বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

কাজরী

মনে পড়ে তার সেই মুখ,

আকাশ ধোয়া জলের মত স্বচ্ছ

আর সেই কালো চোখ দুখানি-

যে চোখে দেখেছিলাম স্বপ্নের হাতছানি,

মদিরার নেশা।

ঠোঁট দুটো ঠিক যেন 

গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে গড়া।

তার কাজল কালো চুলের সেই গন্ধ,

চাঁপা ফুলের মতো।

দেহের পেলব কোমলতায় ছিলো,

নতুন বোনা রেশমের অনুভূতি।

মধুর সেই মুহূর্ত গুলো,

স্বপ্নের আবেশ দিয়ে ভরা।

জীবনের রঙীন স্বপ্নগুলো,

শুরু হয়েছিলো তার হাতছানিতে।

সেই হাসি দেখার জন্য-

আমি বাজি রাখতে পারি জীবনের সব সুখ।

সে যেন দুহাত মেলে ডাকে,

ছুটে এসে আমার বুকে তার মুখ লুকায়।

যেন তার কোমল হাতদুটি,

স্পর্শ করে আমার উত্তপ্ত অশান্তি গুলোকে।

জীবন জুড়ে শান্তি নেমে আসে,

চারিদিকে শুধু সুখের ছড়াছড়ি।

সব দুঃখ, সব কষ্ট মুছে যায়,

সব কিছু ভোরের আকাশের মত-

আলোর রোশনাই দিয়ে ভরা।


মনে পড়ে সেই সমস্ত দিন,

চায়ের কাপ, সবুজ ঘাস আর বাদামের খোসা।

সে আমার পাশে বসে,

তার গায়ে সেই পরিচিত গন্ধ,

আমার হাতে তার হাত।

মনে হতো শুধু চেয়ে থাকি,

তবু সে কত কথা বলে-

কত অনুযোগ, কত হাসি, কত রাগ-

চঞ্চল, উচ্ছ্বল তার জীবন,

প্রজাপতির মতো আমায় ঘিরে থাকে।

সেই যে সেদিন, যেদিন-

কফি হাউসের টেবিলে বসে,

একমুখ ধোঁয়া গিলে,

বিষম খেয়ে তাকে বলেছিলাম-

ভালোবাসি, সত্যি ভালোবাসি।

হাসির দমকে কেঁপে উঠেছিলো সে,

চলকে পড়েছিলো কাপের চা।

বলেছিলো, এ তো পুরোনো কথা,

নতুন কিছু বলো।

ভালোবাসা আমার,

সে তো চির নতুন,

কোনদিন পুরোনো হবে না।

আমি পারি না, ঐ অনেকের মতো হাজার কথার জাল বুনতে,

পারি না মজার কথা বলতে।

আমার জীবনটা শুধু একমুখো,

সেখানে একটাই পথ,

একটাই ভাষা, একটাই ছবি-

কাজরী।


তাকে বলেছিলাম সেই দিনগুলোর কথা,

যখন বুক জুড়ে শুধুই যন্ত্রণা,

তাকে পাইনি যে দুঃসহ দিনগুলোতে।

শুধু লড়াই করেছি নিজের সাথে,

আর ক্ষত বিক্ষত হয়েছে নিজেরই হৃদয়।

কত সহজে সেই কথা বলেছি,

অথচ সত্যিই কি কথাগুলো সহজ?

আজও সেই হৃদয় থেকে রক্ত ঝরে,

আর দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠি রাতে।

সে শুনে প্রবলভাবে হেসে উঠেছিলো,

গড়িয়ে পড়েছিলো শুকনো পাতা ঝরা ঘাসে।

আমি কুড়িয়ে নিয়েছিলাম সেই পাতাগুলো,

যেগুলো ওর মাথায় আশ্রয় নিয়েছিলো।

আমার বোকামিতে ও আবার হেসেছিলো,

আবার ধন্য করেছিলো সেই ঘাসেদের।

আমি আবার পাতা কুড়িয়েছিলাম,

বারবার আমি পাতা কুড়িয়েছিলাম।

তারপর যখন আমরা উঠে গিয়েছিলাম,

সে আমার হাত ধরেছিলো।

আমি ঘাসের উপর থেকে-

চুরি করেছিলাম তার সাদা রুমালটাকে।

যার এক কোণায় কলকা করে লেখা-

কাজরী।


সে বলেছিলো, কাল আমরা সেখানে যাবো-

সেই বটগাছে সুতো বাঁধতে।

আমি শুধু তোমাকে চাই, শুধু তোমাকে।

আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো কাজরী।

কাল আমরা মানত করবো-

দুটি জীবনের এক স্বপ্নের জন্য,

আমাদের সাক্ষী হবে ওই বটগাছ।


সে রাতে আমি ঘুমোতে পারিনি,

একটা নতুন স্বপ্ন দেখেছিলাম-

একটা ছোট্ট ঘরের স্বপ্ন।

সবুজ বনের মাঝে সেই ঘর,

বড় বড় রাধাচূড়া গাছ দিয়ে ঘেরা।

আর উঠোনে ঝরে পড়েছে-

গোলাপ ফুলের কত লাল পাপড়ি।

আমরা যেন শুয়ে আছি,

সেই নরম পাপড়ির বিছানায়।

আরো আরো কত রঙ-

হলুদ, নীল, কমলা ফুলের মালা,

শুধু আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে-

আমরা ঢেকে যাচ্ছি ফুলের নীচে।

আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।

কি শান্তি, কি নিস্তব্ধতা!

আমরা আর জাগবো না কোনদিন,

শুধু ঘুমিয়ে থাকবো।


ভোরবেলা একটা চিঠি এলো,

কাজরী এলো না।


জামরঙা কাগজটায় স্বপ্নের গন্ধ,

কাজরী আমায় চিঠি লিখেছে-

আমি সেই বটগাছের কাছে গেলাম,

সুতো বাঁধতে।

আমি আসছি,

অস্ফুটে বললাম আমি।

কাজরী লিখেছে-

তুমি এসো না।

আমি কান্তারকে নিয়ে গেলাম।

ওর মাঝে আমি হারিয়ে যেতে পারি-

তুমি বড় একঘেয়ে, বেসুরো,

তোমাকে জানা বড় সহজ,

প্রতিদিনের মধ্যে নতুনত্ব নেই;

আমায় কখনো আর খুঁজো না,

তুমি বরং কিঙ্কিণীকে ভালোবেসো।


অনেকগুলো দিন কেটে গেছে,

আমি আজ অনেক শান্ত।

সেদিন বড় কেঁদেছিলাম, অনেকক্ষণ,

তারপর আর একটুও কাঁদিনি।


আজ আমি চলে যাচ্ছি,

বালিশে আলতো ভাবে মাথা ছুঁয়েছি,

সেই শুকনো পাতাগুলো, রুমালটা,

আর সেই রঙীন চিঠিটা-

আমার মাথার কাছে ছড়িয়ে আছে।

আমি নতুন কিছু করতে শিখেছি,

আজ জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে শিখবো।

ওটা টেবিলের ওপর আছে,

ঐ নীল ট্যাবলেটটা আমি খাবো,

তারপর ঘুমোবো-

সেই স্বপ্নের ঘুম।

ঘুমের মধ্যে আমি শুধু তাকে চাই,

ঘুম ভেঙেও তাকে চাই।

আমার ঠোঁটটা শুধু একবার নড়বে,

বলবে-

কাজরী...

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু