বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

নিয়তি

নিয়তি

- সোহিনী  সামন্ত


বিদিশা  আর শায়নের 10 বছরের বিবাহিত জীবন l সুখে দুঃখে ভালোই কেটে যাচ্ছে l রোজ 8:30 পিএময়ের সিরিয়াল টা না দেখলে বিদিশার রাতের খাবার হজম হয় না l সবে  সিরিয়াল টা আরম্ভ হয়েছে তখনই বেলের আওয়াজ শোনা গেল l

সায়ন একজন অঙ্কন শিল্পী l ছোটবেলা থেকেই আঁকার শখ l সে এখন দক্ষ  শিল্পীদের মধ্যে একজন l সায়ন বাড়িতে ঢুকেই বিদিশার গালে একটা চুম্বন দিলো l

বিদিশা বলে উঠলো"  কি করো কি?দেখ এই সিরিয়ালের বাচ্চা টা কত সুন্দর ! কত ফুট ফুটে!"

- " সে আর বলতে l দুঃখ করোনা ভগবান চাইলে তোমার  কোল ও পূর্ণ  হবে  l"

-" তুমি ঈশ্বর বিশ্বাস করো? হঠাৎ কি হল তোমার? তুমি তো নাস্তিক!"

সায়ন কেমন যেন অপ্রতিভ হয়ে উঠলো l ভারী গলায় বলল" জানো আজ ঈশ্বর,  নিয়তি সব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে l

অখিলেশের কথা ভাবলে গা শিউরে ওঠে l

কিছুদিন আগে বিয়ে করল, দুই বছরের ছেলেও আছে l হঠাৎ শোনা গেল ট্রেন এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে l কি বলবে তুমি একে? নিয়তি? অখিলেশের মতো ছেলে হয় না l এমন ডক্টর আর কজন আছে l সংসার খালি করে চলে গেল  l আর দেশ এক অমূল্য রতন হারালো l" সায়নের চোখের জল পড়তে লাগল l অখিলেশ তার ছোটবেলার বন্ধু lপ্রচুর স্মৃতি লুকিয়ে আছে l


বিদিশা বলল "রাত বাড়ছে ডিনার করে নাও চলো  l কাল তো তোমায় দিল্লি যেতে হবে,  চলো খাবে চলো l"

পরের পরদিন দিল্লি পৌঁছে সায়নের কেমন যেন একা একা লাগছে l বিদিশা যদি চাকরিজীবী না হতো তাহলে তাকে ঠিকই নিয়ে আসতো l কিন্তু সে তো আর তার কাজ ফেলে আসতে পারে না l

"দুর্জয় দা কোথায় যাচ্ছ?  আমি খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যাচ্ছি  l একটু দাঁড়াও" বলল সায়ন

দুর্জয় হাসিমুখে এগিয়ে এসে বলল "ভাগ্যিস তুই এলি সায়ন না হলে তো আমি একা পড়ে যেতাম  l আর তুই জানিস তো দিল্লিতে পেইন্টিং এক্সিবিশন বলে কথা !  সবাই মিলে আড্ডা দেবো l "

- "আচ্ছা দাদা দেব কে দেখলে?? "

-" ধুর কাল থেকে ওকে ফোন করছি কোনো সাড়াশব্দ নেই l  কি যে হল ছেলেটার  !!ধ্যাৎ  তার ভালো লাগে না l "


দুর্জয় আর সায়ন একই হোটেলে উঠল l নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা বলতে বলতে কখন রাত হয়ে গেল l দুর্জয় আর সায়নএকটু চিন্তিত ছিল l দেব মানে তাদের বন্ধু দিব্যেন্দু বড় একজন অঙ্কন শিল্পী l বড় শিল্পী বলা চলে কারণ তার এখন অনেক নামডাক  l চড়া  দামে এখন তার ছবি বিক্রি হয়  l পরের দিন এক্সিবিশন শুরু l সায়ন এক্সিবিশনে যাওয়ার আগে তার অর্ধাঙ্গিনী কে ফোন করল l তারপর দিব্যেন্দু কে ফোন করল l দিব্যেন্দুর ফোন সুইচ অফ বলছে l  তাই তার পার্সোনাল সেক্রেটারি কে ফোন করল l ফোন করে জানা গেল যে দেব তাকে না বলে কোথায় যেন গেছে l সেও  ফোনে তাকে পায়নি  l


অগত্যা তারা  দর্শকদের সাথে পেন্টিং এর ব্যাপারে কথা বলতে লাগলো l দেখা গেল দিব্যেন্দু ছবির খুব চাহিদা তবে আসল লোকের দেখা নেই lএকজন আগন্তুক হঠাৎ বলে উঠল" আপনাদের তৃতীয় পার্টনার কই? " আগন্তুক টি একজন রোগাটে গড়নের মাঝ বয়েসী  মানুষ  l চোখে মোটা কালো চশমার ফ্রেম lতার নাকি ছবির খুব শখ lসায়নের ছবি পছন্দ হতে সে  বলে উঠল "কেয়া বাত দারুন ছবি l "এমন করে দিন টা কেটে গেল lএবার সত্যিই তাদের তৃতীয় বন্ধুর জন্য চিন্তা হতে  লাগলো l


দ্বিতীয় দিন সকালে খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে দুর্জয় কেমন চিৎকার করে উঠল "শুনছিস আর দেব বেঁচে নেই !কে যেন তার ফ্ল্যাটে মার্ডার করে চলে গেছে lমোবাইল ল্যাপটপটা ও গায়ের l"এই শুনে কেমন যেন ভিমরি খেয়ে উঠলো সায়ন l সে  বললো "সেই ছোট্ট থেকে ওকে চিনি, ওর যে শত্রু থাকতে পারে ভাবতে পারিনা l কেন যে বম্বে যেতে গেল l যত পসার তত শত্রু l কলকাতাতেই ভালো ছিল lকাকিমা নিশ্চয়ই জেনেছেন l উফ ফ্যামিলি যে কি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে !এমন সময় কারো যেন না আসে l

দুর্জয় খানিক মুষড়ে  বলল" চল ফেরা যাক আর এখানে থেকে লাভ নেই l  যতদূর পড়লাম পুলিশ কাউকে খুঁজে পায়নি l কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না l কি যে হবে কে জানে l"

-"আচ্ছা দেবের তো একটা গার্লফ্রেন্ড ছিল l  ওরা তো লিভ-ইন করত l  আজকাল যা সব হচ্ছে বুঝিনা বাবা  l মেয়েটাকে একবার ফোন করলে হয়না? "

দুর্জয় তাচ্ছিল্যভরে বললো "পরে ফোন করিস, এখন চল বাড়ি কি করে ফিরব তাই ঠিক করি l "

দুজন ফেরার টিকিট কেটে বাড়ি ফিরে এলো l বিদিশা সব শুনে কেমন যেন আনমনা হয়ে উঠলো l সায়নকে জড়িয়ে ধরে ছেলে মানুষীর স্বরে বলল "এমন কেন হয় বলতো?  নিজেদের লোক দূরে চলে যায় lএ কি নিয়তি? চলনা একবার নিশার  সাথে দেখা করে আসি l ওর সাথে আমি কথা বলব l"

নিশাকে অনেকবার ফোন করেও শায়ন ফোনে পেলো না l হতাশাগ্রস্ত হয়ে বসে পড়ল  l কিছুক্ষণ পর নিশা নিজেই ফোন করল  l কেমন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, "কি যে হয়ে গেল দাদা l কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের  বিয়ের কথা ছিল l  অফিসের কাজে বাইরে গেছিলাম l ফিরে এসে জানলাম এমন কাণ্ড l বাঁচতে ইচ্ছে করছে না দাদা l  "ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো নিশা  l হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বিদিশা নিশার সাথে কথা বলতে লাগলো l  সে নাকি এখন কোনো আশ্রমে থাকে l মেয়েটি অনাথ আবারও  সে একা হয়ে গেল l

বিদিশার সাথে নিশার আগেও  অনেকবার দেখা হয়েছে তবে তা  ক্ষনিকের দেখা ছিল l  বিদিশার মেয়েটিকে মিষ্টি আর খুব ভাল লেগেছিল l বিদিশা সায়নকে বললো " চলো একবার নিশার কাছে যাওয়া যাক l" কিছুদিনের মধ্যেই তারা নিশার   বলে দেওয়া  আশ্রমটায় পৌঁছে গেল l নিশা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আর দিব্যেন্দুর কথা বলতে লাগল l সে বলল" দিব্যেন্দুর যে শত্রু থাকতে পারে ভাবা যায় না l এত ভাল মানুষ হয়  না  l পুলিশ তো তদন্ত করে চলেছে,  তবে জানা গেছে মিস্টার খৈতান বলে একজন  অনেকগুলো ছবি দিব্যেন্দুর কাছ থেকে কিনে ছিলেন l তবে পেমেন্টটা তিনি ঠিকমত দিচ্ছিলেন না l তাই দিব্যেন্দুর সাথে তার বচসা হয় l উনি কোন ভাড়াটে খুনি দিয়ে এই কান্ডটা করিয়েছেন বলেই পুলিশ ধারণা করছে  l"

কিছুক্ষণ পর নিশা বিদিশাকে একটি আলাদা ঘরে নিয়ে গেল  l কাঁদতে  কাঁদতে  বিদিশা কে জড়িয়ে ধরে বলল "দিদি আমি  মা হতে  চলেছি l দিব্যেন্দু আর আমার বিয়ের কথা ছিল কিন্তু তা আর হলো না l একা একজনকে মানুষ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়  l তাই ভাবছি ছেলে হোক বা মেয়ে,  তোমরা যদি মানুষ করো  l দিব্যেন্দুর মাকে কিছু বলতে পারিনি l তিনি পুরনো দিনের মানুষ  l প্লিজ দিদি আমাকে না বলো না l "

কিছু মাস বাদে বিদিশাকে নিকো পার্কে একটি ছোট্ট বাচ্চার সাথে খেলতে দেখা যায় l সায়নের মুখে হাসি ফুটে আসে উজ্জ্বল দিনের হাতছানিতে l

                       সমাপ্ত




পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু