বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

ঝিকির ঠাকুর্দা

ঝিকি এলো প্রিয় ঠাকুর্দা-ঠাকুমার ঘরে,

সঙ্গে নিয়ে বন্ধু ইমরানকে হাত ধ’রে।

‘এখানে থাকবে ইমরান এখন থেকে’,

ব’ললো ঝিকি মিঠে হাসি নিয়ে মুখে,

তাকালো ওর ঠাকুর্দা-ঠাকুমার দিকে।

ঠাকুর্দা ব’ললো, ‘এ তোর নতুন চালাকি?

নতুন কাউকে এনে আমাকে দিবি ফাঁকি?

তোর ঠাকুমা আর তুই নাতনী;

আমার পেয়ারের - দুই গৃহিনী;

হঠাৎ ইমরান কেন এলো শুনি?

নিয়ে যাবে বুঝি তোকে ছিনি?’

উত্তরে ঠাকুমার উজ্জ্বল হাসিমুখ,

‘বুড়ীকে নিয়ে মেটাও মনের সুখ।’

ঝিকি বলে, ‘ঠাকুর্দা, আজকাল তো মজাই মজা;

ছেলেমেয়েদের মেলামেশা নিরাপদ আর সোজা।‘

ঠাকুর্দা বলেন, ‘বলিস্ কী?

সাবধান হ’য়ে চলিস ঝিকি;

অবাধ-মিলন নেহাৎই রিস্কী..’

ঝিকি বলে, ‘জানো তুমি ঘোড়ার ডিম;

বার ক’রে নিয়েছি যতো আমার ডিম;

জমা রেখেছি হাসপাতালের হিমঘরে;

বন্ধ্যা আমি যাই বেপরোয়া মজা ক’রে;

ইমরানও নির্বীজ আমারই মতন;

ঠাণ্ডাঘরে তার যৌবনের সব ধন;

যদি কারুর সঙ্গে সন্তান আমি চাই,

বীজ আর ডিমের IVF মিলন ঘটাই।

তোমার ঔরসেও কেউ পেতে পারে IVF সন্তান,

যদি থাকে ইচ্ছে তাহার আর তোমার অবদান।‘

হাসিমুখ ঠাকুর্দা বললো নাড়িয়ে মাথা, ,

‘থামা ঝিকি, তোর যত জ্ঞানের কথা;

এবার তোমার কথা বলো, ইমরান,‘

‘২০৩০-এর মধ্যেই হবে অভিযান,’

দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে বললো ইমরান,

‘জোর চলছে মঙ্গলগ্রহে যাবার প্ল্যান,

বিজ্ঞানীরা ক’রছে খুব গবেষণা,

ওখানে গিয়ে বাঁচা যাবে কিনা;

মিলেছে হদিশ- জল এবং নুনের;

সিওটু থেকে বানানো অক্সিজেনের;

এই যাত্রায় মুসলিমদের নেই ঠাঁই,

পরিচয় মোর গোপন রাথতে চাই।‘

এইটুকু ব’লে ইমরান ক’রলো ইতস্ততঃ;

ঝিকি ব’ললো, ‘থাক্ ওকথা আপাততঃ।‘

ঠাকুর্দা বলেন, ‘বল্ না ঝিকি সোজা কথায়;

লুটে এনে ইমরানকে হিন্দু ক’রবি হেথায়।‘

ঝিকি বলে,, ‘আনিনি লুটে হেথায়,

এসেছে ও ওর নিজেরই ইচ্ছায়;

হেথা পেয়িং গেস্ট হবার অভিপ্রায়।‘

‘আমাদের সময় খালি মেয়েরাই হোত লুট;’

ঠাকুর্দা বলেন, ‘এখন ছেলেরাও না পায় ছুট।‘

শুরু করলেন ঠাকুর্দা জীবনের গল্প;

অনেকটা সত্যি, হয়তো মিথ্যে অল্প।

*** *** ***

‘আমাদের যুগ ছিল একান্তই পুরুষপ্রধান,

মেয়ে লুট ক’রে বিয়ের ছিল তখন বিধান;

পরস্পরকে দেখেশুনে ভালো না বেসে,

লোভ চেপে,  ঠোঁট বেঁকিয়ে মৃদু হেসে, 

ভালবাসার নাটক ক’রে এযুগের মতন,

বিয়ের প্রস্তাব ক’রতো না কেউ তখন।

পাত্র-পাত্রীর আয়, রূপ, গুণ, বংশ-পরিচয়

আর যৌতুকের ওজন,

ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেবার জন্যে দেখতো

না বাবা, মা, গুরুজন; 

বিয়ের বয়স হওয়ার পর প্রতিটি জোয়ান ছেলে,

সংসার খরচ চালানোর মোটামুটি সঙ্গতি হ’লে,

আসতো একটি মেয়েকে সুযোগমত লুটে নিয়ে;

লুটে আনা মেয়েকেই খুশী মনে ক’রতো বিয়ে;

লুটে আনা মেয়ের দায়িত্ব নিতো লুটেরা স্বামী,

মেয়ের বাবা-মার কাছে চাইতো না কিছু দামী।

*

‘মেয়ে পরের ধন’, মেয়ে জন্মালেই বাবা-মা বলতো,

যতদিন কেউ লুটে না নেয়, ঘরের মধ্যে পালতো;

মেয়ে লুট করা যেহেতু বেআইনী বা বেইমানী নয়,

বাবা-মার চোখের সামনে মেয়ে অনায়াসে লুট হয়;

যদি কোন বিয়ের বয়সী ছেলে এসে জোর ক’রে,

বিয়ে ক’রবে ব’লে কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে যায় ধ’রে,

লুটেরাটিকে কোনোভাবেই বাবা-মা বাধা না দেবে,

সসম্মানে তাকে প্রিয় জামাই হিসেবে মেনে নেবে।

*

সে যুগের মেয়েরাও চলতো তখনকার ঐতিহ্য মেনে;

লুট হবার জন্যেই জন্ম একথা জানতো মনে- প্রাণে;

এই নিয়ে সূত্রপাত রঙবেরঙের রপকথার,

শিহরণে ঘুম আসতো খুকুমণি ও খোকার।

ঠাকুরের কাছে মানত ক’রতো সব ঘরের মেয়ে,

সুন্দর সুস্থ কেউ যেন ভালবেসে যায় লুটে নিয়ে,

যাওয়ারর আগে বয়স যেন না যায় খুব বেশী হ’য়ে;

আরো ভালো হয়, পাড়ার জানাশোনা ছেলে হ’লে,

বাবা-মার কাছাকাছি আদরে থাকা যাবে তাহ’লে;

ছেলেরাও নজর রাখতো সুন্দরী স্বাস্থ্যবতীদের উপর,

বাইরের ছেলেদের ঢুকতে দিত না পাড়ার ভিতর।

আমি তখন ঝামাপুকুরের মাস্তান,

ক’রেছি শুরু খুলতে চোখ-কান;

মাসখানেক হ’লো জুটেছে একটা চাকরী;

ভাবলাম এইবার একটা মেয়ে লুট করি;

পাতে নেবার মতো ছিল যে-কটা পাড়ার মেয়ে,

পাড়ার দাদারা তুলেছে যে-যার ঘরে লুটে নিয়ে;

আমাদের জন্য যে কয়েকটা মেয়ে আছে পড়ে,

কুৎসিৎ কদাকার তারা কেবলই ঝগড়া করে।

তখন চড়কের মেলা বসেছে পদ্মপুকুরের ধারে;

ওখানে সব পাড়ার ছেলেমেয়েরাই যেতে পারে।

জানো-তো; কিরীটি আমার নাম, অর্থাৎ অর্জ্জুন

গাণ্ডীবধারী পাণ্ডবের মতোই সকল রণে নিপুণ;

আমার সাকরেদ দুই বন্ধু, পাড়ার ছেলে –

মোহিত আর শ্যামলকে ফেললাম ব’লে,

‘চল, তিনজনে চড়কের মেলা থেকে,

তুলে নিয়ে আসি সুশ্রী তিন মেয়েকে;

ভবানীপুরের মেয়েদের দেখে লাগে বড় লোভ,

কিন্তু কাছে ঘেঁসতে দেয় না ওখানকার লোক;

এছাড়া অন্য পাড়ার মেয়েদেরও দেখা পাবো।

তিনজনে মিলে শিকারগুলোকে কব্জা ক’রবো।‘

মোহিত একটু ভালো মানুষ; ভয়ে ভয়ে ব’ললো –

‘দ্যাখ, ঠ্যাঙানি দিতে পারে ওখানের ছেলেগুলো;

এছাড়া পুরোপুরি তিনটে মেয়ে যদি না পাই;

কী-রকম ক’রে তখন বাঁটোয়ারা হবে ভাই?’ 

আমি বললাম, ‘মোহিত, নিশ্চিন্তে থাকিস।

পাই যদি একটা মেয়ে, তুই নিয়ে নিস্।

আমরা আবার যাবো অন্য কোনো দিনে;

বিয়ে ক’রবো ভাগ্যমতো মেয়ে লুটে এনে।

তবে প্রথম দিনে গোটা তিনটে মেয়ে পেলে

যে যার নিজের শিকার ঘরে নেবে তুলে।‘

*

ঝিকি বললো, ‘ভাবতে মেয়েরা এক একটা মাল;

মন বোঝার নেই কোনো দরকার, করো ইস্তেমাল।

এখন এসেছে সময়, দুজনের চাই সমান অধিকার;

মন বোঝা খুব দরকার; কেউ নয় মৃগয়ার শিকার।

*** সমাপ্ত ***

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু