বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

স্লিপ প্যারালাইসিস

কত অজানা রহস্য আমাদের পদে পদে আতঙ্কিত করে তোলে, বিপর্যয় ডেকে অনেক আমাদের সুস্থ জীবনকে অতিবাহিত করবার ক্ষেত্রে |আজকে এরকমই একটা বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম যা আমার কাছে বড্ড অদ্ভূত ও তার পাশাপাশি অতিপ্রাকৃতিক বলে মনে হয়েছে |


ধরুন আপনি বিছানায় শুয়ে আছেন। ঘরের জানালা বা দরজা খোলা। কিন্তু তা আপনি খোলেননি। ঘরে আপনি ছাড়া  আরও দু’জন আছে। আপনি তাদের দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু উপলব্ধি করছেন তারা আছে। তাদের কথপোকথন শুনতে পাচ্ছেন আপনি। ষড়যন্ত্র করছে তারা। আপনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র।


হঠাৎ মধ্যরাতে আপনার ঘুম ভেঙে গেল। আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে আছে বলে অনুভব করলেন। এত ভারী কিছু যে ঠিকঠাক নিশ্বাসই নিতে পারছেন না। যখন টের পেলেন, আপনি চাইলেও শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করতে পারছেন না। এটি সাধারণত একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার আগের মুহূর্তে ঘটে।আপনি নড়তে পারছেন না। চিৎকার করছেন, কিন্তু তাতে কোনো শব্দ হচ্ছে না। বুক চিঁড়ে হৃৎপিণ্ড বেরিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এমন অনুভূতির সঙ্গে কম-বেশি অনেকেই পরিচিত। যার নাম স্লিপ প্যারালাইসিস। বাংলায় যেটাকে বোবায় ধরা বলে।


বোবায় ধরা (ইংরেজি: Sleep paralysis) হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়া বা ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়ে শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ  নাড়াতে না পারার একটি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। অন্যভাবে, যখন কাউকে বোবায় ধরে, তখন সে তার শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াতে পারে না, অসাড়তা অনুভব করে। এটি ঘটে একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার আগের মুহূর্তে |বোবায় ধরা হচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থা এবং জাগরণের মধ্যবর্তী একটি অবস্থান। এটি ঘুমানোর মুহূর্তে অথবা ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগের মুহূর্তে আপনার সাথে ঘটতে পারে, সেটা আপনার সাবকনশাস মাইন্ড বুঝবে কিন্তু আপনি তা বুঝতে পারবেন না|আপনার মাইন্ড আপনাকে সেই মুহূর্তে যা অনুভব করাবে, আপনি তা শুধু অনুভব করতে পারবেন কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারবেন না, এটি একটা বিচিত্র অবস্থা বলতে পারেন, যেখানে মানুষ চোখের সামনে কিছু দেখে কিন্তু কোন অভিব্যাক্তি প্রকাশ করতে পারেনা কারণ সে ঘুমের ঘোরে থাকে | বোবায় ধরা ব্যক্তিটি প্রায়ই একটি ভয়ের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়, ভয়ের কোন দৃশ্য দেখতে পারে (যেমন, ঘরের ভেতরে কারো অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি) এবং সেই মুহূর্তে বোবায় ধরা ব্যক্তিটি নড়তে পারে না।


শব্দটি অপরিচিত মনে হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি মোটেই আমাদের অপরিচিত না। আমরা অনেকেই কোনো না কোনো সময় ঘুমের মধ্যে এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে  দিয়ে যাই। অনেক সময়ই যথারীতি ঘুম থেকে জেগে মনে হয়, কেউ একজন অন্ধকার ঘরে আপনাকে ধরে রেখেছে। আপনি মাথাটা সামান্য ঘুরিয়ে দেখতে চাইছেন, কিন্তু পারছেন না। চিৎকার করছেন অথচ কেউ শুনতে পাচ্ছে না। পালানোর চেষ্টা করছেন অথচ কেউ হয়তো আপনার বুকের ওপর চেপে বসে আছে।


স্লিপ প্যারালাইসিস এমন এক অবস্থা যখন পুরোপুরি সজাগ অবস্থায় আপনি মোটামুটি পক্ষঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। অনেক কারণেই এমন অবস্থা হতে পারে। হতে পারে নিদ্রাহীনতা বা হঠাৎ ঘুমে আচ্ছন্নতা রোগ যাকে বলে 'নারকোলেপসি'। আবার কিছু সময়ের জন্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণেও এমন হতে পারে। আবার স্নায়বিক সমস্যার কারণেও স্লিপ প্যারালাইসিস অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

এই অবস্থায় যেহেতু কথা বলা যায় না বা নড়া যায় না, কিন্তু মস্তিষ্ক সজাগ থাকে, তাই ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়া স্বাভাবিক। ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে হ্যালুসিনেশন।


ঘুমের ঘোরে আমরা নানা রকম স্বপ্ন দেখি। ভালো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া থেকে উঁচু কোথাও থেকে পড়ে যাওয়া স্বপ্নের মধ্যে থাকে সবই। স্বপ্ন আসলে আমাদের অবচেতনে ঘটে চলা ঘটনাবলী। গভীর ঘুমের দুঘন্টা পর থেকে আমরা স্বপ্ন দেখা শুরু করি। স্বপ্ন দেখার সময়কে Rapid eye movement period বলা হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় যে সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে না সেই সময়টাকে non rapid eye movement period বলা হয়।


পরিত্রানের উপায়


বোবায় ধরা আসলে গুরুতর কোনো রোগ বা এমন কিছুই নয়। তাই এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। তবে এটি যদি বাড়াবাড়ি রকমের হয় অর্থাৎ আপনার ঘুমে নিয়মিতভাবে ব্যাঘাত ঘটায় বা উদ্বিগ্নতার দরুণ আপনার রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বা কমে যায়, তখন এই বোবায় ধরা থেকে বের হবার জন্য আপনাকে কিছুটা উদ্যোগী হতে হবে বৈকি।


ঘুমানোর পদ্ধতি পাল্টান। বিশেষত উপুড় হয়ে কখনোই ঘুমাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট বড়ি সেবন করতে পারেন ঘুমের জন্য। অন্যান্য নিদ্রাজনিত বা মানসিক সমস্যা থেকে থাকলে সেগুলোর চিকিৎসা নিন।


বোবায় ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিস থেকে বাঁচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজ উপায়টি হলো ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সমস্যা সাময়িক। কিন্তু যদি এটি ঘন ঘন হতে থাকে এবং কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না।


সমাপ্ত

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু