বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

রাত গভীর

ঘটনাটি আমার ঠাকুমার মুখে শোনা ।বাংলাদেশ থেকে ঠাকুরদা কাজের উদ্দেশ্যে চলে আসেন কলকাতায় ।ধর্মতলার কাছে যে ব্রিটিশ কলোনি রয়েছে সেখানেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন ঠাকুমারা ।কলকাতা শহর ছেড়ে তখনও ব্রিটিশরা ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে পারেনি ।একটানা দুশো বছর ধরে শাসন চালাবার পরে চিরকালের জন্য একটা স্থান ছেড়ে চলে যেতে হবে শুনলে ,সময় তো একটু সকলেরই লাগবে ।আমাদের মত তাদের ও তো এই শহরটির প্রতি একটা মায়া তৈরি হয়ে গেছিলো বৈকি ।


যে জায়গাটায় ঠাকুমারা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন তার ঠিক পাশেই ইংরেজদের একটা বহু পুরনো কবরখানা ছিল।সেখানে ইংরেজ সৈন্যদের কবর দেওয়া হত ।এরকমও শোনা যায় যারা অপঘাতে মারা যেতেন ,সেইসব ব্রিটিশ সৈন্যদের কেও ওখানেই কবরস্থ করা হত।এছাড়া ও জায়গাটা সম্পর্কে একটা খুব খারাপ কথা প্রচলিত ছিল ।এই কবরখানায় একটি কবরের পাশে একজন বিদেশী যুবককে বসে থাকতে দেখা যেত ।অনেকেরই মতে , এই যুবক অপঘাতে মারা যান ।তার পর থেকে এই কবরখানার পাশে যারাই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে এসেছে ,তাদের আতঙ্কের শেষ নেই ।অনেকেরই স্বপ্নে এসে এই ইংরেজ যুবক জানিয়েছে , যেন তার কবরটা শ্বেত পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হয় ।শোনা যায় , এই যুবকের উচ্চপদস্থ অফিসার হবার খুবই আকাঙ্খা ছিলো ! কিন্তু যে সাহেবের দফতরে সে কাজ করত সেখানে তার মনের ইচ্ছের কথা জানতে পেরে সেই ইংরেজ সাহেব গুলি করে তাকে হত্যা করেন ।ইংরেজ সাহেবকে সরিয়ে এই যুবকটি তার জায়গা নিতে চেয়েছিল ।সেই মনের ইচ্ছে তার কোনদিন পূর্ণ হয়নি ,তার আগেই তাকে খুন করে এখানে কবরস্থ করে দেওয়া হয় ।কিন্তু ঐ ঘটনার কিছুদিন পরেই সেই ইংরেজ সাহেবকে ও নিজের দফতরেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ।


এরপর থেকেই সেই যুবকের অতৃপ্ত আত্মা এই জায়গায় ঘুরে বেড়াত আর লোকজন কে ভয় ও দেখাত ।আমার ঠাকুরদা কোলকাতার সায়েন্স কলেজে কাজ করতেন ।উঁনি শর্টহ্যান্ড টাইপিংয়ে পটু ছিলেন।ওখানকার বড় সাহেব ওনাকে ওনার দক্ষ কাজের জন্য এই চাকরি অফার করেছিলেন ।অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত ও হয়ে যেত ।একদিন প্রায় রাত এগারোটা বেজে গেছিলো ।ঠাকুরদা ঐ রাস্তা দিয়েই আসছিলেন ।ঠিক কবরখানার পাশের রাস্তাটা ধরে আসবার পথে হঠাত্ তিঁনি একটি যুবককে দেখেন ।সেদিন সঙ্গে সাইকেল ছিলো ঠাকুরদার ।দেরি হয়ে যাবার ব্যাপার থাকলে তিঁনি সাইকেল নিয়েই অফিসে যেতেন ।


হঠাৎ তিনি দেখলেন এক যুবক শূন্যে ভেসে আছে ।তার পা দুটো নেই আর না আছে কোন হাত ।মুখের মধ্যে লাল দুটি রক্তবর্ণ চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না ।পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছিলো কোন কট্টর ব্রিটিশ কর্মী ।হাওয়ার মধ্যে সে ভেসে আছে আর ঐ অদ্ভূত মূর্তিটি ক্রমাগত ভাবে এগিয়ে আসছে ঠাকুরদার দিকে ।কাছে সাইকেল থাকা সত্ত্বেও পা দুটো যেন চলতে চাইছে না ।সেদিন প্রায় শেষই হয়ে যেতেন উঁনি ,যদিনা সাইকেল টা পেলে দৌড়তেন বাড়ির দিকে ।


ঐ ঘটনার পরে প্রায় চারদিন ঠাকুরদা শয্যাশায়ী ছিলেন ।ধুম জ্বরে গা প্রায় পুড়ে যাচ্ছিলো ।কোন ডাক্তারি ওষুধে সে জ্বর কমেনি ।এক পীর বাবার দেওয়া ওষুধ খাইয়ে তারপর সে জ্বর নামে ।


ঠাকুমা পরে শুনেছিলেন যে এরকম ভাবেই সেই যুবক লোককে একা রাস্তায় পেয়ে ভয় দেখায় আর মেরে ও ফেলে ।এখনো যে দফতরে যুবকটি কাজ করত ,সেখানে রাতের বেলায় নিস্তব্ধতার মধ্যে গুলির আওয়াজ পাওয়া যায় ।তারপর ঠাকুমারা ঐ জায়গা থেকে উত্তর কোলকাতায় চলে যান একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ।কোলকাতায় এরকম বহু ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী আমার ঠাকুমা ।এখানে আসার পরে আরো এরকম অনেক ঘটনা তিনি ঘটতে দেখেছেন ।সেগুলো আরেকদিন বলব ।


সমাপ্ত

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু