বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

আতঙ্কের গভীরে


আজকের ঘটনাটি একটি সত্য ঘটনা বলতে পারেন ।এই ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার বন্ধু মালিনীর সাথে ।মালিনী পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো ।ডাক্তারি পড়বার জন্য কলকাতা থেকে সে দিল্লী গেছিলো ।একটি বিশেষ কোর্স করবার জন্য তাকে সেখানে যেতে হয়েছিলো ।দিল্লী তে গার্লস হোস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করতো সে ।


প্রথম প্রথম কিছু মনে হয়নি মালিনীর ।কিন্তু কিছুদিন অতিক্রান্ত হবার পর থেকেই ওর শরীর হঠাৎ করেই খুব খারাপ হতে শুরু করেছিলো ।নিজের শরীরের এরকম অবস্থা দেখে মালিনী খুবই চিন্তিত হয়ে পরে ।নিজে ডাক্তারি পড়ছিল ,তার পাশপাশি অনেক ডাক্তারদের সাথে ও বেশ চেনাশোনা হয়ে গেছিলো ওর ।তাদের সাথে এ ব্যাপারে মালিনী কথা ও বলেছিলো ।শুধু তাইই নয় ,দিল্লী তে অনেক বড় বড় ডাক্তারকেও দেখায় সে | কিন্তু আশ্চর্য্য ব্যাপার কিছুতেই শরীরের দুর্বলতা কমতে চাইছিল না ।সব সময় মনে হত শরীরের নির্যাস যেন কেউ বার করে নিচ্ছে ।


এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল ,যে ভালো করে পড়াশোনায় ও মনোনিবেশ করতে পারছিলো না ।ঠিক সেই সময় ওর ঘরেই আরেকটি মেয়ে আসে ।সে ও মেডিকেল এর কোর্স করবার জন্যই এসেছিলো ।মেয়েটিকে দেখতে শুনতে বেশ ভালো ছিল ।মেয়েটির পরিবার ছিল খুব ধনী ।মালিনী কে সে তেমনটাই বলেছিলো ।মেয়েটি যখন বাড়িতে থাকত তখন মালিনীর সাথে কোন কিছুই ঘটত না ,কিন্তু যখন মালিনী ঘরে একা থাকত বা একা বসে পড়াশোনা করতো ঠিক সেই সময় ওর মনে হত কেউ যেন ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে ।কেউ যেন ওর চুলটা ধরে টানল ।এরকম অদ্ভূত ,অদ্ভূত সব অনুভূতি।


মালিনীর সাথে যে মেয়েটি থাকত সে বাঙালি ছিলো না ।সে জয়পুরে থাকত ।একদিন যখন মালিনী একটা কাজে বাইরে যায় তখন ওর রুম মেট দেবীকা ঘরে একাই ছিলো ।মালিনী ওকে বলে ও যায় একটু সাবধানে থাকবার জন্য ।কিন্তু দেবীকা একা একা মানুষ হবার জন্য এসব ব্যাপারে তার তেমন ভয় করতো না ।মালিনী বাড়িতে ফিরে এসে যা দেখে তাতে সে চমকে ওঠে ।একটা কালো রঙের জন্তুর মত দেখতে কি একটা যেন দেবীকার মাথার কাছে বসে আছে ।দেবীকা ঘুমাচ্ছে ।


এরকম ধরনের কোন জীব কে আগে মালিনী নিজের চোখে কোনদিনও  দেখেনি ।মালিনী প্রচন্ড পরিমাণ ভয় পেয়ে নীচে নেমে এসে সকলকে ডাকতে থাকে ভূত ভূত করে চিৎকার করে ।ওর এরকম চিৎকার শুনে অনেকেই বেরিয়ে আসে ।সবাই মিলে মালিনীর সাথে ওর ঘরে যায় বিষয়টা খতিয়ে দেখতে ।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেউ কিছুই দেখতে পায়না।


সবাই মালিনী কে যা নয় তাই বলে অপমান করে নীচে চলে আসে ।এরকম করতে দেখলে ওকে এখান থেকে চলে যেতে হবে ,এমন হুমকি ও দেওয়া হয়  ।এসব চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে হঠাৎ  দেবীকার ঘুমটা ভেঙে যায় ।মালিনী ভেবেছিল দেবীকা হয়ত আর বেঁচে নেই ।ওর মাথার কাছে এরকম একটা কালো রঙের ভয়ঙ্কর জীবকে বসে থাকতে দেখেছিল ও ।কিন্তু ওকে জীবিত অবস্থায় দেখে অনেকটাই স্বস্তি অনুভব করেছিলো মালিনী ।


সব থেকে অবাক করা বিষয় কি জানেন, এই ঘটনার পর থেকে মালিনী অনেকটাই সুস্থ অনুভব করতে থাকে ।কিন্তু দেবীকার শরীরের অবস্থা ক্রমাগতভাবে খারাপ হতে থাকে ।দেবীকা অদ্ভূত অদ্ভূত আচরণ করা শুরু করে ।রাতের বেলায় ছাদের পাঁচিলে উঠে একা একা হাঁটা , একসাথে তিন লিটার জল খেয়ে ফেলা ,এরকম সমস্ত ঘটনা ।শুধু তাইই নয় ,একদিন যখন হোস্টেলের সব লোকেরা মিলে ক্রিসমাস এর পার্টি সেলিব্রেট করছিলো সেই সময় কাঁচা মাংস বাড়িতে আনা হয়েছিলো ।রান্না করে খাবে বলে সবাই খুব উৎসুক ও ছিলো ।সেদিন হঠাৎ  মাংসের থলি টা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না ।সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল বাড়ির মধ্যে ।


সকলে গিয়ে দেখে ছাদের এক কোনে বসে দেবীকা কাঁচা মাংস গুলোকে খাচ্ছে ।সেদিনের পর থেকে আর কারুর বুঝতে বাকি রইলো না যে দেবীকার সাথে যা ঘটেছে সেটা স্বাভাবিক কিছু নয়।মালিনী সেদিন যা দেখেছিল সেটা ও কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ছিলো না বললেই চলে ।ওরা কিছুতেই দেবীকা কে টেনে নিয়ে নীচে আনতে পারছিলো না ।কিছুতেই পুরো খাবারটা শেষ না করে সে নামবে না, কি ভয়ঙ্কর জোর এসে গেছিলো ওর শরীরে।


এরপর অনেকেই ওকে দেখত কার সাথে যেন ও কথা বলে একা একা ।অনেকেই বলত মালিনী কে ।তোর রুমমেট বোধহয় পাগল হয়ে গেছে জানিস ।আবার কেউ বলত ওকে নাকি জিনে পেয়েছে ।মালিনী কিছুই বিশ্বাস করতো না ।ওর মনে হত পড়াশোনার চাপে বোধহয় দেবীকার এরকম হচ্ছে ।মালিনী ঠিক করলো ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে ।


কিন্তু একদিন ক্লাস করে ফিরে মালিনী যা দেখলো তাতে ওর শরীরের সব শক্তি চলে গেলো ।হাত পা একেবারে অবশ হয়ে গেলো ।মালিনী দেখলো রুমে ভিড় করে দাঁড়িয়ে হোস্টেলের লোকজন ।ভিতরে গিয়ে সে দেখলো দেবীকা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ।আর একটা চিঠি তে সে কিছু কথা লিখে গেছে ।সেই চিঠি টা সে হোস্টেলের এক মহিলা কর্মীর হাত থেকে নিয়ে পড়ল ,তাতে ওর বিশ্বাস না হয়ে আর কোন উপায় ছিলো না -


"আমি দেবীকা ।আমি নিজের ইচ্ছায় জিনের কাছে আমার প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছি ।সে আমায় স্বর্গসুখ দেবে বলেছে ।সাধারণ মানুষ হয়ে বাঁচলে আমার পক্ষে কোনদিন সেই সুখ পাওয়া সম্ভব হত না ।আমি মৃত্যুর পরে ওর দুনিয়াতে চলে যাব। সেখানে গিয়ে আমি খুব ভালো থাকব ।আমার মৃত্যুর খবর আমার মা বাবা কে কেউ বলো না ।মৃত্যুর পরে আমি তাদের সাথে দেখা করে আসব ।আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।আমি আর একা নই ।সে সব সময় আমার সাথেই থাকবে ।এতো শান্তি আমি জীবিত অবস্থায় থাকলে কোনদিন ভোগ করতে পারতাম না ।"


চিঠি পড়ে তার কোন মাথামুন্ডু কিছুই আবিষ্কার করতে পারলো না মালিনী ।এর পিছনের সত্যতা কি সেটা ও জানা গেলো না ।পুলিশ এসে দেবীকার দেহ নিয়ে গেলো ।গাড়িতে তোলার সময় মালিনী লক্ষ্য করেছিলো দেবীকার দেহের পাশে ধোঁয়ার মত কি একটা যেন দাঁড়িয়ে ।একটা কালো ধোঁয়ার মত কিছু একটা ।ওর শরীরের পাশে পাশেই চলেছে ।গাড়িতে উঠে ওর পাশেই বসে আছে ।কিন্তু কোন চেহারা নেই সেটার ।


সেটা দেখে মালিনী এতো ভয় পেয়েছিলো যে পড়াশোনা অর্ধেক রেখেই সে কোলকাতা ফিরে আসে ।তারপর সব ঘটনা বিস্তারিতভাবে ও এক তান্ত্রিক কে জানায় ।সেইই নাকি মালিনী কে বলে যে এরকম হয় ।জীন সত্যিকারের আছে ।সে নাকি নিজের পছন্দের মেয়ের সাথে সহবাস করে ।তার শরীরের মধ্যে নিজের সন্তান কে বড় করানোর জন্য আর সেই সন্তান কে পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য ।কিন্তু সকলের সে ক্ষমতা থাকে না ,সেই সন্তান ধারণ করার মত ।সেই কারনে অনেকেই খুব দুর্বল হয়ে যায় ।এমনকি মরে ও যায় ।সেই মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু হয়না ।


"দেবীকাকে দেখে তোমার থেকে বেশী পছন্দ হয়েছিলো জিনের ।তাই তোমায় ছেড়ে দিয়ে সে ওকে গ্রহণ করেছে ।নাহলে ওর জায়গায় হয়ত আজকে তোমার প্রাণ যেত ।"


এই কথা শুনে মালিনী আরো ভীত হয়ে পড়ে ।একদিন কোন এক বান্ধবীর কাছ থেকে সে জানতে পারে ,পোষ্ট মার্টম এর রিপোর্টে নাকি দেবীকাকে প্রেগনেন্ট পেয়েছিলো ডাক্তাররা ।সে নাকি চার মাসের গর্ভবতী ছিলো ।কিন্তু সে মরে যাওয়ায় বাচ্চাটির ও মৃত্যু হয়েছে বলে সবাই মনে করেছিলো প্রথমে ।কিন্তু তেমনটি হয়নি ।মেডিকেল সায়েন্সে এরকম ধরনের ঘটনা আগে দেখা যায়নি ।মৃত ব্যক্তির শরীরে নাকি জীবন্ত বাচ্চা ।ভ্রূণটি নাকি তখনও জীবিত ছিলো বলে ধারণা করেন ডাক্তাররা ।প্রাণ ছিলো তার শরীরে ।সেটা একপ্রকার অসম্ভব ।এরপর নাকি ওরাই আদেশ দেন দেবীকার দেহকে পুড়িয়ে ফেলতে ।


মালিনী পরে আমায় ঘটনাটি জানিয়েছিলো ।আমি নিজে আজও অবাক হয়ে ভাবি এসব জিনিস কি সত্যিই আছে ?নাকি শুধুই মনের ভুল ছিলো এই সব কিছু ।সব কিছু যদি ভুল ও হয় তাহলে মেডিকেল সায়েন্স ও কি ভুল ? আপনারাই ভাবুন ।আমি তো কিছুই বলতে পারবোনা এই ব্যাপারে ।


সমাপ্ত

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু