বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পাঁচিল

ছেলেদের সঙ্গে মিশতে নেই; দীপ্তি বরাবরই মেনেছে এই নিষেধের পাঁচিল। আশা ছিল, বিয়ের পরে স্বামী হিমাংশুর সঙ্গে এ-পাঁচিল থাকবেনা। কিন্তু, বিয়ের ঠিক পরেই শুনলো- হিমাংশু দীপ্তির সঙ্গে থাকবে না; ও ক’লকাতায় এমএ পড়বে। অগত্যা, দীপ্তি বাবা-মাকে নিয়ে এলো ওর কর্মস্থল - জামসেদপুরে। 

 

দীপ্তি পরে বুঝলো, কলকাতার মহিলাদের সঙ্গে হিমাংশু কোনো পাঁচিল রাখেনি। দীপ্তির বাবা যখন জামসেদপুরের হাসপাতালে ছিলেন; হিমাংশু এসেছিল শ্বশুরকে দেখতে; কিন্তু ব্যস্ত থাকতো ক’লকাতায় চিঠি পাঠাতে।

 

বাবা হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রাত্তিরে হিমাংশুকে একা ঘরে পেয়ে দীপ্তি জিগ্যেস ক’রলো, ’রবীন্দর কাউর কে আর তার সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক।‘

‘একথা কেন জিগ্যেস ক’রছো? রবীন্দর আমার খুব নিকট বন্ধু।‘

‘কী কী করো তোমার এই নিকট বন্ধুর সঙ্গে?‘

‘তোমার মতো বুড়ীরা বুঝবেনা। অনেক কথা মেয়েবন্ধুদের বলা যায়, যা ছেলেদের বলা যায় না।‘

‘হিমাংশু, তুমি এখানে এসে অনেক চিঠি লিখেছো, আমি হিসেবও রাখছিলুম না। একদিন সকালে পোস্ট ক’রতে দিলে রবীন্দরকে লেখা একটা চিঠি, আবার লাঞ্চের সময় যখন এলুম আবার তুমি পোস্ট ক’রতে দিলে রবীন্দরকে লেখা আর একটা চিঠি। জিগ্যেস ক’রেছিলাম এত তাড়াতাড়ি আবার লেখার দরকার পড়লো কেন, জবাব দাওনি; এখন আমার জবাব চাই।‘

‘একটা জরুরী কথা লেখার দরকার ছিল।‘

‘বলো কী সেই জরুরী কথা! ‘

‘সেটা আমার আর রবীন্দরের মধ্যেই থাকবে।‘

‘আমি রবীন্দরের চিঠিটা পড়েছি; ও লিখেছিল- ওর পিরিয়ড শুরু হ’য়েছে আবার, প্রেগন্যান্ট ক’রতে পারোনি তুমি ওকে-‘

হিমাংশু ঝাঁপিয়ে প’ড়লো দীপ্তির পায়ে; ব’ললো, ’ক্ষমা করো, এরকম আর কখনো হবে না।‘

দীপ্তি ব’ললো, ’তোমার লেখা চিঠিটাও পড়েছিলাম,– বড়াই ক’রে লিখেছিলে- রবীন্দর প্রেগন্যান্ট হবেই, মেরা বাজী জিৎ গয়া।‘

হিমাংশু দীপ্তির পা জড়িয়ে ধ’রে কাঁদলো, ’একথা আর কাউকে ব’লো না দীপ্তি; বাবুমণি মেরে ফেলবেন আমাকে। যদি এখন জামসেদপুরে ফিরে আসি, পাড়াপড়শীরা সবাই সন্দেহ ক’রবে, বাবুমণিকে, মামণিকে, আমাকে জেরা ক’রে জানতে চাইবে কেন আমি ক’লকাতায় থেকে এম-এ পড়া শেষ ক’রছিনা।‘ 

 

হিমাংশুর কথামতো কলকাতায় গিয়ে দীপ্তি অভিনয় ক’রলো; হিমাংশুর বাবা-মা অবাক; ওঁরা ভাবতেই পারছিলেনা যে এরা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে এতো ভালবাসে।

দীপ্তি হেসে ব’লেছিল, ’কিছুই হয়নি হিমাংশু আর রবীন্দরের মধ্যে। মজা করার জন্যে চিঠিগুলো লিখেছিল ওরা; ধারণা ক’রতে পারেনি চিঠিগুলো আমি দেখবো।‘

দীপ্তি যখন ব’ললো- হিমাংশু ক’লকাতা থেকেই পড়ুক, তখন শ্বশুরমশাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

দীপ্তি তখন বুঝতে পারেনি যে দীপ্তির মিথ্যা কথা বলার সুযোগ নিয়ে হিমাংশু সারা জীবন দীপ্তির আইন-সম্মত স্বামী হ’য়ে থাকবে, কিন্তু মজবুত পাঁচিল থেকেই যাবে দুজনের দেহ ও মনের মধ্যে।

অনেকদিন কেটে গেছে এর পর। আসছে হিমাংশু আর দীপ্তির পঞ্চাশতম বিবাহবার্ষিকী। কিন্তু ওদের মধ্যে পাঁচিলটা থেকে গেছে।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু