বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

কে ফিরে এলো

লোভ জানবেন মানুষকে অনেক নীচে নিয়ে যায় ।লোভের হাত থেকে মুক্তি পাওয়াও বড় কঠিন ব্যাপার ।সকলের দ্বারা তা সম্ভব ও হয়না ।লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ মানুষকে মেরে অবদি ফেলতে পারে ।কিন্তু সে কাজ যে একেবারেই সঠিক নয় ,তা আমরা অনেকসময় ভুলে যাই ।কথায় আছে লোভে পাপ আর পাপেই মৃত্যু ।


মনোজ বাবু লোকটি এমনিতে সাদামাটা ।কিন্তু সুযোগ পেলেই হাত সাফাই করতে ওস্তাদ তিঁনি ।কোন কিছু মূল্যবান বস্তু দেখলেই ,ঝোঁকের বসে শুরু হয়ে যায় সেটি পাবার আকাঙ্খা ।ছোট থেকেই এই রোগ ।মায়ের বকুনি খেয়ে ও কোন লাভ হয়নি ।সুস্থ ,স্বাভাবিক ছেলে হলে কি হবে ,একবার যদি মনের মত কিছু দেখেন ,আর রক্ষে নেই ।সেই বস্তু প্রাপ্তির যোগ্যতা তার থাক বা না থাক ,যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটিকে নিজের করতে পারছেন তত্ক্ষণ শান্তিতে উঁনি বসতে পারেন না ।


একটা শীতের রাত ।মনোজ বাবু ফিরছেন নিজের বন্ধুর বাড়ি থেকে ।পেট পুরে খাওয়া দাওয়া সেরেছেন সেদিন ।বাড়িতে এসে একেবারে শুয়ে পড়বেন ঠিক করেছেন ।লোকটা ক্লান্ত নামেই ,চোখ সর্বদাই ঘুরে চলেছে তার ।রাস্তায় কি মূলধন থাকতে পারে ,আপনারাই ভাবুন !তবুও সেই লোকটি এদিকে ওদিকে চোখ না দিয়ে পারেন না ।হেলে দুলে দিব্যি হেঁটে চলেছেন মনোজ বাবু ।


যে পথ ধরে উঁনি আসছেন নিজের বাড়ির দিকে ,পথটা মোটেই খুব একটা ভালো নয় ।খুন জখম লেগেই থাকে রাত্রদিন ।এছাড়া অনেকে বলেন ,ফাঁকা শুনশান পথ দেখে অনেকে আত্মহত্যা করতে ও পিছুপা হয়নি ।ফলে বুঝতেই পারছেন ভূত প্রেত এর ও উত্পাত এর কথা শুনতে পাওয়া যেত ।কিন্তু মনোজ বাবুর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই ।সজাগ হয়ে এদিকে ওদিকে দেখতে দেখতে উঁনি চলেছেন ।ভয় আবার কি বস্তু ! ভূত বলে আবার কিছু আছে নাকি ?


নিজেই বলছেন - "সবাই আমাকেই ভয় পায় ,আমি আবার ভূত কে কোন দুঃখে ভয় পেতে যাবো , যতসব বুজরুকি জিনিস"।


কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ  ঝোপের পাশেই দেখলেন কেউ একটা পড়ে আছে ।কে সেটা বুঝতে পারলেন না উঁনি প্রথম দিকে ।একটু ভয় ও করছিলো ।কিন্তু লোভ সবেতেই ওনার ।যথারীতি সব লাজ লজ্জা পেরিয়ে এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে ।দেখলেন একটা নিশ্চল দেহ পড়ে আছে ।দেহটি একটি মেয়ের ।উপুড় হয়ে পড়ে আছে ।


ভালো ঘরের মেয়ে ।দেখে শুনে মনোজ বাবু সেটা বেশ ভালো ভাবেই বুঝলেন ।কৌতুহল বসত মেয়েটিকে ডাকতে যাবেন হঠাত্ চোখ গেলো ওনার মেয়েটির ডান হাতের দিকে ।হাতের মাঝ আঙুলে কি যেন একটা চকচক করছে ।ভালো করে মনোজ বাবু দেখার চেস্টা করলেন ।মাথাটা নীচু করে ঝুঁকে দেখতে গিয়ে মেয়েটির ঘাড়ের উপরে পড়েই গেলেন উঁনি ।কিন্তু মেয়েটির কোন সাড়াশব্দ নেই ।আরেকবার হাত ধরে নাড়লেন মনোজ বাবু ।তবুও কোন সাড়াশব্দ টের পেলেন না ।


বুঝলেন মেয়েটি জীবিত নেই ।মেয়েটি সেই উপুড় হয়েই পড়ে ।লোকের পকেট কাটতে মনোজ বাবু ওস্তাদ ।পকেটে সব সময় একটা ছোট ছুরি থাকত তার ।নিজেই চোর অথচ দেখুন আত্মরক্ষার সম্বল হিসাবে ছুরিখানা কাছে রাখতে কোনদিনই ভোলেন না উঁনি ।মৃত মেয়েটির হাতে হীরের আংটিটি দেখে মনোজ বাবুর চোখ চকচক করতে লাগল ।অনেক চেস্টা করলেন আংটিটি খুলে নেবার কিন্তু দেহটি শক্ত হয়ে যাবার কারনে সেটা করতে একটু অসুবিধা ছিলো ।উঁনি ছুরি দিয়ে মাঝের আঙুল টা কাটলেন ।মৃত মানুষ বলেই হয়ত সেই বেদনার জ্বালা সহ্য করতে হলো না মেয়েটিকে ।


আংটিটি এখন মনোজ বাবুর হাতে ।হাতের মুঠোয় নিয়ে আরো জোরে পা চালিয়ে রওনা হলেন বাড়ির দিকে তিঁনি ।পকেটে ভরে ফেললেন আংটিটি ।বাড়িতে পৌঁছে আগে ভাগে লুকিয়ে ফেললেন আংটিটি ।উঁনি যে কাজটি বেশ সন্তর্পণে করেছেন সেটা বুঝতে ওনার অসুবিধা ছিলো না ।তবুও বাড়িতে আসবার সময় চারিদিকটা একটু ভালো করে দেখে নিলেন তিঁনি ,কেউ তাকে দেখছে কিনা ?কিন্তু বাড়ির দিকে আসবার সময় কাউকেই ওনার চোখে পড়েনি ।


মনোজ বাবু একটা জামাকাপড় এর দোকানে কাজ করেন ।খুব একটা আয় তেমন হয়না ।বিয়ে করেননি ।একাই থাকেন একটা ছোট বাড়ি ভাড়া নিয়ে ।মা বাবা মারা গেছেন অনেকদিন ।একটা বোন ছিলো ,তার ও বিয়ে হয়ে গেছে বেশ অনেকদিন আগেই ।সুতরাং ঝাড়া হাত পায়ে এখন বাড়িতে বেশ ভালোই স্বছন্দে থাকেন মনোজ বাবু ।


এরকমভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো ।রাতে ঐ দিকটায় ভালোই ঠান্ডা পড়ত ।একদিন রাতে মনোজ বাবু বাড়িতেই ছিলেন ।শরীর খুব খারাপ ছিলো ওনার ।ঠান্ডায় ওনার জ্বর এসেছিলো ।বেশ দুর্বল ছিলেন ।এতদিনে ও আংটিটি উঁনি কাউকেই দেখাননি ।এমনকি বিক্রি করতে ও যাননি ।মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিলো ,যদি উঁনি বিক্রি করতে যান তাহলেই বিপদ ।লোকে সন্দেহ করবেন উঁনি হঠাত্ কোথা থেকে এরকম একটা মূল্যবান হীরের আংটি পেলেন ?


হঠাৎ দরজায় ঠকঠক ।


"এরকম সময় আবার কে আসলো ! যাই রে বাবা ! অতবার করে দরজা ধাক্কাবার কি আছে ?"


ঐ বলে তিঁনি দরজা খুললেন ।দেখলেন একটা মহিলা সাদা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে তার সামনে ।রূপবতী মহিলাটি ।কাপড়ের আড়ালে মুখটি ঢাকা ।তবুও বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটিকে দেখতে সুন্দর ।কিছু বুঝতে না পেরে মনোজ বাবু মেয়েটিকে ঘরের ভিতরে আসতে অনুরোধ করলেন ।মেয়েটি ও ঢুকে পড়ল ।মনোজ বাবু কারন জানতে চাইলে মেয়েটি বলল ,


"আমি অনেক দূরে থাকি ,যেতে যেতে পথ হারিয়ে ফেলেছি ।আপনার বাড়ির বাইরে আলো জ্বলতে দেখে ভাবলাম এখানে কেউ থাকেন হয়ত ।দেখলাম আপনি দরজা খুললেন ।কিছু যদি মনে না করেন ,আজকের রাতটা কি আমি এখানে আশ্রয় নিতে পারি?"


মনোজ বাবুর চোখ আবার লোভে ছলছল করছে ।এতো সুন্দরী একটা মেয়ে ।তারপর আবার একা ।একটা গোটা রাত ।আহা ,কত কিছুই না করা যেতে পারে !


চিরকালই এরকম খারাপ চরিত্র মনোজ বাবুর ।গুণের কোন শেষ নেই ।তাই এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন মনোজ বাবু ।


"হ্যাঁ ,হ্যাঁ , আমার কোন আপত্তি নেই ,তুমি থাকতেই পারো এখানে "।


মেয়েটি আর কোন কথা বলল না ।শুধু একটু হাসলো ।


রাত ১১ টা ।

মেয়েটি বলল "আপনি যদি আপত্তি না করেন ,আজকের রাতের খাবার রুটি ,তরকারি আমি করে দেবো ?"


মনোজ বাবুর আনন্দের আর শেষ নেই।

"হ্যাঁ ,হ্যাঁ ,আপনি আমার বাড়িটি কে নিজের বাড়িই মনে করুন ।আপনি রান্না করতে চান যখন করুন না !কোন অসুবিধা নেই আমার"।


আজকে তো সৌভাগ্যের শেষ নেই মনোজ বাবুর ।মনোজ বাবু লক্ষ্য করলেন মেয়েটির হাতের মাঝের আঙুল টা নেই ।ভাবলেন হয়ত কোন অ্যাকসিডেন্ট এ কাটা পড়েছে হয়ত ।উঁনি আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাইলেন না মেয়েটিকে ।রান্না করতে সময় লাগছে বলে মনোজ বাবু জানলার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন ।শরীরটা ভালো নেই বলে ,চোখটা কখন লেগে এসেছে কোন হুঁশ নেই ওনার।


"দাদা ,আপনার খাবারটা ! রান্না হয়ে গেছে ,উঠে একটু খেয়ে নিন"।


"আপনি খাবেন না ,শুধু রান্না করলেই হবে আমার জন্য ? খেতে ও তো হবে নাকি ?"


"আপনি খেয়ে নিন,আমি পরে খাবো"।


মনোজ বাবু রুটি ছিঁড়ে মুখে দিলেন ।তরকারি খেতে অসাধারণ হয়েছে ।এরকম রান্না আগে উঁনি কোনদিন খাননি ।কিন্তু শেষের টুকরো মুখে দিতে গিয়ে গলার কাছে একটা শক্ত জিনিস আটকে গেলো ওনার ।অনেক চেস্টা করলেন কিন্তু দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে ওনার ।কি অবস্থার মধ্যে পড়লেন,নিজেই বুঝে উঠতে পারলেন না উঁনি ।


মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জল চাইলেন ।

দেখলেন একটা হাত এগিয়ে আসলো তার দিকে ।মাঝের আঙুলটা নেই ।রক্ত ঝরছে সেখান দিয়ে ।মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন ,মেয়েটির ভয়ানক মুখটি ।সৌন্দর্য্য আর নেই ।চুলগুলো উড়ছে ।


"চিনতে পারলি আমায় মনোজ ? আমি সেই মেয়ে যার আংটি তুই চুরি করেছিলি ।এখন সেই আংটি তোর গলায় আটকে আছে ।শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তোকে ।তুই কি ভেবেছিলি ,এর কোন শাস্তি তুই পাবি না ?নে ,এবার ভোগ কর।"


সামনে আর কেউ নেই দাঁড়িয়ে ।যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে শেষ হয়ে গেলো মনোজ ।লোভে পাপ ,পাপে মৃত্যু ।


সমাপ্ত

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু