিজয়াদশমী পর্য্যন্ত – এই পাঁচ দিনের ছুটি কাটাতে ক’লকাতায় এসেছে ৬টি ঘনিষ্ঠ দম্পতি। রহিম এদের উৎসাহিত ক’রেছে দল বেঁধে থাকার কর্মশালায় যোগ দিতে, ব’লেছে এতে পরিবারগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বাড়বে বহুগুণ। রহিম একটি নামকরা বেশভূষা ও বিজ্ঞাপণ-সংস্থার কর্ণধার; এর আগে ও অনেক দলগড়ার কর্মশালার আয়োজন ক’রেছে। এই অনুষ্ঠানের খরচের শতকরা ষাট ভাগ দেবে রহিম; তির্য্যক, বিক্রম, অ্যাস্টন আর কিরীটি দেবে দশ শতাংশ ক’রে; চঞ্চল এখন কাজ খুঁজছে, তাই খরচের হাত থেকে ওকে দেওয়া হ’য়েছে রেহাই।

ক’লকাতায় বেড়াতে এসে এই দলবাঁধার কর্মশালায় কী ক’রতে হবে এবিষয়ে প্রায় কেউই ওয়াকিবহাল ছিল না। বিক্রম মেয়েমানুষ নিয়ে মজা ক’রতে ভালবাসে; হোটেলে পৌঁছে ও বললো, ‘আমাদের ৬টি সুন্দরী বৌকে মিউজিকাল চেয়ার খেলতে হবে। যতক্ষণ গান চলবে তোমাদের নেচে যেতে হবে ৫টি চেয়ার ঘিরে। হঠাৎ গান থেমে যাবে, তখন তোমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা চেয়ারে ব’সে পড়তে হবে। একটা চেয়ার কম, তাই একজন বসতে পারবে না। দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরী হবে আমাদের খেলার পুতুল; তাকে নিয়ে আমরা ছয় পুরুষে আদর ক’রে খেলবো; চাইলে মহিলারাও মজা নিতে পারো, পারো পুতুলের গয়না পোষাক খুলে নিজেদের গায়ে চড়াতে।‘

‘আমরা মহিলারা এ খেলায় একেবারেই উৎসাহী নই‘, সুভদ্রা একটু ধমক দিয়ে উত্তর দিল, ‘হোক্ না এ খেলা মরদদের নিয়ে–‘

‘মরদদের নিয়ে কি তেমন পুতুল খেলা যায়?’, জবাব দিলো বিক্রম, ‘ছয় সুন্দরীর নরম-গরম আদর খাওয়ার লোভে আমি তো ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে থাকবো।‘

বিক্রম এবারে দলের পুরুষদের দিকে তাকিয়ে ব’ললো, ‘তরুণী চামেলীকে চোখ মারো; কে না চায় ওকে একটু চেখে দেখতে। হাত তোলো কে কে চামেলীর চুমু খেতে চাও?’

‘মুখ সামলে-‘, চীৎকার ক’রে ব’ললো চঞ্চল।

‘বেচারা চামেলী! বেকার বালকের সামর্থ্য নেই ওকে দেখাশোনা করার।‘ – বিক্রম মন্তব্য ক’রলো।

‘বেকার হলেও এখানের অনেকের চাইতে বেশী যোগ্যতা রাখি।‘ চঞ্চল প্রতিবাদ ক’রলো।

বিক্রম আরও কিছু ব’লতে যাচ্ছিল, রহিম এসে ওকে চুপ করালো। রহিমের মত একেবারেই আলাদা। এই দল বাঁধার খেলায় নারী ও পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে সমানভাবে অংশ নেবে– এটাই রহিমের অভিমত।

রহিম বিক্রমকে অবান্তর কথা বন্ধ করার জন্যে অনুরোধ ক’রলো; পরীক্ষামূলকভাবে সঙ্গী বদলের খেলার কথা বললো। সব দম্পতিকে নিয়ে চললো হোটেলের বলরুমে, মহিলাদের সারি বেঁধে দাঁড়াতে ব’ললো একধারে। তারপর পুরুষদের ব’ললো আর এক সারিতে দাঁড়াতে মহিলাদের মুখোমুখি। হোটেলের এক কর্মচারী এসে প্রতি মহিলার কাছে তার স্যুটকেস রেখে গেলো, আর ওদের প্রত্যেকের হাতে একটা ক’রে রুমের চাবি দিয়ে গেলো।

রহিম মহিলাদের বোঝাতে শুরু  ক’রলো. ‘তোমরা মেয়েরা প্রত্যেকে তোমাদের রুমের চাবি পেয়েছো; প্রত্যেকের কাছে ফ্যামিলির স্যুটকেশও রয়েছে; তোমরা যখন নিজের ঘরে যাবে, স্যুটকেশ তোমাদের সঙ্গে যাবে; ঘরে পৌঁছে নিজের জামাকাপড় জিনিসপত্র ওয়ার্ড্রোবে বা টেবিলে গুছিয়ে রাখবে; স্বামীর জামাকাপড় ইত্যাদি স্যুটকেশেই থাকবে; স্যুটকেশ রেখে আসবে ঘরের দরজার বাইরে। তোমার স্বামী এসে পরে স্যুটকেশটা নিয়ে যাবে। তার মানে বুঝতে পারছো? এই পাঁচদিন তোমার স্বামী হয়তো তোমার সঙ্গে এক রুমে থাকবে না, থাকবে অন্য কোনো পুরুষ। আমরা খেলবো বৌ-বদল বা বর-বদলের খেলা। ভগবান না করুন, আমাদের বারোজনের কেউ যদি এই মহামারীতে প্রাণ হারায়, তার পার্টনার একবারে নিঃস্ব হ’য়ে যাবে না; থাকবে তার আরও আপন জন, হারানো পার্টনারের ভূমিকা নেবে আর একজন।‘

একটু থেমে আবার বললো রহিম, ‘এখন বলো জনমত কী?  বৌ-বদল না বর-বদল? পুরুষেরা তাদের সঙ্গিনী বেছে নেবে, না মহিলারা ঠিক ক’রবে কোন পুরুষকে ঘরে রাখবে পাঁচদিন?’

‘আমরা কি একই লিঙ্গের সঙ্গী পেতে পারি না?’ জিগ্যেস ক’রলো জ্যানেট, ‘প্রতি মহিলা আর এক মহিলাকে বেছে নেবো সঙ্গী হিসেবে।‘

‘না, না, সমকামী নই আমরা কেউ; আমাদের কারুরই পার্টনার সমান লিঙ্গের নয়’,– প্রায় সবাই সমস্বরে জানালো প্রতিবাদ।

নিজের খাঁচায় জ্যান্ত একটা জানোয়ার পেলে যে কোনো বাঘই রক্তের নেশায় মেতে ওঠে। এখানের প্রতিটি পুরুষ তার নিকট বন্ধুর জীবনসঙ্গিনীকে পাঁচদিনের জন্যে প্রাণ ভ’রে তারিয়ে তারিয়ে চেখে নিতে চাইলো; প্রতিটি নারী উন্মুখ হ’য়ে রইলো বান্ধবীর কাছে শোনা স্বামীর আদর ক’রার গল্প নিজের গা ভরিয়ে উপভোগ ক’রতে।

‘ঠিক আছে’, ব’ললো রহিম, ‘বলো পছন্দ করার সুযোগ পুরুষেরা পাবে? না নারীরা?’

‘নারীরা পছন্দ ক’রবে’, সমস্বরে ব’লে উঠলো মহিলারা।

‘না, পুরুষ তার সঙ্গিনী বেছে নেবে, এইতো চিরকালের নিয়ম‘, প্রতিবাদ ক’রলো পুরুষেরা।

‘দু পক্ষের কথাই রাখছি; টস্ ক’রে ঠিক হবে কারা সুযোগ পাবে’, রহিম ব’ললো, ‘মেয়েরা বলো– হেড না টেল?’

‘হেড’, ব’ললো সুভদ্রা, বাকী মেয়েরা মাথা নেড়ে সাপোর্ট ক’রলো।

‘দেখা যাক’ ব’লে রহিম ছুঁড়ে দিল একটি পাঁচ টাকার কয়েন।

ছুটে গেল সুভদ্রা আর বিক্রম টস করা কয়েনটি দেখার জন্যে– দেখলো কয়েনের উল্টো পিঠ, অর্থাৎ টেল। 

‘হিপ হিপ হুররে, জিতেছে ছেলেরা’– গান গেয়ে উঠলো বিক্রম,-

‘মাননীয়া মহিলাগণ.

পরাজয় করো বরণ।

যে বেশ প’রে বেরিয়েছিলে মাতৃগর্ভ থেকে,

সে বেশ ধ’রি দাঁড়াও দেখি মোদের সম্মুখে।

মন ভ’রুক নিরাবরণ ছয় নারীকে দেখে;

কে জানে কার ভাগ্যে ছিঁড়বে কোন শিকে।‘

 ‘সরি, বিক্রম’, রহিম থামালো ওকে, ‘নারী বা পুরুষ, প্রতিটি মানুষ পোষাক পরবে নিজের পছন্দ অনুযায়ী। পুরুষরা টসে জিতেছে; তারা বেছে নেবে এক সপ্তাহের সঙ্গিনী। এখন দেখা যাক- পুরুষদের মধ্যে কে পাবে প্রথম সুযোগ ছয়টি মহিলার মধ্যে একটি শয়ন-সঙ্গিনী বেছে নেবার?  আমার ৬টা ভিসিটিং কার্ডের পেছনে পুরুষদের নামের আদ্যক্ষর- কে, আর, টি, এ, বি, সি– লেখা যাক। জ্যানেট, প্লীজ এদিকে এসো, এই কার্ডগুলোকে সাফ্ল করো। এবারে বলো সবচেয়ে উপরের কার্ডটাতে কী লেখা আছে?’

জ্যানেট কার্ডটি তুলে বললো, ‘আর, অর্থাৎ রহিম, সঙ্গিনী বেছে নেওয়ার প্রথম সুযোগ তোমার।‘

রহিম এগিয়ে এসে ব’ললো, ‘আমার সঙ্গিনী পছন্দ করার আগে কয়েকটা কথা ব’লি সকলের মনে রাখার জন্যে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে পছন্দ ক’রে পাঁচ রাত্তিরের জন্য ঘরে রাখতে পারো, কিন্তু কোনো বেআইনী কাজ ক’রবেনা। তোমার স্ত্রী ঘরে না থাকলেও তোমার সঙ্গে জুড়ে থাকবে আইনের বাঁধনে। এমন কিছু করার কথা ভেবোও না যা তোমার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙ্গে দেবে বা বন্ধুরা তোমার উপর আস্থা হারাবে।

‘এই হোটেলে তোমাদের ঘরে না থাকবে টিভি, না থাকবে ইন্টারনেট করার কোন সুযোগ। ঘরের মানুষকে ভালো করে চেনো, নিজের মনের কথা ব’লে আপন ক’রে তোলো তাকে। সঙ্গে যদি কোনো বই এনে থাকো তা পড়তে পারো; কবিতা লিখে, ছবি এঁকে, নেচে, গান গেয়ে পরস্পরকে আনন্দ দিতে পারো। প্রতি ঘরে আছে একটি পিয়ানো আর দুটি মাউথ-অর্গান। প্রতি ঘরেই অঢেল খাবার জিনিস রাখা আছে; আছে মাইক্রোওয়েভ, ফ্রীজ, টোষ্টার আর ইলেকট্রিক কেট্ল।

‘প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা তোমাদের ঘরের মধ্যে থাকতে হবে। কোন দু-ঘণ্টা বাইরে যেতে পারবে সেটা লেখা থাকবে রুমের দরজার পেছনদিকে। যেহেতু প্রতি মহিলা একটি ক’রে রুমের চাবি পেয়েছে, নীচের চার্টে রুম নম্বরের বদলে রুমের মালকিন বা মহিলা মালিকের নাম দেওয়া আছে।

বাইরে যাবার সময়             সপ্তমী       অষ্টমী       নবমী       দশমী

------------------------------         -----------------------------------------------------

সকাল ৫টা থেকে ৭টা                     সল্মা          জ্যানেট       চামেলী       শৈলজা

সকাল ৭-৩০টা থেকে ৯-৩০টা      শৈলজা       সুভদ্রা        সল্মা          রিমি

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা      রিমি          চামেলী       শৈলজা       জ্যানেট

দুপুর ১২-৩০টা থেকে ২-৩০টা      জ্যানেট       সল্মা          রিমি          সুভদ্রা

দুপুর ৩টা থেকে ৫টা               সুভদ্রা        শৈলজা       জ্যানেট       চামেলী

সন্ধ্যে ৫-৩০টা থেকে ৭-৩০টা              চামেলী        রিমি          সুভদ্রা        সল্মা

যেকোনো সময়ে ৬টি ঘরের মধ্যে কেবল একটি ঘরের মেয়ে পুরুষের জোড়া হোটেল ছেড়ে যেতে পারবে; তার মানে পাঁচ দিনের সব কটি ঘণ্টা কাটাতে হবে একই পার্টনারের সঙ্গে, দলের বাকী দশজনের সঙ্গে দেখা করার, কথা বলার কোনো উপায় থাকবেনা। তবে এখন হয়তো সকলেই ক’লকাতার পুজো দেখতে চাইবে, ছুটির দুঘন্টার মধ্যেই দেখতে হবে। ট্যাক্সি নিয়ে, হোটেলের গাড়ী বুক ক’রে, বা বাসে-ট্রামে ক’রে ঘুরতে পারো। কার কোন সময়ে ছুটি হবে সেটা পুরুষেরা পরে জানতে পারবে। রুম পার্টনারের সঙ্গেই বেরোতে হবে, তখন আসল স্বামী বা স্ত্রীর খোঁজ ক’রতে যাবে না কেউ।

এবারে মেয়েরা রেডী হ’য়ে দাঁড়াও। যাকে ডাকবো, সে চলে আসবে আমার সঙ্গে; কোনো অজুহাত চলবে না।‘

আশা, উৎসাহ আর উত্তেজনা নিয়ে ছয় নারী দাঁড়ালো বলরুমের একপ্রান্তে একটা বেঞ্চির মতো ডায়াসের উপরে, প্রত্যেকেই মন-ভোলানো হাসি দিয়ে মন জিততে চাইলো রহিমের– এই দলের সবচেয়ে সফল ও সুদর্শন পুরুষের, এক সপ্তাহ ধরে ওকে এক বিছানায় পেয়ে ধন্য হ’তে চাইলো।

 

রহিম তাকিয়ে দেখলো ছয়টি নারীর দিকে– শৈলজা, চামেলী, জ্যানেট, সল্মা, সুভদ্রা আর রিমি– ছয় অন্তরঙ্গ বান্ধবী প্রত্যেকে অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার চেষ্টা ক’রছে, পরিমাপ ক’রছে একে অপরকে, কী ক’রে কাড়া যায় সকলের মনের মানুষ সবল পুরুষ রহিমের নজর।

রহিমের রায় শোনা গেল,- ‘আমার পছন্দ রিমি, অন্তঃস্বত্ত্বা, অনিন্দ্যা, আনন্দময়ী!’

তির্য্যকের কণ্ঠে উদ্বেগ,- ‘রহিম, রিমি ৬-মাসের গর্ভবতী, অনেক খেয়াল রাখতে হবে ওর।'
'অবশ্যই, জানি, তির্য্যক। প্লীজ, আমাকে ব’লে দাও ওর কী কী যত্ন নিতে হবে; প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমার অবহেলার কারণে রিমিকে বা তোমাকে কোনো অসুবিধে ভোগ ক’রতে হবে না। রিমি, আমার সঙ্গে এসো, প্লীজ।'

রহিম তারপর পরের কার্ড তুললো, ‘টি'।

 

তির্য্যক এগিয়ে এলো এবং এক নজরে দেখলো পাঁচ নারীকে- শৈলজা, চামেলী, জ্যানেট, সল্মা আর সুভদ্রাকে; ধীরে ব’ললো, ‘রিমির দেখ-ভাল করারই ইচ্ছে ছিল আমার। রহিম আমাকে মুক্তি দিয়েছে সে দায়িত্ব থেকে। সুভদ্রা, তুমি এসো আমার সঙ্গে; তোমার চোখ-ভোলানো চেহারা দেখে মন ভরাই।‘

কিরীটির দেহ-মন এখনও ভালবাসে ট্র্যাডিশন; ও চোখ রাখলো ঘরের সিলিং-এ ঝোলানো ঝাড়লণ্ঠনের দিকে; তুমুল জয়ধ্বনির মধ্যে বীরদর্পে এগিয়ে গেলো সুভদ্রা।  তির্য্যক তুললো পরের কার্ড– ‘কে’।

 

এবারে কিরীটির এগিয়ে আসার পালা। চার নারীর প্রত্যেকের চোখে চোখ রাখলো কিরীটি। প্রতিটি নারীই যেন ব’লতে চাইছিল,- 'এক সপ্তাহের জন্য আমাকে নাও, কিরীটি, তোমার জীবনে, তোমার বিছানায়; আমি নিশ্চিত ক’রবো যে তুমি আমাকে ফিরে আসতে দেবে না আমার স্বামীর কাছে।'

সুভদ্রা যদি থাকতো এদের মধ্যে; তবে ওকে বেছে নিতে একটুও দ্বিধা করতো না কিরীটি; সপ্তাহ ধ’রে সুভদ্রাকে নিজের ক’রে পাওয়ার সুযোগ ছাড়তো না। সকালে ওর মুখ দেখে ঘুম ভাঙতো; সারা দিন কাটতো ওর হাতে হাত রেখে, গায়ে-গায়ে গলা জড়িয়ে; তারপর রাত হ’লে একসঙ্গে বিছানায় শুতো একই লেপের ঢাকায়, এক হয়ে যেতো দুজনে; পরম তৃপ্তিতে একসঙ্গে দুজনের চোখে ঘুম আসতো; ভোরে ঘুম ভাঙ্গার পরে আবার একটা কাছে পাওয়ার কাছে থাকার দিন। এমনি করে কাটতো পাঁচটা দিন।

চশমা খুলে কাঁচদুটো মুছে আর একবার দেখলো কিরীটি। বেশ্যাবাড়ীতে রাত কাটাবার জন্যে ও আসেনি এখানে, এসেছে একটি নারীকে তার ফ্যামিলির গণ্ডির বাইরে নিয়ে এসে একান্ত আপন ক’রে নিতে। কিরীটি জানে, মেয়েদের নরম শরীরের ছোঁয়া যেন নেশার মতো লাগে। বুকগুলো আপেল না আমের মতো; দেখে মনে হয় পাথরে খোদাই করা, হাতে ধ’রলে মিষ্টি তুলো মোয়া। ও ভাবলো, এদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী পোষাকের আড়ালে ঢেকে রেখেছে নিজেকে, তাকেই ও বেছে নেবো। শরীরটা যার ভালো ক’রে ঢাকা আছে. তার দেহ-মনের লুকোনো সম্পদ আবিষ্কার ক’রবে নিজের মনের আলো দিয়ে। এর মধ্যে সল্মা রয়েছে পুরোপুরি বোরখা দিয়ে ঢাকা। কেবল ওর চোখদুটো দেখা যাচ্ছে; মনে হয় ও নিতান্তই পতিব্রতা; সাত দিনে ওকে কাছে আনা যাবে না। তারপরে ঢাকা জামাকাপড় পরা জ্যানেট। ওকে ডাকলো কিরীটি, ‘জ্যানেট, প্লীজ এসো আমার সঙ্গে; থাকতে দেবে তোমার ঘরে পাঁচদিনের জন্যে? প্লীজ?’

‘নিশ্চয় দেবো কিরীটি; এতো আমার পরম সৌভাগ্য !’

কিরীটি তুললো পরের কার্ড– ‘এ’।

 

তরুণ যুবক অ্যাস্টন এগিয়ে এল; তার তারুণ্যে তৃষ্ণার্ত্ত তিন তরঙ্গিনী- শৈলজা, চামেলী আর সল্মা। অ্যাস্টন আমন্ত্রণ জানাল সল্মাকে, বললো, ‘সুন্দরী মহিলাবৃন্দ, আপনাদের কেউ কম নয় কারুর থেকে; আমি চাই বোরখাপরা সল্মাকে।‘

‘ধন্যবাদ, অ্যাস্টন, আশা ক’রি নিরাশ হবে না‘,- সল্মা হাত জোড় ক’রে এগিয়ে এলো। অ্যাস্টন পরবর্তী কার্ড পড়ে ব’ললো- 'বি'।

 

বিক্রম এগিয়ে এলো প্রায় লাফ দিয়ে। তার সামনে দাঁড়ানো দুই নারী– শৈলজা আর চামেলীর দিকে তাকিয়ে ব’ললো,  ‘দেখো আমার বরাত। আমাকে বেছে নিতে হবে এই দুজনের মধ্যে একজনকে। একজন আমার ৪৬বছর বয়সী শৈলজা, যে গোলমোটোল পিপেটাকে আমি ২৫বছর আগে ঘরে এনেছিলুম, আর ২২বছরের টাটকা মেয়ে চামেলী, যে ক-মাস আগে বিয়ের পরে এসেছে আমাদের পড়শী হ’য়ে। আমার বাকী জীবনটা আমার স্বাস্থ্যবতীর গোলকধাঁধা নিয়ে বাঁচবো, চামেলী সুন্দরী আমার লটারীতে জেতা ট্রফি, মাথায় তুলে রাখি পুজোর এই ক’দিনের জন্যে। গোদা শৈলজাও মজা পাবে কুরমুরে চঞ্চলকে নিয়ে হপ্তা কাটাতে। চামেলী প্রিয়তমা, এসো, আমার বুকে এসো।‘

‘বিক্রম, তোমাকে গ্রেপ্তার করা উচিত নাবালিকা-নিধনের অপরাধে; চামেলী তোমার মেয়ের চেয়ে ছোটো। তুমি তোমার এতদিনের স্ত্রীকে নিয়ে থাকো না!’, চঞ্চল এগোলো বিক্রমের দিকে।

'চঞ্চল, বিক্রমের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে চামেলীকে।', রহিম বাধা দিল চঞ্চলকে, 'এই খেলা শুরু  হবার সময় আমরা ঠিক ক’রেছি, নির্বাচক পুরুষ যদি কোন অনির্বাচিতা নারীকে চায়, সে নারীকে পুরুষটির সঙ্গে যেতেই হবে। চামেলী, বিক্রমের সঙ্গে এগিয়ে চলো। চঞ্চল, তোমার জন্যে শুধু একটি মহিলাই অবশিষ্ট রয়েছে; শৈলজাকে আমন্ত্রণ জানাও।'

নিরুপায় চামেলী মাথা নীচু ক’রে এগিয়ে চললো বিক্রমের দিকে। অবশিষ্ট নারী শৈলজার কাছে এলো চঞ্চল, ব’ললো, ‘চলো, তোমার ঘরে যাই।‘

 

সবাই যে যার ঘরে যাবার আগে রহিম ব’ললো, ‘এই পাঁচদিনে প্রতিটি জুটির দায়িত্বের কথা একটু ব’লে নিই। এই পুজোর ক’দিন এই হোটেলের পাঁচটি আলাদা আলাদা ঘরে থাকবে ছ-টি জুটি – রিমি-রহিম, সুভদ্রা-তির্য্যক, জ্যানেট-কিরীটি, সল্মা-অ্যাস্টন, চামেলী-বিক্রম আর শৈলজা-চঞ্চল। এখানে প্রতি জুটির প্রতি সদস্যকেই শিখতে হবে কী ক’রে তার পার্টনারকে মনের খুশিতে বাঁচিয়ে রাখা যায়। উদাহরণ হিসেবে ধ’রছি শৈলজা-চঞ্চলের জুটি। ভুলে যাও যে এ-জুটি তোমরা নিজেদের ইচ্ছেয় বাঁধোনি। অনেকসময় আইনমতো বিয়ের জুটিও দুজনের পছন্দমতো হয় না। তবুও শৈলজার দায়িত্ব চঞ্চলকে আপন ক’রে নেওয়া; যদি কোভিড মহামারী বা অন্য কোন দুর্ঘটনায় চামেলীর মৃত্যু হয়, তবে শৈলজার দায়িত্ব চঞ্চলকে ওর দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে নিজের বাড়ীতে রাখার, প্রথম স্বামী বিক্রমের সঙ্গে।

একইভাবে চঞ্চলের দায়িত্ব শৈলজাকে আপন ক’রে নেওয়া; যদি কোভিড মহামারী বা অন্য কোন দুর্ঘটনায় বিক্রমের দেহাবসান ঘটে, তবে চঞ্চলের দায়িত্ব শৈলজাকে ওর দ্বিতীয় পত্নী হিসেবে নিজের বাড়ীতে রাখার প্রথম পত্নী চামেলীর সঙ্গে।‘

*** ***   

ঘরের জিনিসপত্র গুছিয়ে যথাস্থানে রাখার পরে রহিম রিমিকে তার প্রাত্যহিক জীবনসূচী নিয়ে প্রশ্ন ক’রলো, ‘জানি, অন্তঃস্বত্বা রিমি আর তোমার হবু সন্তান– দুজনেরই প্রয়োজন নিখুঁত যত্নের। বলো তুমি কী করো সারাদিন, যাতে আমিও একটু কাজে লাগতে পারি।‘

‘আমার ভেতরের এই প্রাণীটির তাগিদে সারাদিন ধ’রে খেয়ে যাই। ঘুম থেকে উঠি সকাল সাতটায়; দাঁতমাজার পর সকালের চা, অরেঞ্জ জুস, টোস্ট আর ওমলেট। তারপরে টয়লেট ক’রে হাল্কা হওয়া, একটু সাজগোজ করা। তারপর ৯টা বাজলেই আবার খিদে পায়; তখন কর্ন ফ্লেক্স মিষ্টি দই দিয়ে, সঙ্গে সিঙ্গাপুরী কলা আর দুধ।‘

রহিম হোটেলের নোটপ্যাডে লিখতে রইলো রিমির রোজকার প্রোগ্রাম; ব’ললো, ‘তবে মোটা হ’য়ে যেওনা। বাচ্চা পেটে আসার পর যদি বডি-মাস-ইনডেক্স ২৫এর কম থাকে তবে ওজন ১০/১২ কেজি বাড়লেও খারাপ নয়; তিরিশের বেশী থাকলে ৫কেজি-ই অনেক। ভরাপেট নিয়ে পেটভরা তোমার মেজাজটা কেমন ওঠানামা করে দেখতে চাই। সল্মাকে এইভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। পেটের ভেতরে তোমার বাচ্ছা যখন পা ছুঁড়বে, আমার হাতের তালুতে সেই ধাক্কা অনুভব ক’রতে দেবে?’

‘অবশ্যই দেবো; চলো, আমি ব্যালকনির দোলনায় গিয়ে শোবো; তুমি একটা টুল নিয়ে পাশে বসো।‘

‘চলো রিমি, যাই ওখানে এখনই।‘

রহিম সত্যিই খুব যত্ন করে– বিশেষতঃ পেটভরা রিমিকে; খুব মন দিয়ে দেখছিল ও কখন খেতে চায়, কখন হঠাৎ কী চায়, অকারণে খেপে যায়। রিমির মনে হ’লো ওর নিজের স্বামী তির্য্যকও এত খেয়াল রাখেনা; কিন্তু তির্য্যককে কখনও ব’লতে পারবে না একথা। ভগবান না করুন, যদি তির্য্যক অপঘাতে মারা যায়, একা হবার অসুবিধে হবে না ওর। সল্মাও ওর স্বামী রহিমের সঙ্গে হাত বাঁটবে।

শিল্পী রহিম এক গর্ভবতী নারীর ছবি এবং প্রতিমূর্ত্তি গড়তে চাইলো; রিমির কোনো আপত্তি নেই শিল্পীর জন্যে মডেল হ’তে, কখনও অল্প কিছু কাপড় গায়ে জড়িয়ে পোজ ক’রতে, কখনো পুরো নিরাবরণ হয়ে রূপ দেখাতে। রহিম কখনও ওকে উপভোগ ক’রতে চেষ্টা করেনি; সদা সতর্ক থেকেছে যাতে অন্তঃসত্ত্বা নারীর বিন্দুমাত্র ক্লেশ না হয়।

মূর্ত্তি গড়ার মাটি দিয়ে রহিম যখন রিমির প্রতিমা গড়ছিল, তখন ও কখনো হাতের আঙ্গুল দিয়ে, কখনো বা তালু ছুঁয়ে মেপে দেখেছে ওর কাঁধ, ওর পিঠ, ওর নিটোল বুকদুটো, পেট, পাছা, এমনকি সামনের ছোট্ট দরজাটিও, যাতে প্রতিমার প্রতিটি মাপ হুবহু রিমির মত হয়। রিমি নিজেকে পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছে রহিমের হাতে; ও নিশ্চিত যে রহিম ওকে নিয়ে উপভোগ ক’রবে না। সারা সপ্তাহ রহিমের অনুরোধে রিমি তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্য্যবেক্ষণ ক’রতে দিয়েছে, যেমন ডাক্তারের কাছে ক’রতে হয়। রিমি নিশ্চিন্ত মনে সমর্পণ ক’রেছে নিজেকে; আর রহিম কখনই নিজেকে অনাবৃত করেনি। তবুও রিমি ভাবলো একবার – সল্মার অপঘাতে দেহাবসান হ’লে কী হবে? হয়তো তির্য্যকের চোখের সামনে, রহিমের জন্যে নিরাবরণ হ’তে পারবে না।

   *** ***

স্যুটকেশ খালি ক’রে ওয়ার্ডোবে জামাকাপড় সাজগোজের জিনিস রাখার পরে তির্য্যক ডাকলো সুভদ্রাকে তার পাশে সোফায় বসার জন্যে, ‘আমার জীবনে স্বাগত জানাই তোমাকে, সুভদ্রা, বলো কীকরে তোমার মন ভরাতে পারি?’

সুভদ্রা বললো, ‘টিভি ছাড়া কীক’রে সময় কাটবে জানিনা। এত টাকা দিয়ে পাঁচতারা হোটেলে থাকছি, কিন্তু ঘরে টিভি নেই। অনেকগুলো সিরিয়াল মিস হ’য়ে যাবে, আগে জানলে রেকর্ড ক’রতে দিয়ে আসতুম-‘

‘এখানে পিয়ানো আছে; বাজাওনা একটু’, ব’ললো তির্য্যক।

পিয়ানোর উপর ঝাঁপ দিয়ে সুভদ্রা সুর তুললো– ধিতাং ধিতাং বোলে। এক মিনিট বাজিয়েই থামিয়ে দিল; ব’ললো, ‘আমার কাছে দুটো বই আছে, তা-দিয়ে কাটবে কিছুটা সময়; ভ্রমণকাহিনী লেখার কাজেও হাত দিতে পারি। না-না, মনে পড়েছে - এখন আমরা দুজনে মিলে কি ক’রতে পারি। আমার আইপড থেকে বাজনা বাজাবো আর নাচবো আমরা দুজনে; জানি তুমি খুব ভালো নাচো।‘

‘নিশ্চয়ই নাচবো’, জবাব দিল তির্য্যক, ‘এসো তার আগে একটু শ্যাম্পেন খেয়ে মেজাজ ক’রে নিই; রিমি প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে কয়েকমাস এসব খাওয়া হয়নি।‘

দুজনেই ভালবাসে নাচতে; একটানা নেচে চললো; মাঝে মাঝে চিজ, শ্যাম্পেন, বাদাম, বিস্কুট, আর শারদোনের ব্রেক। ঘন্টাদুয়েক এইভাবে মজা করার পরে দুজনেই ক্লান্ত হ’য়ে পড়লো। এবারে বিশ্রামের প্রয়োজন– বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে একটানা লম্বা ঘুমের।

তির্য্যক ব’ললো, ‘চলো আমরা চান ক’রে নিই– একসঙ্গে ক’রবো– বাথটবে না শাওয়ারে?’

‘না, অনেক ধন্যবাদ, আমি চান ক’রবো সকালে একা-একা, তুমি একাই চান সেরে এসো, প্লীজ!’

তির্য্যক চান সেরে বেরোলো নাইট ড্রেস পরে। সুভদ্রা ইতিমধ্যে ওর ভিক্টোরিয়ার সিক্রেটের মধ্যে রেডী। বিছানায় ওঠার পরে সুভদ্রা ব’ললো, ‘এবার দেখতে চাই তুমি কত বড় খেলোয়াড়, তৈরী আছো?’

তির্য্যক ইতস্ততঃ করছিলো, ‘আজ কতটা ক’রবে?’

‘পুরোপুরি’ সরাসরি সুভদ্রা জবাব দিল, ‘আজকের দিনটা ভালো আছে। সঙ্গে কনডোম আছে? না থাকলেও ক্ষতি নেই, আমি পিল খেয়ে এসেছি।‘

তির্য্যক তবুও চুপচাপ; সুভদ্রা বললো, ‘ঘাবড়ে যেওনা, তির্য্যক, তোমাকে একটা তিন ধাপের খেলা শিখিয়ে দিচ্ছি। যা বলছি করো।-

সুভদ্রার নির্দেশ শুনে ঠিক ঠিক কাজ ক’রলো তির্য্যক; আনন্দে কেঁদে ফেললো সুভদ্রা।

তির্য্যক ব’ললো, ‘রিমির পেট হবার পর থেকে ওকে অনেকদিন কিছু দেওয়া হয় নি। সুভদ্রা, আমার সমস্ত সঞ্চয় উজাড় করে তোমাকে ভ’রিয়ে দিলাম, খুব ভালো লাগছে, একেবারে হাল্কা হ’য়ে গেছি।‘

সুভদ্রা ব’ললো, ‘যদি কোভিডের অপঘাতে কিরীটিকে ইহলোক ছেড়ে যেতে হয়, অনেকটাই মানসিক আর আর্থিক কষ্ট হবে আমার; তবে একটাই আশার কথা, রোজ তোমার সঙ্গে খেলবো এই তিন ধাপের খেলা। ধরো, রিমিও যদি বাচ্চা দেবার পরে মারা যায়, আমি মানুষ ক’রে তুলবো রিমির বাচ্চাকে নিজের বাচ্চার মতো যত্ন ক’রে। যদি কিরীটি বেঁচে থাকে আর রিমি মারা যায় – বাচ্চা দিয়ে বা না দিয়ে, তবে তুমি চলে আসবে আমাদের বাড়ীতে আমার দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে। কিরীটি যাই বলুক, আমি মনের খুশীতে তোমার দেখাশোনা ক’রবো।‘

*** ***

কিরীটি জ্যানেটকে ব’ললো, ‘বলো বিছানার কোন পাশটায় শোবে?’ ওর পছন্দ অনুযায়ী দুজনে যে যার জিনিস নিজের নিজের দিকে রাখলো।

জ্যানেট আর কিরীটির দুজনের জন্যেই এই পাঁচটা দিন বিশেষভাবেই আলাদা; সকালে কাজে যাবার তাড়া নেই; রান্নাবান্নার কোন দরকার নেই। পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা, একটু খেয়াল রাখা, দেখাশোনা করাটাই কাজ; সারাদিন ধরে তার অনেক সুযোগ। এদের দুজনের মধ্যে একটা বড় মিল যে এরা রিসার্চ করতে ভালবাসে; ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে কিছু ক’রে রেখে যেতে চায়। প্রথমে জ্যানেট আলোচনা ক’রলো ইনফ্রা-রেড থার্মোগ্রাফ নিয়ে।

‘ইনফ্রা-রেড থার্মোগ্রাফ দিয়ে বোঝা যায় কোন্ ইলেকট্রিক্যাল কনেকশন বা যন্ত্রাংশ উত্তপ্ত হ’য়ে উঠছে, এতে সুবিধে হয় সময়মতো এদের মেরামত করা। এতে যন্ত্রপাতি অনেকদিন চলে, যন্ত্রপাতির উপর আস্থা রেখে কাজ তোলা যায়।‘

মাথা ঘামিয়ে আলোচনা করার বিস্তারিত বিবরণ ওরা দুজনেই নিজের মতো ক’রে লিখে নিলো যাতে উপযুক্ত পত্রিকায় প্রকাশ করা যায়। এরপরে কিরীটি আলোচনা শুরু ক’রলো টায়ার পাঙ্কচার নিয়ে, কেমন ক’রে এমন চাকা তৈরী করা যায় যা মাত্র একবারই ফোলাতে হবে। এরা দুজনেই যেমন যুক্তি দিয়ে আলোচনা পছন্দ ক’রি, তেমনই চায় ধ্যান ক’রে সমাধান পেতে। এরা ভাবলো এ সপ্তাহের গবেষণা দিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার ক’রতে পারবে।

ডিনারের পর কিরীটি ঘন্টাখানেক কাজ ক’রছিল ল্যাপটপে নোটগুলো একটু ভালোভাবে লেখার জন্যে; দেখলো যে জ্যানেট শুতে যাবার জন্যে রেডী হয়ে ডাকতে এসেছে ওকে, ব’ললে, ‘কেন এত কষ্ট ক’রছো টাইপ করার জন্যে। আমি তাড়াতাড়ি টাইপ ক’রতে পারি; আমি কিছু স্কেচ ক’রেছি আর শর্টহ্যাণ্ডে অনেকটা লিখেছি; কাল টাইপ ক’রে দেবো; এখন জামাকাপড় বদলে শুতে এসো না?‘

কিরীটি ব’ললো, ‘তুমি তোমার দিক থেকে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ো। আমি এখনও পর্য্যন্ত কেবল সুভদ্রার সঙ্গে এক বিছানায় শুয়েছি, যদিও সুভদ্রা কাছে আসেনা, আমার গায়ের গন্ধ ওর সহ্য হয় না। এছাড়া হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য মনে গাঁথা হ’য়ে আছে; মনে হয় পরস্ত্রীর সঙ্গে শোয়া পাপ।‘

‘নিজের বিবেকের উপর বিশ্বাস রাখো, কিরীটি; কুসংস্কারকে ঐতিহ্য ব’লে ধ’রে নিয়ো না। এখন সুভদ্রা পরপুরুষের সঙ্গে মজা ক’রছে, অ্যাস্টনও এক পরনারীর স্বাদ নিচ্ছে। আমরা এতক্ষণ মনপ্রাণ দিয়ে গবেষণা ক’রেছি; এখন মনের কথা শুনবো, ব’লব আমরা ভালবাসি। আমি তোমাকে এক বিছানায় কাছে পেতে চাই–‘

কিরীটি নাইট-ড্রেস পরে শুতে এসে বিছানার ওদিকটায় চোখ রাখলো– নাইট শার্ট প’রে এটা কি জ্যানেট, না অন্য কেউ? কোনো পুরুষ নাকি? দিনের বেলায় জ্যানেট হয়তো প্যাডেড ব্রা প’রে থাকে, বেশ পুষ্ট মনে হয় বুক দুটো; এখন নাইট শার্টের আড়ালে ওর লুকোবার কিছু নেই।

জ্যানেট জোর করাতে কিরীটি ওর শার্ট খুলে বিছানার পাশে রাখলো; পাছে জ্যানেট কিছু মনে করে তাই ওর শার্টটাও খুলে নিলো কিরীটি, ব’ললো, ‘তোমার সমতল বুকে মনে হচ্ছে মশার কামড় খেয়েছো; তাই ফুলে উঠেছে দু-জায়গায়।‘

মশা-কামড়ানোর ফোলাদুটোকে দুই আঙুল দিয়ে একটু আদর ক’রে চোখ বুজলো কিরীটি, এবারে ঘুমিয়ে প’ড়বে। জ্যানেট ওর কাঁধে হাত দিয়ে ওর চোখে চোখ রাখলো, ওর নিষ্পলক চোখের দিকে তাকিয়ে পলক প’ড়লো না কিরীটির চোখেও; ওর চোখে কী মায়া না ভালোবাসা? ও যেন কিরীটিকে ডাকছে? কিরীটি তাকালো জ্যানেটের মুখের দিকে, ওর চোখে চোখ রাখলো, - তারপরে মশাকামড়ানোর ফোলাতে ঠোঁট দিয়ে ধরে জিভ দিয়ে ছুঁলো, শুষে নিলো; জিভে মিষ্টি ক্ষীরের স্বাদ- মশাকামড়ানোর ফোলা থেকে অমৃতধারা।

‘তোমাতে অমৃতের স্বাদ, জ্যানেট, না ভালবেসে পারছিনা।‘ ওর স্কার্টটা তুলে কিরীটি ভরিয়ে দিলো, পরম তৃপ্তি জ্যানেটের চোখে। এখন কিরীটির মনে প’ড়লো জ্যানেটের তিন বছরের মেয়ে ফুলকির মুখখানা; পরে ওর সঙ্গে খেলা করার সময় আজকের দিনটা ভুলতে পারবে না কিরীটি, ওর মায়ের চ্যাপ্টা বুকে কত মিষ্টি দুধ আছে সে নিয়ে গল্প ক’রতে পারবে না কোনদিনও, ব’লতে পারবে না সুড়ঙ্গে ঢোকার রহস্য রোমাঞ্চের কথা।

পরের দিন যখন কিরীটির ঘুম ভাঙলো, তখন একটু বেলা হয়ে গেছে। জ্যানেট অনেক আগেই উঠেছে; চান সেরে ফ্রেশ জামাকাপড় পরে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে; বললো, ‘ওঠো কিরীটি, দাঁত মেজে নাও; ব্রেকফাস্ট ক’রবো; কত কাজ আছে করার জন্যে।‘

কিরীটি-জ্যানেটের প্রতিটি দিনই কাটলো একই ঊদ্দীপনা নিয়ে, সত্যের সন্ধানে। সত্যি ওদের দুজনের মধ্যে কোন গণ্ডি বা সীমারেখা রইলো না। রহিমের কথাগুলো মনে পড়লো – ওরা ভাবলো কী হবে যদি জ্যানেট বা কিরীটির কারুর পার্টনারের দেহাবসান হয়।

সুভদ্রার অপঘাতে মৃত্যু হ’লে অ্যাস্টন আর জ্যানেট দুজনেই কিরীটিকে নিকট বন্ধু হিসেবে শ্রদ্ধা আর ভালবাসার সঙ্গে ওদের ঘরে ডেকে নেবে; জ্যানেটের সঙ্গে রিসার্চ করার অনেকটা সময় পাবে কিরীটি; জ্যানেটের মশাকামড়ানোর ফোলা থেকে অমৃতধারা হয়তো কখনও পাবে, যদি ওদের পেপার পড়ার জন্য দুজনকে বাইরের কোনো শহরে গিয়ে হোটেলে উঠতে হয়।

অ্যাস্টনের অপঘাতে মৃত্যু হ’লে জ্যানেট এসে উঠবে কিরীটিদের বাড়ীর গেস্ট রুমে। সুভদ্রার কড়া নজর থাকবে ওদের দুজনের উপর। খুব একটা রিসার্চ ক’রার সুযোগ হয়তো হবেনা, মশাকামড়ানোর ফোলা নিয়ে আগ্রহ দেখানো দূরের কথা।

*** *** 

অ্যাস্টন ঠিক ক’রলো, এই পাঁচ দিনের সহবাসের সময় এমন কিছু ক’রবে যাতে সল্মা খুশী হবে। ও সল্মাকে জিগ্যেস ক’রলো ওর কী ভালো লাগে।

‘আমাকে একটা গল্প বলো, সল্মা’, এই দিয়ে শুরু ক’রলো অ্যাস্টন।

‘ঠিক আছে, একটা লম্বা গল্প ব’লবো তোমাকে’, ব’ললো সল্মা।

‘প্লীজ,’

‘একটা লোক বারান্দায় ব’সে মটরশুঁটি খাচ্ছিল। অনেকগুলো চড়ুই পাখী ঘুরছিল তার আশেপাশে। সে একটা মটরশুঁটি তুলে নিলো ঠোঙা থেকে আর রাখলো মেঝের উপর।‘

‘কী হোলো তার পরে?’

‘একটা চড়ুই উড়ে এলো, আর মটরশুঁটি মুখে নিয়ে উড়ে গ্যালো।’

‘তারপরে কী হ’লো?’

‘লোকটি আর একটা মটরশুঁটি তুলে নিলো ঠোঙা থেকে আর রাখলো মেঝের উপর।‘

‘কী হোলো তারপরে?’

‘আর একটা চড়ুই উড়ে এলো, আর মটরশুঁটি মুখে নিয়ে উড়ে গ্যালো।’

‘আমার ঘুম আসছে এবার– ‘

‘তুমি ঘুমোলে আমি তোমার গায়ের মাপ নেবো।‘

‘মাপ নেবে কেন?’

‘একটা সোয়েটার বুনবো তোমার জন্যে, তোমার কোমরের আর বুকের মাপ চাই, কোমর থেকে কাঁধের লম্বাই, আরও ছোটখাটো দু-চারটে মাপ।‘

‘এখনই আমার মাপ নিয়ে নাও না। ঘুমোবার পরে মাপ নিতে গেলে আমি জেগে উঠবো।‘

এই ক’দিনের জন্যে সল্মা অনেক পশমের গুলি নিয়ে এসেছিল; তার প্ল্যান ছিল কিছু বোনার; অ্যাস্টনের জন্যে সে একটা হাফহাতা সোয়েটার বুনে ফেললো।

আর কী ক’রলো সল্মা? গানের পর গান গেয়ে গ্যালো। অ্যাস্টন মুগ্ধ হ’য়ে ওর সঙ্গে সঙ্গত ক’রতে রইলো। তবলা নেই, টেবিলটা বাজাল তবলার মতো করে; পিয়ানোতেও চেষ্টা করলো, মাউথ অর্গ্যানও বাদ গেল না। সল্মা এর আগে এত উৎসাহ কখনও পায়নি।

শুধু গান শুনে মন ভরে না; আরও কাছে আসতে চাই।  অ্যাস্টন, ব’ললো, ‘সল্মা, আর একটু ভালো ক’রে দেখতে চাই তোমাকে; খালি তোমার চোখদুটো দেখেছি; পুরো অবয়বটাতো ঢেকে রাখো বোরখার আড়ালে?’

‘আমাদের স্বামী ছাড়া আর কারুর সামনে আবরু খুলতে নেই।‘

‘রাত্তিরেও কি এ বোরখা পরে শোবে?’

‘না, রাত্তিরে পরবো সায়া আর শেমিজ।‘

অ্যাস্টনের কাছে একটা রেডিও প্লেয়ারও ছিল; ওর সারাদিন কাটতো গান শুনে, কখনো রেডিয়োর, কখনো সল্মার। সল্মার সময় কাটতো সোয়েটার বুনে বা গান গেয়ে। অবশ্য ওরা চান, খাওয়া আর কিছু প্রাত্যহিক কাজেও সময় দিত।

রাতে একটা পাজামা পরে খালি গায়ে খাটে শুয়েছিলো অ্যাস্টন। সল্মা শুতে এলো ঢিলে শেমিজ আর সায়া প’রে, বললো, ’আমরা এক বিছানায় শোব, কিন্তু ভাইবোনের মত; মাঝখানে থাকবে একটা পাশবালিশ।‘

অ্যাস্টন পাশ ফিরে একটা ইকনমিক্সের বই প’ড়তে শুরু ক’রলো আর মিনিটদুয়েকের মধ্যেই ঘুমিয়ে প’ড়লো; গভীর ঘুম ঘন্টাদুয়েক।  পিঠে একটু কোমল গরম ছোঁয়া পেয়ে অ্যাস্টনের ঘুম ভেঙে গেলো, পাশবালিশটা নীচে নেমে গেছে; ঘুমের মধ্যেই সল্মা জড়িয়ে ধরেছে অ্যাস্টনকে। ধীরে ধীরে সল্মার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ঘুরে শুলো অ্যাস্টন - পাতলা কাপড়ের শেমিজ ওদের দুজনের ঘামে ভিজে সেঁটিয়ে আছে সল্মার গায়ে; মনে হচ্ছে ও কিছু পরে নেই। দুটো পায়ের ফাঁকে সায়াটা ঢুকে আছে; এক অদম্য আবেগ পেয়ে ব’সলো অ্যাস্টনকে; সল্মার সায়াটা তুলে দেখবে একবার, সায়ার নীচে ও আর কিছু পরে আছে কিনা। পারলো না; তার আগেই দমক দিয়ে কিছু যেন বেরিয়ে এলো; পাজামা ভিজিয়ে কিছুটা সায়ার উপরও পড়লো।

খাট থেকে নেমে পড়লো অ্যাস্টন। দৌড়ে টয়লেটে গ্যালো; পাজামা পাল্টে নিলো। বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো।

পরের দিন সকালে সল্মা জিগ্যেস ক’রলো, ‘তুমি শুলে একটা আনকোরা নতুন সাদা পাজামা পরে; আর এখন প’রে আছো নীল পাজামা?’ কী ক’রে সল্মা কী বুঝলো জানিনা, ব’ললো, ‘আমি এমনিতেই রোজ সকালে সায়া-শেমিজ কেচে দিই; যাই চান করে আসি।‘

নটা বাজলে, সল্মা হোটেল রিশেপশনকে ফোন ক’রে ডাবল বেড হাটিয়ে টুইন বেড আনালো।

এক সপ্তাহে অ্যাস্টন আর সল্মা আরও অনেক কথা ব’ললো। সল্মা জেনে নিলো অ্যাস্টন জ্যানেটের সঙ্গে কীভাবে সময় কাটায়, যেমনভাবে এক বোন দাদার কাছে বৌদির সম্মন্ধে জানতে চায়। অ্যাস্টনও রহিমের কথা জিগ্যেস ক’রেছে ব্যক্তিগত গোপন কথা বাদে।

অ্যাস্টন ভাবলো, - ভগবান না করুন, যদি জ্যানেটের অপঘাতে মৃত্যু হয়, তবে রহিম-সল্মার বাড়ীর গেস্টরুমে গিয়ে উঠবে অ্যাস্টন, কিন্তু কোনোদিনই সল্মার দ্বিতীয় স্বামী হ’য়ে উঠতে পারবে না। যদি রহিমের দেহাবসান হয় কোভিড বা অন্য মহামারীতে, সল্মা ওদের বাড়ীতে এসে উঠবে এক বিধবা বোনের মতো, অ্যাস্টনের দ্বিতীয় স্ত্রী হ’য়ে উঠতে পারবে না কখনও।

*** *** 

চামেলী আর বিক্রমের রুমের দরজা থেকে স্যুটকেশ নিয়ে এসে শৈলজার ঘরের দরজার বেল টিপলো চঞ্চল। দরজা খুলে দিল শৈলজা; তরমুজের মতো বিরাট ওর দুটো বুক; কামিজ বা ব্রা কিছু দিয়ে ঢাকা নেই।

‘আজ ভীষণ গরম’, ব’ললো শৈলজা, বুক ঢেকে না রাখার যেন এটাই কারণ।

হঠাৎ চঞ্চলের মনে ভেসে উঠলো – পনেরো বছর বয়সে মাকে একবার এরকম বেশে দেখেছিল। কোনো কারণে তাড়াতাড়ি ছুটি হ’য়ে গেছিল স্কুল থেকে; দরজা খুলে বাড়ীতে ঢুকেই চমকে গিয়েছিল মাকে দেখে; সঙ্গে সঙ্গে বুক ঢেকেছিলেন মা।

শৈলজা কোন চেষ্টাই ক’রলো না বুক ঢাকার। এতদিন পর্য্যন্ত ওকে কাকী বা মাসীর মতো গুরুজন বলে ভাবতো; ও কোনদিন চায়নি গোলগাল মোটা মাসীর কাছে যেতে।

‘তোমার তো দামী দামী অনেক জামা আছে,’ বললো চঞ্চল, ‘গায়ে চড়ালে ভালো দেখাবে।‘

‘চঞ্চল, তুমি এত সুন্দর’, শৈলজা উত্তর দিল, ‘কিছু না পরলেও ভালো লাগবে। এসো আমাকে নিয়ে একটু আহ্লাদ করো।‘

‘অবশ্যই ক’রবো; বিক্রম চামেলীর কী দশা ক’রছে এখন জানিনা। ওর চোখে লালসা ভরা ছিল চামেলীকে ডেকে নেওয়ার সময়।‘

‘ভেবোনা, চঞ্চল, ও এমন কিছু ক’রবে না যে মুখ দেখাতে পারবে না আমাদের কাছে। তুমি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ো, যা পারো লুটে নাও।‘

‘দেখি কতটা পারি। বিক্রমের বদমাইসির শোধ তোমার উপর তুলবো না। তুমি সুন্দরী স্বাস্থ্যবতী; নরম নরম গদি খুবই আরামের। দেখি, কিছু কাজ করা যাক।‘

চঞ্চল অনায়াসে তুললো শৈলজার ভারী শরীরটাকে; শুইয়ে দিল মাটিতে। ওর তরমুজদুটো নিয়ে একটু নাড়াচাড়া ক’রলো। আবার তুলে নিল কাঁধে; ব’সলো একটা মজবুত ঊঁচু চেয়ারে; শৈলজাকে একটু ছুঁড়ে কোলে বসালো; প্যান্ট নামিয়ে, স্কার্ট উঠিয়ে, সাবধানে কোলে চড়ালো। শৈলজা কেঁদে উঠলো, খুব লাগছে ওর; চঞ্চলেরও মনে হ’লো কিছুতে আটকাচ্ছে; ও ব’ললো, ‘কেন জানিনা, রুদ্ধ প্রবেশদ্বার । চামেলীর সঙ্গে কখনও এরকম হয়নি।‘

‘সরি, চঞ্চল, অনেকদিন অভ্যেস নেই‘. ব’ললো শৈলজা।

চঞ্চল শৈলজাকে কাঁধে তুলে নিয়ে সোফায় বসালো; ব’ললো, ‘সরি হবার কিছু নেই, শৈলজা। আমার যা করার ছিল ক’রেছি; কিন্তু এই ছুটির পরেই এক গাইনোকোলজিস্টকে দেখাও; ঠিকমত চিকিৎসা ক’রিয়ে নাও’।

শৈলজা জিগ্যেস ক’রলো, ‘এই পাঁচদিন কী ক’রবো আমরা?’

‘সবচেয়ে ভালো থাকবে আর কিছু না ক’রলে। আরও খারাপ ক’রতে দিতে চাই না।‘

একবার চঞ্চল ভাবলো শৈলজার ছেলে বিলাস ওকে দাদার মতো ভক্তি করে; কিন্তু ওকে বলা যাবে না ওর মার এই সমস্যার কথা। একথা শৈলজাকেই জানাতে হবে বিক্রমকে।

চঞ্চল ভাবলো, কোভিডে যদি ওর নিজের মৃত্যু হয় শৈলজার স্বামী বিক্রম ওর স্ত্রী চামেলীকে লুফে নিয়ে যাবে; বাইশ বছর বয়েসী চামেলী, যাকে ওর মেয়ের মতো স্নেহ করা উচিত, তার উপর বলাৎকার, অত্যাচার ক’রবে, রক্ষিতার মতো রাখবে কেবল নিজের যৌন পরিতৃপ্তির জন্যে। শৈলজা বিক্রমকে রুখতে কিছুই ক’রতে পারবেনা। ভগবানের কাছে প্রার্থনা ক’রলো, যেন অপঘাতে ওর নিজের মৃত্যু না হয়।

চঞ্চল আরও ভাবলো, যদি বিক্রমের অপঘাতে মৃত্যু হয়, তাহ’লে চামেলীকে নিয়ে ও শৈলজার বাড়ীতে গিয়ে উঠবে। বেকার অবস্থায় এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের ভাড়া দেওয়াই কষ্টকর, আরও একটা রুম নেওয়া অসম্ভব। শৈলজা অবশ্য চঞ্চলের কাছে মাতৃস্থানীয়, ওঁকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ওঁকে মেনে নেওয়া অসম্ভব।

এত অল্প বয়সে চামেলীর মৃত্যু সহ্য ক’রতে পারবে না চঞ্চল। হয়তো শৈলজা-বিক্রমের বাড়ীতে ডাক আসবে ওর; ও যদি তখনও বেকার থাকে, ওকে হয়তো একটা ক্রীতদাসের মতোই দেখবে বিক্রম।

*** *** 

চামেলীর ঘরে এসে বিক্রম ওর চিবুকে হাত দিয়ে আদর ক’রে বললো, ‘কেমন লাগছে চামেলী? তুমি এখন বেশ ডাগর হ’য়ে উঠেছো, অপূর্ব সুন্দরী, এখন আর ছোট্ট মেয়েটি নেই; যে কোনো মরদকে ধাঁধিয়ে দিতে পারো। আমরা মরদেরা বাচ্ছা দিতে পারি না: তোমার মতো সুন্দরী তরুণী আরও রূপবতী হ’য়ে উঠবে, যখন তুমি মা হবে, নতুন এক প্রাণকে নিয়ে আসবে পৃথিবীতে– তোমার গায়ে, মুখে, চলাফেরায় আসবে এক নতুন ছন্দ, নতুন সৌগন্ধ্য।‘

চামেলী অবাক হ’য়ে তাকালো বিক্রমের দিকে। বয়সে বড় ব’লে বিক্রম ওর বাবার মতোই শ্রদ্ধাভাজন; চামেলী ব’ললো মাথা নীচু ক’রে, ‘আপনার প্রশংসা আর শুভেচ্ছার জন্যে ধন্যবাদ। চঞ্চল আমাকে খুবই ভালবাসে; কিন্তু ও এখন বাচ্ছা চায় না, চায় একটা ভালো চাকরী।‘

‘তোমরা এক বিছানাতেই শোও? কাছাকাছি আসোনা না কখনও?’

‘বেশীরভাগ দিন ওকাজ করে অনেক রাত পর্য্যন্ত; বিছানায় যখন আসে তখন আমি গভীর ঘুমে অচৈতন্য, আর জাগায় না আমাকে। এছাড়া কন্ডোমের দাম অত্যন্ত বেশী; এক প্যাকেটে তিনমাস চালাই; বুঝতেই পারছেন। এসব কথাতো বাবার বয়েসীদের সঙ্গে আলোচনা ক’রতে পারিনা।‘

‘কন্ডোম ছাড়াই ক’রতে পারে; খরচ বাঁচবে।‘

‘খুব রিস্কি কিছু না পরে ক’রলে–‘

‘তোমাকে বুঝিয়ে দেবো এই ক’দিনে, কেমন মতলব ভেঁজে চলতে হয়। চলো এখন চান ক’রে আসি‘

‘ঠিক আছে; আপনি যান।‘

‘না চামেলী, আমরা একসঙ্গে যাবো। আমরা চান ক’রবো এক সঙ্গে, দুজনে দুজনকে সাবান মাখাবো, গা ঘসে পরিষ্কার ক’রবো নিজের হাতে। এই পুজোর কদিন আমাদের কাজ হ’লো একে অপরকে ভালো ক’রে জানা– শরীর-মনের সবটা।‘

একটু থেমে বিক্রম ব’ললো, ‘এসো আমরা জামাকাপড় খুলে রাখি‘

‘এখানে? এই লাউঞ্জে?’

‘তা না তো কী? কেউ দেখতে আসবে না এখানে; যা খুশী ক’রতে পারি।’

‘আপনি প্রথমে শুরু ক’রুন। নিজের উদাহরণ দিয়ে নির্দেশ দিন আমাকে।‘

‘দেখো, এখানে তুমি আমাকে ‘তুমি’ ব’লবে। গুরুজন আপনি আর নয়। এই দ্যাখো, আমি শুরু  ক’রেছি; তুমিও শুরু করো-  না, পিছন ফিরে নয় চামেলী; আমার দিকে মুখ ক’রে থাকো, লজ্জা ক’রোনা।‘

‘ঠিক আছে বিক্রম, তুমি ব’লেই ব’লছি; তোমাকে আমার পেছন দেখতে হবে না, আমার মুখের দিকে তাকাও। টপটা খুলে ফেলেছি, এবারে স্কার্টটাও নামছে‘

‘এইতো চাই চামেলী’, ব’লেই নাকে হাত দিলো বিক্রম, ‘কী দুর্গন্ধ, তুমি কি আণ্ডি কাচো না কখনও? আর ঐ ব্রা দিয়ে কি তোমার ঐ বাড়ন্ত বুকটা আর ঢাকা যায়? কার ফেলে দেওয়া ব্রা কুড়িয়ে প’রেছো?’

বিক্রম ঐ ব্রাটা নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলবে ভাবছিল, থেমে গেল চামেলীর মুখ দেখে। ও দাঁড়িয়ে আছে মাথা নীচু ক’রে; দু-গালে জলের ধারা, ‘আণ্ডি আর ব্রা-এর ভীষণ দাম, বেশী কেনার মতো পয়সা নেই আমাদের। বাইরে থেকে কেউ দেখতে পায় না এগুলো।‘

‘যখনই ডাক্তারের কাছে যাই কাচা গেঞ্জি আণ্ডারওয়ার প’রে যাই, যাতে ডাক্তারের অসুবিধে না হয়। ডেটিং-এ গ্যাছো কখনও?’

চামেলী মাথা নীচু ক’রে বললো, ‘না’।

‘এই ধরণের ট্যুরে তোমার ডেটের অনুরোধে জামাকাপড় খুলতে হ’তেই পারে; নোংরা কিছু দেখলে সে বেগরবাঁই ক’রতেই পারে। আমি তোমাকে ভালো রকম চিনি, তাই একটু উপদেশ দিলাম; কিছু মনে ক’রোনা, প্লীজ।’

‘নিশ্চিন্ত মনে তোমার জামাকাপড়গুলো রাখো সোফায়; যাই পরো না কেন তুমি চার্মিং চামেলী, আরো বেশী কিছু না প’রলে। তোমার সারা গা থেকে ঠিকরে পড়ছে আলো। তোমার হৃদয় আমি পেতে চাই; কাছে নিয়ে অনুভব ক’রতে চাই তোমার প্রতি অঙ্গ।‘

বিক্রম চুমু খেলো চামেলীর হাতে; আদর ক’রে হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে এলো বাথরুমে। শাওয়ারের কাছে এসে যে যার তোয়ালে রাখলো; তাকিয়ে দেখলো একে অপরকে। চামেলীর দুই বুকের মাঝখানের সমতল জায়গাটিতে ঠোঁট রাখলো বিক্রম। ওর বুকের বোঁটা ধরলো দুই আঙুলের ফাঁকে, বললো, ‘তোমার বুক দুধে ভরে দিতে মদৎ ক’রবো আমি; তুমি তো আইসক্রীম ভালোবাসো; তোমার বুক থেকে ক্ষীর বেরোবে আইসক্রীমের চেয়েও সুস্বাদু হ’য়ে।

অতর্কিতে চামেলীকে তুলে কাঁধের উপর ফেললো বিক্রম; নামলো বাথটবে।

‘কেমন লাগছে চামেলী? রেডী চান করার খেলার জন্যে?’

‘সত্যি মজা লাগছে। এভাবে চান ক’রিনি কখনও‘

‘আমারও ভালো লাগছে খুব; একটু আদর ক’রি তোমাকে‘, চামেলীকে সামনে রেখে ওর কাঁধে চুমু খেলো বিক্রম। চামেলী আনন্দে বিহ্বল হয়ে অনুভব ক’রলো- ওর দরজা খুলে যাচ্ছে, বিক্রম প্রবেশ ক’রছে দরজা ঠেলে– বিক্রমের সঙ্গে তাল না মিলিয়ে ও পারছে না। আকুল হ’য়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরেছে– বিক্রমের ঘামে ভিজে গেছে ওর কোমল বুক দুটো। মিনিট খানেক ওরা দাঁড়িয়ে রইলো পরস্পরকে জড়িয়ে– এক দেহ, এক প্রাণ হ’য়ে– ভুলে গেল যে দুজনের শরীর আলাদা, দেখার জন্যে আলাদা আলাদা চোখ আছে,  শোনার জন্যে আলাদা আলাদা কান আছে, আছে আলাদা আলাদা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। ধীরে বিক্রম তার পিঠে ভর দিয়ে শুয়ে প’ড়লো, চামেলীকে বুকে নিয়ে; তারপর খুব সাবধানে চামেলীকে বুক থেকে নামিয়ে পাশে রাখলো।

‘ঠিক আছো, চামেলী? খুশী?’

‘অপূর্ব! তোমার হৃদয়ধারার বন্যা উজাড় ক’রে দিলে আমাতে; পরিপূর্ণা আমি আজ।‘

‘তোমাকে খুশীতে ভ’রিয়ে দিতে পেরে দারুণ গর্ব হ’চ্ছে; তুমি শীগগিরই মা হবার আনন্দ পাবে।‘

‘একটু ধুয়ে নিতে হবে আমাকে।’

‘সেজন্যেই এখানে এনেছি তোমাকে; শাওয়ারের জলে ধুয়ে যাবে সব সহজেই।‘

বিক্রম চুমু খেলো চামেলীর ঠোঁটে, ওর গালে, ওর জিভে, ওর মুখ তুলে নিয়ে এলো নিজের মুখের কাছে, নিষ্পলক চোখে দেখলো ওর মুখ।

‘রূপবতী তুমি চামেলী, এত কাছ থেকে দেখিনি কোনো মেয়েকে। তোমার প্রতি অঙ্গ ধুয়ে দেবো নিজের হাতে।‘

বিক্রম চামেলীকে সাবান মাখাতে শুরু ক’রলো ওর নরম বুকদুটোতে প্রথমে; হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো বিক্রম, ‘এটা কী, চামেলী? তোমার বাম বুকে একটা শক্ত ডেলা? তুমি দেখেছো কখনো এটা?’

স্বর্গ থেকে হঠাৎ ধরাতলে নেমে এলো চামেলী, স্বপ্ন থেকে কঠিন সত্যে। বিক্রমের কথা বুঝে নিতে সময় লাগলো, ব’ললো, ‘দেখেছি; কিন্তু কারুর চোখে পড়বে না বলে গুরুত্ব দিইনি।‘

‘চঞ্চল দেখেছে?’

‘না, ওর সামনে যদি কখনও জামা খুলি, তখন আলো থাকেনা ভালো ক’রে দেখার জন্যে‘

‘এর চিকিৎসা দরকার, চামেলী, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এখান থেকে ফেরার পরে চঞ্চলকে দেখাবে। ভগবান না ক’রুন যদি ম্যালিগন্যান্ট হয়‘

জলের ধারা নামলো চামেলীর দুচোখ থেকে– ‘কী বলবো আমি ওকে?’

‘আমি দেখেছি- বলবে না একথা। খালি ওকে স্পটটা দেখাও আর তাগিদ দাও ডাক্তারকে দেখানোর জন্যে।‘

‘আমি প্রেগন্যান্ট হ’য়ে গেলে কী হবে?’

‘ওকে কিছু জানাবার দরকার নেই; ওর সঙ্গে কাজ ক’রে যাও প্রেগন্যান্ট হবার জন্যে; চেষ্টা করো কন্ডোম ছাড়া করবার; কন্ডোম কামড়ে ছিঁড়ে দাও যাতে কেমিস্ট্রি হয় ঠিকমতো।‘

‘শৈলজাকে কি জানাবে একথা?’

‘কখনো না। প্রতিজ্ঞা করো আজকের ঘটনার কথা আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ জানবে না।‘

‘বাকী ক-দিন আমরা কেমন করে কাটাবো?’

‘যত পারো মজা করে যাও; যদি মনে হয় তুমি প্রেগন্যান্ট হ’য়েই গ্যাছো, তাহলে আমাদের রোজ কাছে আসতে বা দেওয়া-নেওয়া ক’রতে কোন আপত্তি নেই।  যদি মনে হয় তুমি এখনও প্রেগন্যান্ট নয়, তাহলে কাছাকাছি যাবো না আমরা। এই লাম্পটা আগে দেখলে তোমার উপর জোর ক’রতাম না‘

বিক্রম হ্যাণ্ড-শাওয়ার দিয়ে চামেলীকে ধুয়ে দিল, প্রথমে পিঠ আর পেছনের দিকটা; তারপরে ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে বুক আর সামনের দিকটা জলের ধারা দিয়ে পরিষ্কার করে দিল।

‘আমিও তোমাকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেবো’, ব’ললো চামেলী।

‘তোমার গায়ের প্রতিটি বিন্দু ধুয়ে দেবো নিজের হাতে, বিক্রম‘। এর আগে কখনও কোনো নগ্ন পুরুষকে চান করায়নি চামেলী; নিজে নিরাবরণ হয়ে বিবস্ত্র বিক্রমের প্রসাধন ক’রলো চামেলী, একদিন নয়. দুর্গাপুজোর পাঁচটি দিন।

বিক্রমের মাথায় এখন একমাত্র চিন্তা – কী ক’রে চামেলীর চিকিৎসা শুরু করা যায়। চঞ্চলের যদি অপঘাতে মৃত্যু হয়, তাহ’লে অবশ্যই নিজের বাড়ীতে নিয়ে আসবে চামেলীকে; শুরু ক’রবে ওর ক্যানসারের চিকিৎসা; এছাড়া হয়তো চামেলীর গর্ভে এসেছে বিক্রমের সন্তান; দরকার সেই ভ্রূণের তত্ত্বাবধান। যত তাড়াতাড়ি চঞ্চলের মৃত্যু হয়, ততই সুবিধা হবে তাড়াতাড়ি চামেলীর চিকিৎসা শুরু ক’রতে; নয়তো কবে চামেলী চঞ্চলকে ব’লতে পারবে জানা নেই।

যদি শৈলজার অপঘাতে মৃত্যু হয়, তবে বিক্রম অবশ্যই বেকার চঞ্চলের বাড়ীতে গিয়ে উঠবে না। তখন চামেলী আর চঞ্চল দুজনকেই বিক্রম নিজের বাড়ীতে নিয়ে আসবে; চঞ্চলকে বুঝিয়ে, খরচ দিয়ে, চিকিৎসা শুরু করাবে।

অনেক ভেবে বিক্রম ফোন ক’রতে ব’সলো এক বন্ধুকে -  বন্ধুটি একটি মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীর চীফ এক্সেকিউটিভ; অনুরোধ ক’রলো চঞ্চলের মতো এক উচ্চ-শিক্ষিত যুবককে ইন্টারভিউ ক’রে দেখতে – ওকে কোনো কাজ দেওয়া যায় কিনা দেখতে।

*** ***

 

স্বামী ও স্ত্রী – এই দুজনের সংসার থেকে যদি একজন নিহত হয় কোভিডের মহামারীতে, অন্যজনকে নিদারুণ কষ্ট ক’রতে হয় শুধু বেঁচে থাকার জন্য। তাই ছয় দম্পতি জোট বেঁধেছিল পাঁচদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাতে, একজনের মৃত্যুর শোক ভাগ ক’রে নেওয়া যায় ছয় পরিবারের আরও কয়েকজনে সঙ্গে।

পার্টনারের মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হবার জন্যে, ছয় দম্পতির প্রতি পুরুষ তার নিজের স্ত্রী নয় এমন এক নারীর সঙ্গে কাটিয়েছে পুজোর পাঁচ দিন আর পাঁচ রাত্রি। বলা বাহুল্য যে, প্রতি নারীও তার নিজের স্বামী নয় এমন এক পুরুষের সঙ্গে কাটিয়েছে পুজোর পাঁচ দিন আর পাঁচ রাত্রি। প্রতি জুটির পুরুষ ও নারী পরস্পরকে আপন ক’রে নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে যদি এই পাঁচ দিনের জুটির কোনো একজনের বিবাহিত পার্টনারের দেহান্ত হয়, তবে জুটির অপর জন মৃত পার্টনারের শূণ্য স্থান পূরণ ক’রবে, নিজের বিবাহিত পার্টনার বেঁচে থাকা সত্ত্বেও। এই পরীক্ষায় যে ছয়টি নারী ও ছয়টি পুরুষ অংশ নিয়েছে তারা সকলেই এই ছয় দম্পতির একজন, কেউ বাইরের নয়।

 

গার্হস্থ্য রাজনীতির দক্ষতায় সাধারণতঃ মহিলারা পুরুষদের তুলনা বেশী পারদর্শী। পুজোর ক্যাম্পের পরে তারা নিজেদের মধ্যে অনেক আলোচনা তর্ক-বিতর্ক চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হোলো যে, পুজোর পাঁচদিনে প্রত্যেকের জন্যে যে দ্বিতীয় পার্টনার নির্ধারিত হ’য়েছে তা কার্য্যকর করা সম্ভব হবেনা; কারণ এই নির্ধারণের মূল ভূমিকা ছিল পুরুষদের; প্রায় প্রতি পুরুষের লক্ষ্য ছিল যতটা সম্ভব যৌন আনন্দ উপভোগ করা। পুরুষ সেই মহিলাকেই বেছে নিয়েছে যার উপর কাজ ক’রতে সবচেয়ে বেশী মজা হবে; মহিলাদের সন্তানদের ব্যাপারে পুরুষেরা কোনো চিন্তাই করে নি। যেহেতু সন্তানেরা পুজোর ঐ পাঁচদিন বাড়ীতে অন্য অভিভাবকদের হেফাজতে ছিল, নিজেদের মায়েদের অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে বিছানায় অংশ নেওয়ার কথা সন্তানেরা জানতেও পারে নি।

মূলতঃ মহিলাদের সুপারিশে আর একটি একদিনের ক্যাম্পের আয়োজন হ’লো ক’লকাতার একই হোটেলে- ১৪ই নভেম্বর – দেওয়ালীর দিনে। দুটোয় চেক-ইন করার পরে, হোটেলের সুইমিং পুলে নেমে হৈ হৈ ক’রে সাঁতার কাটলো ছয় দম্পতির টিমের ১২জন সদস্যের প্রত্যেকে। ছয় দম্পতির টিমের ১২জনের কেউই সুইমিং কস্টিউম নিয়ে আসেনি, তাই হোটেল থেকেই ভাড়া করা হ’লো ছেলেদের ওয়ান-পিস আর মেয়েদের টু-পিস সুইমিং কস্টিউম – সবই ফ্রী-সাইজ, কিন্তু এদের সকলের সাইজ সমান নয়। আরও একটা মজা হ’লো - সুইমিং কস্টিউমগুলো জলে ভেজার পরেই স্বচ্ছ হ’য়ে গেলো; মনে হচ্ছিলো বারোজন নারী ও পুরুষ নগ্নদেহে সাঁতার কাটছে। ছেলেরা স্বভাবতঃই একটু বেশী উত্তেজিত হ’য়ে উঠছিলো। হঠাৎ দেখা গেল সব পুরুষেরা সল্মাকে ঘিরে রয়েছে, কেউই চোখ ফেরাতে পারছে না; সাধারণতঃ যে মেয়ে বোরখার আড়ালে ঢাকা থাকে তার বুকে শ্রাবস্তীর কারুকার্য্য সবাই দেখছিল মুগ্ধ হ’য়ে। কোথা থেকে তীর বেগে এলো অ্যাস্টন; সল্মার পেছনে ভাসছিল ওর টপটা; অ্যাস্টন সযত্নে সল্মার বুকে টপ লাগিয়ে ক্লিপ আটকে দিল। সল্মা এতক্ষণে বুঝলো, কেন পুরুষেরা মুগ্ধ হ’য়ে ওকে ঘিরেছিল; ভাগ্যিস অ্যাস্টন এসে ওকে ঢেকে দিলো।

তারপরে সন্ধ্যেবেলায় ডিনার আর বলরুমের ডান্সেও অংশ নিলো প্রত্যেকেই। কে কার সঙ্গে কতটা নাচলো তার ঠিক নেই, তবে প্রত্যেক পুরুষই চাইলো নিজের স্ত্রীকে যতটা সম্ভব কাছে রাখতে; রাত্রে বিছানাতেও আদর করার কোনো ত্রুটি রাখলো।

 

নারীরা অনেক গবেষণা করে, নিজেদের মধ্যে অনেক আলোচনা, বোঝাপড়া করে ঠিক ক’রেছিল কোন পুরুষ কোন নারীর সঙ্গে বছর কাটাবে।  চূড়ান্ত ফলাফলযেদিন ঘোষণা করা হবে, সেদিন সব পুরুষদের লাউঞ্জে নিয়ে আসা হল; নারীরা এসে যে যার নিজের স্বামীর চোখ বেঁধে দিল পুরু কালো মাস্ক দিয়ে, যাতে কোন পুরুষের দেখার উপায় না থাকে। এর আধঘন্টা পর থেকে একটি ক’রে মহিলা ঘরে ঢুকলো, চোখ-বাঁধা এক পুরুষকে হাত ধ’রে নিয়ে এলো কার পার্কে। পুরুষটির গাড়ীর কাছে এসে ওর চোখের মাস্ক খুলে দিলো মহিলাটি; বললো – ‘তোমার গাড়ীতে আমাকে নিয়ে চলো আমার বাড়ীতে। সেখানে থাকবে এক বছর, শুধু আমার স্বামী হ’য়ে নয়, আমার ছেলেমেয়েদের বাবা হ’য়ে। তোমার সঙ্গে আমার দাম্পত্য-জীবন চলবে পরের বছরের বিজয়দশমী পর্য্যন্ত – ২০২১ সালের ১৫ই অক্টোবর শুক্রবারে, আমার আস্তানা থেকে তোমাকে দেবো বিসর্জন; তখন ফিরে যেয়ো তোমার আইন-সঙ্গত ধর্মপত্নীর কাছে।‘

 

সবচেয়ে প্রথমে ঢুকলো সুভদ্রা, চোখবাঁধা চঞ্চলের হাত ধ’রে তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল। চঞ্চল তার বন্ধুদের ‘বা-ই’ ব’লে বিদায় নিলো; বন্ধুরা তার চলে যাওয়ার কথা বুঝতে পারলো, কিন্তু বুঝতে পারলো না কোন মহিলা তাকে দখল ক’রলো। সুভদ্রা চঞ্চলকে নিয়ে গেলো রাস্তায়, যেখানে ওদের সকলের গাড়ীগুলো রাখা আছে; চঞ্চলের চোখের পটি খুলে দিয়ে বললো,- ‘প্রিয়তম চঞ্চল, এখন থেকে তুমি আমার স্বামী, এক বছরের জন্যে; তোমাকে নিয়ে ঘর করবো আমার বাড়ীতে। আমাকে নিয়ে বসাও তোমার গাড়ীতে, তারপর গাড়ী নিয়ে চলো আমার বাড়ীর দিকে।‘

 

শৈলজা বেশী সময় নেয় নি রহিমকে ডেকে নিতে। পরিকল্পনামত সে রহিমকে তার গাড়ীর কাছে নিয়ে গেল; চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে বললো, ‘এবছর তুমি আমার ভালবাসার মানুষ। তোমার গাড়ীতে চড়াও আমাকে, চলো আমার বাড়ীতে।‘

 

এর পর রিমি এল বিক্রমকে নিতে। চোখবাঁধা হলেও বিক্রম হাত দিয়ে ছুঁতে চাইল তার হাত-ধরা নারীটিকে, শুঁকতে চাইল তার গায়ের গন্ধ। রিমি এক ধাক্কায় ঘুরিয়ে দিল ওর মুণ্ডুটা, টেনে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল; ব’ললো, ‘আমি ঘরের ভেতরে কথা বলিনি যাতে কেউ বুঝতে না পারে– কে কাকে নিয়ে যাচ্ছে। চিনেছো নিশ্চয় এতক্ষণে; আমি রিমি, তুমি আমার এক বছরের গোলাম। তোমার গাড়ীতে চড়িয়ে আমাকে নিয়ে চলো আমার বাড়ী।‘

 

জ্যানেট যখন এসে হাত ধরলো, চোখবাঁধা তির্য্যক ভদ্রভাবে তাকে অনুসরণ ক’রলো। কোন্ নারী তার এক বছরের মালকিন হবে তা নিয়ে সে চিন্তিত নয়। সে নিজেকে উৎসর্গ ক’রবে একটি নারীর কাছে এক বছরের জন্যে, সপ্তাহে সাতদিন, প্রতিদিন ২৪ঘন্টা।

 

সল্মা শান্তভাবে এসে কিরীটির হাত ধরলো এবং কিরীটিকে নিয়ে গেলো ওর গাড়ীর দিকে। সল্মা যখন কিরীটির চোখের বাঁধন খুলে দিল, কিরীটির চোখে পড়লো সল্মার আবায়া, পুরো কাপড় দিয়ে ঢাকা সল্মা; খালি তার চোখদুটোতে আপনকরা ঘরে-ডেকে-নেওয়া হাসি; কিরীটি সল্মাকে নিয়ে গাড়ীর দিকে এগিয়ে গেলো। কিরীটি কিছুতেই ভুলতে পারছিল না ক’দিন আগে দেখা শ্রাবস্তীর কারুকার্য্য; এই এক বছরে আরও অনেকবার দেখর জন্যে উৎসুক হ’য়ে রইলো।

 

চামেলী যখন ঢুকলো, ঘরে তখন মাত্র একটিই চোখবাঁধা পুরুষ– অ্যাস্টন। চামেলী তার চোখের পটি খুলে দিল, তাকাল তার চোখের দিকে; হঠাৎ যেন শুভদৃষ্টি। চামেলী ব’ললো,- ‘তুমি খুব ভালো মানুষ, জ্যানেটের স্বামী হিসেবে এতদিন দেখেছি তোমাকে। এর পরের একটা বছর তুমি আমার সঙ্গে থাকবে, জ্যানেটের থেকে দূরে। ক’দিন বাদেই আমার একটা বুক কেটে বাদ দিতে হবে যতে ক্যানসার আর না ছড়ায়। পারবে ভালবাসতে এই এক-বুকের মেয়েমানুষটকে?’

‘বুক কটা তাতে কিছু এসে যায় না, মানুষ তো একটাই, মন ভরাতে পারি কিনা দেখি। বরাবর ঈর্ষা করে এসেছি চঞ্চলকে, তোমার মত স্ত্রী পেয়েছে বলে। এক বছরের জন্যে অন্ততঃ ভালবাসবে আমাকে!’– অ্যাস্টন চামেলীকে কাছে নিয়ে গালে চুমু খেলো। প্রায় এক ঘন্টা ধরে দুজনে দুজনকে দেখলো, কথা ব’ললো; তারপর চললো অ্যাস্টনের গাড়ীর দিকে, চামেলীর বাড়ীতে যাবার জন্যে। চামেলীকে পাশে রেখে গাড়ী চালাতে চালাতে অ্যাস্টন বললো,- ‘দেখ, ‘মাই’ কথাটা উচ্চারণ ক’রলে মনে হয় আমরা অশ্লীল ভাষায় কথা বলছি; অথচ থাইল্যান্ডে কেউ যদি বলে ‘মাই খাও চাই’ বা ‘মাই কাও যাই’ তার মানে হ’লো– ‘আমি বুঝতে পারছি না’।‘

চামেলী কোন জবাব দেওয়ার আগেই অ্যাস্টন গেয়ে উঠলো, -

‘গাঁয়ের ভাষাতেই বলতে তোমায় চাই,

এক-মাই মেয়ে, তুলনা কোথাও নাই।

মধুভরা মিষ্টি তুমি একটি মাই নিয়ে,

মন দিয়ে মন ভোলালে- মনের মত মেয়ে।

এক বছর আমার সঙ্গে থাকো এখন এক-মাই,

ভরে দেবো রূপ তোমার, করবো দুই-মাই।‘

‘মারবো তোমাকে, অ্যাস্টন।‘– ব’ললো চামেলী।

অ্যাস্টন ব’ললো,- ‘দেখো না দুজনে মিলে কি না পারি, একবছর তোমাকে নিয়ে ঘর ক’রি।‘

এক ট্যুরে অ্যাস্টন চামেলীর সঙ্গে দেখে এল ওর জন্মভূমি কামারপুকুর; থাকলো কিছুদিন চামেলীর বাবা-মায়ের সঙ্গে। অ্যাস্টনকে ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে পরিচয় করাতে সমস্যা হচ্ছিল চামেলীর; ওঁরা মেনে নিতে পারছিলেন না যে অ্যাস্টন-চামেলী পরস্পরকে বিয়ে না করেও একসঙ্গে রয়েছে, অথচ চামেলীর বিয়ে করা স্বামী চঞ্চল রয়েছে পরস্ত্রী সুভদ্রার সঙ্গে, আর অ্যাস্টনের স্ত্রী জ্যানেট রয়েছে পরপুরুষ তির্য্যকের সঙ্গে। তবু কদিন থাকার পরে চামেলী যখন জিগ্যেস ক’রলো ওর বাবা-মাকে, অ্যাস্টনকে ওদের জামাই হিসেবে কেমন লাগবে, ওরা কিছু ব’লতে পারলেন না, কেবল একটু মৃদু হাসলেন। অ্যাস্টন সহজেই জিতে নেয় মানুষের আস্থা, এমনকি হৃদয়ও।

         

এক বছরের জন্যে সঙ্গীবদলের খেলায় অনেকটাই মানিয়ে নেবার দরকার পড়ছিল; বিশেষতঃ সন্তান-সন্ততিদের জন্যে। সন্তান-সন্ততিরা রয়ে গেল একই বাড়ীতে, তাদের মায়ের সঙ্গে। পুরুষদের অভ্যস্ত হ’তে হ’ল শুধু অন্য সঙ্গিনীর সঙ্গে নয়, দিন কাটাতে হ’লো অন্য বাড়ীতে, সম্পর্ক গড়তে হ’লো সঙ্গিনীর সন্তানের সঙ্গে।

কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ পুরুষই বছরের শেষে ফিরে গেল তাদের আইনসঙ্গত স্ত্রীদের কাছে। চামেলী এবং অ্যাস্টন একে অপরকে এক বছরের জন্য এত পছন্দ করেছে যে তারা আর ফিরে গেল না তাদের আইনসঙ্গত জীবনসঙ্গীদের কাছে; তারা বিচ্ছিন্ন রয়ে গেল জীবনসঙ্গীদের থেকে।

আগে চঞ্চলের সঙ্গে যে ফ্ল্যাটে থাকতো, সেই ফ্ল্যাটেই রয়ে গেল চামেলী, সঙ্গে অ্যাস্টন আর বিশু; অ্যাস্টনের সঙ্গে থাকার সময়েই বিশুর জন্ম হ’য়েছিল। বিশু, অ্যাস্টন কিংবা চঞ্চল কেউই কখনও জানতো না যে বিশুর জন্ম বিক্রমের শুক্র অর্থাৎ স্পার্ম থেকে। অ্যাস্টন এবং চামেলী ভেবে দেখলো  চামেলী এবং/অথবা বিশু অ্যাস্টনের পদবী গ্রহণ করবে কিনা; তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে পদবী পরিবর্ত্তন এখন না করলেও চলবে, বিশুর রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার অ্যাস্টন নেবে চঞ্চলের কাছ থেকে। আশা করা যায়, অ্যাস্টন ও চামেলী এখন থেকে সারা জীবন একসঙ্গেই থাকবে।

চঞ্চল এবং জ্যানেট একে অপরকে বিয়ে করার কথা ভাবেনি কখনও। তারা সঙ্গীবদলের খেলায় কখনও একসঙ্গে থাকেনি,  তারা কখনও তাদের পরিণীত সহযোগীদের হারাতে চায় নি। কিন্তু, এখন দুজনের একসঙ্গে থাকাটাই সমস্যার সহজ সমাধান। তারা ঠিক ক’রলো জ্যানেটের বাড়ীতে দুজনে বন্ধু হিসেবে থাকবে।

সুভদ্রা চঞ্চলের সঙ্গে এক বছর কাটানোর পরে আশ্চর্য্য হলো চামেলীর বোকামিতে; যৌন ক্রিয়াকর্ম্মে চঞ্চল সবচাইতে দক্ষ খেলোয়াড়; এরকম খেলোয়াড়কে কোনো নারীই হাতছাড়া করতে চায় না। সে ভাবলো চঞ্চলের এত গুণের কথা চামেলী, জ্যানেট বা অন্য কাউকে না জানানোই ভালো, কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে ওকে নিয়ে। তাই সুভদ্রা চঞ্চলকে অনুরোধ ক’রলো ওর সঙ্গে থেকে যেতে; এতে জ্যানেট আর কিরীটি দুজনেই খুশী, ওরা একসঙ্গে গবেষণা চালিয়ে যাবে।

*** ***

২০২১ সালের ১৫ই অক্টোবরে বিজয়া দশমীর দিনে, ছয় দম্পতির  বারোটি মানুষ তাদের পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি বা ইনসিউরান্স লিপিবদ্ধ ক’রলো এই তালিকায়:-

বারোটি মানুষ      বর্ত্তমান পার্টনার     প্রথম বিকল্প               দ্বিতীয় বিকল্প

অ্যাস্টন               চামেলী                সল্মা                          জ্যানেট

কিরীটি                জ্যানেট                সুভদ্রা                         সল্মা

চঞ্চল                 সুভদ্রা                 চামেলী                        শৈলজা

চামেলী                অ্যাস্টন               চঞ্চল                         বিক্রম

জ্যানেট               কিরীটি                অ্যাস্টন                       তির্য্যক

তির্য্যক                রিমি                  জ্যানেট                        সুভদ্রা

বিক্রম                শৈলজা                সল্মা                          চামেলী

রহিম                 সল্মা                  শৈলজা                        রিমি

রিমি                  তির্য্যক                বিক্রম                         রহিম

শৈলজা               বিক্রম                 রহিম                         চঞ্চল

সল্মা                  রহিম                 কিরীটি                        অ্যাস্টন

সুভদ্রা                 চঞ্চল                 তির্য্যক                        কিরীটি

ছয় দম্পতির বারোটি মানুষ নিশ্চিন্ত হ’লো যে পার্টনারের মৃত্যু হ’লে তারা কেউ নিঃসঙ্গ হ’য়ে মৃত্যুর অপেক্ষা ক’রবে না। এই বিজয়াতে বিসর্জ্জনের পরে ওরা বেঁচে থাকবে প্রতিশ্রুতির ইনসিউরান্স বা আশ্বাস নিয়ে। হয়তো আরও অনেক পরিবার এদের অনুসরণ ক’রবে।

*** সমাপ্ত ***

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু