অধ্যায় 2
টাকার আত্মকথা (পর্ব -২)
গোপাল চন্দ্র মন্ডল
সন্ধ্যাবেলায় আধ সেকেন্ড লেট না করে ছেলের মহান পিতার প্রবেশ ঘটলো পাঞ্জাবির বাড়িতে। মৃত্যুকে আহ্বান করার মত পাঞ্জাবি ডাকলো আসুন আসুন, বসুন এখানে। হারকিপটে বাঙালি বেহাই মশাই বলল আজ আর বসে সময় নষ্ট করব না, যার জন্য এসেছি সেটা নিয়ে আসুন তো বাবু। নইলে আবার যদি আসতে হয় তাহলে আমার আসার ভাড়া বাবদ 23003 টাকা 50 পয়সা সুদে-আসলে ধরে নেব। অসহায় পাঞ্জাবি টাকাটা দিল। দেখে মনে হল পাঞ্জাবির শরীর থেকে হৃৎপিণ্ড বেড়িয়ে গেল।এরপর বাঙালি বাবু প্লেনে করে আমাকে ও আমার বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে এলো পশ্চিমবাংলায়- কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে।
আলমারির ভিতরের দিন দুই থাকার পর আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফুলের বাজারে। ফুল দেওয়ার পর ফুল বিক্রেতা আমাকে কোচরে ভরে রাখে। ব্যাটা এতটা নির্দয় যে আমি মরলাম না বাঁচলাম সেটা লক্ষ্য করে না। কিছুক্ষণ পর ফুল বিক্রেতা বাথরুমের রাস্তা ধরে। যেতে যেতে লোকের ধাক্কায় আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। কি দুর্গন্ধময় জায়গা সে আর বলার নয়। 10 সেকেন্ড পর এক পাগল আমাকে পায়ে ছেঁটে মারিয়ে দিল। খালি পায়ে ছিল তাই সে বুঝতে পারল তার পায়ের নিচে কিছু একটা আছে। সে আমাকে হাতে তুলল, মিনিটখানেক গবেষণা করার পর হা হা করে হাসতে লাগলো। চারদিকে তাকিয়ে আমাকে গোল করে পাকিয়ে চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। মনে মনে ভাবলাম পাগলে নিজের নাম ভুলে যায়, বাবা-মাকে চিনতে পারেনা কিন্তু টাকার ছাপতো বেশ মনে রাখে। এরপর পাগল টা এক দৌড়ে রাস্তায় চলে এলো।সেখান থেকে ঝড়ের মত বেগে দুই হাতে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আবার দৌড় শুরু করলো। এরপর হঠাৎ সে উল্টো দিকে দৌড়াতে লাগল। ঠিক এই সময় হঠাৎ একটা ট্রাক এসে পাগল টাকে পিশে দিল। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল তার রক্তাক্ত দেহ। সবাই দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে কিন্তু কেউ তাকে তুলতে আসে না।আমি অবাক হয়ে গেলাম কারন একটা কুকুর মরলেও চারটে লোক পাওয়া যায় কিন্তু পাগল মরলে কারো কিছু এসে যায় না।
মিনিট পাঁচেক পর একজন এল চারদিকে ঘুরে দেখল কিন্তু পাগল টাকে হাত দিলো না। সে আমার রক্তমাখা বডি টাকে তুলে রুমাল বের করে পরিষ্কার করতে লাগলো। যদিও রক্তের দাগ পুরোপুরি উঠলো না। এরপর সে খুব যত্ন করে আমাকে তার মানিব্যাগে রাখল। যদিও পাগল টাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না, কিন্তু আমি যে অসহায়।এরপর লোকটা আমাকে নিয়ে একটা বাসে উঠলো। বাস থেকে নেমে রেলস্টেশনের বারান্দায় বসে পড়ল। সে বলতে লাগল---দাদা আমাকে কিছু সাহায্য করুন। আমার বিধবা স্ত্রীর ক্যান্সার হয়েছে। ভুল বলে ফেলেছি বুঝতে পেরেছে ঠিক করে বলে---না মানে আমার মাথা ঠিক নেই বাবু আমার বউকে যদি বাঁচাতে না পারি তাহলে আমি যে বিধবা হয়ে যাব, আমি সর্বস্বান্ত হয়ে যাব। দয়া করে কিছু সাহায্য করুন। ঘণ্টাখানেক পর তাকিয়ে দেখি যে মানিব্যাগে আমার পাশের জায়গাগুলো পূর্ণ হয়ে গেল। প্রায় হাজার খানেক টাকা নিয়ে এসে পৌছালো একটা এক্সিস ব্যাংকে। সেখানে প্রায় হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা করল। কিন্তু আমাকে মানিব্যাগে রেখে দিল। ব্যাংক থেকে বেরিয়ে লোকটা বলল---আজকে এত অল্প সময়ের মধ্যেই কিস্তিমাত করে দিলাম যে আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।এভাবে প্রত্যেকটা দিন চলে কয়েক বছরের মধ্যে আমি কয়েক লক্ষ টাকার মালিক হব।আর তখন আমার গাড়ি বাড়ি সব হবে। এছাড়া মনের মত সুন্দরী বউ পাব। তারপর এই বিজনেসটা কে বাড়াবো।কর্মসংস্থানে এ্যাড দেবো মানুষকে টুপি পরানো বুদ্ধিসম্পন্ন 500 ভিখারি চাই। মাসে 10000 টাকা বেতন এবং থাকা ও খাওয়া ফ্রি। আর তখন আমি হব ভিখারির রাজা। এ যে আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। বলতে বলতে আমাকে মানিব্যাগ থেকে বের করে চুম্বন করে আর বলে তুই আমার কাছে খুব লাকি তাই তোকে আমি আমার কাছেই রেখে দেবো। মানুষ হয়ে মানুষকে যে এভাবে ঠকাতে পারে তা এই ভিখারিকে দেখে বুঝলাম। আর বুঝতে পারলাম হলো ভি.আই.পি ভিখারি এবং বড় মাপের অভিনেতা। অভিনয়ে অস্কার পাবার যোগ্য। যাইহোক বহুকষ্টে মানিব্যাগের ভিতর পাঁচ বছর কাটলো। পাঁচ বছর পর ভিখারি তার বউকে বলল---ডার্লিং এবার আমার বেরোনোর সময় হয়েছে। তুমি আমার খাতা পত্র রেডি করে দাও। কয়েকজন নতুন ভিখারি চাকরিতে জয়েন করেছে। আমি ওদের ট্রেনিং দিতে যাব। এসি গাড়িতে যেতে যেতে সে একটা মন্দিরে দাঁড়ালো। মন্দিরে উঠে প্রনামি বক্সে আমাকে ফেলে দিল। আমি বললাম হে মা তুমি আমাকে বাঁচালে।
চলবে