বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

নিউ-ইয়ার ইভের রাতে অশরীরী আত্মারা

পৃথিবীতে প্রত্যেকেই যদি চেষ্টা করে- প্রতি প্রতিবেশীকে খুশী রাখতে, প্রতি আত্মীয় বা বন্ধুর সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ ক’রে পরস্পরকে সফল ক’রতে এবং পারিপার্শিক প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ ক’রতে, তবে এ পৃথিবীর সবাই হবে খুশী, সবাই হবে রাজা আপন রাজত্বে। কিন্তু প্রায় প্রতি প্রাণীই স্বার্থপর হ’য়ে ওঠে, তার নিজের শরীরকে সুখী আর পরিতৃপ্ত করার জন্যে। মনে করা যাক্, অশরীরী আত্মারা আছে নশ্বর মানুষের আশেপাশে; নিজেদের শরীরকে পরিতৃপ্ত করার কোনো তাগিদ নেই তাদের; তাদের চেষ্টা প্রকৃতিকে আর প্রাণীদের ভালো রাখার। দিনের আলোয়, নশ্বর প্রাণীদের কোলাহলে দেখা যায় না বিদেহীদের কার্য্যকলাপ। তাই এই গল্পে অশরীরীর মন দিয়ে দেখা যাক মায়াবী রাতে কয়েকটি নশ্বর মানুষের সঙ্গে মিলে, সকলকে খুশী করার জন্যে বিদেহীদের প্রয়াস।

***   

নিউ-ইয়ার ইভের মায়াবী রাতে কবরস্থানে সমবেত হ’য়েছে বিদেহী আত্মারা। নিউ-ইয়ারের আত্মা ‘আগমনী’র সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মহিলা- ‘কৈকেয়ী’; জীবিতাবস্থায় আত্মীয়-স্বজনের চক্ষুশূল ছিল ‘কৈকেয়ী’। মরণোত্তর যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়ার আশায়, কবরে প্রবেশের আগে ‘কৈকেয়ী’ পরোপকারী হবার প্রতিশ্রুতি দিল। শোনা গেল, আত্মা ‘বর্ত্তমান’এর আশ্বাস- ভালো থাকুক ‘কৈকেয়ী’ ।

বিদেহী আত্মারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে অসৎ এবং হতভাগ্য মানুষদের পুনর্বাসনের জন্যে। এইভাবেই পুনর্বাসন হ’য়েছিল ‘অনিন্দ্য বোস’এর মতো এক মানুষের। ‘কৈকেয়ী’ নিউ-ইয়ারের সকালে জেগে উঠলো এবং প্রতিবেশী শিশুরা তাকে অভ্যর্থনা জানালো। কৈকেয়ী তার কুৎসিৎ মনোবৃত্তি ত্যাগ ক’রে, বাইরে শিশুদের সাথে খেলায় যোগ দিলো। ‘ব্রহ্মা’, অতীত নিউ-ইয়ারের আত্মা ‘সংস্কৃতি’ এবং অন্যান্য আত্মারা ‘কৈকেয়ী’কে স্বাগত জানাতে এলো এবং তার পুনর্বাসনের জন্য তাকে অভিনন্দন জানালো। আত্মারা তারপর নিজেদের কাজে ফিরে এলো এবং পৃথিবীকে ভালো করার জন্য শুরু ক’রলো প্রার্থনা-সঙ্গীত।

যদিও ‘বর্ত্তমান’ তার এখনকার কাজের দায়িত্ব উপভোগ করে, পার্থিব জগতে ওর মৃত্যুর পর থেকে ২০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে ও এই কাজে ব্যস্ত রয়েছে। ও দীর্ঘদিন ধরে অবসর গ্রহণের জন্য উৎসুক, কিন্তু ভাবছে, অবসরোত্তর জীবন এমনই আকর্ষণীয় হবে কিনা।
‘ব্রহ্মা’-র পাশে আত্মারা সমবেত হ’য়ে প্রস্তুত হ’লো দূরাচার দূরীকরণের পরবর্তী লক্ষ্যের জন্য। প্রথমে নজরে এলো- হোটেল ম্যানেজার কালীচরণ। বিদেহী আত্মারা হোটেলে এসে দেখেছে- কালীচরণ তার কর্ম্মচারীদের প্রহার করে। এর পরে, ‘বর্ত্তমান’ দেখলো ‘দুর্বার’কে; ‘দুর্বার’ ওর নিজের কোম্পানির সিইও- তাড়াতাড়ি কথা বলে। আত্মারা দেখলো- ‘দুর্বার’ একটি বক্তৃতা দিচ্ছে; কিন্তু শ্রোতারা ওর কথা না শুনে হৈচৈ ক’রছে। ‘দুর্বার’ চাইছে কৃত্রিম গাছের পরিবর্ত্তে পৃথিবীর মাটিতে জন্মানো গাছ ব্যবহার করা হোক্, পৃথিবীর মধ্যে বাস্তবতা নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, নিউ-ইয়ার ফিরিয়ে আনতে চায় ‘দুর্বার’। ‘দুর্বার’এর জনতার সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা দেখে ‘বর্ত্তমান’ অভিভূত হ’লো; ‘বর্ত্তমান’ ‘দুর্বার’কে সংশোধন ক’রে পাপমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলো।      
আত্মারা ‘ব্রহ্মা’-র সাথে দেখা ক’রলো, ‘ব্রহ্মা’ ‘বর্ত্তমান’কে ‘দুর্বার’এর সংশোধন করার অনুমতি দিতে অস্বীকার ক’রলো, কারণ ‘দুর্বার’এর ফাইলটিকে "অসংশোধনীয়" হিসাবে স্ট্যাম্প করা হয়েছে। তখন ‘বর্ত্তমান’ ‘ব্রহ্মা’কে একটি আল্টিমেটাম দিলো – “তাকে অবিলম্বে ‘দুর্বার’কে সাহায্য করার অনুমতি দিতে হবে, নতুবা ‘বর্ত্তমান’ অবিলম্বে তার অবসরের প্যাকেজ নিয়ে অন্য সবাইকে হতবাক করে দেবে।“
যদিও ‘ব্রহ্মা’ মনে করে ‘বর্ত্তমান’ মিথ্যে ভয় দেখাচ্ছে, তবু ‘ব্রহ্মা’ ‘বর্ত্তমান’কে অনুমতি দিলো এবং আত্মাদের ‘দুর্বার’এর দিকে এগিয়ে যেতে দিলো। আত্মারা কয়েক ঘন্টা ধরে ‘দুর্বার’এর অতীত এবং বর্তমান নিয়ে গবেষণা ক’রে জেনেছিল যে ‘দুর্বার’এর একটি ছোট ভাই আছে, যার নাম ‘নির্ভর’; ‘নির্ভর’ আর ‘দুর্বার’এর দিদি ‘দৃষ্টি’ এক বছর আগে মারা গেছেন। ‘নির্ভর’ ওদের দিদির মেয়ে অর্থাৎ ওদের ভাগ্নি ‘দোয়েল’এর দেখাশোনা ক’রছে। ‘দুর্বার’এর জীবনদর্শন ও তার বিশ্বাস অনুযায়ী, কোনো মানুষ বদলায় না।
নিউ-ইয়ারের ঠিক আগে, ‘নির্ভর’ এবং ‘দোয়েল’ ‘দুর্বার’এর সঙ্গে, ওর কর্ম্মক্ষেত্রে, দেখা ক’রতে এলো; কারণ ‘দোয়েল’ স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি হবার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক’রছে, তাই ‘দুর্বার’এর পরামর্শ চায়। ‘বর্ত্তমান’ এই দৃশ্যের সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত ছিল। ‘দুর্বার’ ‘দোয়েল’কে উপদেশ দিল– নিজেকে "জনগণের মহিলা" হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভোটারদের পাশে দাঁড়াতে, এবং তার প্রতিপক্ষ ‘রঞ্জন’, যে আসলে সৎ ও কাজের ছেলে, তার বদনাম ক’রতে। ‘দুর্বার’ তার সহকারী ‘চারুলতা’কে ‘রঞ্জন’এর খুঁত ধরার গবেষণায় নিয়োগ ক’রলো; ‘চারুলতা’ ‘রঞ্জন’এর একটি পুরানো TikTok ভিডিও দেখতে পেলো,- ‘রঞ্জন’এর বাবা-মা গৃহহীনদের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা চালান, সেখানে গৃহহীনদের সাথে খাবার ভাগ করে নিতে ‘রঞ্জন’ অনিচ্ছুক। কিন্তু, ‘চারুলতা’ চায় না সৎ যুবক ‘রঞ্জন’এর জীবন নষ্ট ক’রে দিতে, বরং সে ছেড়ে দেবে ‘দুর্বার’এর চাকরি। ‘বর্ত্তমান’ ‘চারুলতা’র কাছে এসে দেখা দিলো ওর সাথে কথা বলার জন্যে। ‘বর্ত্তমান’ ওর পূর্ব্ব-জীবনের স্মৃতি ‘চারুলতা’র কাছে গোপন রাখার চেষ্টা ক’রলো, কারণ পূর্ব্ব-জীবনে ‘বর্ত্তমান’এর নাম ছিল ‘অনিন্দ্য-বোস’; ‘চারুলতা’ ছিল ‘অনিন্দ্য-বোস’এর বান্ধবী। ‘বর্ত্তমান’ ব’ললো যে, ও ‘দুর্বার’কে ভালো হ’তে সাহায্য করার চেষ্টায় আছে; ‘চারুলতা’ হেসে ব’ললো যে, ওর বিশ্বাস- ‘দুর্বার’এর মতো লোককে ভালো করা যায় না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও, ‘চারুলতা’ ‘দুর্বার’ এবং ‘দোয়েল’কে ‘রঞ্জন’এর ভিডিও সম্পর্কে ব’ললো, যাতে ‘দোয়েল’ এটি ‘রঞ্জন’এর বিরুদ্ধে ব্যবহার ক’রতে পারে।
‘দুর্বার’ নিউ-ইয়ারের প্রাক্কালে একটি পার্টির আয়োজন ক’রলো। আত্মারা ঠিক ক’রলো- কে কোথায় আশ্রয় নেবে। ‘ব্রহ্মা’ দেখা দিলো বৃদ্ধের বেশে; ‘বর্ত্তমান’এর সংসর্গ ‘দুর্বার’এর জীবনে কী পরিবর্ত্তন আনবে, তারই আভাস ‘দুর্বার’কে দিতে চেয়েছিল ‘ব্রহ্মা’। কিন্তু ‘দুর্বার’ ‘ব্রহ্মা’কে তার কথা শেষ করতে দিলো না, কারণ ‘দুর্বার’ অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ক’রলো। ‘সংস্কৃতি’ এসে ‘দুর্বার’কে ডেকে নিয়ে গেলো ‘দুর্বার’এর শৈশবের বাড়িতে। ‘সংস্কৃতি’ আর ‘দুর্বার’ পরস্পরের সঙ্গে অনেক স্মৃতিচারণ ক’রলো এবং একসাথে ঘুমিয়ে পড়লো।
‘বর্ত্তমান’ সচেষ্ট হ’য়ে ‘দুর্বার’কে তার অতীত জীবনের পুনরাভিনয় করালো, যাতে ‘দুর্বার’ বুঝতে পারে কখন কি-ক’রে ওর জীবনে নেমে এসেছিল পাপের কালো ছায়া। ওরা ‘দুর্বার’এর শৈশব থেকে একটি নিউ-ইয়ারের ফ্ল্যাশব্যাক দেখেছিল, যেখানে ‘দুর্বার’এর মাতাল মা ‘গান্ধারী’ ওকে একটি কুকুরকে খাওয়ানোর বাটি দিয়েছিল; বাটি দেখে ‘দুর্বার’ মনে করেছিল,- ও নিউ-ইয়ারের জন্যে একটি কুকুর পেয়েছে, কিন্তু পিছনের দরজা খোলা থাকায় কুকুরটি পালিয়ে গেছে। ‘দুর্বার’এর দিদি ‘দৃষ্টি’ বুঝতে পেরেছিল সত্যিটা, কারণ ‘দৃষ্টি’ জানতো যে ওদের মা ছলনাময়ী মিথ্যুক। কিন্তু নিষ্পাপ ছোট্ট ‘দুর্বার’ খুঁজতে বেরিয়েছিল নিউ-ইয়ারে পাওয়া কুকুরটিকে। এখন, প্রাপ্তবয়স্ক ‘দুর্বার’ ‘বর্ত্তমান’কে ব’ললো যে, তার মাকে মিথ্যাবাদী মনে করার বদলে, সে বিশ্বাস ক’রতে চেয়েছিল যে, মা তাকে একটি কুকুর দিয়েছে; কারণ সাধারণতঃ লোকেরা তাই বিশ্বাস করে, যাতে তারা খুশী হয়।
‘বর্ত্তমান’ তখন ‘দুর্বার’কে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের অতীতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ক’রলো,- সেখানে সে তার ব্যবসায়ের কাজ শুরু করার পর, ‘মীরা’ নামে একজন সহকর্মীর সাথে সম্পর্ক শুরু ক’রেছিল। ব্যাপারটা কুশ্রী হ’য়ে উঠলো যখন ‘দুর্বার’ তার ভাইবোন এবং মায়ের সাথে মলে দেখা ক’রেছিল; মা ‘গান্ধারী’ ওর বান্ধবী ‘মীরা’কে আগে থেকেই চিনতো; ওদের দুজনের সম্পর্ক ভালো ছিল না। এই সময়ে, ‘দৃষ্টি’ জানালো যে ও গর্ভবতী,- তখন ‘দোয়েল’ ছিল ওর গর্ভে। ‘মীরা’ও সন্তান চেয়েছিল; কিন্তু ‘দুর্বার’ ‘মীরা’কে বলেছিল যে, ও সন্তানের জন্য প্রস্তুত নয়; আরও  বলেছিল যে, ‘মীরা’ মা হবার যোগ্য নয়। ‘মীরা’ ‘দুর্বার’এর অক্ষমতায় বিরক্ত হ’য়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়।
‘বর্ত্তমান’ আরেকটি স্মৃতি দেখালো যে ‘দুর্বার’ একজন রাজনীতিবিদের হ’য়ে ক্যানভ্যাসিং ক’রছেন, আর বিরোধী প্রার্থীর বিরুদ্ধে নোংরা কৌশল ব্যবহার ক’রছেন, বদনাম দিয়ে কোনো মহিলার জীবন নষ্ট ক’রছেন। ‘দুর্বার’ বরখাস্ত হ’লো; তখন, ‘দুর্বার’ ‘চারুলতা’কে সাথে নিয়ে নিজের কোম্পানি খুললো, আর বসের ক্লায়েন্টদের সাথে ব্যবসা শুরু ক’রলো; শপথ নিলো ওর বসের কোম্পানিকে ধ্বংস ক’রবে। ‘বর্ত্তমান’ উপলব্ধি ক’রলো যে, ‘দুর্বার’ একজন সত্যিকারের সৎ লোকের ব্যবসা ধ্বংস ক’রতে সফল হ’য়েছিল।
‘দুর্বার’ অবিচল থাকলো, তাই ‘বর্ত্তমান’ একটি শক্তিশালী স্মৃতির আশ্রয় নিলো - ‘দুর্বার’ শেষবার যখন ‘দৃষ্টি’কে ক্যান্সারে মারা যাওয়ার সময় দেখেছিল, ও ‘দোয়েল’এর জন্য একটি উপহার নিয়ে এসেছিল, কিন্তু ‘দোয়েল’ এটি আরও গরীব বাচ্চাদের দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ‘দৃষ্টি’ ‘দুর্বার’এর কাছে কোনো আশ্বাস চাওয়ার আগে, ‘দুর্বার’ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল।
‘বর্ত্তমান’ তারপর ‘দুর্বার’কে দেখালো কি-করে আর এক অসংশোধনীয় ব্যক্তিকে আত্মারা সংশোধন ক’রেছিল, তার দৃষ্টান্ত।  ‘বর্ত্তমান’ আর ‘দুর্বার’ পৌঁছালো ১৮০০ সালের অতীতে, লন্ডনের একটি পুরোনো  শহরে। ‘বর্ত্তমান’ জানালো যে, অসংশোধনীয় ব্যক্তিটি ছিল ‘বর্ত্তমান’ নিজেই, তখন নাম ছিল ‘অনিন্দ্য-বোস’। ‘অনিন্দ্য-বোস’ যখন "শুভ বিকাল" ব’লতো, তখন আশেপাশের লোকেরা রেগে যেতো, কারণ "শুভ বিকাল" ব’লতে ওরা বুঝতো- “জাহান্নামে যাও”। ‘দুর্বার’ ‘বর্ত্তমান’কে "শুভ বিকাল" ব’লে তার ব্যক্তিগত হতাশা প্রকাশ ক’রতে উত্সাহিত ক’রলো; ‘দুর্বার’এর এই চেষ্টা কাজ ক’রেছিল ‘ব্রহ্মা’ না আসা পর্যন্ত; ‘ব্রহ্মা’ এসে ‘দুর্বার’কে তার বেডরুমে ফেরৎ পাঠালো আর ভর্ৎসনা ক’রলো ‘বর্ত্তমান’কে, তার নিজের ব্যক্তিগত স্মৃতি ‘দুর্বার’কে দেখানোর অপরাধের জন্যে।
‘দুর্বার’ তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে জেগে উঠলো,- সেখানে শুরু হবে তার পার্টি। ‘দুর্বার’এর চোখে এমন একটি আলো এসে পড়লো, যেখানে ‘বর্ত্তমান’কে দেখা গেল ওর ক্লাসিক "নিউ-ইয়ার সঙ্গীত"এর স্বরূপে। ‘বর্ত্তমান’ ‘দুর্বার’কে ব’ললো, কিভাবে ও কাজ থেকে অবসর নিয়ে একজন মরণশীল মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে ফিরে আসতে চায়। ‘বর্ত্তমান’ তারপর ‘দুর্বার’কে দেখালো, যে ‘দুর্বার’ সেখানে না থাকলেও পার্টি চলছে। ‘নির্ভর’ তার ভাইয়ের হ’য়ে কথা না বলা পর্যন্ত ‘দুর্বার’এর কর্মচারীরা তার নিন্দে ক’রছে। ‘বর্ত্তমান’ এখন ‘দুর্বার’কে দেখালো, কীভাবে ওর পুরোনো বান্ধবী ‘মীরা’ তার নিজের পরিবারের সকলকে খুশী রেখেছে; ‘দুর্বার’ চাইলে ও-ও ‘মীরা’র সঙ্গে থাকতে পারতো। যাই হোক, ‘দুর্বার’ জানে, ‘বর্ত্তমান’ ‘চারুলতা’কে পছন্দ করে; তাই ‘বর্ত্তমান’কে দেখালো, ও আবার ‘অনিন্দ্য-বোস’ হ’য়ে, ‘চারুলতা’র সাথে ওর নতুন নশ্বর জীবন কীভাবে কাটাবে।
‘বর্ত্তমান’ ‘দুর্বার’কে আরও দেখালো যে, ‘নির্ভর’এর সাথে ‘দোয়েল’ আইস-স্কেটিং করছে; অন্য দিকে ‘রঞ্জন’ তার বাবা-মাকে স্যুপ-কিচেনে সাহায্য ক’রছে। ভোট পাওয়ার জন্যে ‘রঞ্জন’ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট ক’রলো বাবার তোলা স্যুপ-কিচেনে ‘রঞ্জন’এর ফটো। ওদিকে ‘দোয়েল’ তার পুরানো TikTok পোস্ট ক’রলো, যার ফলে ছাত্ররা ‘রঞ্জন’কে প্রতারক ব’লে ব্যঙ্গ ক’রলো।
‘দুর্বার’ যখন ‘রঞ্জন’এর পরিস্থিতি নিয়ে কথা ব’ললো, তখন ‘বর্ত্তমান’ ভাবলো,- এই সুযোগ ‘দুর্বার’কে হাসপাতালের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার, যা থেকে ‘দুর্বার’ পালাতে পারবে না। ‘দুর্বার’ দেখতে বাধ্য হ’লো যে, ‘দৃষ্টি’ ওর অবর্ত্তমানে ‘দোয়েল’এর দেখাশোনা ক’রতে বলেছিল ‘দুর্বার’কে। কিন্তু ‘দুর্বার’ এর থেকে বেরিয়ে এসে ‘নির্ভর’এর উপর সে দায়িত্ব দিয়েছিল। ‘নির্ভর’ ওর দিদির জন্য কিছু ক’রতে পেরে খুশী হ’য়েছিল। ‘দুর্বার’ স্বীকার ক’রলো যে তার উচিত ছিল ‘দোয়েল’এর দেখাশোনা করা। ‘বর্ত্তমান’ ‘দুর্বার’কে নিউ-ইয়ারের আত্মা ‘আগমনী’র সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত ক’রলো, কিন্তু ‘ব্রহ্মা’ উপস্থিত হ’লো ‘বর্ত্তমান’কে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ‘বর্ত্তমান’ ও ‘দুর্বার’কে বাড়িতে ফেরৎ পাঠানোর জন্য ‘ব্রহ্মা’ তার জাদু ব্যবহার করার আগে, ‘দুর্বার’ ‘বর্ত্তমান’কে ধরে রাখলো কারণ ‘দুর্বার’ চায় যে ‘বর্ত্তমান’ তার নিজের সমস্যার সম্মুখীন হোক, কারণ ‘বর্ত্তমান’ সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়ার যোগ্য কিনা তা অনিশ্চিত। তখনই এলো ‘বর্ত্তমান’এর আত্ম-উপলব্ধির একটি মুহূর্ত্ত; সে এখনই তার অবসর নেওয়ার সময় বেছে নিলো, জগতের অন্য সবাই ‘বর্ত্তমান’কে জানালো অভিনন্দন ও বিদায়ের শুভেচ্ছা।

‘দুর্বার’ এবং ‘বর্ত্তমান’ ‘দুর্বার’এর ঘরে জেগে উঠলো, কারণ ‘বর্ত্তমান’ এখন আবার নশ্বর। ‘বর্ত্তমান’ পার্টিতে যোগদান ক’রলো এবং নশ্বর হওয়ার জন্যে নিজের গতিবিধির সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা ক’রলো। ‘বর্ত্তমান’ ‘চারুলতা’র সাথে সময় কাটাতে গেলো, বাইরে হাঁটতে বেড়িয়ে পরস্পরকে চুমু খেলো। এদিকে, ‘দুর্বার’ ‘আগমনী’র সাথে যেতে বাধ্য হ’লো; ‘আগমনী’ তাকে ‘দোয়েল’এর স্টুডেন্ট কাউন্সিলের পদে জয়ী হওয়ার একটি দৃশ্য দেখালো, কিন্তু ‘দোয়েল’ যখন বক্তৃতা দিচ্ছিল, তখন ‘দোয়েল’ ও অন্যান্য স্টুডেন্টদের ফোনে একটা মেসেজ এলো। সেই মেসেজে দেখা গেলো যে, TikTok ভিডিওর কারণে ‘রঞ্জন’ আত্মহত্যা ক’রতে চলেছে; এর জন্যে স্টুডেন্টরা ‘দোয়েল’এর উপর দোষারোপ ক’রেছে। ‘দুর্বার’ এই সংবাদে আতঙ্কিত হ’লো এবং এই ফলাফল পরিবর্তন করার জন্য আত্মাকে অনুরোধ ক’রলো। ‘দুর্বার’ দেখলো যে ও নিজে হার্ট অ্যাটাকে একা মারা যাচ্ছে এবং ওকে তার কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে ‘সংস্কৃতি’ এবং ‘আগমনী’র আত্মার সাথে তার দেখা হ’য়েছে। আত্মারা কেবলমাত্র ইঙ্গিত ক’রতে সক্ষম। ‘আগমনী’র আত্মাটি শেষ পর্যন্ত কথা ব’লতে সক্ষম হ’লো এবং ‘বর্ত্তমান’কে অবসর নিতে রাজি করার জন্য ‘দুর্বার’এর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ ক’রলো এবং ও ‘দুর্বার’কে তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরিয়ে দিলো।
‘দুর্বার’ ‘বর্ত্তমান’এর সাথে মিলিত হ’লো; তারা ‘দোয়েল’কে খুঁজে বের ক’রে, তাকে TikTok পোস্ট করা থেকে বিরত রাখলো। ‘বর্ত্তমান’ আক্ষেপ ক’রছে যে, যদিও ও ‘চারুলতা’র সাথে খুশী, তবুও ও অবসর নিয়ে ভুল করার অনুভূতিটি ও এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। দুজনে ছাদের স্কেটিং রিঙ্কে পৌঁছালো; সেখানে ‘দোয়েল’কে দেখে তাদের মনে হ’লো,- ‘দোয়েল’ ভিডিওটি পোস্ট ক’রতে চলেছে, কিন্তু ‘চারুলতা’ এসে স্টুডেন্টদের বলে – ‘এটা প্রচার করুন যে, ও ‘দোয়েল’এর সাথে কথা ব’লেছে এবং তাকে ব’লেছে যে ভিডিওটি পোস্ট ক’রলে খারাপ পরিণতির সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ‘দোয়েল’ পোস্ট না করা বেছে নিয়েছে।‘
‘বর্ত্তমান’ মনে করে যে ‘দুর্বার’কে এখনই উদ্ধার করা উচিত, কিন্তু সময় থামেনি; উভয়েই বিশ্বাস করে যে হয়তো কিছু মানুষ সত্যিই বদলাতে পারে না। আত্মার সাথে দেখা করা এবং তাদের সাথে কথা বলার জন্য ‘বর্ত্তমান’ তার নশ্বর দেহ ত্যাগ ক’রতে চায়; তাই ট্রেণের লাইনে শুয়ে, ট্রেন চাপা পড়ে মরার চেষ্টা ক’রলো, কিন্তু ‘দুর্বার’ তাকে ট্রেণের লাইন থেকে সরিয়ে দিলো, নিজে চলন্ত ট্রেণের সামনে ঝাঁপ দিলো।….
এখন সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অন্যান্য সমস্ত আত্মারা ‘দুর্বার’কে অভিনন্দন জানাতে বেরিয়ে আসছে, কারণ তার বীরোচিত আত্মত্যাগ তাকে তার মুক্তি দিয়েছে।………
আত্মাদের সুখী সঙ্গীতের পরে, সময়ের চলা আবার শুরু হ’লো.....
এবং ‘দুর্বার’ সত্যিই ট্রেণের চাপে নিহত হ’য়েছিল।
‘দুর্বার’ এখন একটি আত্মা, এবং ‘ব্রহ্মা’ তাকে ব’ললো যে বলিদানের পুরস্কার তাকে অবশ্যই মাথা পেতে নিতে হবে। যদিও ‘দুর্বার’ দুঃখিত যে ও ‘নির্ভর’ এবং ‘দোয়েল’কে আর দেখতে পাচ্ছে না, ‘দৃষ্টি’র আত্মা তার ছোট ভাইয়ের ত্যাগের জন্যে গর্বিত; তাকে স্বাগত জানাচ্ছে দিদির স্নেহের রাজত্বে।
***
কয়েক বছর কেটে যায়, এবং ‘দুর্বার’ নিউ-ইয়ারের আত্মা ‘বর্ত্তমান’এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যেখানে ও ‘দৃষ্টি’র সাথে কাজ করে এবং ‘সংস্কৃতি’র সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। ‘দুর্বার’ ‘অনিন্দ্য-বোস’ এবং ‘চারুলতা’র সাথে দেখা করে; ওরা এখন বিবাহিত, ওদের দুটি সন্তান আছে - ওরা সবাই ‘দুর্বার’কে দেখতে পায়। ‘দুর্বার’ জানতে পারে যে ‘দোয়েল’ তার স্বপ্নের কলেজে ভর্তি হচ্ছে। তারপরে ‘দুর্বার’ সকলের সঙ্গে নিউ-ইয়ারের গান গায়; প্রত্যেকের মধ্যে দেখে নিজের ভাবমূর্ত্তি।
***সমাপ্ত***

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু