বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

ফিরে চাই ক্লাস ফোরের বিয়ে

আজ ফোনে শুনতে পেলাম তোমার, নাকি আমার আর্ত্তনাদ।

কেন নেই পুরোনো সেই দিনগুলোর অজস্র অফুরন্ত আহ্লাদ?

 

বেলতলা স্কুলের ক্লাস-টুতে হ’য়েছিল আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ;

তুমি তখন ক্লাসের সেরা স্টুডেন্ট – প্রতিটি সাবজেক্টে ফার্স্ট।

তোমার দেখাদেখি শুরু ক’রেছিলাম সুযোগমতো হাত তুলতে;

চেয়েছিলাম, তোমার মতন, প্রত্যেক দিদিমণির নজরে পড়তে।

কিভবে জানিনা, পরস্পরের মধ্যে বিরাট আস্থা উঠেছিল গড়ে;

একজন অ্যাবসেন্ট হ’লে শিখে নিতাম অন্যজনের নোট পড়ে।

তখন আমরা ক্লাস ফোরে; মে মাস থেকে শুরু হবে গরমের ছুটি;

তার এক সপ্তাহ আগে, শনিবারে ক্লাসে সবাই ক’রছিল ছোটাছুটি;

টিফিনের পর আর কোনো ক্লাস থাকেনা শনিবারে, আমাদের হাফডে,

মনিটর অলকা সকলের চাঁদা নিয়েছিল; ব’লেছিল একটা পার্টি দেবে।

জানতাম না কী উপলক্ষ্য; বুঝলাম ক্লাসের শেষে, দেখি অলকা তৎপর;

আমাকে টেনে নিয়ে বসালো এক আসনে, মাথায় পরালো বরের টোপর।

একটু পরে বসানো হলো তোমাকে আমার পাশে এক সাজানো আসনে;

তোমার পরনে একটা লাল শাড়ী; ফুলের মুকুট মাথায় তুমি এক ক’নে।

তারপর প্রণব এলো পুরোহিতবেশে, কিছু সংস্কৃত মন্ত্র ব’লে করলো ঘোষণা-

আমি, তুমি এখন থেকে স্বামী-স্ত্রী; কেউ কখনও অপরকে ছেড়ে যাবোনা।

 

ক্লাস ফাইভে আমাদের দুজনকেই যেতে হ’লো বেলতলা গার্লস্ ছেড়ে।

আমি গেলাম মিত্র ইনস্টিটিউশনে, তুমি ভর্ত্তি হয়েছিলে লা মার্টিনিয়ারে।

আলাদা স্কুলে পড়লেও আমরা নিয়মিতই চালিয়ে গেছি গল্প, দেখাশোনা।

ক্লাস নাইন থেকে, দুজনেই পড়েছি সায়েন্স; করেছি নিরীক্ষার আলোচনা।

হায়ার সেকেণ্ডারীতে দুজনের মার্কস্ই ছিল নাইন্টি পার্সেন্টের চেয়ে বেশী;

আবার একসঙ্গে যাদবপুরে ইলেকট্রনিক্স পড়বো, এই ভেবেই ছিলাম খুশী।

 

বাদ সাধলেন তোমার বাবা- তোমাকে দিল্লীতে থেকে পড়তে হবে ডাক্তারী;

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি; সাধ্য নেই– দিল্লীতে অত খরচ করে পড়ি।

ইঞ্জিনীয়ারিং পাশ করার পরে আমাকে কাজ নিয়ে যেতে হ’লো ব্যাঙ্গালোরে;

বাবার জানা দিল্লীর হাসপাতলে তুমি শুরু ক’রলে এর ঠিক এক বছর পরে।

তোমার বাবা দাবী ক’রলেন: আমি দিল্লীতে এসে কোনো কাজ নিয়ে থাকি;

নাহ’লে উনি জামাই ক’রবেন না আমাকে; স্কুলের বিয়ে হবে না পাকাপাকি।

গরীবের সন্তান আমি; স্বাবলম্বী না হ’য়ে চাইলাম না দিল্লীতে গিয়ে থাকতে;

তোমাকে অনুরোধ পাঠালুম ব্যাঙ্গালোরে এসে কোনো প্র্যাক্টিশ শুরু ক’রতে।

পেলাম না তোমার উত্তর; এলো এক নিমন্ত্রণপত্র তোমার বাবার কাছ থেকে;

নামকরা বিদেশী এফ-আর-সি-এসের সঙ্গে তোমার বিয়ে; থাকবে নিউইয়র্কে।

 

তারপর কয়েক বছর ক’রে গেছি কাজ-গবেষণা তোমার নেপথ্য প্রেরণা নিয়ে;

যখন উদ্গ্রীব আমি তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে, পিএচডি পাওয়ার খবর দিয়ে,

তখনই অনেকদিন পরে অতর্কিতে বাজলো আমার ব্যাঙ্গালোরের বাড়ীর ফোন;

তুমি ব’ল্লে- ডাক্তারী ভুলেছো; ধনী স্বামীর সংসারে পুতুল হ’য়ে কাটছে জীবন।

অসহায় আর্ত্তনাদে তোমার আত্মহননের ঝোঁক; নিলাম অঙ্গীকার তোমাকে বাঁচাতে-

ফিরে চাইব আমাদের ক্লাস ফোরের বিয়ে; নাই ডর কোনোরকম আইন ভাঙাতে।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু