বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

চিড়িয়াখানার চড়ুইভাতি

একবার এই বিরাট বনে আগুন লেগেছিল। বনের ছোট ছোট প্রাণীরা যত তাড়াতাড়ি পারে দৌড়ে পালিয়েছিল আগুন থেকে বাঁচার জন্যে। কাঠবিড়ালি, শিয়াল, সাপ, কচ্ছপ, খরগোশ, ইঁদুর এবং আরও অনেক প্রাণীকে তাদের নতুন আস্তানা খুঁজে বের ক’রতে হয়েছিল। ওদের মধ্যে কেউ অন্য বনে গিয়েছিল, কেউ পার্কে গিয়েছিল, আবার এদের মধ্যে কাউকে যেতে হ’য়েছিল মানুষের আঙিনায়, সেখানে নতুন আস্তানা গড়বার জন্যে।
আগুন থেকে অনেক দূরে একটা বাড়িতে তিনটি ছোটো বাচ্ছা থাকতো। এদের নাম ছিল লাল্টু, মিলি আর রুমি। এরা সবাই স্কুলে যেতো, কিন্তু সেপ্টেম্বরের এই দিনটি ছিল শনিবার। সারা সকাল খেললো ওরা। এর পর এলো দুপুরের খাবারের সময়; খিদেও পেয়েছে; বাড়ীতে গিয়ে মাকে ব’ললো, ‘এবার তো খেতে দেবে? আমরা বাড়ীর পিছনের উঠোনে ব’সে খাবো; পাশেই রয়েছে বনবাদাড়ি; এটা হবে আমাদের বনভোজন, অর্থাৎ চড়ুইভাতি।‘
মা ব’ললো, ‘তোমাদের লাঞ্চ অনেকটা ক’রে ফেলেছি; এগুলো উঠোনে নিয়ে গিয়ে চড়ুইভাতি ক’রতে পারো।’
চড়ুইভাতির আইডিয়াটা বাচ্চাদের খুব মনে ধরেছে; কিন্তু উঠোনের কোথায় ওরা ক’রবে এই চড়ুইভাতি?
ঝাউগাছের ঝোপের কাছে সবুজ ঘাসের উপর মা কম্বল বিছিয়ে দিতে ব’ললো। যখন ওরা কম্বল পেতে চড়ুইভাতির জায়গা ক’রছিলো, তখন মা কিছু শসা আর গাজরের স্টিকস, কিছু মুখরোচক পিনাট বাটার আর জেলি স্যান্ডউইচ তৈরি ক’রতে লাগলো।
চড়ুইভাতির কম্বল বিছোনোর পরে, বাচ্চারা দৌড়ে রান্নাঘরে গেল, আর মার কাছে খাবার চাইলো। মা ওদের ব’ললো, প্লেটগুলো কম্বলের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখতে, প্লেটের ওপরে গাজরের স্টিকসগুলো আর পাশে গ্লাসভরা অরেঞ্জ জুস। লাল্টু, মিলি এবং রুমি এগুলো যত্ন ক’রে কম্বলের কাছে সাজিয়ে রাখলো।
তারপর বাচ্ছারা দৌড়ে রান্নাঘরে ফিরে গেল আর মাকে ব’ললো, ‘বলো আর কি নিয়ে যাবো?’
তখন মা ব’ললো, ‘আমি এখন তোমাদের জন্য শসা স্টিকগুলো কেটেছি - এগুলো চড়ুইভাতির কম্বলে নিয়ে যাও।" তাই তিনটি বাচ্ছা দৌড়ে বেরিয়ে গেল ওদের প্লেটে শসা স্টিক রাখার জন্যে।
 
শসা স্টিক রাখার জন্যে যখন বাচ্ছারা কম্বলের কাছে পৌঁছলো, তখন ওরা দেখলো গাজরের স্টিকগুলো প্লেটে নেই। মিলি ব’ললো, ‘কেউ হয়তো মজা ক’রছে আমাদের সঙ্গে। এবার শসা স্টিকগুলো এখানে রেখে যাবো। দেখি কি হয়!’
তারপরে ওরা আবার দৌড়ে মায়ের কাছে ফিরে গেল। মা ততক্ষণে চিনাবাদামের মাখন আর জেলি স্যান্ডউইচ তৈরি ক’রে ফেলেছে।
বাচ্ছারা মাকে ব’ললো যে, গাজরের স্টিকগুলো প্লেট থেকে চুরি হ’য়ে গেছে।
মা ব’ললো, ‘তোরা ইয়ারকি মা’রছিস!’
বাচ্ছারা ব’ললো, ‘চলো - তোমাকে দেখাবো!’
মা ওদের সাথে গেল চড়ুইভাতির কম্বল দেখতে। কিন্তু এখন, শুধু গাজরের স্টিকগুলো নয়, শসা স্টিকগুলোও হারিয়ে গেছে!
মা ব’ললো, ‘হয়তো তোমাদের পাড়ার কেউ এগুলো লুকিয়ে রেখেছে তোমাদের বোকা বানানোর জন্যে।‘
একথা শুনে সবাই ছড়িয়ে পড়লো, আর গাছ, ঝোপ, ইত্যাদি সব জায়গায় খুঁজে দেখলো। দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা না পেলো গাজর বা শসা স্টিকগুলো, না দেখলো লুকিয়ে থাকা কাউকে।
অবশেষে মা ব’ললো, ‘আচ্ছা, তোমাদের ড্রিঙ্কস এখনও এখানে রয়েছে। চলো তোমার স্যান্ডউইচগুলো নিয়ে আসি। ওগুলো এখানে ব’সে খাও, দেখা যাক্ এরপরে কি হয়।‘
তাই লাল্টু, মিলি এবং রুমি তাদের চড়ুইভাতির কম্বলে বসে তাদের স্যান্ডউইচগুলো খেয়েছিল। অবশ্যই, খেতে খেতে তারা চারপাশে তাকিয়ে তল্লাস ক’রেছিল শসা এবং গাজর চোরকে খুঁজতে।
বাচ্ছারা সবেমাত্র খাওয়া শেষ করেছে; রুমি কনকচাঁপা ঝোপের দিকে তাকিয়ে দেখলো,- একটা কিছু নড়ছে। সে মৃদুস্বরে লাল্টু এবং মিলিকে ব’ললো,, ‘হুশ্শ! ওখানে কিছু ঘোরাঘুরি করছে! দ্যাখ ঝোপটা নড়ছে?’
সবাই খুব স্থির হ’য়ে বসে রইলো, আর একটি ছোট্ট বাদামী প্রাণী ঝোপের ধারে এসে ওদের দিকে তাকালো। ওরা বুঝতে পারলো - একটি খরগোশ নিঃশব্দে ঝোপের মধ্যে ফিরে গেল।
‘আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে’, লাল্টু ব’ললো, ‘আয় আমরা আরও শসা আর গাজর নিয়ে এসে এখানে রাখি, আর দেখি খরগোশটি চুরি করে কিনা। আমরা শসা আর গাজর ঝোপের ধারে রাখবো আর জানলা থেকে দেখবো কী হয়।"
বাচ্ছারা চুপচাপ ঘরে ফিরে গেল আর মাকে ব’ললো আরও শসা ও গাজর কাটতে। বাচ্ছারা শসা ও গাজর সাবধানে ঝোপের কাছে নামিয়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে গেল। দেখতে দেখতে ছোট খরগোশটি বেরিয়ে এলো, আর শসা ও গাজর মুখে নিয়ে আবার কনকচাঁপা ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়লো। ওদের মা-ও দেখলো খরগোশটিকে, আর ব’ললো যে, আগে কখনও উঠোনে খরগোশ দেখা যায়নি; হয়তো বনে আগুন লেগেছে ব’লে খরগোশরা বেরিয়ে পড়েছে নতুন আস্তানার খোঁজে।
মা ব’ললো, ‘দ্যাখ, আমরা রোজ এই খরগোশটাকে খাওয়াতে পারি, তাহ’লে ও এখানে অনেক দিন থাকবে।‘
ঠিক তাই ক’রতে রইলো তারা। তারা প্রতিদিন বাচ্ছা খরগোশটাকে খাবার দিয়ে যেতে লাগলো। কয়েক সপ্তাহ কাটলো এইভাবে। আবহাওয়া ঠাণ্ডা হ’তে লাগলো; তারপরে শীত এলো, আর তারা খরগোশটাকে দেখতে পেতো না। তারা ঝোপের ধারে যে খাবার রেখে আসতো, তা কখনও কখনও অদৃশ্য হয়ে যেতো, আবার অনেক সময় খাবার ওখানেই থেকে যেতো। পুরো শীতকালটা তারা খরগোশটাক নিয়ে চিন্তায় রইল – ওর কি ঠান্ডা লেগেছে, ও কি ভয় পেয়ে, অন্য কোথাও চলে গেছে?
অবশেষে বসন্ত এলো। তারা প্রতিদিন খরগোশটার খোঁজ করতো। এপ্রিলের শুরুতে, ইস্টারের আগের দিন, যখন গাছে মাত্র কয়েকটি পাতা আছে, লাল্টু, মিলি এবং রুমি ঝোপের কাছে খাবার নিয়ে গিয়ে দেখলো- ছোট্ট খরগোশটি বেরিয়ে এসে খাবার ধরলো! শীতের সময় ও যেভবেই থাকুক, এখন সে সুস্থ আছে!
বাচ্চারা খরগোশটিকে নিয়মিত খাওয়াতে রইলো। একদিন তারা দেখলো খরগোশটি একা খাবার নিতে আসেনি; ওর সাথে রয়েছে চারটি বাচ্চা খরগোশ! ওরা বুঝলো যে, ওদের খরগোশটি একটি মা খরগোশ!
এর পর থেকে, লাল্টু, মিলি এবং রুমি একটি খরগোশ পরিবারকে খাওয়াতো, আর খরগোশের পরিবারটি আস্তানা ছিল কনকচাঁপা ঝোপে।
***
মার সঙ্গে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসে মোটেই ভালো লাগেনি লাল্টু, মিলি আর রুমির। ভয়ঙ্কর সিংহের চেহারা দেখেই গায়ে কাঁটা দিয়েছে আতঙ্কে। ভয়ঙ্কর বাঘের থাবাগুলো, ভয়ে খাড়া হ’য়ে যায় মাথার চুল। মিলি ব’ললো, 'মা, চলো বাড়ী ফিরে যাই'; রুমি ব’ললো, ‘মা, এখান থেকে দেখতে ভালো লাগছে না; তুমি ফটো, ভিডিয়ো তুলে নাও; বাড়ীতে গিয়ে দেখবো।'

মা ব’ললো, 'ঠিক আছে, আমরা তাড়াতাড়ি বাড়ী চলে যাব। তবে, যাওয়ার আগে, চল্ আমরা জিরাফ আর ক্যাঙ্গারু দেখে আসি।

ক্যাঙ্গারু আর জিরাফের খাঁচার কাছে গিয়ে ওরা দেখলো, ক্যাঙ্গারু আর জিরাফ খাঁচায় নেই। তারা রয়েছে এক দ্বীপে; সে দ্বীপ এক জলের বলয় দিয়ে ঘেরা আর জলের বলয়ের পরিধি এক দেওয়াল দিয়ে সুরক্ষিত।

লাল্টু, মিলি আর রুমি ক্যাঙ্গারু আর জিরাফের সঙ্গে কথা ব’লতে চায়; কিন্তু কোন্ ভাষায় কথা বলবে?  
মিলি জিজ্ঞেস ক’রলো, ‘কুকুর ঘেউ ঘেউ ক’রে কথা বলে, বেড়াল বলে মিয়াওঁ, ক্যাঙ্গারু কী করে কথা বলে?’
রুমি ব’ললো, 'ক্যাঙ্গারু ওর পা ঠুকে আওয়াজ করে, অন্য ক্যাঙ্গারুদের সতর্ক করার জন্যে; এছাড়া বাঁশী বাজানোর মতো শফ্দ ক’রে'।
লাল্টু, মিলি আর রুমি ক্যাঙ্গারুর কাছে গিয়ে পা ঠুকে জিজ্ঞেস ক’রলো, 'কেমন আছো আজ?'
ক্যাঙ্গারু দুবার লাফিয়ে তিনবার চোখ মেললো। রুমি বুঝতে পারলো ক্যাঙ্গারু কি বলেছে; ও ব’ললো, ‘ক্যাঙ্গারু খুবই দুঃখিত, কারণ তার বাচ্চা ক্যাংগ্রেট স্কুলে গেছে।’
'মা,' রুমি ব’ললো, 'চলো স্কুলে গিয়ে ক্যাংগ্রেটকে খুঁজে আসি'।
'অবশ্যই,' মা ব’ললো, 'আমাদের স্কুলটা খুঁজে বের করতে হবে। চল জিরাফের কাছে যাই।‘
জিরাফ তার কাছে আসতেই হেসে উঠলো। মিলি আর রুমির কোনো ধারণা ছিল না কিভাবে জিরাফ কথা বলে; মা প্রাণীদের উপর গুগলে অনুসন্ধান ক’রে পেয়েছিল - ঘোড়া, মুরগি, ঘুঘু, ছাগল, শূকর, বাঘ, গরু, কাক, গাধা, ব্যাঙ, হাঁস, মৌমাছি, বিড়াল, কুকুর, সিংহ, জিরাফ আর কোকিল কী কী ভাষায় কথা বলে; লাল্টু, মিলি আর রুমিও তালিম নিয়েছিল মা কাছ থেকে।

মিলি জিরাফকে জিজ্ঞেস ক’রলো, 'স্কুল কোথায় দেখিয়ে দাও. প্লীজ!'
উত্তরে জিরাফ নীচু হয়ে মাথা দিয়ে মাটি স্পর্শ ক’রলো। তার ছেলে জিরাফেটও স্কুলে গিয়েছিল। তারপর ও আবার নিজেকে লম্বা ক’রলো। লম্বা ঘাড়ের উপরে ওর ছোট্ট মাথা ঘুরিয়ে ও স্কুলের দিকে ইশারা ক’রলো চোখ দিয়ে।
চিড়িয়াখানা-স্কুলে হেঁটে গেল লাল্টু, মিলি রুমি আর ওদের মা।
ওরা দেখলো, একটি বড় হাতী ঐ স্কুলের শিক্ষক। ওর লম্বা শূঁড় দিয়ে, হাতী ওর চার ছাত্র- জিরাফেট, কাংগ্রেট এবং সিংহ ও বাঘের শাবক - লিওনেট ও টাইগ্রেটকে শেখাচ্ছিল।
 
একটি বড় ট্রামপোলিনে ছাত্ররা লাফাচ্ছিল এবং নাচছিল। ভাগ্যিস্ শিক্ষক হাতী ট্রামপোলিনে চড়েনি; তাহলে ছিঁড়ে যেতো ট্রামপোলিন।
হাতী ট্রামপোলিনের উপর একটি বল ছুঁড়ে দিচ্ছিল যাতে কোনো একজন ছাত্র বলটি ধরে শিক্ষকের দিকে ছুঁড়ে দিতে পারে।
পরে, ছাত্ররা সবাই মাটিতে নেমে ব্যায়াম করার কায়দা শিখছিল। একবার তারা সবাই তাদের পিঠে শুয়ে পড়লো আর তাদের হাত অর্থাৎ তাদের সামনের পা দিয়ে তালি দিল। এরপর তারা একই সাথে হাত ও পা দিয়ে তালি দিল।
একটু পরে ছাত্রদের প্রথমে তাদের চার পায়ে এবং তারপর তাদের হাতে অর্থাৎ তাদের সামনের পায়ে দাঁড়াতে বলা হ’য়েছিল।
লাল্টু, মিলি আর রুমি ছাত্রদের, অর্থাৎ জিরাফেট, ক্যাংগ্রেট, লিওনেট এবং টাইগ্রেটের সার্কাস দেখে খুব মজা পেয়েছিল।
এর পরের বার যখন লাল্টু, মিলি আর রুমি চিড়িয়াখানায় গিয়েছিল, তারা খাঁচায় পশুদের দেখার জন্য অনেক সময় দিয়েছিল। ওরা বারবার গেছে সেই স্কুলে, যেখানে হাতী তার ছাত্রদের পড়ায়।
এবারেও, ওরা উপভোগ করেছে পশুদের সার্কাস যখন হাতী বাঁশি দিয়ে একটি সুর বাজাচ্খিল।
এর পরে আরো একটা বড় মজা শুরু হ’লো, যখন হাতী কিছু শব্দ শেখানো শুরু ক’রলো - ওদের খাঁচার পরিচারকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য কয়েকটা প্রয়োজনীয় শব্দ শেখালো হাতী।
'যখন তোমরা তৃষ্ণার্ত এবং জল বা জুস পান ক’রতে হবে', হাতী জলের টব থেকে পান ক’রতে ক’রতে ব’ললো, - 'ব’লবে জল – জল খাবো ব’লো'।
ছাত্ররা শব্দটির পুনরাবৃত্তি ক’রলো-  ‘জল খাবো’
'যখন তোমার ক্ষুধার্ত আর কিছু চিবিয়ে খাবার দরকার', হাতী ব’ললো, - 'বলো – চিবিয়ে খাবো'।
ছাত্ররা বারবার উচ্চারণ ক’রলো- ‘চিবিয়ে খাবো।‘
'যখন তুমি ঘুমোতে চাও এবং আরাম করতে ইচ্ছুক', হাতী ব’ললো, - 'বলো - ঘুমোবো'।
ছাত্ররা শব্দটির পুনরাবৃত্তি ক’রলো – ‘ঘুমোবো’।
'যখন তোমার মনে হয় তোমার প্রস্রাব ক’রতে হবে', হাতী ব’ললো, - 'বলো – হিসি ক’রবো'।
শিক্ষার্থীরা বারবার উচ্চারণ ক’রলো - 'হিসি ক’রবো'।
'যখন তোমার মনে হয় তোমার পায়খানা ক’রতে হবে', হাতী ব’ললো, - 'বলো – হাবু ক’রবো'।
ছাত্ররা শব্দটির পুনরাবৃত্তি ক’রলো - 'হাবু ক’রবো'।
 
লাল্টু, মিলি আর রুমি শিক্ষক এবং ছাত্রদের কথা শুনেছিল; ছাত্ররা সবাই একই ভাবে ব’লছিল না।
যখন হাতী ব’ললো, 'হাবু', জিরাফেট ব’ললো, 'হাব-হা'; কাংগ্রেট ব’ললো, ‘হাগ-রে’; লিওনেট ব’ললো, ‘হাগ-বো’; এবং টাইগ্রেট ব’ললো, 'হাগগুম'।
***
এরপর থেকে লাল্টু, মিলি এবং রুমি প্রতি শনিবারে চিড়িয়াখানা-স্কুল পরিদর্শন ক’রতে যেতো; দিনে দিনে ওরা জিরাফেট, ক্যাংগ্রেট, লিওনেট, টাইগ্রেট এবং তাদের শিক্ষক হাতীর বন্ধু হ’য়ে ওঠে। হাতী এবং তার ছাত্ররা লাল্টু, মিলি এবং রুমিকে আমন্ত্রণ জানালো ডিসেম্বরের শেষ শনিবারে ওদের ক্রিসমাস পিকনিকে যোগ দেবার জন্যে।
বাড়ীতে ব্রেকফাস্ট সেরে লাল্টু, মিলি এবং রুমি চিড়িয়াখানার অফিসে রিপোর্ট ক’রলো; সেখান থেকে পিকনিকের যাত্রা শুরু হ’লো। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রতি অংশগ্রহণকারীর জন্য একটি স্পেস-স্যুটের ব্যবস্থা ক’রেছিল। লাল্টু, মিলি আর রুমি ওদের স্যুট গায়ে চড়িয়েছিল; জিরাফেট, ক্যাংগ্রেট, লিওনেট, টাইগ্রেট আর তাদের শিক্ষক হাতীও তাই করেছিল। তারা সবাই একটি খুব বড় বাসে উঠেছিল, যেটি রাস্তার উপর দিয়ে উড়ে যেতে পারে। স্পেস স্যুটগুলি প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে রক্ষা করার জন্য বর্মের মতো ডিজাইন করা হয়েছিল, পাছে এই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ পিকনিকের সময় বা পিকনিক স্পটে যাত্রার সময় হিংস্র হ’য়ে পড়ে।

 
পিকনিক স্পটটি সব অংশগ্রহণকারীদেরই পছন্দ হ’য়েছিল। এটি পশুদের খেলার মাঠ যেখানে বন্য প্রাণীরা প্রতিদিন ঘুরে বেড়াতো; কিন্তু এই দিনে হিংস্র প্রাণীদের অন্য বনে স্থানান্তরিত করা হ’য়েছিল যাতে চিড়িয়াখানা-স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে মিলে মিশে খেলতে পারে।
 
রোদের আলোয় ভরা ডিসেম্বরের শেষ শনিবারের সকালে দুটি ছোট ছোট ইঁদুর, কিট্টু আর মূষিন, ঠিক ক’রলো পশুদের খেলার মাঠে চড়ুইভাতি ক’রবে, ঠিক যেখানে চিড়িয়াখানার শিক্ষার্থীরাও গেছিল পিকনিক ক’রতে।
ছোট ইঁদুরদুটি আমন্ত্রণ জানালো ওদের সমস্ত বন্ধুদের। ওদের বন্ধুরা- কুকুর ম্যাক্স, জিরাফ চিতোট, বিড়াল হুলো আর খরগোস রাবিতো খুব খুশী হয়েছিল কিট্টুর আমন্ত্রণ পেয়ে। 
মূষিন কিট্টুর থেকেও ছোট; কিন্তু মূষিনই পিকনিকের জন্য বেক করা খাবার প্যাক ক’রেছিল। প্যাকে ছিল গাজরের পিঠে, পনীরের কেক আর কুচি কুচি করা গাছের পাতা। হুলো বিড়ালের জন্য কোন খাবার ছিল না ব’লে, কিট্টু নদীতে গেলো কিছু মাছ ধরতে। মাছ ধরে মাঠে ফিরে আসার পর কিট্টু মূষিনকে সাহায্য ক’রলো সব খাবর ঝুড়িতে ভরে তাদের পনীরের গাড়িতে রাখতে। অবশেষে তারা পৌঁছলো পশুদের খেলার মাঠে। কুকুর ম্যাক্স আগেই ওখানে পৌঁছে গেছিল; অন্য বন্ধুরা ছিল তখন আসার পথে।
 
‘ম্যাক্স, তুমি কি গাজরের কেক খাবে?’ কিট্টু জিগ্যেস ক’রলো।
‘হ্যাঁ, আবশ্যই খাবো‘, ম্যাক্স উত্তর দিল। ম্যাক্স কেকে কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য বন্ধুরাও এসে গেলো। পশুদের খেলার মাঠটি ভ’রে গেলো নানা প্রাণীদের সমাবেশে; দেখা গেলো বানর মশাইকেও।
মূষিন ফিসফিস করে কিট্টুকে ব’ললো, ‘মনে আছে? আগের বার যখন আমরা এই মাঠে এসেছিলাম, বানর মশাই আমাদের গাড়ি চুরি ক’রেছিল?’ কিট্টু আর মূষিন ঠিক ক’রলো,- ওরা বানর মশাইএর ওপর নজর রাখবে।
কিট্টু আর মূষিন দেখলো, বানর মশাই একটা গাছে উঠে, সব প্রাণীর দিকে তাকাচ্ছে। হুলো বিড়াল মূষিন আর কিট্টুর কাছে আসতেই, বানর মশাই নিঃশব্দে ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, খাবারের ঝুড়ি কেড়ে নিলো। চিতোট জিরাফ ঝুড়ি থেকে গ্রেট করা গাছের পাতা নিতে গিয়ে দেখলো,- ঝুড়িটি সেখানে নেই।

‘কিট্টু, মূষিন, খাবারের ঝুড়ি হারিয়ে গেছে’, চিতোট জিরাফ চেঁচিয়ে উঠলো। কিট্টু এবং মূষিন দৌড়ে চিতোট জিরাফের কাছে গিয়ে দেখলো, ও ঠিক আছে।

‘বানর মশাই’, মূষিন ধমক দিলো। মূষিন, কিট্টু আর ওদের সমস্ত প্রাণী বন্ধুরা ছুটে গেল বানর মশাইএর দিকে, যাতে বানর মশাই ওদের খাবার না খেতে পারে।

‘তোমাদের খাবার নিয়েছি ব’লে আমি দুঃখিত; আমার খুব খিদে পেয়েছিল, আর খাবারও খুবই সুস্বাদু’, বানর মশাই ব’ললো। মূষিন উত্তরে ব’ললো, ‘তুমি আমাদের জিজ্ঞেস ক’রতে পারতে’।

কিট্টু ব’ললো, ‘তুমি সবসময় আমাদের সমস্যায় ফেলছো বানর মশাই’।

লোভী বানর মশাই তখন ব’ললো, ‘আমি দুঃখিত, কিট্টু ও মূষিন তোমাদের কাছে কোন কলা আছে কি?’

মূষিন ব’ললো, ‘দেখি, জোগাড় ক’রতে পারলে দেবো।‘

বানর মশাই খেলার মাঠের দিকে দৌড়ে গেলো, আর গাছে উঠে চিৎকার করে ব’ললো "চলো সবাই একসাথে খেলি"। সমস্ত প্রাণী বন্ধুরা ‘ওয়াও’ ব’লে ছুটে এসেছিল।
***
পিকনিক স্পটে খেলার জন্যে অনেক প্রাণী ছিল; হরিণ পিকনিকের গানে নাচছিল, আর বানররা গাছে দোল খাচ্ছিল। চিড়িয়াখানা-স্কুলের ছাত্ররা বনের প্রাণীদের কাছে তাদের সার্কাসের ক্যায়দা দেখাচ্ছিল। তারা গাছে উঠেছিল, দুই পায়ে হেঁটেছিল, একসঙ্গে ব’সে গল্পগুজব ক’রেছিল। তারা তাদের স্পেস স্যুট পরে বড় পুকুরে সাঁতার কেটেছিল।
সকলের এত মজা হয়েছিল যে তারা ভুলে গেছিল দুপুরে লাঞ্চ খাওয়ার কথা। এই বনভোজনে শিক্ষার্থীদের খাবার রান্না ক’রতে হয়নি; প্রত্যেকের পছন্দমতো দুপুরের খাবারের প্যাক সেখানে পৌঁছে গেছিল। তারা সবাই ‘খাবো’ বলে খাবারের জন্য ছুটে গেল। লাল্টু, মিলি এবং রুমির প্যাকেটে পরোটা, পাস্তা আর সসেজ ছিল।
 
জমকালো মধ্যাহ্নভোজের পর, কিছু ছাত্র হাঁপাতে শুরু করে, যখন তাদের বেশিরভাগই বনে খেলা ক’রে এবং দৌড়ানো দিয়ে এই দিনটা শেষ ক’রতে চাইলো।
ঠিক এই সময়ে, কেউ খেয়াল ক’রলো টাইগ্রেট নিখোঁজ। সমস্ত ছাত্র টাইগ্রেটকে খুঁজতে শুরু ক’রলো, কিন্তু এত বিশাল বনে তাকে খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না। হাতী বলেছিল, ‘আমাদের প্রতিটি স্পেস স্যুটে জিপিএস ট্যাগ থাকা উচিত,’ কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশতঃ এমন কোনও ট্যাগ ছিল না। এমনকি স্পেস স্যুটে কিছু ট্র্যাকিং মেকানিজম পাওয়া গেলেও, পিকনিক পার্টি স্পেস স্যুটগুলি ট্র্যাক করার জন্য কোনও সরঞ্জাম নিয়ে আসেনি।
 যখন সবাই ভাবছিল টাইগ্রেটকে ফিরিয়ে আনার জন্য কী করা যেতে পারে, তখন মিলি ব’ললো যে, লাঞ্চের ঠিক পরে ও টাইগ্রেটকে 'হাগগুম' ব’লতে শুনেছে। মিলির কথায় হাতী একটা বড় ক্লু পেলো; হাতী তার ছাত্রদের ব’লেছিল, বনের কোন অংশটি টয়লেট হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সমস্ত চিড়িয়াখানা-স্কুলের ছাত্ররা সেই টয়লেট স্পটটিতে গেলো, আর সেখানে টাইগ্রেটকে দেখতে পেলো, টাইগ্রেট পায়খানা ক’রে স্বস্তি পেয়েছে এবং তার স্পেসসুটে ঢুকতে যাচ্ছে।

এবার চিড়িয়াখানায় ফেরার পালা। বাসের সবাই ব‘লছিল,- খুব মজাদার হ’য়েছে চড়ুইভাতি, সেই সঙ্গে মিলির প্রশংসা ক’রছিল, তার চিড়িয়াখানার ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্যে আর টাইগ্রেট কীভাবে 'হাগগুম' ব’লেছিল তা মনে রাখার জন্যে।
***সমাপ্ত***

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু