বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

দিল্লীতে মিলির সঙ্গে আমার সংসার

আমরা যখন দিল্লী স্টেশনে নামলাম, তখন অঞ্জু মাসী সালোয়ার-কামিজের সেট প’রে ছিল। দাদা অঞ্জু মাসীকে কেবল শাড়ি প’রতেই দেখেছে, অন্য কোনও পোশাকে কখনও দেখেনি। অঞ্জু মাসীর লম্বা চুল আর ছিল না; দু ভাগে ভাগ করা চাদর অর্থাৎ দোপাট্টা, ওর বুকের উপর দিয়ে দুটি ভাঁজে সাজিয়ে কাঁধের চারপাশে ফেলে দেওয়া ছিল; ওর চুল ছিল দোপাট্টার ঠিক উপরে।
দিল্লী স্টেশনে দাদা আমাকে জিগ্যেস ক’রেছিল, ‘আমি কি মিলিকে আগে দেখেছি?’
আমি বললাম, ‘দেখে থাকতে পারো; ও আমাদের বাড়ীর কাছেই থাকে।’
 
অঞ্জু মাসী এবং আমি ইস্ট অফ কৈলাশের একটি সাজানো অর্থাৎ ফার্নিশ্ড  অ্যাপার্টমেন্টে সংসার শুরু ক’রলাম; ওর আগের গৃহবধূর অভিজ্ঞতা কাজে লাগল। ও সেলুনে গিয়েছিল এবং চুলগুলি কুঁচকে – কার্ল ক’রে নিলো – এটি দিল্লীর একটি সাধারণ ফ্যাশন।
টি.সি.এসে প্রথম দিনের আমার পরিচয় প্রক্রিয়া চলার সময় আমি ঘোষণা ক’রেছিলাম যে আমি সম্প্রতি মিলিকে বিয়ে ক’রেছি। টি.সি.এস.-এর  প্রোগ্রামাররা প্রায়ই বিদেশে কোনো প্রোজেক্টে কাজ করে, তাই টি.সি.এস. আমার ও মিলির দুজনের জন্যেই পাসপোর্টের ব্যবস্থা ক’রে দিো। মিলি বলেছিলো, ‘চলো আমরা আমার নাম বদলাবার জন্যে একটি এফিডেভিট বা হলফনামা করি’। বিয়ের আগে, ওর নাম ছিল অঞ্জু মজুমদার, স্বপনকাকে বিয়ে করার পর ও অঞ্জু বোস হ’য়েছিল; এখন ও হয়ে আমার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করার জন্যে ‘মিলি মন্ডল’ নাম নিল। ওর অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট আর ডিগ্রিগুলোতে, তার নাম অঞ্জু মজুমদার হিসাবে দেখানো ছিল; মিলি বলেছিলো যে, নিয়োগ করার সময় সাধারণতঃ মূল সার্টিফিকেট আর ডিগ্রিগুলো দেখাবার  দরকার পড়ে না।
 
মিলি বি.এড.-ও ক’রেছিল - কোলকাতায় থাকার সময় । রাইসিনা বেঙ্গলী স্কুল বিনা দ্বিধায় ওকে অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেস হিসাবে নিষুক্ত ক’রলো। অঞ্জু মাসী যখন লুকিয়ে আমার ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েছিল এবং ওকে দিল্লীতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অনুরোধ ক’রেছিল, তখন আমি দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে আমি কীভাবে ওর থাকা খাওয়ার খরচ সামলাবো; এক সপ্তাহের মধ্যে, আমার সমস্ত উদ্বেগ যেন হাওয়ায় উড়ে গেলো।
 

পরের রবিবার, ইস্ট প্যাটেল নগরে আমার দাদার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম, আর সেখানে আমার মা এবং বাবার সাথে দেখা হলো। মা আমাকে একপাশে নিয়ে গিয়ে জিগ্যেস করলেন, ‘স্বপনের স্ত্রী কেন সালোয়ার-কামিজ প’রেছে? আর কেন ও ওর সুন্দর পা-পর্য্যন্ত লম্বা চুল কেটে ফেলেছে আর কেনই বা ও তোর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে?’
উত্তরে আমি বলেছিলাম, ‘তুমি আজকাল খুব ভাল দেখতে পাচ্ছো না মা। মিলি আমাদের পাড়ায় থাকে। মাত্র কয়েক মাস আগে ওর বাবা-মা একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, তার পর থেকে ও আমাদের পাড়ায় ওর মামার কাছে এসে উঠেছে। ও অঙ্কে এমএসসি-তে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। ও ঘরের কাজেও খুব নিপুণ; ও তোমার জন্যে শুক্তো এবং মুড়ির-ঘন্টো রান্না ক’রে দেবে। ওর কাকা ব’ললেন, ‘ওকে দিল্লীতে নিয়ে যাও। তোমার বাবা-মা অবশ্যই ওকে পছন্দ ক’রে তাঁদের কাছে রাখতে চাইবেন।’
 

আমরা দিল্লী পৌঁছানোর এক সপ্তাহ পরে প্রথমবার মিলি আমার জীবনসঙ্গিনী নারী হিসাবে আমার সামনে হাজির হ’য়েছিল। সেটা ছিল শুক্রবারের রাত; পরদিন সকালে ওঠার কোনও তাড়া ছিল না। রাতে খাবারের পরে আমি একটি সিগারেট জ্বালিয়ে শোবার ঘরে ঢুকলাম; মিলি দুটো বালিশের উপর মাথা রেখে আধ-শোয়া হ’য়ে বিছানায় পড়েছিল। ও একটা রঙিন লুঙ্গি আর ঢিলেঢালা গোলাপী টি-শার্ট প’রেছিল। এতক্ষণে আমি পরিস্থিতি ভালভাবে মেনে নিয়েছি; ও আর অঞ্জু মাসী নন; ও আর কেউ নয়, ও খালি মিলি, আমার সবচেয়ে আপন, আমার একেবারে নিজস্ব - মিলি। আমি ওর ঠোঁটে, ওর সারা গায়ে আমার ঠোঁট দিয়ে চাপ দিলাম, আর ভাবলাম যে ওকে আরও ভাল ক’রে দেখার সময় এসেছে। ভালবাসার কায়দায়, সহজেই দ্রুত নিপুণ ছোঁয়া দিয়ে, আমি ওর টি-শার্ট খুলে নিলাম।
আমি ওর স্তন দুটিকে আদর ক’রে না দেখে পারলুম না – বিশেষ ক’রে ওর  স্তনবৃন্তগুলিকে, আমি আমার হাতের তালু রেখেছিলাম ওর সুডৌল এবং গোলক-আকার স্তনের উপর, আমি আমার আঙুলের ডগা দিয়ে স্পর্শ ক’রেছিলাম ওর উন্নত প্রসারিত স্তনবৃন্ত আর তার চার পাশে ঘোর বাদামী ত্বকের বৃত্ত। মিলি ওর দু'হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধ’রলো, ওর স্তনগুলিকে আমার ছাতির উপর বিশ্রাম নিতে দিয়ে। আমি মুগ্ধ মিলিকে দেখে, মিলিও মুগ্ধ। আমি কেবল তার ঠোঁটেই নয়, তার কাঁধে, বাহুতে, স্তনগুলিতে এবং তার পুরো শরীরেও অনেক অনেক চুমু খেলম। আমি তার লুঙ্গি খুলে ফেলে, লুঙ্গির নীচে কী আছে তার আবিষ্কার না ক’রে পারলুম না। ভবানীপুরে শেষ রাত্রে যা না বুঝে ক’রেছিলাম, তা পুনরাবৃত্তি হ’লো দুজনেরই সম্মতিতে।
 

এক সপ্তাহ পরে, মিলি জানিয়েছিল যে ওর পিরিয়ড বন্ধ হ’য়ে গেছে। আমি খুব আনন্দ আর গর্বের সাথে ওকে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলাম, উনি নির্ণয় ক’রেছিলেন যে মিলি ৪৫ দিন ধরে গর্ভবতী, সম্ভবতঃ আমার সাথে দিল্লী যাওয়ার আগে পনেরো দিন আগে। আমার গর্ব চূর্ণ হয়ে গেল। আমি মিলিকে জিগ্যেস ক’রলাম ও এই শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় কিনা। মিলি বলেছিলো যে, ও জীবন বাঁচিয়ে রাখার পক্ষে; আমাকে ভ্রূণের বয়স সম্পর্কে কাউকে না জানাতে অনুরোধ জানায়।
 
আমি হাসপাতালে মিলির পাশে ছিলাম; খুব শীগগিরই যে কোনও সময় শিশুর জন্ম হবে। আমি ভাবছিলাম যে আমার স্বপনকাকে ফোন করা উচিত এবং তাকে জানানো দরকার যে, অঞ্জু মাসী তার আরেকটি সন্তানের জন্ম দিচ্ছে এবং বাচ্চাটি দেখানোর সময় এসেছে; কিন্তু মিলি স্বপনকাকে ফোন করা অনুমোদন করেনি।
এবার আমি শিশুর প্রসবের সময় অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। আমার মনে আছে টুম্পারও জন্মের সময়েও আমি হাসপাতালে ছিলাম, তবে তখন আমি অপারেশন থিয়েটারে থাকতে অস্বীকার ক’রেছিলাম, কারণ ঠিকমতো জামাকাপড় না পরা অঞ্জু মাসীকে দেখতে লজ্জা হ’য়েছিল।
সেদিনের সন্ধ্যে আটটা নাগাদ মিলির ব্যথা উঠেছিল; পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে যখন ওর অবিশ্বাস্য রকমের রক্তপাত হ’য়েছিল। আমি ভাবছিলাম যে স্বপনকার সাথে এই দুঃখ ভাগাভাগি করা উচিত আমার, নাকি আমাকে একা এই ক্ষতিটি সইতে হবে - যে ক্ষতিটি আমার স্বর্গ ভেঙে চুরমার ক’রে দিতে পারে।
এই গুরুতর পর্যায়ে, আমি দেখতে পেলাম যে নার্স ঠিকমতো মোকাবেলা ক’রতে পারছে না, এবং তাই তাকে সহায়তা করার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সকাল ৫টায় একটি মেয়ে জন্মেছিল। মা ও নবজাতিকা দুজনেই বেঁচে গেলো। রক্ত দেওয়া শুরু হ’য়েছিল, কারণ মিলির প্রচুর রক্ত ​​বেরিয়ে গেছিল। আমরা মেয়েটির নাম রাখলাম ‘রিমি’।
মিলি বাড়ি ফিরে এসে ব’ললো ‘টুম্পা এখন এখানে থাকলে! সে বাচ্চার সাথে খেলতো। বাবলু তুমি কি তাকে কিডন্যাপ ক’রে নিয় আসতে পারো না?’
 
পরের তিন বছর মিলি এবং আমি আমাদের সমস্ত সময় খরচ করি রিমির যত্ন নেওয়ার জন্যে; আমরা একে অপরের জন্যে বড় একটা সময় দিতে পারি নি। রিমি তিন বছর বয়সী হওয়ার পরে, রিমি এবং আমি দুজনেই আমাদের কেরিয়ার গড়তে মনোনিবেশ ক’রেছিলাম। আমরা দুজনেই পাঁচ বছরের পার্ট টাইম অধ্যয়নের পরে পিএইচডি  হ’তে পেরেছি - গণিতে মিলি এবং কম্পিউটিংয়ে আমি।
 

মিলির সাথে আর একটি দিন কখনও ভুলে যেতে পারবো না। আমরা এমন এক ভক্তিমূলক গান শুনছিলাম, যা প্রকৃতির অন্যান্য উপহারের মতোই নিজেকে সহজ-স্বাভাবিকভাবে উপহারের মতোই উপলভ্য হওয়ার স্বপ্নকে উদ্বুদ্ধ ক’রেছিল - যেমন আকাশ বাতাস আমাদের নিঃশ্বাস নিতে দেয়; প্রকৃতিতে জল আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করে; গাছের ছায়া আশ্রয় দেয়। আমি কখনই বুঝতে পারি নি যে আমি মিলির এত কাছে, ওকে প্রাণভরে নিজেকে দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত। মিলি বুঝতে পারে নি যে ও আমাকে ওর সেরা উপহার দিতে প্রস্তুত — নিজেকেই, স্বভাবতঃই এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এক মাস বা তার পরে ওর গর্ভাবস্থার পরীক্ষা ইতিবাচক ছিল। নয় মাস পর আমাদের ছেলে মিন্টু কোনও ঝামেলা ছাড়াই জন্মগ্রহণ ক’রেছিল। এবারও মিলি জিজ্ঞেস ক’রলো, ‘তুমি কখন টুম্পাকে আনবে? কেন তুমি তাকে চুরি ক’রতে পারছো না? বাবলু, আমি নিশ্চিত তুমি আমার জন্যে অন্ততঃ এটুকু ক’রতে পারবে।'

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু