বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

সুইসাইড নোট

রিতা আর আইভি ঘরে বসে ।ওরা ছোট থেকেই একে অপরের খুব ভালো বন্ধু ।আজকে আইভি ডেকেছে রিতা কে ওর বাড়িতে নৈশ ভোজের জন্য ।আজকে আইভির বাড়িতে কেউ নেই ।সব দেশের বাড়িতে গেছে ।বাইরে বর্ষার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ।এদিকে কারেন্ট নেই ।একটা ছোট মোমবাতি জ্বলছে চোখের সামনে ।সেই আলোতেই ঘরে যতটা আলো হয়েছে তাতে একে অপরের মুখ দেখা যাচ্ছে ।


হঠাৎ ঘরের মধ্যে থেকে আইভি নিয়ে আসলো একটা চিঠি ।সেটা রিতার হাতে দিলো ।তাতে লেখা ছিলো -


"ঠাকুমা ,তোমার দেখা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে করা সম্ভব নয় ।সেই জন্য আমি চলে যাচ্ছি ।"


রিতা : কার চিঠি এটা আইভি ?


আইভি : আমার দাদার ! যে দাদা আজকে আর আমাদের মধ্যে নেই ।যার শেষ কাজটা সম্পন্ন করতে মা বাবা আর বাড়ির সবাই দেশের বাড়িতে গেছে তার দেওয়া চিঠি এটা ।


রিতা : তোর কাছে কিভাবে আসলো এই চিঠি ,মানে তুই কোথায় পেলি এটা ! এটা কি তোর দাদার মৃত্যুর আগে লেখা চিঠি ?


আইভি : না মৃত্যুর পরে লেখা চিঠি ।


রিতা : সে আবার কেমন কথা ?মৃত্যুর পরে এসে আবার কেউ চিঠি লিখতে পারে নাকি ? তুই আমায় ছোট বেলার মত ভূতের ভয় দেখানোর জন্য এসব  করেছিস না রে ?


আইভি : না আমি করিনি রে ! এটাই সত্যি।


আইভি : দাদা মারা যাবার পরে ঠাকুমা ভীষণ অসুস্থ হয়ে যান ।তারপর একদিন রাতে এতো জ্বর আসে যে ডাক্তার বলে দিয়ে যান আর হয়ত ঠাকুমা বাঁচবেন না ।সেদিন রাতে আমি আমার ঘরে পড়াশোনা করছিলাম অনেক রাত পর্যন্ত ।হঠাত্ দেখি প্রায় মধ্যরাতে ঠাকুমা উঠে এলো আমার কাছে ।আমায় যে নাম ধরে ডাকতেন সেটা ধরে আর ডাকলেন না ।দাদার মত গলায় ডাকলেন আর বললেন

"ঝিমলি সরে যা ওখান থেকে ,আমি লিখব "।


আমি সরে গেলাম আর ঠাকুমা দেখলাম নিজের হাতে গোটা গোটা বাংলায় এই চিঠিটা লিখলেন আমার সামনে ।তারপর একটা পেপার ওয়েট দিয়ে চিঠিটা চাপা দিয়ে পরে গেলেন মাটিতে ।তারপর কিন্তু আর ঠাকুমার জ্ঞান ফেরেনি ।ঠাকুমা তার পরের দিনকেই মারা যান ।প্রথমে দাদা তারপর ঠাকুমা ।আমার চোখের সামনে দু দুটো প্রাণ চলে গেলো ।


রিতা : ঠাকুমা লিখলেন ? হয়ত উঁনি লিখতে পারতেন তুই সেটা জানতে পারিসনি কোনদিন ।কারন তুই তাকে জিজ্ঞাসা করিসনি ।


আইভি : আমার চোখ এতো ভুল ও দেখেনা রিতা ,কারন আমার ঠাকুমা কোনদিন লেখাপড়া শেখেননি ।সেটা আমি খুব ভালো করে জানতাম আর সেদিন যে ঠাকুমা সেটা লেখেননি ,ঠাকুমার ভিতরে যে ছিল সে লিখেছে , সে এখন ত তোর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে রে ।


রিতা : কি যা তা বলছিস বলত ? তুই ত আইভি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস আর তোর ঠাকুমার মধ্যে ত সেদিন তোর দাদার আত্মা ঢুকেছিলো ।তাহলে শুধুশুধু আমায় কেন ভয় দেখাচ্ছিস বলতো ?


হঠাৎ মোমবাতি টা ঠিক সেই সময় দমকা একটা হাওয়ায় নিভে যায় ।আর রিতা কে কেউ ডেকে ওঠে ঘরের মধ্যে ওর নাম ধরে ।রিতা কে আইভির দাদা মণি বলে ডাকত ।হঠাৎ পুরুষালী কণ্ঠে কেউ ডেকে ওঠে


"এইইই মণি ,মণি ! আমার কথা এর মধ্যে ভুলে গেলি কিকরে ? ওরা ত সবাই আমার কাজ করতে দেশের বাড়িতে গেছে ।তুই ত তোর ছোটন দার সাথেই এতক্ষণ বসে আছিস এই ঘরে ।যাবার আগে ত দেখাই হয়নি ।হাহাহাহাহাহাহা হাহাহাহাহাহাহা হাহাহাহাহাহাহা হাহাহাহাহাহাহা "।


রিতা কোনরকমে সেদিন প্রায় পাশের সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে নীচে নামতে পেরেছিলো আর এতো জোরে দৌড়েছিল প্রাণটা হাতে নিয়ে যে হয়ত এটাই তার শেষ দিন এমন ।


সমাপ্ত

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু