বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

পর্ব ২

রাজবাড়ীর ভেতরে ঢুকতেই ঝিনুকের মুখটা পুরো হা হয়ে গেল।  "কি বড় বাড়ি " বলে উঠলো ঝিনুক। সুব্রত ওর মাথায় একটা ছোট্ট করে চাটি মেরে বললো "মুখটা বন্ধ কর "।

রাজবাড়ীর মেন গেটটা দিয়ে কিছুটা এগোতেই বাঁদিকে চওড়া সিড়ি উঠে গেছে। সামনে একটা বড় দালান।তার ডানদিকে বিশাল বড় একটা ঠাকুর ঘর।উল্টোদিকে চাকরদের থাকার ঘর। দালানের মাঝ বরাবর বসার জায়গা। ওখানে গিয়ে নারায়ণ দেব রায় আমাদের বসতে বললেন।

 

নারায়ন দেব রায় : চা না কফি?

সুব্রত : না না ধন্যবাদ।আপনি বসুন না।আমরা তাহলে কথা শুরু করতে পারি।

"বেশ তবে" বলেই বসে পরলেন নারায়ণ দেব রায়।

 

সুব্রত : বলুন এবার সব খুলে। অনিরুদ্ধ কবে থেকে নিখোঁজ?

নারায়ন দেব রায় : তা প্রায় ৩ দিন মতো হল।

সুব্রত : উনি নিখোঁজ হবার পর কোনো ফোন বা কিছু....

নারায়ণ দেব রায় : না না সেরকম কিছুই হয়নি।

সুব্রত : উনি নিখোঁজ হবার আগে ওনার মধ্যে কোনোরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন?

নারায়ণ দেব রায় : নাহ। তবে....

সুব্রত : তবে কি?

নারায়ণ দেব রায় : তবে ও একবার আমায় বলেছিল ওর নাকি এরম মনে হয় কেউ যেন ওর ওপর নজর রাখে!

সুব্রত : নজর রাখে! কে?

নারায়ণ দেব রায় : জানি না।

সুব্রত : আচ্ছা ওনার কোনো শত্রু ছিল বলে আপনার জানা আছে?

নারায়ণ দেব রায় : না না।ওর মতো ছেলেই হয় না। ওর কোনো শত্রু থাকতেই পারেনা। যদি থাকেও তাহলে আমার জানা নেই।

সুব্রত : আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?

নারায়ণ দেব রায় : হ্যাঁ।আমার তো একজনকেই সন্দেহ হয়। আর আমার মনে হয় এর পেছনে ওই আছে।

সুব্রত : কে?

নারায়ণ দেব রায় : সুদীপ্ত !

সুব্রত : মানে তো আপনার ছোটো ছেলে!

নারায়ণ দেব রায় : হ্যাঁ।কিন্তু ওকে আমি ছেলের চোখে  মোটেই দেখি না।

সুব্রত : আপনার ছোটো ছেলের ওপর এত রাগ কেন?

নারায়ণ দেব রায় : ও একটা লম্পট,অপদার্থ ছেলে।

কোনো কাজ হয় না ওর দ্বারা। অনিরুদ্ধকে হিংসা করে। কেউ কারোর নিজের দাদাকেও এত হিংসা করতে পারে?

সুব্রত : তাতে কি আপনার একটুও দোষ ছিল না?

নারায়ণ দেব রায় : আমার কি দোষ?

সুব্রত : আপনি আপনার বড় ছেলেকে বিদেশে পড়তে পাঠিয়েছিলেন।তাহলে ছোটো ছেলেকে কেন নয়?

নারায়ণ দেব রায় : অনিরুদ্ধ বরাবরই পড়াশোনায় ভালো ছিল। ওর মধ্যে শেখার একটা ন্যাক চিরকালই ছিল।কিন্তু সুদীপ্তর ছোটো থেকেই বাবুয়ানি। বাবার পয়সায় ফুটানি মারার শখ। এমনকি পড়াশোনাটাও কমপ্লিট করেনি।

সুব্রত : আপনার বাড়িতে কে কে আছেন?

নারায়ণ দেব রায় : আমি,অনিরুদ্ধ,সুদীপ্ত,রঞ্জন আর ওর মেয়ে।আর ৩ জন চাকর। রঞ্জন আমার ছোটোবেলাকার বন্ধু। বিদেশে চলে যাওয়ার আগে এই বাড়িটায় ওদের থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলাম।

সুব্রত : কেন?

নারায়ণ দেব রায় : আসলে ওর একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। ওর ডান হাত আর পায়ে ভীষণ চোট লাগে। ওরা ভাড়া বাড়িতে থাকতো। চোট পাওয়ার পর রঞ্জন কাজে যেতে না পারায় ওরা ভাড়া দিতে পারছিল না। তখন মেয়েটাও সবে কলেজে উঠেছে।তাই নিরুপায় হয়ে আমার কাছে হেল্প চেয়েছিল।আমি ওদের এই বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দি।

ঝিনুক : আপনি নিজে কতদিন এই বাড়িতে থেকেছেন?

(ঝিনুকের হঠাৎ এই প্রশ্নে নারায়ণ দেব রায় বেশ চমকে গেলেন )

নারায়ণ দেব রায় : আমি এই বাড়িতে মাত্র কয়েক মাস হলো রয়েছি। আসলে আমার যখন ৭/৮ বছর বয়েস তখন আমার পরিবার কলকাতায় শিফট হয়ে যায়।

একটা চাকর এসে নারায়ণ দেব রায় আর আমাদেরকে একটু চা জল খাবার দিয়ে চলে যেতে যাচ্ছিল হঠাৎ ঝিনুক তাকে প্রশ্ন করতে শুরু করে -

ঝিনুক : আপনি কতদিন এখানে কাজ করছেন?

চাকর নিমাই : তা প্রায় বছর ৮/৯ হবে।

ঝিনুক : আচ্ছা অনিরুদ্ধ বাবু যেদিন নিখোঁজ হয়েছিলেন সেইদিন তুমি ওনাকে দেখেছিলে বাড়ি থেকে বেরোতে?

নিমাই : আজ্ঞে হ্যাঁ।

ঝিনুক : কখন?

নিমাই : আজ্ঞে রাত ১০ টা হবে।

ঝিনুক : রাত ১০ টা! উনি কি রোজ ওই সময়ে বেরোতেন?

নিমাই : না শুধু সেদিনই দেখেছিলাম।

ঝিনুক : আচ্ছা উনি কিরম জামা পরে বেরিয়ে ছিলেন?

( মামা ঝিনুকের এই প্রশ্নে একটু অবাক হল)

নিমাই : উনি তো সবসময় সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরতেন। সেদিনও তাই পরেছিলেন। তবে সেদিন উনি টুপি পরেছিলেন।

সুব্রত : টুপি? টুপি কেন?

নিমাই : তা জানি না।

ঝিনুক : তুমি কি একাই ওনাকে বেরিয়ে যেতে দেখেছো? নাকি আরও কেউ দেখেছে?

নিমাই : আজ্ঞে এখানের আর এক জন চাকর রতনও দেখেছে।

ঝিনুক : হুম! ঠিকাছে।আমার আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই আপনাকে।

নিমাই প্রনাম ঠুকে চলে গেল।

ঝিনুক : নারায়ণ জেঠু তুমি তো বলছিলে তুমি শিওর যে বডিটা পাওয়া গেছে সেটা অনিরুদ্ধর নয়।কিন্তু তোমার বাড়ির চাকররাই বলছে যে তারা তাকে রাত ১০ টার সময় বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছিল।

নারায়ণ দেব রায় : ওরা ভুল কাউকে দেখেছে।

সুব্রত : আপনি এত শিওর হলেন কি করে?

নারায়ণ দেব রায় : কারণ ওর সাথে আমার রাত ১০:৩০ টার সময় কথা হয়েছিল!

সবাই নারায়ণ দেব রায়ের কথা শুনে অবাক।

সুব্রত : কি বলছেন? এটা কি করে সম্ভব?

নারায়ণ দেব রায় : সেটাই তো আমি এদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। সবাই ভাবছে আমি অন্য কারোর গলা শুনেছি। কিন্তু আমি তো আমার ছেলের গলা চিনি।আমার ভুল কিছুতেই হতে পারেনা।

ঝিনুক : কি কথা হয়েছিল আপনাদের মধ্যে?

নারায়ণ দেব রায় :আমরা রোজ রাতে ডিনারের পর একটু ছাদে যেতাম। কিন্তু কয়েকদিন আমার শরীরটা খারাপ হবায় আমি ঘরেই থাকতাম। সেদিনও আমি ঘরেই ছিলাম। ঘরের লাইট বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম।বাইরের লাইট জ্বলছিল। হঠাৎ কারোর আসার আওয়াজ পেয়ে আমি চোখ খুললাম। আমার ঘরের দরজা বন্ধই ছিল। অনিরুদ্ধ বলে গেল যে আমি ছাদে যাচ্ছি। ও চলে যাওয়ার পর আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম।আমি অ্যলার্ম দিয়ে শুয়ি।তাই সেদিনও অনিরুদ্ধ চলে যাওয়ার পর আমি অ্যলার্ম দিতে গিয়ে দেখেছিলাম ১০:৩০ টা বাজে।তারপর তো সকালে উঠি শুনি রাত থেকে নাকি অনিরুদ্ধকে খুজেঁ পাওয়া যাচ্ছেনা। (বলতে বলতে নারায়ণ বাবুর চোখ ছলছল করে উঠলো)

উনি নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময় ওই বড় সিড়ির কাছ থেকে কোনো একটা মেয়ের সুরেলা কন্ঠস্বর ভেসে এলো এইদিকে নারায়ণ বাবুকে উদ্দেশ্য করে "জেঠু ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে এলো তো।তোমায় কতক্ষণ ধরে খুঁজছি আর তুমি এখানে?" বলে এগিয়ে আসতে লাগলো সে। আমরা সবাই ওই দিক দিয়ে মুখ সরিয়ে নারায়ণ বাবুর দিকে জিজ্ঞাস্যু চোখে তাকালাম। নারায়ণ বাবু বললেন "সুচন্দ্রা..."




পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু