বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

অধ্যায় - ১

– তুমি এঁটো মুখে আমায় চুমু খেলে?

 

– মাইরি না।

 

– মাইরি না মানে? এই তো আলুকাবলি সাঁটিয়ে পাতাটা ফেললে।

 

– না...মানে...ইয়ে, তারপর তোমার পিঠে মুখটা ঘষে নিলাম তো।

 

– কী? তুমি মুখ মোছার জন্য আমার সালোয়ারে তখন তোমার ঘেমো মুখটা রগড়াচ্ছিলে?

 

– না গো। ভালোবাসা থেকেই রগড়াচ্ছিলাম। বাকিটা আপনে আপ হয়ে গেল।

 

– লজ্জা করে না তোমার?

 

– কিসের?

 

– বেশি আলট্রা মডার্ন হয়েছো না? আশেপাশের লোক দেখতে পেল তো! তুমি নির্লজ্জ হতে পারো, আমি না।

 

– আরে না, কেউ দেখেনি। ওই জন্যই তো পার্কের এই জায়গাটা বেছে নিয়েছি। দেখো- সামনে পুকুর, বাঁদিকে ঝোপ, ডানদিকে ঝোপ, পিছনে গাছের মোটা গুঁড়ি। এই! কেমন একটা দুর্গ দুর্গ ফিলিং হচ্ছে না।

 

– দুর্গ ফিলিং!

 

– না...মানে বলছি যে, মনে হচ্ছে না- শুধু তুমি আর আমি বেশ একটা পুরোনো দুর্গের মধ্যে বসে আছি; আর কেউ নেই।

 

– না গো, একদমই মনে হচ্ছে না। আমার মাথা আর চোখ, দুটোই এখনও ঠিক আছে। পুকুরের উল্টোদিকে বসে একটা বুড়ো ড্যাব-ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। বাঁদিকের ঝোপটার নর্থ-ইস্ট অ্যাঙ্গেলে যে ফাঁকটা রয়েছে, সেখান দিয়ে একজোড়া ছেলে-মেয়েকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

 

– আরে ধূর! বুড়োটার বয়েসটা দেখো! অত দূর থেকে আমাদের ছায়া ছায়া দেখবে। আর ছেলে-মেয়ে দু'টোর তো সাপের শঙ্খ লাগা কেস। সারাক্ষণ চিপকে আছে।

 

– শোনো বান্টু, সবাই তোমার বাবার মত চিপ্পুস যক্ষ নয় বুঝলে, যে ব্যাঙ্কে লাখ-লাখ টাকা জমিয়ে রেখে দুচোখ ভর্তি এঁটুলির মত ছানি নিয়ে- "নমিতা লুঙ্গিটা একটু পরিয়ে দেবে? নমিতা একটু ছু-ছু করিয়ে দেবে?" বলতে থাকবে। ছানি অপারেশনের পরে বয়স্করা এখন নরমাল মানুষের মতই দেখতে পায়।

 

– ছিঃ! হবু শ্বশুরের সম্বন্ধে অমন করে বলতে নেই। আর বলছিলাম কি, বান্টু বলে না ডাকলেই কী নয়? আসলে নামটার মধ্যে কেমন একটা অশ্লীল গন্ধ আছে।

 

– তোমার চেহারা আর স্বভাবের সঙ্গে ওই নামটাই যায় সোনা।

 

– বলো কী! আমি তো ভদ্র ছেলে। আমার একদম গা ছুঁয়ে কোনও মেয়ে হেঁটে গেলেও তাকিয়ে দেখি না। আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমি তাকাই না।

 

– তাই নাকি? তা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে বোঝো কী করে? আর সেদিন তাহলে বললে কেন- "তোমার ফিগারটা বেশ ডাগর হয়ে উঠেছে।"

 

– কী মুশকিল! না তাকালেও বোঝা যায় কেউ দেখছে কিনা। আর তোমার দিকে তাকাবো না? আমি অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর কথা বলছিলাম।

 

– চরিত্রের দোষ থাকলে অবশ্য না তাকিয়েও বোঝা যায়। যে একটা মেয়ের ফিগার রাক্ষসের মত চোখ দিয়ে গেলে, সে সব মেয়েকেই ঝাড়ি মারে।

 

– বাঃ, কী সুন্দর অ্যানালিসিস! তোমার গালদুটো কই গো?

 

– এ'সব ক্ষেত্রে লোকে পা খোঁজে, গাল কেন?

 

– আমি তো প্রণামের কথা ভাবছি না, দু'গালে দুটো চুমু খেতাম।

 

– পার্কে বসে চুমু খেয়ে আর কাব্য করেই জীবনটা কাটিয়ে দাও। ডিগ্রিগুলো তো খারাপ নেই, চাকরির চেষ্টা তো তেমন কিছু দেখছি না।

 

– চাকরি করছি তো। চব্বিশ ঘন্টার কাজ।

 

– সে কী! কবে পেলে? এই, বলোনি তো!

 

– এ তো বলার নয়, অনুভবের কাজ। চব্বিশ ঘন্টা তোমাকে চোখে হারাচ্ছি, তোমার কথা ভাবছি, তোমার খিদমত খাটছি; মোদ্দা কথা- তোমাকে ভালোবাসছি। এটা চাকরি নয়?

 

– জল-বিছুটি কাকে বলে জানো? তোমার সামনে দিয়ে যখন কেউ আমাকে নিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যাবে, আর আমি তোমার দিকে তাকিয়ে টা-টা করবো; তখন দেখবে ওই ফিলিংসটা আসবে।

 

– এভাবে বলো না মৌরি! ছোটবেলায় এক জ্যোতিষী বলেছিল- "ছেলেটি ক্ষণজন্মা, কিন্তু হার্ট'টা দুর্বল।"

 

– তোমার মুখের বচন ছাড়া সবই দুর্বল।

 

– মা কসম। আমার হৃদয় ছাড়া বাকি সব ঝালাই রডের মত সবল। তুমি পরীক্ষা করে দেখো।

 

– পুলিশ ডাকবো? দেখবে ওদের ডান্ডার বাড়িটাও কেমন সবল। জাস্ট বলবো- আমাকে হ্যারাস করছে।

 

– সে তুমি পারবে না মৌরি। আমি জানি তুমি আমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসো।

 

– ভুল জানো। আর হ্যাঁ, তোমাকে আমি লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমাকে তুমি ফারদার মৌরি বলে ডাকলেই ব্রেকাপ।

 

– তোমার খাটো চেহারা, বোঁচা নাক, কুতকুতে চোখ আর ঢ্যাপসা পেটের সঙ্গে ওই নামটাই যায় গো।

...ওকি! উঠলে নাকি?

...কথা বলবে না?

 

– ব্রেকাপ।

 

– যাঃ, বললেই হলো! তাছাড়া এই দু'বছরে তুমি কম-সে-কম দু'হাজার বার ব্রেকাপ করেছো। কোনটাই দু'ঘন্টার বেশি টেকেনি। নিজেই নাকে কেঁদে ফোন করেছো। আমার মত সোনার টুকরো ছেলে তুমি আর পাবে?

 

– একদম ফালতু কথা বলবে না, তুমি বারেবারে এসে হাতে-পায়ে ধরেছো। তাছাড়া এবারেরটা ফাইনাল। আর সোনার টুকরো না ইয়ের টুকরো, সে আমি হাড়েহাড়ে জানি। যদি একমাসের মধ্যে একটা ভদ্রস্থ চাকরি জুটিয়ে বাবাকে গিয়ে বিয়ের কথা বলতে না পারো, তাহলে এ দেখাই শেষ দেখা।

 

– চাকরি তো হয়ে যাবে। কিন্তু তোমার বাবার ওই অমরীশ পুরীর মত চেহারাটা ভাবলেই তলপেট'টা কেমন কুঁই-কুঁই করে,পটি পায়।

 

– বেশ তো, তাহলে একটা রাজেশ খান্নার মত দেখতে শ্বশুর জুটিয়ে নাও। টুইংকল বসে নাড়ুগোপালকে খাইয়ে দেবে, ডিম্পল চূড়া করে চুল বেঁধে দেবে।

 

– সে আর হয় না। তোমাকে কথা দিয়ে ফেলেছি। আমরা আবার যুধিষ্ঠিরের বংশধর। কথার খেলাপ হয়ে যাবে যে!

 

– যুধিষ্ঠির না গো, তোমরা জরাসন্ধের বংশধর। একটা কথাও সত্যি বলো না। আর, কথা দিয়ে ফেলেছি মানে? তুমি কি কথা রাখার জন্যই আমাকে বিয়ে করতে চাইছো? ভালোবাসার জন্য নয়?

 

– ...মানে, বলছিলাম কি, পাতাটা কী সুন্দর পুকুরের জলে দুলছে দেখো!

 

– দেখেছি গো। ঠিক যেমন তুমি তোমার মায়ের কোলে দুলতে দুলতে ফিডিং বোতলে দুধ খাও।

 

– এটাও বলতে পারো, ঠিক যেমন তোমার বিশ্ব-ন্যাকা মা তোমার বাবাকে- "বা-ই-ই সুইট হার্ট, আই উইল বি লেট..." বলে ভাসতে ভাসতে কিটি পার্টিতে বেরিয়ে যায়।

 

– তোমাকে আমি ত্যাজ্যবর করলাম।

 

– যাক বাবা, নিশ্চিন্ত। তার মানে আমাকেই তুমি বর বলে মেনে নিলে। কিন্তু, যদি তোমার মনের মত চাকরি না পাই, যদি তোমাকে সেই স্বাচ্ছন্দ না দিতে পারি, যদি...

 

– কী আর করবো! তোমাকে তো আর ছাড়তে পারবো না। পোড়া কপাল বলে মেনে নেবো। হাঁদারাম, স্বাচ্ছন্দ সম্পদের নয়, মনের। সুখ অর্থের নয়, প্রেমের।

 

– উফফ্! কী দিলে গো! একবার জড়িয়ে ধরবো?

 

– হ্যান্ডব্যাগে ছোট ছুরি আর লঙ্কাগুঁড়ো দুটোই আছে।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু