বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

শপি_ বিচিত্রা/বিষয়: ছুটির ভেলা/ভুতের গল্প

মে মাসের গরমের ছুটিতে আমি শিলিগুড়ি মাসির বাড়ি গিয়েছিলাম। বুনিমাসি এসে আমাকে নিয়ে গেছিল। মেসো মারা গেছে প্রায় ৮-৯ বছর হলো। কাকন দিদি কলকাতার বড় এক হসপিটালে ডাক্তার। বলতে গেলে মাসির কাছে আসতে একেবারেই সময় পায়না। মাসি বড্ড একা। যাই হোক ,ঘটনায় আসি। এটা একটা সত্য ঘটনা। মাসি শিলিগুড়িতে এই বাড়িটায় 20 বছর ধরে আছে। মেসো এই বাড়িটা পাল্টায়নি। মেসোর ধারণা এই বাড়িটা খুব পয় মন্ত্র। মেসোর ছিল পাথরের মূর্তির ব্যবসা। ইমপোর্ট এক্সপোর্ট। যদিও মেসোর একটা কলকাতায় তিন কামরা ফ্ল্যাট আছে। আমি আর বুনি মাসি বাসে করে শিলিগুড়ি গেলাম। তারপর আমরা মাসি র বাড়ি  পৌছে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করলাম। কত খাবার ব্রাউন বেড, ব্যানানা ,ডিমের পোজ সঙ্গে মিষ্টি। বরাবরই মাসি এরকম। খেয়েদেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম করছি এই সময় মনে হচ্ছে আমার চুল ধরে কে টানছে। আমি পিছন ঘুরে বললাম, ও মাসি, চুল টানছো কেন? মাসি রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো, সেকিরে আমি তো রান্না করছি দুপুরে তুই আর আমি খাব। আমরা দুজন লাঞ্চ করব না?। সত্যি বলছি, মাসি আমার চুলকে টানলো। মাসির ঘর গুলো আমার একদম পছন্দ হয়নি। কেমন ঘর গুলোতে গা ছমছম করে। অনেক পুরনো বাড়ি। কি যে মেসোর লাকি বাড়ি। আমি মাসিকে বললাম, যাই বলো মাসি, তোমার বাড়িটা আমার ভাল লাগছে না। মাসি বললো সে কিরে আমি বিশ বছর   ধরে কাটিয়ে দিলাম তুই বলছিস খারাপ? কেমন একটা গা ছমছমা বাড়ি। মাসি তুমি রাগ করোনা। তারপর স্নান টান সেরে মাসি পুজো করল গোপালকে গোলাপ জল দিয়ে স্নান করালো, গা মুছালো ভালো ড্রেস পরালো তারপর খেতে দিল। গোপালের লাঞ্চ এক এক দিন একেক রকম। কখনো গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি, নিরামিষ তরকারি পায়েস মিষ্টি। আবার কখনো বাসন্তী পোলাও তার সাথে পনি র পাঁচ রকম ভাজা মিষ্টি ,দই এগুলো নিত্য লেগেই আছে। শুধু তাই না সন্ধ্যাবেলায় চা বিস্কুট দেওয়া। আবার বিকেল বেলায় একটা ঝুড়ি করে বসিয়ে পার্কে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। ঘণ্টি বাজিয়ে ঘুম থেকে তোলা। ইউনিক, একেবারে দেখবার মতো। ঠাকুরের কাজ সেরে আমরা দুজন লাঞ্চ করলাম। বুনি মাসির হাতের রান্না দুর্দান্ত! ফাটাফাটি। দুপুরে লাঞ্চ সেরে আবার গিয়ে শুয়ে পড়লাম। তন্দ্রা মত এসে গেছে, আমার পায়ে চিমটি কাটছে, কেরে? ও মাসি? আমার পায়ে কে চিমটি কাটছে? মাসির ধড়মড় করে উঠলো। কি হয়েছে? তুই আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিবি না। আমি বললাম আর এখানে থাকবো না, কখনো চুল টানছে ,কখনো চিমটি কাটছে। বাজে একটা ভূতের বাড়ি। তুমি আমায় বাড়ি দিয়ে আসো। মাসি বললো রাগ করিস না, আজকে বিকালে তোকে মার্কেটে ঘুরতে নিয়ে যাব। দেখবি খুব ভালো লাগবে। বিকেল বেলায় ঘুম থেকে উঠলাম তখন বাজে সাড়ে পাঁচটা ছটা। মাসি উঠে গরম গরম চা আর ডিমের চপ বানিয়ে আনলো। দুই কাপ গরম চা ,সঙ্গে চারটে ডিমের চপ। জাস্ট ভাবা যাবেনা, ফাটাফাটি! মনের মত খাবার। মাসি গরম চা আর ডিমের ট্রেটা টেবিলের উপর বসিয়ে চলে গেল। আমি চা নিতে গিয়ে দেখলাম তিনটে ডিমের চপ। ও মাসি এখানে তিনটি ডিমের চপ কেন? মাসি ওই ঘর থেকে উত্তর দিল ,কেন আমি তো চারটে দিয়ে এলাম। মাসি ও ঘর থেকে এলো। যেই চায়ের কাপটা হাতে নিল দেখল, চারটে ডিমের চপ। এইতো চারটে ডিমের চ প। তুই বললি তিনটে। সত্যি বলছি, তিনটে ছিল। মাসি আমি আর তোমার বাড়ি থাকবো না। আমার সাথে ভৌতিক কাণ্ড হয়ে চলেছে। চা ডিমের চপ খেয়ে আমরা মার্কেটে ঘুরতে গেলাম। দারুন লাগলো মার্কেটটা। তারপর মার্কেট থেকে ঘুরে এসে, মাসি আবার রাতের খাবার করতে গেল, আমি টিভি দেখছি। চ্যানেলটা বারবার কে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। মাসিকে চেঁচিয়ে বললাম, টিভি চ্যানেল টা বারবার কে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। মাসির একটু সন্দেহ হলো, বারবার কি হচ্ছে। মাসি ফোন করে বাড়ি অলি বুড়ি দিদার সাথে কথা বলছিল। এই বাড়ির ঘটনা সম্বন্ধে। বুড়ি দিদার মাথাটা একটু গোলমেলে ছিল। বাড়িতে সম্বন্ধে সব ঘটনা বলে দিল। এই বাড়িতে একটা মেয়ে গলায় দড়ি দিয়েছিল ২০ বছর আগে মেয়েটা অন্তঃসত্তা হয়ে গেছিল। ছেলেটা বিয়ে করতে অস্বীকার করে বলে আমার বাচ্চা না। তারপর বাড়িওয়ালীরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, অন্য জায়গায় বাড়ি কিনে নেয় যেটা মিশু একেবারেই জানতো না, বাড়িওয়ালা মেসোকে গোপন করেছিল। ওই মেয়েটির আত্মা ওই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। মাসি পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, এই বাড়ি ছেড়ে দেবে। মাসি রাত্রে স্বপ্ন দেখে, একটা মেয়ে মাসিকে বলছে, তোরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যা, আমি এই বাড়িতেই থাকি। আমার অসুবিধা হচ্ছে। আমার আত্মার মুক্তি হয়নি, আমাকে শুধু শুধু দোষ দিয়েছিল। মাসি মধ্যরাতে ভয় পেয়ে উঠে বসলো। যত তাড়াতাড়ি পারি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। এইরকম দিনের পর দিন হয়েই যাচ্ছে। পরের দিন রাতে পাশের ঘর থেকে চিৎকার করে কে যেন কাঁদছে রাত তিনটে, আমরা লাফ দিয়ে উঠলাম, গিয়ে দেখলাম কেউ নেই। সকালে উঠে দেখছি বেসিনে   ব্রাশ থাকে আমার সেটা নেই। মাসিকে বললাম, বলল ভালো করে খুঁজে দেখ। মাসি রান্না ঘরে ঢুকলো চা করতে, দেখল গ্যাসের ওভেনের পাশে ব্রাশ। মাসি আমাকে দিয়ে গেল। মাসি তো এইবার সিদ্ধান্ত করেই নিয়েছে এই বাড়ি ছেড়ে দেবে। মাসি সন্ধ্যেবেলা আমাকে নিয়ে বাড়িওলার বাড়িতে গেল। সব ঘটনা বলল, মাসি বললো আপনারা কিছু ব্যবস্থা করুন? নাহলে ওর আত্মার মুক্তি পাবে না। তারপর ওরা পেট সিলায় গিয়ে পিন্ডদান করল। একেবারে সঙ্গে সঙ্গে কি কাজ হয়? এদিকে মাসি কলকাতায় কাকন দিদির সঙ্গে থাকবে বলে সমস্ত প্যাকিং করতে থাকলো। মাসিও বলল না এখানে আর থাকবো না। আমার গরমের ছুটিতে ঘোরা টাই বিফলে গেল। ভূতের ভয়ে আমি আর ভালো করে ঘুরতেও পারলাম না, আনন্দও করতে পারলাম না। তবে বুনিমাসী তো বিপদ থেকে উদ্ধার হল। তারপর বুনি মাসী আর আমি সমস্ত জিনিস নিয়ে কলকাতায় কাকন দিদির কাছে চলে গেলাম। মে মাসে গরমের ছুটিতে এবার// ছুটির ভেলায়/ /ঘুরতে লাগলাম। বুড়ি মাসিকেও বাড়ি ওলির মেয়ে পেছন ছাড়েনি আবার আজ রাতে স্বপ্ন দেখেছে মেয়েটি বলছে মাসিকে আর কাঁদছে, সাগরকে বল আমায় ক্ষমা চাইতে। ওই বাচ্চাটা সত্যি সাগরের ছিল। বুনি মাসি ঘুম থেকে উঠে আবার বাড়িওয়ালাকে ফোন করে সব কথা বলল। বাড়িওয়ালা বলল, দেখেন দিদি আমরা এখন কি করবো। ওই সাগর থাকে বোম্বে। বুনি মাসি বলল বাড়িয়ালাকে, আপনারা ফোন করে সাগরের সাথে যোগাযোগ করুন। না হলে ওর আত্মার মুক্তি কখনোই হবে না। আপনাদের বাড়ির মেয়ে। এতগুলো বছর হয়ে গেল। বাড়িওয়ালা সাগর কে ফোন করে সব কথা বলল। সাগর বোম্বে থেকে শিলিগুড়িতে এলো। শিউলি দিদির সব কাজগুলো করল। না করলে আত্মার মুক্তি হবে না। এখন সবাই ভালই আছে ওই বাড়িতে আর  কান্নার আওয়াজ শোনা যায় না। এবার বল গল্পটা কেমন লাগলো?

সমাপ্ত।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু