বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

তোমায় হারাবো আমরা

হারাবো তোমায় আমরা


সংযুক্তা ব্যানার্জী চক্রবর্তী


তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত-- মোবাইলটা বেজে উঠলো সকাল নয়টা নাগাদ। ছুট্টে এসে ফোনটা ধরলাম। ওপার থেকে এক মহিলা কন্ঠ বলে উঠলো , বৌদি, শুভদা বাড়ী নেই? একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললাম , না থাকার তো কোনো কারণ নেই, এখন তো ছুটি শুরু হয়ে গেছে। তা আমার ননদিনীর নামটা জানতে পারি কি?  সুরেলা কন্ঠ খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, আমি পাপিয়া, আসলে শুভদার ফোনটা সুইচ অফ আসছে তো তাই সেকেন্ড নম্বরে কল করলাম। একটু দিন না শুভদাকে, আমার খুব দরকার।

মনের বিরক্তি মনে চেপে মুখে হাসি মাখিয়ে বললাম, ঘুম থেকে উঠলে বলে দেব।মুখটা হাসি হাসি রেখেছিলাম কিন্তু মনে পরে গেল আমি ভিডিও কলে কথা বলছি না, তাই বিরক্তিকর মুখটাই বহাল রাখলাম।সুরেলা কন্ঠী বিস্ময়ের সাথে বলল, ওমা তাই, ঠিক আছে বৌদি পরে কথা বলবো। অসহ্য, করোনার জন্য একটু বেলায় ঘুম থেকে উঠি ঠিকই। কিন্তু তারপর আর সময় পাই?  করোনাতঙ্কে সবার ছুটি - মেয়ের কলেজ ছুটি, ছেলের স্কুল ছুটি, বরের আবার ঘরে বসে বসে অফিসের কাজ। কাজের দিদিকেও সবেতন ছুটি দিয়েছি ভয়ে, মানে তার ভালো চেয়ে বলছি বন্ধুদের, আসলে করোনার ভয়ে, পাছে তার ছোঁয়ায় কিছু (করোনা)হয়ে যায়!  আমায় ছুটি কেউ দিল না। সবাই বাড়ীতে, তাই আজ সকালে লুচি তো রাতে পরোটা পাঠার মাংস, পরেরদিন ঘরে তৈরী বিরিয়ানি।  মরতে শখ করে একদিন ইউ টিউব দেখে তৈরী করেছিলাম, এখন তাদের মাঝে মাঝেই খেতে শখ হয়!  আর ঐ লোকটা সারাদিন ল্যাপটপ মুখে বসে থাকবে জন্য আগেই বলে রেখেছে ঘনঘন চা দিতে। কারণ গলা শুকিয়ে গেলে করোনা ধরবে!  চা করলে ছেলেমেয়েও পায়, আমিও এক কাপ খাই তবে কাজ করতে করতে ভুলে গেলে সেটা ঠান্ডা হয়ে যায় বেশীরভাগ সময়।


তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত -- --  ওরে বাবা আর পারি না। তিন মূর্তি ঘুমে কাদা।দৌড়ে এসে ফোন ধরলাম। দিদি আমি পিকু বলছি। পিকু আমার ফেসবুক ভাই। আবার হাসিমুখে বললাম, বল ভাই কি খবর। পিকু যা বলল তাতে আমার ভয়ই লাগলো। ও বলল, দিদি আমার তো কলেজ বন্ধ তাই তোমার সাথে দেখা করতে যাব ভাবছিলাম। তুমি কবে ফ্রি থাকবে বলো তো?

আমি আবার ফ্রি থাকবো কিরে আমার কাজের শেষ নেই। আর তুই সেই যাদবপুর থেকে বেহালা আসবি এই সময়, নারে ভাই, তুই সাবধানে থাক, এখন দেখা করতে আসতে হবে না। যদি করোনা আমায় না ধরে তাহলে নিশ্চয়ই একদিন দেখা হবে। এখন বাড়ীর বাইরে বের হোস না।পিকু একটা কলেজে পড়ায়। ও বলল, ও দিদি তুমি এত সেকেলে কেন গো! আমরা তিন বন্ধু মিলে এই ছুটিতে শান্তিনিকেতন যাব ঘুরতে। আরে ছুটির মজাটা তো নিতে হবে নাকি!

আমি অল্প শিক্ষিত মেয়ে মানুষ, কি আর বলবো। তবু সাহস করে বললাম, দেখ শান্তিনিকেতনে না অনেক বিদেশী আসে যায়, সাথে করোনাও আসতে পারে। তাই আমার মনে হয় এখন ঘোরাঘুরি না করাই ভাল। এবার পিকু একটু বিরক্ত হয়েই বলল, তুমি না একদম আমার মায়ের মত গেঁয়ো গেঁয়ো কথা বলছো। রাখছি। রাখো বাপ, আমার বাড়ী এসো না, আমাকে জ্বালাতে।

সারাদিনের কাজ শেষ করে দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর মোবাইল নিয়ে বসে মাথা ঘুরতে লাগলো। পিকু বেলেঘাটা হাসপাতাল থেকে ছবি দিয়েছে, লিখেছে প্রিয় বন্ধু অনিকেতের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ায় ওদের দুই বন্ধুকেও টেষ্টের জন্য আসতে হয়েছে। আমি পিকুর পোষ্টেই দেখেছিলাম অনিকেত দিনকয় হলো কেরালা থেকে এসেছে। হে ভগবান রক্ষা করো সবাইকে।


সতর্ক হও সবাই বলছি কিন্তু অনেকেই বুঝতেই পারছে না কেন এত হাতপা ধোয়ার হিড়িক। আমার কাজের দিদিকে ছুটি দিতে সে কাঁদো কাঁদো মুখে বলল, আমার তো কোনো অসুখ করেনি বৌদি, আমাকে এভাবে ছাড়িয়ে দিচ্ছো কেন? আমি বোঝালাম, ছাড়াই নি ছুটি দিচ্ছি, কারণটাও বললাম। তবে মুখ দেখে আমি বুঝলাম ও কিছুই বোঝে নি। ব্যাগটা নিয়ে যেতে যেতে বলছিল, বৌদির যত বয়স বাড়ছে তত শুচিবাই  বাড়ছে। আল্লা রে আমি কৈ যাই!!!

মু্ড়ির দোকানে চিড়া মুড়ি কিনছি। কর্মচারী ছেলেটি মালিককে বলছিল, দাদা আমি কয়দিন ছুটি নেবো, চারিদিকে একটা রোগ এসেছে। মালিক বলল, ফালতু কথায় কান দিবি না একদম, আর না আসলে টাকাও পাবি না। কেউ কাউকে ছুঁয়ে দিলে কোনো রোগ হয় না, এসব মোবাইলে রটে। আমি থতমত খেয়ে গেছিলাম এসব শুনে। পরে বললাম, রোগটা সম্পর্কে, যেটুকু বুঝেছি। তাতে মালিক রাগ হলো।


বাড়ী থেকে বের হলেই ফিরে সোজা বাথরুম, জামাকাপড় টু নিজে ডেটল ওয়াশ করছি। কাল তো একখান ফাটাফাটি হাতের ছবি পেলাম। হাতের মালকিন ঘন্টায় ঘন্টায় কখনো বা আরো বেশী স্যানিটাইজার আর হ্যান্ডওয়াশে হাত ধুচ্ছে। বাড়ীতে নিজের ছোট ছেলেমেয়ে প্লাস পোষ্য আছে। হাত ফেটে ফাটাফাটি চিত্র।


যাই হোক, টাকাপয়সা ধরলেও সবার হাত ধোয়া উচিৎ। সবাই সাবধানে থাকলে আমরা পারবো নিশ্চয়ই। আমারা সবাই নিজেকে ও নিজের সন্তানকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু আমরা যদি ধৃতরাষ্ট্রের মত ব্যবহার করি তাহলে তো সন্তানকে রক্ষা করা যাবে না। তাই বাড়ীর কারো শরীরে করোনা ভাইরাস এসেছে সন্দেহ হলে আগে ডাক্তারের কথা মত চিকিৎসা করানো উচিৎ। কারণ অন্ধ ভালোবাসা দিয়ে অসুস্থকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে চারিদিকে রোগ ছড়িয়ে সাময়িক আনন্দ থাকলেও সেটা স্থায়ী হয় না। তাই আপনজনের চিকিৎসা করানোর সুযোগটা নেওয়া উচিৎ। আমি ডাক্তার নই, বিরাট কোনো পোষ্টে থাকার যোগ্যতাও নেই কিন্তু আমি একটা সংসার ভালোবাসা, মায়া মমতা দিয়ে চালাই। হয়ত এটা পড়ে অনেকেরই মনে হবে ফালতু সংসারের মায়ায় জড়িয়ে আছি আমি। হ্যাঁ, সংসার সুখের হয় রমণীর ভালোবাসার বাঁধনে।অন্ধ স্নেহে নয়।


চেষ্টায় কি না হয়। আমরা সবাই চাইলে আমরা জয় করবোই, করোনাকে  হারাবোই - আমরা হারবো না।


গাইতে গাইতে শুভদিনের সূচনা করি -- আমরা করবো জয়, আমরা করবো জয়, আমরা করবো জয় নিশ্চয় -------

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু