বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

প্রেম জনম

রাতে খাওয়ার পর ঘরে গিয়ে রেণুকার কোলে মাথা রাখে হৃষিক। দীর্ঘ সাত বছরের ভালোবাসা; আড়াই মাস হলো তাদের বিয়ে হয়েছে। রেণুকা জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা হৃষি, তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো?"

"হঠাৎ এই কথা?"

"বলো না?"

"পাহাড় যতটা ভালোবেসে নিজের বুকে ঝরনাকে জায়গা করে দেয়, আমি তোমাকে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসি রেণু।"

"ধুর, মোটেই না! তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তাহলে তোমার আগের জন্মের কথা মনে পড়ে না কেন?"

"উফ, আবার সেই এক কথা! আমি পারিজাত আর তুমি রুকসানা, সেটাই বলবে তো এখন?"

"আগের জন্মে তুমি এতটা স্মার্ট ছিলে না। সাদাসিধে একটা ছেলে, আমাকে খুব ভালোবাসতে।"

"প্লিজ স্টপ ইট রেণু! সাত বছর ধরে শুনে আসছি কথাগুলো। আমি এখন টায়ার্ড, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।"

হৃষিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে রেণুকা আনমনে বলে চলে, "ধুর, শোনোই না! আমার তো খুব মনে পড়ে সেইসব স্মৃতি। আগের জন্মে তুমি কত ভালো ছিলে। ছুটির সময় রোজ দাঁড়িয়ে থাকতে আমার স্কুলের অদূরে। তারপর একসাথে কত গল্প করতাম, কত সময় কাটাতাম। কেউ জানত না সেইসব কথা। আচ্ছা, তোমার ডালিম গাছটাকে মনে পড়ে? যার বুকে তুমি আমাদের দু'জনের নাম লিখে রেখেছিলে। সবার অলক্ষ্যে কেটেছিল কয়েকটা বছর। কিন্তু একদিন আমার চাচু একসাথে দেখে ফেলে আমাদের। তারপর থেকে সব কী রকম যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।" হৃষিক ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। খেয়াল করতেই অভিমানী কণ্ঠে রেণুকা বলে ওঠে, "এ কী! তুমি ঘুমিয়ে পড়লে হৃষি? খুব বাজে তুমি। আমার একটা কথাও শুনতে চাও না।"

হৃষিকের মাথার নিচে একটা বালিশ রেখে মৃদু অভিমানকে সঙ্গী করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল রেণুকা। প্রায় প্রতিদিনই দু'জনের মাঝে এইভাবে কেটে যায় নিশ্চুপ রাতগুলো। হৃষিক শুনতে চায় না, অথচ রেণুকা নিজের মনে বকবক করে চলে অনর্গল।

কয়েক মাস পরে রেণুকাকে নিয়ে হৃষিক বেড়াতে গেল কুমারডুবির মাসির বাড়িতে। স্টেশন থেকে নামতেই জায়গাটাকে কেমন যেন চেনা লাগে রেণুকার। কিছু কিছু আবার অচেনাও মনে হলো। স্টেশন থেকে রিকশা করে যেতে যেতে একটা জায়গাকে নির্দেশ করে রেণুকা হঠাৎ বলে ওঠে, "আরে, এখানে তো সেই ডালিম গাছটা ছিল! কিন্তু..."

কথাটা কানে যেতেই চালক বললেন, "ওটা কবেই ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। তা বছর বিশেক তো হবেই।"

চালকের কথায় বিস্মিত হলো হৃষিক। রেণুকাকে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, এখানে যে কোনও ডালিম গাছ ছিল সেটা তুমি কী করে জানলে রেণু? তুমি তো এর আগে এখানে আসোনি কখনও!"

"এসেছিলাম তো, আর তুমিও ছিলে আমার সাথে। তোমার মনে নেই? ডালিম গাছের গায়ে গাঁথা পেরেকে তুমি নিজের হাত কেটে আমার সিঁথিতে রক্ত এঁকে দিয়েছিলে। আর তারপরই তো ঘটল সেই ঘটনাটা।"

রেণুকার চোখমুখে কেমন একটা ভয় খেলে গেল। পাছে চালক অন‍্যকিছু ভাবতে পারে, এই ভেবে হৃষিক আর কিছুই বলতে দিল না তাকে। সেদিন রাতে শোবার সময় রেণুকা আবার বলতে লাগল, "জানো হৃষি, সেই রাতে যখন আমার সাথে দেখা করতে এসে তুমি আব্বুর নজরে পড়লে, তখন ওরা তোমাকে খুব মারধোর করেছিল। তোমাকে ওই ডালিম গাছটার সাথে বেঁধে দিয়েছিল। পরদিন সকালে তোমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়। সবকিছু জেনে আমি আর স্থির থাকতে পারিনি। রাত গভীর হলে চুপিসারে উঠে বাইরে এসে তোমার বাঁধন খুলে দিই, তোমায় পালিয়ে যেতে বলি। কিন্তু কেউ একজন সেটা দেখতে পেয়ে সবাইকে জানিয়ে দিল। আর তারপর ওরা তোমাকে... আমিও সেই ঘটনার পর নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলাম। তোমার কি সে'সব কিছুই মনে পড়ে না হৃষি?" দৃশ্যগুলো ভাবতে ভাবতে রেণুকার চোখদুটো সজল হয়ে উঠেছে।

মধুর আলিঙ্গনে তাকে জড়িয়ে ধরে হৃষিক। তারপর বলে, "আমি সত্যিই জানি না যে এ'সব আদৌ ঘটেছিল কিনা। তবে আজ না তোমার কথাগুলো অবিশ্বাস করতে মন চাইছে না রেণু। হয়তো বা ঘটেছিল! কিন্তু আমি এটা উপলব্ধি করতে পারি যে, আমাদের ভালোবাসা মাত্র সাত বছরের নয়। আরও আগে থেকে লেখা হয়েছিল আমার আর তোমার ভালোবাসার গল্পটা। কিন্তু সেটা ঠিক কবে থেকে, তা আমার মনে পড়ে না। জন্মান্তর বলে যদি সত্যিই কিছু হয়ে থাকে, তবে প্রতিটা জনমেই আমি শুধু তোমায় পেতে চাই রেণু। শুধু তোমায়..."

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু