বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

অনুরাধার চেম্বার (১৫)

অনুরাধার চেম্বার (১৫)


সংযুক্তা ব্যানার্জী চক্রবর্তী


সকালে চায়ের কাপ হাতে  নিতে না নিতেই অনুরাধা কলিং। নানা গল্প চলছে। ও নিজের নতুন কেসটা বলছে আর  আমি নানা মজার গল্প করছি। একসময় অনুরাধা আমায় বলল, হ্যাঁরে, তোর ঘরে বাজার আছে? আমি বললাম, কেন রে?  ও বলল, আজ কি রান্না করবি ঠিক করলি? আমি হাসলাম, বললাম আজ খিচুড়ি  ডিমভাজা। অনুরাধা বলল, আর কিছু করবি না? আমি হাসতে হাসতে বললাম, আমার মনে হয় আমি রাজকীয় খাবার করছি আজ, তাই আর কিছুর প্রশ্নই ওঠে না। আর আমার ঘরে

বাজার বলতে চাল ডাল তেল নুন আছে, বাকি কিছু থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না।  আর জানিস তো ফ্যাটি লিভারের জন্য কত বছর আগেই ডাক্তারবাবু আমায় তেল না খাওয়ার মত খেতে বলেছিলেন। তখন তো শুনিনি। এখন ঘরে তেলের দৈন্যদশা, তাই খুব কম তেলে রান্না করে চলেছি। খারাপ নয় ব্যাপারটা। ডাক্তারের কথা শুনিনি  কিন্তু করোনার রক্তচক্ষুকে ভয় পেয়ে তেল কম খাচ্ছি - হা হা হা। 

অনুরাধা একটু চুপ থেকে বলল, দেখ আমার বেশী পেশেন্ট  এলে আমি তোর ফোন নম্বরটা দিয়ে দেব।এই চরম সঙ্কটের দিনেও তুই হা হা করে হাসছিস কি করে জানি  না বাপু!! চারিদিকে সবাই ভয়ে মরছে আর তুই হে হে করছিস। এমন তো নয় যে তুই কিছু বুঝতে পারছিস না!

আমি হাসতে হাসতেই বললাম, আচ্ছা তুইএকটা কথা বলতো আমায় -- তোর ঘরে সারাদিন টিভি চলছে  আর তোরা সারাদিন চীন, ইতালি, ফ্রান্স, আমেরিকা বা নিজের দেশের খবর শুনে চলেছিস। এবার বল তো, তুই কোনও সুরাহা করতে পারলি এই মৃত্যুমিছিলের?   শোন, আমি কখনোই বলবো না দেশের খবর বা বিদেশের খবর রাখতে হবে না। আরে ভাই সারাদিনে একবার শুনবি, তাহলেই সব খবর পেয়ে যাবি।আর বাকি অনেকখানি পাবি ফেসবুকে।আমি তো সারাদিন মুঠোফোন হাতে নি না বললেই চলে। দ্যাখ, সব কিছুরই ভালো দিক, মন্দ দিক আছে।

সেই ছোটবেলায় ওঙ্কার করতাম, বহু বছর তার থেকে দূরে। এবার শ্বাস ঠিক রাখার চেষ্টায় আবার পুরানো দিনে ফিরে গেলাম। আমার মা কিন্তু বহু বছর ধরে সকালে আমরা ওঠার আগে উঠে ২১ বার ওঙ্কার করেন।  দুই, আগে কত রকম রান্নার করতাম ছুটির দিনে। এখন রোজ রবিবার কিন্তু রান্নাটা করি মাসের শেষ দিনগুলোর মত। আরেকটা খরচ আমার কোনোকালেই নেই কিন্তু যাদের ছিল তাদেরও আর সেই খরচ লাগছে না। মানে ঐ সাজগোজ সংক্রান্ত জিনিসগুলো আর কি।  আর সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হল আলফাল কত কিছু লিখে সময় নষ্ট করতাম রে বন্ধু, এখন রান্নার সাথে বাসনমাজা যোগ হয়েছে + চৈত্র সংক্রান্তির ঝাড়াঝাড়ি। ওরে, সারা গায়ে ব্যথা হয়ে গেল রে। এরপর মোবাইল নিয়ে শুলে ঘুম বাবাজী না এসে পারে! 

অনুরাধা বলে ওঠে, সঞ্জু তুই একই রকম রয়ে গেলি সারাজীবন,কি করে রে?

আমি হেসে ফেলে বললাম, ঠিক বলেছিস, আমি একই রকম বোকা রয়ে গেলাম রে। তবে বোকার শত্রু কম হয়, তাই আমার চলে যাচ্ছে।  সবাই বাড়ীতে থাকতে গিয়ে পাগল পাগল করছে। কিন্তু আমি সপ্তাহে একদিন বের হলেই মনে করতাম, আজ আবার বের হতে হবে।তাই আমি নিজেকে বন্দী মনে করতে পারছি না। বরং কাউকে বাইরে দেখলে মনে মনে বলি, তাড়াতাড়ি বাড়ী যাও হে।

দেখ, কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। কটাদিন যদি সবাই ঘরে থাকতে পারে তাহলে খুব একটা ক্ষতি মনে হয় হবে না, বের হলে পুরো পরিবার, পাড়া সবার ক্ষতির সম্ভাবনা।

এই অনুরাধা, আজ তোর নতুন কেসটা পুরো শোনা হলো নাতো। কাল কথা বলতে চেষ্টা করবো। রান্না শুরু করি গিয়ে। ঐ চেংড়ি, কাল নয়টায় টিভি খুলবি, নমো কি বলেন শুনতে হবে। কাল ঐসময় ফোন করিস না কিন্তু।ভালো থাকিস, ঘরে থাকিস।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু