#সসম্মানে রাখার অঙ্গীকার।
নাচ গানের মানে আজকালকার ছেলে মেয়েরা বাঙালি বাড়িতে সে সংগীত অনুষ্ঠানের চল করেছে তা শেষ হওয়ার পর রাতের খাওয়া হতে হতে অনেক দেরি হয়ে গেছে, তারপর অতিথিরা কে কোন ঘরে শুবে সব ঠিক ঠাক করে যখন অরিকা আর তার শ্বাশুড়ি কেতকি নিচের ঘরে শুতে এলো রাত প্রায় একটা।
বিছানায় শুয়ে অরিকা আর কেতকি পরের দিনের অনুষ্ঠান কি ভাবে পরিচালনা করতে হবে সেই আলোচনা নিয়ে বসেছিল। বাড়ির কর্তা রজত বাবু আর তার বড়ো পুত্রের মেজাজ সামলাতে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়, তার উপর আছে রজতের দিদি অনিমা দেবী । সব কিছুতেই তার খুদ ধরা চাই। এই তিন জন কে নিয়ে শ্বাশুড়ি বৌয়ের আলোচনা শেষ হলো প্রায় রাত দুটো।
কেতকি আর অরিকার ঘুম আধঘন্টাও হয়নি,অমনি রজতবাবু আর তার দিদি রাত তিনটে থাকতেই শুরু করলেন হাঁকডাক, বলি কাক ডাকার পরে কি ছেলেকে দই খই খাওয়াবে নাকি, জল সইতেই বা কখন যাবে। দাদা বোনের রাত তিনটের সময় নিয়মের নাম সংকীর্তনের জ্বালায় অন্যদের ঘুম খারাপ হওয়ার আগেই উঠে পরে কেতকি দেবী আর অরিকা। এরা নিজেরা কিছু করবে না, কিন্তু অন্যেকে খালি সময়ের তাগদা দিয়ে সুস্থ কাজকে বিশৃংখল করে দেয়।
রজতের ছোট ছেলে উদীপ্তর আজ বিয়ে। সকালবেলায় রজত হুকুম দিয়ে রেখেছে কেতকিদেবী কে, তোমার নাস্তিক ছেলে যেনো উপোস করেই বিয়ে করে সেই দিকটা লক্ষ্য রেখো।
জল ভরে এনে সব এয়ো স্ত্রীরা উদীপ্তর গায়ে হলুদ দিচ্ছে , অমনি , বাঁজা মেয়ে ছেলে শুভ কাজে হাত দিয়েছো, অনিমা দেবীর এই চিৎকার শুনে ভয়ে হলুদের বাটিটা অরিকার হাত থেকে পড়ে যায়। এতো গুলো মানুষের সামনে লজ্জায় মাথা নত করে ঘরে চলে যায় অরিকা। উদীপ্ত যে এই সব কুসংস্কার মানে না, বৌদি কে ডাকতে ঘরের দিকে যাচ্ছিলো, সেই সময় উদীপ্ত শুনছে, ওর বড়দা প্রদীপ্ত নিজের স্ত্রী কে সান্ত্বনা না দিয়ে শাসাচ্ছে, পিসিমা তোমাকে বাঁজা বলে কোনো অন্যায় করেনি, তুমি যা তোমাকে তাই বলেছে। নিজের সম্মান যদি আর খোওয়াতে না চাও তবে, বরযাত্রীর লিস্ট থেকে নিজের নামটা সরিয়ে নিও । দাদা বৌদির কথার মাঝে প্রবেশ না করে উদীপ্ত মন খারাপ করে ঘরের বাইরে থেকে চলে আসে। মনে মনে ভাবে, তাদের পিসিমা না হয় এতো লেখা পড়া কিছু করেনি, কিন্তু বাবা দাদার তো শিক্ষার ঝুলিতে অনেক ডিগ্রি আছে, তবু তারা মনের মধ্যে কুসংস্কার পুষে স্ত্রী কে পরাধীনতার জালে বদ্ধ করে রাখার শিক্ষা কোথায় পেলো ! নারীদের কে নিজের হুকুমের আর ইচ্ছের দাসী বানিয়ে রাখা, দাদা বাবার এই এই নিম্নমানের রুচিবোধের স্বীকার যাতে তার স্ত্রী পিয়ালীকে না হতে হয়, তার ঢাল হয়ে দাঁড়াবে উদীপ্ত নিজেই।
পিসিমা , অনিমা বলছে, বিয়ে করতে যাওয়ার আগে উদীপ্ত তোর মা কে বল , মা আমি তোমার জন্য দাসী আনতে যাচ্ছি।
না পিসিমা,আমি এমন একটি মেয়ে কে বিয়ে করে আনতে যাচ্ছি, যে কিনা হবে মায়ের মেয়ে, আর আমার বৌদির বোন। আর আমি হবো তার সুখ দুঃখের ভাগিদার।
পিসিমার স্বর আবার সপ্তমে, দেখেছিস রজত, তোর ছোট ছেলে যে বিয়ের আগেই বৌয়ের আঁচলে বাঁধা পড়েছে। তোর এই সংসার জোড়া থাকলেই হয়!
রজতবাবু চোখ রাঙাচ্ছে, কেতকিদেবীর উপর, ছোটো ছেলে মুখে মুখে তর্ক করার স্বভাব তোমার আস্কারাতেই পেয়েছে, বড়ো ছোটো জ্ঞান আর কবে হবে ওর।
উদীপ্ত বলে ঠিক বলেছো বাবা, মুখের উপর উচিৎ কথা বলার স্বভাবটা মার থেকে নয় মায়ের জন্যই পেয়েছি আমি। মা যদি প্রথম থেকে তোমার দাসত্ব মেনে না নিতো, প্রতিবাদ করতো, তাহলে মায়ের হয়ে আজ আমাকে তোমার সামনে প্রতিবাদ করতে হতো না। তুমি এতকাল মা কে যেমন দমিয়ে রেখেছো, দাদাও তোমাকে দেখে শিখেছে, বউকে কি করে দাবিয়ে রাখতে হয়। তোমার আর দাদার মনে নারী পুরুষের যে ভেদাভেদ আছে তা তোমরা এখনও দূর করতে না পারলেও, আমি যাকে জীবন সঙ্গিনী করে আনছি, তাকে তোমাদের সামনেই সসম্মানে রাখবো, এই অঙ্গীকার করলাম।