বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

অতৃপ্ত

ছ মাসের কোর্ট কাছারির পর – অন্তরার সঙ্গে মিউচ্যুয়াল সেপারেশনটা শেষ অব্দি আজ হল।

কোর্ট থেকে বেরিয়ে, একটা ছোট লং ড্রাইভের উদ্দেশ্যে, অনিমেষ বানতলার শুনশান লেদার কমপ্লেক্সের

রাস্তাটা ধরল। মুক্তির স্বাদের সঙ্গে যে মন খারাপের ভাবটা মিশে আছে, সেটাকে কাটানো দরকার – হাজার

হোক, বারো বছরের সম্পর্ক তো।

সায়ন্স সিটি থেকে মাইল সাতেক দূরে একটা চায়ের দোকানে গাড়িটা দাঁড় করাল অনিমেষ। বৃষ্টি আসন্ন।

আকাশের মুখ বেশ ভার – পড়ন্ত বিকেল যেন সন্ধ্যের চেহারা নিয়েছে। চায়ে দুটো চুমুক দিতে না দিতেই টাকে দু

ফোঁটা বৃষ্টি এসে পড়লো। তড়িঘড়ি চায়ের দামটা মিটিয়ে, গাড়িতে বসে যেই না হেড লাইটটা অন করতে যাবে,

হুড়মুড় করে এসে পড়লো এক মাথা বৃষ্টি আর তার সঙ্গে অনিমেষকে হতবাক করে দিয়ে তার গাড়ির পিছনের

দরজা খুলে গাড়িতে চড়ে বসলো এক কলেজ ফেরতা প্রণয় যুগল।

অনিমেষের বিস্ময়ের ভাবটা কাটতে না কাটতেই ছেলেটি বলে উঠলো, “আসলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে একদম

ভিজে যাব কাকু..তাই আর কি আপনার গাড়িটা দেখে….”

কাকু? কে কাকু? মাথায় টাকটা অকালে পড়ে গেছে বলে, একদম কলেজ স্টুডেন্টের কাকু ? এ-এই ছেলে-মেয়ে দুটো

কি এই চা দোকানেই বসে ছিল? কই, অনিমেষ তো মনে করতে পারছে না। আড়চোখে অনিমেষ লুকিং গ্লাসে দেখল,

ঐ একটি মাত্র বাক্য ব্যয় করে, তারই গাড়িতে, তাকেই সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, ঠোঁটালাপে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে

ওরা। এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের এটাই সমস্যা –একটুও তর সয় না। কিন্তু এদের মুখটা এতো চেনা চেনা লাগছে

কেনো? অনিমেষ কি আগে ওদের কোনদিন দেখেছে? কিন্তু দেখার তো কথা নয়। কলেজ লাইফের পর, এ রাস্তায়

তো বড় একটা আসা হয় না আর। কলেজ জীবনের কথা মনে হতেই অনিমেষের মাথাটা ধাঁ করে ঘুরে গেলো আর

তার পরের চিন্তাটা তার রক্ত হিম করে দিলো – তাই তো – ব্যাক সিটে বসে থাকা, তাকে কাকু বলা ছেলেটাকে সে

অনেকবার দেখেছে – নিজের কলেজ জীবনে; বছর বারো আগে; প্রতিদিন আয়নায়; যখন তার ছিল মাথা ভর্তি চুল।

আর সাথের মেয়েটা আর কেউ নয় – আজ থেকে অফিসিয়ালি প্রাক্তনা হয়ে যাওয়া তার গার্লফ্রেন্ড – টার্নড –

স্পাউস – অন্তরা।

একটা চাপা আর্তনাদ করে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি থেকে এক ঝটকায় বেরোতে বেরোতে অনিমেষ বুঝল শুধু

অতৃপ্ত মানুষের আত্মাই ফিরে আসে না – ফিরে আসতে পারে অকাল মৃত অতৃপ্ত সম্পর্কের আত্মাও।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু