বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

ফেসমোফোবিয়া

আজ আমি এই ফোবিয়া বিষয়টির উপরে কিছু লিখতে চাই ।ভয়ে যেন শরীর ঠান্ডা হয়ে এল, গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল তাঁর, থরথর করে কাঁপতে শুরু করল লোকটাই। কিংবা ঘরে ঢুকেই চিৎকার দিয়ে মূর্ছা গেলেন এক গৃহিণী। এমন ঘটনার মুখোমুখি আমরা কখনো কখনো হই বৈকি। আমাদের মনে নানা ধরনের ‘ফোবিয়া’ বা ভীতি থেকেই এমনটা হয়ে থাকে। নানা বয়সের বিপুলসংখ্যক মানুষ এমন নানা রকম ভীতিতে আক্রান্ত। সাধারণত ফোবিয়া বলতে আমরা ভয়টাকেই বুঝে থাকি। তবে ফোবিয়া মানে শুধু ভয় নয়। ভয়ের সাথে জড়িয়ে থাকে অকারণ দুশ্চিন্তা, আতঙ্কিত ভাব আর প্রচণ্ড রকমের একটা বিরক্তি। আর সেই সঙ্গে থাকে ভয়ের পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা। অপছন্দের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারার অক্ষমতা থেকেই জন্ম নেয় ফোবিয়া। উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার যথার্থ, যুক্তিসম্মত কারণ থাকলে সেটা ভয়। কিন্তু ভিত্তিহীন কারণে দুশ্চিন্তার নামই ফোবিয়া। সেই ফোবিয়া থেকে কেউ যখন এমন কাজ করতে শুরু করে যেটা নিজের এবং অন্যের অসুবিধা, ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন সেটা রোগ। চিকিত্‍সাশাস্ত্র অনুযায়ী ফোবিয়া এক ধরনের অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার।


ফোবিয়া হওয়ার কারণ:


১. মানুষের আচরণ মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যাল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিউরোকেমিক্যালের সঞ্চালনের তারতম্য ঘটলে আচরণে পার্থক্য দেখা যায়।


২. অনেক ক্ষেত্রে ফোবিয়া বংশগত। তবে মা-বাবার যে ধরনের ফোবিয়া সন্তানেরও একই ফোবিয়া হবে এমন কোনো কারণ নেই। অনেক সময় মা-বাবা নিজেরা অ্যাংজাইটির শিকার হলে বাচ্চাদের মধ্যেও সেই ডিজঅর্ডার থাকলে তা বুঝতে পারে না কারণ তারা ওই রকম ব্যবহারে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখতে পান না।



৩. বয়স বা অন্য কোনো শারীরিক অসুবিধা মানুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। সেই কারণে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা হারায়। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মেকানিজমে এই দুর্বলতা মানুষের আচরণে একটা পরিবর্তন আনে। সেই পরিবর্তনটাই ফোবিয়ার আকার ধারণ করে। এছাড়া সাইকোসোমেটিক ডিজঅর্ডার যেমন ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, ডায়াবেটিস এগুলো থেকেও কখনো কখনো সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী ফোবিয়ার জন্ম হতে পারে।



ফোবিয়ার শারীরিক লক্ষণ: ১. হার্টরেট বেড়ে যাওয়া। ২. গলা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া। ৩. প্রচণ্ড ঘাম। ৪. বুকে ব্যথা। ৫. পেশিতে টান, কাঁপুনি। ৬. বমিবমি ভাব। ৭. নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা। ৮. পেটে অসুবিধা, ডায়রিয়া। ৯. মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।


*ফোবিয়ার মানসিক লক্ষণ: ১. অমূলক ভয়ের পরিস্থিতি, বাইরের লোকজন এড়িয়ে চলা। ২. আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। ৩. হতাশ লাগা।



আমরা অনেকেই অনেক রকম কারনে ভয় পাই ।কিন্তু কোন কারণকে নিয়ে যখন আমরা অত্যাধিক ভয় পেতে শুরু করি যা আমাদের মস্তিষ্কে সম্পূর্ণরূপে বাসা বেঁধে ফেলে ,

শুতে ,বসতে ,খেতে ,জাগতে , হাঁটতে ,চলতে আমাদের চোখের সামনে আমাদের ভয়ের কারণটা রয়েছে মনে হয় তারই নাম "ফোবিয়া"।এটি হলো মানুষের মস্তিষ্ক প্রসূত কল্পনা ।যা একটা সময় মানসিক রোগের আকার ধারণ করে নিতে পারে ।বলতে পারেন্ ,কোন কিছু নিয়ে অত্যাধিক ভাববার ফলে আমরা হ্যালুসিনেশন এর শিকার হয়ে পরি ।হ্যালুসিনেশন মনের মধ্যে তৈরি করা কোন চরিত্রকে বাস্তবে দেখা বা ইমাজিন করা বোঝায় আর বাস্তবে কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে চোখের সামনে তার বারংবার উজ্জ্বল উপস্থিতির অনুভব হলো ফোবিয়া ।আসলে, ফোবিয়া ব্যাপারটা বেশ আতঙ্কজনক।কোনও জিনিষ নিয়ে সামান্য ভয় পাওয়া এক কথা, আর অনর্থক চিন্তা বা প্যানিক করা, ভয়ের জিনিষ এড়িয়ে চলার প্রবণতা নিয়ে অকারণ কোনও আতঙ্ক ভুগতে থাকা আলাদা- একেই ফোবিয়া বলে। দুটি বিষয়ের মধ্যে খুব বেশী পার্থক্য না থাকলে ও ফোবিয়া একটা মারত্মক ব্যধি বলতে পারেন।যার থেকে বেরোতে পারা খুব কষ্টের ।আজ সেরকমই একটা ফোবিয়ার কথা আমি আলোচনা করব ।এই ফোবিয়াটির নাম হলো "ফেসমোফোবিয়া " যা ভূতের ভয় থেকে জন্ম নেয়।


‘ভয়’ শব্দটির সাথে আমরা সকলেই কমবেশি জড়িয়ে আছি। বিভিন্ন অলৌকিক বা অশরীরী ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের ‘ভূতের ভয়’ নামক অনুভূতি আবর্তিত হয়। আত্মানির্ভর বা পারলৌকিক বিষয়ের উপর কোনো চলচ্চিত্র বা গল্পের বইয়ের রেশ যখন মনের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে উঁকি দিয়ে যায়, তখন এক গা ছমছমে অনুভূতির জন্ম নেয়। কারো কাছে ব্যাপারখানা নিতান্তই রোমাঞ্চের, আবার কারো কাছে জীবন কেড়ে নেয়ার মতো হুমকিস্বরূপ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অলৌকিক বা ভূতের অতিরিক্ত ভয়কে এক ধরনের ফোবিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার নাম ‘ফেসমোফোবিয়া‘।


ফেসমোফোবিয়া কী?

আপনি হয়তো খুব ভয়ের একটি চলচ্চিত্র দেখলেন বা একটা ভূতের বই পড়লেন। কিন্তু গল্প শেষ হয়ে গেলেও গল্পের চরিত্রগুলোর সাথে অনেক বেশি একাত্ম হয়ে আছেন। গল্পের চরিত্রগুলো এতটাই জীবন্ত ছিল যে চরিত্রগুলো যেন কল্পনা থেকে বাস্তবে উঠে এসেছে। আর মনের অজান্তেই নিজের চারপাশে এক ভৌতিক পরিবেশের সৃষ্টি করে নিয়েছেন।রাতে যখন ঘুমোতে গেলেন, তখন গল্পের সবগুলো ভৌতিক দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো। বিছানায় একা শুয়ে আছেন, কিন্তু মনে হলো কীসের যেন একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। দরজায় কেমন যেন একটা আওয়াজ হচ্ছে। ঘরের কাঠের আসবাব থেকে ঘুনে ধরার আওয়াজ আসছে। মাথার কাছে রাখা ঘড়িটার টিক টিক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে যেন। সব মিলিয়ে এক অদ্ভুতুড়ে পরিবেশ।


জানলার পর্দাটা খোলা ছিল বলে বাইরের ল্যাম্পপোস্টের কিছুটা আলো ঘরে ঢুকে পড়েছে। আধো আলো ছায়াতে বিছানার পাশেই যেন কারো অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে রাখতে চাইছেন, তবু কেন জানি চোখ খুলে ফেলছেন বারবার। শরীরের উপর চাদরটা দিয়ে মুখটা ভালোভাবে ঢেকে দিলেন, কিন্তু মনে হতে লাগলো কেউ একজন যেকোনো সময় চাদরটি মুখ থেকে সরিয়ে নেবে । আবার বিছানার পাশেই হয়তো গল্পের সেই সাদা মুখের বাচ্চাটি গুটি দিয়ে বসে আছে।চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই, তবুও চোখ খুলতে সাহস হচ্ছে না। চোখ খুললেই হয়তো লাল শাড়ি পরা মেয়েটিকে দেখা যাবে, যে কিনা রাতের আঁধারে এসেই গলা টিপে দিয়ে যেত। চাইলেই বৈদ্যুতিক বাতিটি জ্বালিয়ে কিছুটা হলেও ছাড় পাওয়া যায় কিন্তু সকালেই নিন্দুকের টিপ্পনি সইতে হবে। ভীতু নামটা যেন কিছুতেই গায়ে মাখা যায় না।



এরকম ধরনের ব্যাপার ঘটে থাকে এই ধরনের ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষজনের ।ভূত দেখতে না পেয়ে ও ভূতের মতোন কিছু দেখছেন ।চোখের সামনে বিষয়টির একটি চিত্র অঙ্কন করে নিয়েছেন ।দেখতে পারছেন চোখের সামনে তার উপস্থিতি কে ।ঠিক যেভাবে সিনেমা বা গল্পে বর্ণনা করা ছিলো সেই একইভাবে আপনি ও কল্পনা করছেন আপনার ঘরের মধ্যে কিমবা বাইরে তার উপস্থিতি কে ।অর্থাত ভূত নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার উপস্থিতির বিষয়টি কে নিয়ে মানুষের মনে যে তীব্রতর ভয়ের সূত্রপাত সেটাই "ফেসমোফোবিয়া"।



তবে ফেসমোফোবিয়ায় আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে ভয়ের মাত্রাটি অনেক বেশি। তারা একা ঘরে থাকতে ভয় পায়, অন্ধকারকে অসম্ভব ভয় পায়, নিস্তব্ধতা সহ্য করতে পারে না, শহরে বাস করলে গ্রামে কোনভাবেই রাত কাটাতে চায় না, ভৌতিক গল্প, সিনেমা বা ছবি থেকে অনেক দূরে থাকেন। তবে এই ধরনের ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ প্রদর্শন করে থাকেন।


১। একা ঘুমাতে ভয় পান।

২। পুরোপুরি অন্ধকার ঘরে ঘুমাতে চান না।

৩। মনের মধ্যে সবসময় অলীক ভূতের ছবি ভাসতে থাকে।

৪। যেকোনো পরিস্থিতিতে ভূতের অস্তিত্বের আভাস পান।

৫। মাঝে মাঝে ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

৬। সবসময় মুখে চিন্তার ছাপ দেখা যায়।

৭। নিদ্রাহীনতায় ভুগতে থাকেন কারণ ভূতের ভয়ে ঘুমাতে পারেন না।

৮। বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্রের প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।


ফেসমোফোবিয়া থেকে মুক্তির সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হলো ভূতের ভয় মন থেকে পুরোপুরি বের করে ফেলার চেষ্টা করা। ভূতের ভয়কে যত বেশি প্রশ্রয় দেয়া হবে, ভয় ততই মনের মধ্যে স্থায়ী হয়ে যাবে। তাই সর্বপ্রথম নিজের মনকে বোঝাতে হবে, ভূত বলে কিছু নেই। এটি সম্পূর্ণ নিজের মনের ভুল ধারণা। আর যদি আপনি ভূতে বিশ্বাস করে থাকেন, তবে চেষ্টা করতে হবে ভূতের দেখা পাওয়ার চেষ্টা করা। কারণ আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে ভূত যদি থেকেও থাকে, তা কখনো সরাসরি আপনাকে আঘাত করতে পারবে না, বরং একমাত্র ভয়ই হয়ে উঠতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ। তাই মনকে শক্ত করে ভূতের মুখোমুখি হওয়ার জন্যে মনকে গড়ে তুলুন।বিজ্ঞানের এই যুগে ভূতে বিশ্বাস রাখা খুব কষ্টসাধ্য। তবুও যদি মনের মধ্যে ভূতের ভয় বাসা বাঁধে, তবে মনের বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাকে জাগ্রত করে তুলুন। কোনো কিছুর প্রমাণ ছাড়া সহজেই মেনে নেয়ার অভ্যাস দূর করতে হবে।


ভূতের ভয় বেশী যাদের তারা পারলে ভূতের গল্পের বই পড়া আর সিনেমা দেখা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকুন ।সেরকম ভয় কাজ করলে আপনারা মোন বিশেষজ্ঞের কাছে যেতেই পারেন।বিজ্ঞানের এই যুগে ভূতের ভয় একধরনের বিলাসিতা বা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সমাপ্ত

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু