বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

হরিণ পাখি

হরিণ পাখি
হিমাংশু রায়


সবুজ দ্বীপের খাঁচার ভিতর একটা পাখি থাকতো আকাশ রংয়া শরীর, গোল গোল চোখ। দ্বীপের ফল খেত, গাছের ছায়ায় ঘুমোত নিশ্চিন্তে।
অভয়ারণ্যের একটি হরিণের সাথে তার খুব ভাব। হরিণটা সকালবেলা সূর্যের সাথে দৌড়ের প্রতিযোগিতা করে। হলুদ রঙের শরীর, পেশীবহুল শরীরে হলুদ কাল ছোপ আর মাথায় বাতাবিলেবু গাছের ডালের মত লম্বা শিং।
পাখিটা প্রতিদিন চুপটি করে একটা লাল ফল নিয়ে আসতো আর ফেলতো হরিণের মুখের সামনে, ঘুম ভাঙাতো। লাল ফল খেয়ে বুক ভরাতো হরিণটা তারপর শিংয়ে বসিয়ে গোটা জঙ্গল ঘোরাতো পাখিটাকে। পাখিটা এসময় বড়ই অলস অথবা অলস হওয়ার নাটক করে। বলে
-আমার উড়তে ভালো লাগেনা একটু দৌড়েই আকাশে ওড়ার অলসতা জাগে। আমার মাটিতে দৌঁড়াতে ভাল লাগে। নিজের পা মাটিতে রেখে দৌড়ানোর আনন্দ নিতে চাই,তোমার মত।
- হরিণটা পাখিটাকে শিংয়ে বসিয়ে এদিক ওদিক তাকায় শুকনো ঘাসে। শুকনো ঘাস নিস্পন্দ দেখে নিশ্চিত হয়। তারপর বলে
- মাটিতে পায়ে দৌড়ানো শান্তি আছে কিন্তু নিশ্চিন্তি নেই,সারাক্ষণ ইতি ইতি চাইতে হয় বিপদের শঙ্কায়। তোমার মত ডানা মেলে দিয়ে নিশ্চিন্তে হেসে ভেসে থাকার সুখ কোথায়? আমারও তোমার মত উড়তে ইচ্ছে হয়।
- কিন্তু নিজের আকাশে তো সবাই একলা আঁকড়ে ধরার মানুষ কই?আকরগুলিও আশ্রিত অবস্থায় সুন্দর।
 
ঠিক হলো যখন পাখিটা বড় হবে ডানা বড় হবে, চিলের চেয়েও বড়। একদিন সময় করে পাখিটা হরিণটাকে আকাশে উড়তে নিয়ে যাবে। হরিণটাও কথা দিয়েছিল নিজের পায়ে দৌড়ানো শেখাবে।
 
সেদিন ছিল শীতের প্রথম দিন পাখিটা ঘুম থেকে উঠেছিল দেরিতে। হরিণটা উঠেছিল ঠিক সময়মতো তবে পাখিটার জায়গায় এবার তাকে জাগিয়েছিল একটা মাংসখেকো বাঘ।মাংসখেকো বাঘ তাড়া করে হরিণটাকে। হরিণটা ছুটে পালাতে থাকে প্রাণপণে। হঠাৎ একটা ঝোপে আটকে যায় হরিণটা। মাংস খেকো বাঘ আঁচড় কাটে তার শরীরে।হলুদ শরীর লাল হয়ে আসে, হলুদ কালো ছোপের শরীরে তৈরি হয় গভীর গর্ত, রক্ত ঝরে অনর্গল।
হরিণটা চিৎকার করে ওঠে শেষবারের মতো
- পাখি তোমার ডানা কোথায়?
চিৎকার শুনে পাখিটা ছুটে আসে। বাঘটার উদ্যত থাবার সামনে সর্বান্তকরণে লড়াই করে। বাঘের রক্তিম চোখের দিকে তীব্র গতিতে ছুটে যায়।আঘাত করার চেষ্টা করে। একটা জোরালো খাবার আঘাত পাখিটা ছিটকে পড়ে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায়। একটা ডানা পঙ্গু হয়ে যায়। কিছুদূরে মাটিতে পড়ে থাকে হরিণের অবশিষ্টাংশ। বাতাবিলেবুর ডালের মত সিং, সর্বদা হাসির একপাটি দাঁত আর চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যাওয়া দুটি চোখ।
সন্ধ্যে নেমে আসে পাখিটা হরিণের দুটো খুবলে নেওয়া চোখ নিয়ে একটা ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ার চেষ্টা করে। একটা ডানা দিয়ে রক্ত পড়তে থেকে ক্রমাগত।
 
হয়তো হরিণটার আকাশ দেখার স্বাদটা মিটবে এবার আর পাখিটার মাটিতে থাকার ইচ্ছে।


"আমরা সবাই যেন এক হরিণ পাখির গল্প
মাটি পায়ে দৌড়াতে চাই, উড়তেও চাই অল্প।
ঝড় আসলে ওড়া বৃথা, বন্যা আসলে হাঁটা।
খড়কুটোর জীবন আঁকড়ে বাঁচি,একটা ডানা কাটা।
জন্ম মাটির, জীবন মাটির মৃত্যুও এক মাটি
মৃত্যুতেও জীবন হাঁটে,বৃথাই কান্নাকাটি।"

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু