অঞ্জু মাসীকে নিয়ে ট্রেনে দিল্লীর পথে
অঞ্জু মাসীকে নিয়ে দুপুর বারোটা নাগাদ হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে গেলাম; রাজধানী এক্সপ্রেসটির হাওড়া স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল দুপুর ৪ টা ৫০ মিনিটে; আমরা স্টেশনের একটি রেস্তোঁরায় আমাদের মধ্যাহ্নভোজ ক’রলাম এবং ৯নং প্ল্যাটফর্মে গিয়ে অপেক্ষা ক’রতে রইলাম। অঞ্জু মাসী পুরোপুরি বোরখাতে ঢাকা ছিল। যখন আমার আত্মীয় এবং বন্ধুরা সেখানে উপস্থিত হবে আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্যে, তখন তাদের সন্দেহ এড়াবার জন্যে, অঞ্জু মাসী আমার কাছ থেকে সামাজিক দূরত্ব পাঁচ মিটারের বেশীই রেখেছিল।
ট্রেনটি বিকাল তিনটা নাগাদ প্ল্যাটফর্মে পৌঁছেছিল। অঞ্জু মাসী আর আমি ট্রেনে উঠলাম। অঞ্জু মাসী বুদ্ধি খাটিয়ে বার্থগুলি রিজার্ভ ক’রেছিল, যাতে আমাদের বার্থগুলি খুব কাছাকাছি না থেকে যায়, অথচ আমরা প্রত্যেকেই ট্রেনের জানালায় নীচের বার্থ পেয়েছিলাম।
আমি আমার বার্থের খুব কাছে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলাম, যখন স্বপনকা আমাকে বিদায় জানাবার জন্যে দেখতে এসেছিল। বোরখা পরিহিতা অঞ্জু মাসী ট্রেনের ভিতরে বসে ছিল; অঞ্জু মাসী আমাদের কথা বলার সময় দেখতে পাচ্ছিল, কিন্তু স্বপনকা কখনই অনুমান ক’রতে পারননি যে জানলায় বোরখা পরা মহিলাটি আসলে তার স্ত্রী। আমার কলেজের কয়েকজন বন্ধুও আমাকে দেখতে এসেছিল; স্বপনকা তাদের সাথেও কথা ব’লেছেন। আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, স্বপনকা বলবেন যে তার স্ত্রী হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে, তবে স্বপন এরকম কোনও উল্লেখ করেনি, যদিও তার চোখ সর্বদা তার স্ত্রী অঞ্জুর খোঁজে হন্যে হ’য়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে দেবার পরে, ভেবেছিলাম পরের দিন সকাল ৯ টায় ট্রেনটি দিল্লী পৌঁছানোর আগে অবশ্যই আমাকে কয়েকটি জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি ভেবেছিলাম, আমার এবং অঞ্জু মাসীর কী ঘটতে পারে তা কল্পনা করার জন্যে আমাকে ঠাণ্ডা মাথয় ধ্যান ক’রতে হবে এবং আমাকে এটি খুব তাড়াতাড়িই ক’রতে হবে। আমি অঞ্জু মাসীর উপর একটু রেগে গিয়েছিলাম, কারণ ও আমার কোনও অষ্টাদশী কুমারী মেয়েকে বিয়ে করার সম্ভাবনা নষ্ট ক’রে দিয়েছিল। এর পরে, আমি ভেবেছিলাম যে আমিই দোষী ব্যক্তি; কারণ আমি ওর সম্মতি না নিয়েই ওর উপরে কিছু কাজ ক’রেছিলাম।
তারপরেই আমার মনে হোলো, - অঞ্জু মাসী আমার মা বোনের মতো, তবু কেন ও আমার বিছানায় উলঙ্গ হ’য়ে লুকিয়ে ছিল – ওর কাছে এরকম ব্যবহার আশা করা যায় না। হঠাৎ, আমি ভাবলাম, এখন ওকে হত্যা করা উচিত; যে মহিলা তার স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। বোরখার আড়ালে ওকে একটি মুসলিম মেয়ের মতো দেখতে লাগে, তাই একজন মুসলিম মেয়ের মতো অনার কিলিংটি বা মান বাঁচানোর জন্যে মৃত্যুদণ্ডকে ওর ভাগ্য হিসাবে মেনে নেওয়া উচিত।
তবে আমি সে রকম নৃশংস হ’তে পারিনা - কাউকে মেরে ফেলতে পারি না, আমি চাইব ও আমার চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাক - ঐ ঘৃণিত মহিলার সাথে যেন আমাকে আর কথা ব’লতে না হয় - ওকে ট্রেনেই ছেড়ে দিয়ে দিল্লীতে নেমে যাবো, দাদার সঙ্গে চলে যাবো আমার ইস্ট অফ কৈলাসের ফ্ল্যাটে। কিংবা ওকে দিল্লী স্টেশনে বা দিল্লীর আগে অন্য কোনও স্টেশনে নামতে বাধ্য ক’রি, বলি, - ‘থাকো যেখানে হোক নির্বাসনে এবং খুঁজে নাও তোমার বেঁচে থাকার উপায়।‘ … ..
তবে অঞ্জু মাসী কোথায় নামবে? কোথায় থাকবে ও? যদি ও একজন পুরুষ মানুষ হ’তো তবে থাকতো যাহোক কোথাও, এমনকি ফুটপাতে বাস করাও খুব কঠিন হ’তো না। কিন্তু ও একজন মেয়েমানুষ; আমি জানি না যে ওর কাছে কোনও টাকা পয়সা আছে কিনা। একজন মহিলাকে কেবল তার কাছে থাকা টাকা গয়নার জন্যেই বদমাইশ লোকেরা ছিনতাই করে না, কেবল যৌন সুখের জন্যেই অনেক পুরুষ পড়ে পাওয়া মেয়েমানুষ পেলে তাকে ফাঁদে ফেলতে পারে। আবার আমার নিজেকে দোষী মনে হ’লো; আমি নিজেও ওর সম্মতি না চেয়ে ওকে উপভোগ ক’রেছি। আমি যা ক’রেছি তাতে ও সন্তানসম্ভবা হ’য়ে উঠবে না তো? সন্তানের জন্যে আমার বড় একটা মাথা-ব্যথা নেই; কিন্তু এর জন্যে অঞ্জু মাসীর দেখভাল করার দরকার হ’তে পারে।
আমার উপরের বার্থ যার, সেই মহিলাটি আমার সামনের সীটে বসেছিল। আমি তাকে জিগ্যেস ক’রলাম, ‘ম্যাডাম, আপনি কি নীচের বার্থ পছন্দ করেন?’
মহিলাটি ব’ললেন, ‘এ কথা জিগ্যেস করার জন্যে ধন্যবাদ; আমি কি আপনার সঙ্গে আমার বার্থ বদল ক’রতে পারি?’
আমি বলেছিলাম, ‘ঠিক, তবে আমার সঙ্গে নয়, আমার স্ত্রীরও লোয়ার বার্থ রয়েছে, তবে বেশ কয়েকটি জানালা দূরে। আপনি কি সেখানে যেতে প্রস্তুত? তাহ’লে আমার স্ত্রী আমার কাছেই থাকতে পারে – আর আমি আপনার বার্থে যাবো। ‘
‘আমি প্রস্তুত’, তিনি ব’ললেন। তাঁর সাথে একসাথে, হাঁটলাম আমি সেই সীট পর্য্যন্ত যেখানে বোরখা পরা অঞ্জু মাসী ব’সে ছিল। আমি অঞ্জু মাসীকে জিগ্যেস করলাম, ‘শোনো প্লীজ, তুমি কি এই মহিলাটির সাথে নিজের বার্থটি বদলা বদলী ক’রে নেবে, যাতে তুমি আর আমি একসাথে বসে থাকতে পারি?’
‘অবশ্যই’, অঞ্জু মাসী বলেছিলো এবং মহিলাটির সাথে ওর বার্থের বিনিময় করার জন্যে, ওর লাগেজ নিয়ে এসেছিল আমার সঙ্গে।
এখন, আমি আর অঞ্জু মাসীকে খুন করার বা তাকে যে কোনও স্টেশনে নির্বাসন দেওয়ার দরকার দেখছিলাম না। আমি ভাবতে শুরু ক’রেছি, আমরা এখন কী ভাবে দিল্লীতে গিয়ে থাকবো সে সম্পর্কে আমাদের মতের মিল ক’রতে হবে।
আমি অঞ্জু মাসীকে জিগ্যেস করলাম, ‘তুমি বলেছিলে যে তোমার মামা দিল্লীতে থাকেন। তুমি কি তাঁর সাথে থাকতে চাও?‘
‘আমি কয়েকদিনের জন্যে থাকতে পারতাম, কিন্তু মামা এবং আমার মামীও অনেক কিছু জিগ্যেস ক’রবে আমার এবং আমার স্বামীর সম্পর্কে। স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সম্মতি ছাড়া যে কোনও বিবাহিত মহিলার পক্ষে অন্য কোনও আত্মীয়ের বাড়ীতে বসবাস করা নিতান্তই কঠিন।’
‘এর অর্থ, তুমি একদিনের জন্যেও তোমার মামা এবং মামীর কাছে থাকতে পারবেন না।’ আমি বলেছিলাম।
‘আমি সারা জীবন তোমার স্ত্রী হ’তে প্রস্তুত আছি। তুমি কি দয়া ক’রে আমার স্বামী হবে, নয়তো অন্ততঃ স্বামীর মতো সেজে থাকবে?’ ব’ললো অঞ্জু মাসী।
আমি কয়েক মিনিটের জন্যে উত্তর দিতে পারিনি। আমি কিছুক্ষণ ধ্যান ক’রলাম; তারপর আমি ওর হাতের উপর হাত রাখলাম। তারপরে আমার বন্ধু বিভাস এবং আমার দাদাকে এস-এম-এস পাঠিয়ে দিলাম, ‘আমার মেয়ে-বন্ধু মিলি আমার সাথে ট্রেনে আছে; তিনি আমার সাথে দিল্লীতে থাকবেন।’
এস-এম-এস-টা দেখালাম অঞ্জু মাসীকে; বললাম, ‘এরা আমাকে স্টেশনে রিসিভ ক’রতে আসবে। দেখছি, যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়, আর গাড়ীতে আমাদের দুজনেরই বসার জায়গা হয়, স্যুটকেস রাখারও।
এরপরে, অঞ্জু মাসী তার স্যুটকেস খুলে একটি সালোয়ার কামিজ সেট বের ক’রে টয়লেটে গেল। একট পরেই ও ওর পোশাক বদলে ফিরে এসেছিল। এই প্রথম, আমি এই পোষাকে ওকে দেখলাম; ওকে আর বাঙালি গৃহবধূর মতো লাগছিল না। তারপরে ও ওর কিটব্যাগ থেকে একটা বড় কাঁচি বের ক’রে ব’ললো, ‘বাবলু; তোমার বাবা এবং মা আমাকে আমার লম্বা চুল দেখে চিনতে পারবে। প্লীজ এটি কেটে ছোট ক’রে দাও, যাতে এটি আমার কাঁধের ঠিক উপরে থাকে।
আমি এর আগে কখনও কারও চুল কাটিনি। আমি ওকে জিগ্যেস ক’রলাম, ওর কাছে যদি কোনো টেপ বা ফিতে থাকে। ওর কাছে ছিল; ও ওর হ্যান্ডব্যাগ থেকে বার ক’রে আমাকে দিয়েছিল। আমি ওর চুলের গোছা ধ’রে একটা গিঁট বেঁধে দিলাম গিঁটটি যাতে গিঁটটা তার কাঁধের থেকে একটু নীচে থাকে। তারপরে গিঁটের ঠিক উপরে কাঁচি দিয়ে কেটে দিলাম। আমি আমার স্যুটকেস থেকে একটি শার্টে ভরা প্লাস্টিকের ব্যাগ বের ক’রেছিলাম। ব্যাগ থেকে শার্টগুলি বার ক’রে স্যুটকেসে রেখেছিলাম এবং অঞ্জু মাসীর চুলের গোছাটি সেই প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে দিয়েছিলাম। প্লাস্টিকের ব্যাগের খোলা দিকটা রাবার ব্যাণ্ড দিয়ে আটকেছিলাম। কোনও সিট বা ট্রেনের বগির মেঝেতে কোনও চুল পড়ে ছিল না। আমি চুলে ভর্তি শার্ট-ব্যাগটি আমার স্যুটকেসে খুব যত্ন ক’রে রেখে দিয়েছিলাম এবং অঞ্জু মাসীকে বলেছিলাম, ‘তুমি যদি কখনও এই চুলগুলি ফিরে চাও তবে আমি এগুলি তোমার চুলে স্টিকি টেপ আর সুপার গ্লু দিয়ে আটকিয়ে দেব, মিলি।’
‘ধন্যবাদ, বাবলু!’ অঞ্জু মাসী একটু উচ্ছ্বসিত হ’য়ে বলেছিলো, ‘তুমি ঠিক নামটি মনে রেখেছো তো - এটাই সেই নাম যা আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটকে ব্যবহার ক’রেছিলাম। এখন থেকে আমাকে মিলি ব’লে ডেকো। আমি এখন মিসেস মিলি মন্ডল - মিঃ কিরীটি মন্ডলের জীবনসঙ্গিনী।’