বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

চেকমেট

"চেক।" ঘোড়াটিকে আড়াই ঘর পিছনে টানলেন অধিরাজ চ্যাটার্জি। সোজাসুজি অবস্থানে থাকা নৌকোটা প্রতিপক্ষ রাজাকে কিস্তি দিল।

নিশিকান্ত বাড়ুই চিন্তিত মুখে পরবর্তী চাল ভাবতে লাগলেন। তাঁর রাজা অন্যপক্ষের সমস্ত ঘুঁটি দ্বারা এমনভাবে আটক হয়ে রয়েছে যে রাজাকে সরানোর কোনও উপায় নেই। হয়তো আর দু-তিনটে চালের মধ্যেই তিনি কিস্তিমাত হয়ে যাবেন। আর তারপর...


একরাশ অন্ধকারময় বিস্তীর্ণ ঘরটিতে কেবল একটিমাত্র কম পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে। তার ঠিক নিচে একটা টেবিলে যত্ন করে সাজিয়ে রাখা দাবার বোর্ড। বোর্ডের ওপর মৃদু আলোটা লম্বভাবে এসে পড়েছে। টেবিলের দু'দিকে মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসে অন্ধকারের কুজ্ঝটিকায় নিজেদেরকে মিশিয়ে রেখেছেন তাঁরা। দু'জনেই কলেজ জীবনের বন্ধু। তবে কলেজে যতটা না ঘনিষ্ঠতা ছিল, একই অফিসে চাকরি করার দরুন বন্ধুত্বটা বেশ গাঢ় হয়। দু'জনের কেউই বিবাহিত জীবনের পথে পা বাড়াননি। পরিবারেও এমন কেউ নেই যে তাঁদের নিয়মিত খোঁজ রাখে। একাকীত্ব আর খামখেয়ালিপনার সংসার দু'জনের! তাই তো ষাট পেরিয়ে যাবার পরও এই বয়সে তাঁদের মনে অদ্ভুত খেয়ালটা চাপল। নিজেদের সহমতে দু'জনেই পরস্পরকে একটা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। চ্যালেঞ্জটা শুরু হবে দাবা খেলা দিয়ে, কিন্তু শেষ হওয়ার পর...


টেবিলে দাবার বোর্ডটির দুইপাশে পেপার-ওয়েট চাপানো দুটো উইল। দুটো কাগজের মূল লেখাটা এক হলেও স্বাক্ষরদুটো আলাদা।


একরকম নিরুপায় হয়েই বাড়ুইবাবু তাঁর মন্ত্রীটিকে রাজার সামনের ঘরে সরিয়ে আনলেন। যথারীতি সেটা খাওয়া পড়ল। মিস্টার চ্যাটার্জির মুখে জয়ের হাসি ফুটে উঠেছে। তবুও সামনের মানুষটির প্রতি তিনি প্রবলভাবে অবিশ্বাসী; যেকোনও মুহূর্তে মানুষটি যেন সবকিছু ওলটপালট করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু না, তিনি কিছুতেই হারতে পারেন না! নিশিকান্তবাবুর মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে অধিরাজবাবু তাঁর দিকে মদের গ্লাসটা বাড়িয়ে ধরলেন, "কি ভায়া, একটু পরেই তো তোর স্থাবর, অস্থাবর -যা কিছু আছে সব আমার হবে। তার জন্য প্রস্তুত তো?"


দু'ঢোঁক গলায় ঢালার পর নিশিকান্তবাবু গ্লাসটাকে টেবিলে নামিয়ে রাখলেন। ক্রমশ তাঁর মুখমণ্ডলটি অলীক একটা হাসিতে ছেয়ে যাচ্ছে। ধীর-স্থির স্বরে তিনি বললেন, "থ্যাংকস মাই ডিয়ার। বাট নাউ ইউ উইল বি ফিনিশড। ইট'স কলড চেক অ্যান্ড মেট।"


কোমরে গোঁজা রিভলভারটা বের করে আচমকাই ট্রিগার চেপে দিলেন উলটোদিকের মানুষটির মাথা লক্ষ করে। নিথর শরীরটা নিমেষেই টেবিলের ওপর লুটিয়ে পড়ল। হঠাৎই নিশিকান্তবাবুর চোখ চলে যায় অধিরাজবাবুর জামার বুকপকেটের দিকে। বেরিয়ে থাকা কাগজের টুকরোটিকে হাতে নিয়ে সেটার ভাঁজ খুলতে লাগলেন তিনি। সাদা রঙের গুঁড়ো গুঁড়ো কিছু... পয়জন! তৎক্ষণাৎ তাঁর চোখ পড়ে মদের গ্লাসটার দিকে। একটু আগেই তিনি কিছুটা গলায় ঢেলেছিলেন। তাহলে কি...

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু