বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

অনুরাধার চেম্বার (১৪)

অনুরাধার চেম্বার (১৪)


সংযুক্তা ব্যানার্জী চক্রবর্তী


এই এক মেয়ে, সুন্দর নতুন সংসার নিয়ে মেতে ছিল, ভালো ছিল। এখন করোনাতঙ্কে সবাই ঘরে থাকায় ওর বর ওকে সংসারের কাজে খুব সাহায্য করছে ফলে ওর অফুরন্ত সময়। তাই ও মনের সুখে ফোনচেম্বার খুলে বসেছে বন্ধুর। আর আমাকে বলে যাচ্ছে এত এত গল্প। আচ্ছা, তোমরাই বলো তো  আমার অত সময় কৈ!  আমার বর একটাও কাজ করে না। একটু চা করতে পারলেও হত, না সে আশায়ও বালি। যাই হোক, বন্ধু বলে কথা, তাই এত রাতেই বসলাম একটু লিখতে।


২২শে মার্চ জনতা কার্ফু ছিল। পরেরদিনই অনুরাধার কাছে প্রথম ফোনটা আসে সামনের বাড়ীর বৌদির।  বৌদি শান্ত মানুষ, ধীরে ধীরে যা বললেন, তা হল, আজ বিকেলে বৌমার বাবা এসে বৌমাকে নিয়ে যাবে জানিয়েছেন।আর তারপর থেকে ছেলে ছাদে গিয়ে বসে আছে আর বৌমা কেঁদে ভাসাচ্ছে।  বৌদির কাতর ডাক, অনু একবার আসবে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না কি হলো ওদের!  অনুরাধা -- না না আমি আজ বের হবো নাগো বৌদি, তুমি বরং পাপুকে বলো ও যেন  একবার আমায় ফোন করে এক্ষুনি।   বেশ কিছুক্ষণ পরে পাপু ফোন করলে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো অনুরাধা।


ঘটনাটা হলো গত ১১ই মার্চ পাপুর বিয়ে হয়েছে। ১৩তারিখ বৌভাত।বৌদির কল্যাণে জানা ছিল যে পাপু বৌ নিয়ে সিকিম যাবে। কিন্তু করোনার জেরে সিকিম সরকার বাইরের লোক আর ঢুকতে দেবে না নতুন করে, একথা জানার পর সেটা ক্যান্সেল করে বাঙালীর প্রিয় দীঘাতেই গিয়েছিল ওরা। কিন্তু ওখানে একদিন  থেকেই বাড়ীর বড়দের তাড়নায় ফিরে এসেছিল। এবার মোদীজী ২২ তারিখ লকডাউন বা জনতা কার্ফু ডাকার পর পাপুর শাশুড়ীমা মেয়েকে নিজের কাছে আপাতত রাখবেন বলে ফোন করে জানিয়েছেন, মনে হয় এখন একজনের থেকে আরেকজনের দূরে থাকা উচিৎ ভেবে।  পাপুর তাই খুব রাগ ( আসলে মন খারাপ),হয়েছে।

এবার অনুরাধা পাপুর বৌ মৌতানির সাথে কথা বললো।মৌতানির কথা হল, ওর মা একটু জেদী টাইপের। তাই নিজে যা ঠিক করেন সেটাই করেন। মৌতানি ওর বাবার সাথে কথা বলেছিল। ও ওর মাকে অনেক বুঝিয়েছিল যে সবে এই বাড়ীতে এসেছে, এখনো সবার সাথে ঠিকমত সম্পর্কই গড়ে ওঠে নি, এখনই ও এখান থেকে চলে যেতে চায় না। কিন্তু মা নিয়ে যাবেনই। তবে ওর বাবার ইচ্ছে মেয়ে শ্বশুর বাড়ীতেই থাকুক। পাপু আবার ভাবছে বৌ নিজেই নিজের মাকে বলে বাড়ী যেতে চাইছে।আজ সেই কালো দিন, ওর নতুন বৌ চলে যাবে। এরপর যদি টানা লকডাউন হয় (বাস্তবে তাই হল) , তাহলে বৌ আবার কোনদিন আসবে কে জানে!  


এমন সহজ সমস্যার সমাধান করতে অনুরাধার সময় লাগে না।  তাই ও এবার ওদের বাড়ীর সবাইকে নিয়ে ভিডিও কল করে বলে দিল কি করতে হবে ওদের।  ও বলল -

ব্যাপারটা হবে এরকম,  পাপুর শরীরটা ভালো নেই জন্য আজ অফিসে জয়েন করার কথা থাকা সত্বেও ও যেতে পারে নি। সারাদিন কিছু খায়ও নি। বমির ভাব আছে। ডাক্তার ফোনেই ওষুধ দিয়েছেন গ্যাসের। এখবরটা মৌতানি ওর বাবাকে দেবে।কিছু পরে নিশ্চয়ই ঐ বাড়ী থেকে জামাইয়ের খবর নেবে। তখন দাদা মানে পাপুর বাবা ফোন ধরে একটু উদ্ ভ্রান্ত  গলায় বলবেন যে ওনারা একটু চিন্তায় আছেন কারণ  শুধু ছেলে নয় ছেলের মায়েরও পেটটা সমস্যা করছে, পেটে ব্যথাও করছে বলে এইমাত্র এসে শুয়ে পড়েছে।মহা মুস্কিলে পড়া গেছে। বৌমাও আবার ব্যাগ গোছাচ্ছে বাড়ী যাবে বলে। আমি এখন ফোন রাখছি মনে হয় ছেলেটা বমি করছে। একথা বলতে বলতে দাদা ফোন রেখে দেবেন। আশাকরা যায় ওনারা এরপর সেদিনই আর মেয়ে নিতে আসবেন বা। আর যদি তাও আসতে চান তাহলে মৌতানি কেই বলতে হবে যে আজ তোমরা আসবে না, আমি এঅবস্থায় সংসার ফেলে যেতে পারবো না। দুতিনদিন পর যাব।


ঘটনা অনুরাধার প্ল্যান অনুযায়ী ভালোভাবেই উতরে গিয়েছে। সেদিন মাঝ রাত থেকেই পুরো লকডাউন হওয়াতে পাপু ভীষণ খুশী। পরেরদিনই ফোন করে বলেছে, আন্টি লকডাউন খুল্লেই আমি মিষ্টি খাওয়াবো তোমাদের। আর প্রধানমন্ত্রী দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশ বাঁচবে আর আমার সংসারও।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু