বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

পর্ব ১

আচ্ছা আপনারাই বলুন তো একটা ১৯/২০ বছরের মেয়ের কি রকম শখ থাকতে পারে?

১. এই বয়সে বয়ফ্রেন্ড থাকাটা কোনো বড় কথা নয়।ওটা তো এখন ট্রেন্ড।

২.বয়ফ্রেন্ডের টপিক যদি বাদ দি তাহলে আছে মেয়েদের শপিং এর শখ।সাজগোজের জিনিসপত্র,নিত্যনতুন ফ্যাশনেবল জামাকাপড়ের প্রতি মেয়েদের টান তো বরাবরই।

৩.তাও যদি বাদ দি তাহলে থাকে রান্নাবান্নার শখ কিংবা সিনেমা দেখার শখ কিংবা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া,পার্টি করার শখ।

 

কিন্তু না এইসবের কিছুই আমাদের ঝিনুক রানীর মধ্যে এতটুকু নেই। না না ঝিনুক একটা মেয়েরই নাম কিন্তু আপনারা আবার তাকে সত্যিকারের সমুদ্রে খুঁজে পাওয়া সেই ঝিনুক ভাববেন না যেন। ওর পোশাকি নাম উৎসা ব্যানার্জি।ঝিনুক ওর ডাক নাম। নাত্নির ডাক নাম রেখেছিলেন দাদু। তবে নাম ঝিনুক হলে কি হবে মেয়েটির হাবভাব মোটেই ওই ঝিনুক নামটার মতো মিষ্টি নয়। বরং বেশ ঝাঝালো।

কলেজে এমন কোনো বাজে ছেলে অবশিষ্ট নেই যে ওর হাতে মার খায়নি। সবসময় একটা গুন্ডাগুন্ডা ভাব।তবে সেটা শুধুই বাইরে,বাড়িতে কিন্তু লক্ষী মেয়ে।

 

হ্যাঁ যে শখের কথা বলছিলাম আর কি। ঝিনুকের মধ্যে কোথাও মেয়েসুলভ কোনো শখ নেই। ওর ঘরে গেলে চারিদিকে দেখতে পাবেন শুধু শার্লক হোমস্, জেমস বন্ডের পোস্টারে,বইয়ে ছড়াছড়ি।এমন কোনো ডিটেক্টিভ বই বাকি নেই যা আপনি ঝিনুকের ঘরে পাবেন না। সকালের নিউজ পেপার পড়বেন? তাতেও শান্তি নেই।আগে ভাগে সব পড়ে নিয়ে যেখানে যতরকম ক্রাইমের খবর থাকবে সব কটা কেটে কেটে নিজের ডায়েরিতে ঢোকাবে।প্রায় ৪/৫ খানা ডায়েরি জুড়ে আপনি ক্রাইম,খুনোখুনি এইসব ছাড়া আর কোনো খবর পাবেন না। এরপর আবার নিজেই তদন্ত করতে থাকবে পাক্কা একজন ডিটেক্টিভের মতো।

আর ওর ইন্সপিরেশন হলো ওর মামা। ও.সি. সুব্রত সান্যাল।

 

ঝিনুকের মা ঝিনুককে নিয়ে একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে আছেন। তার একটাই কথা মেয়েমানুষ আবার ডিটেক্টিভ! আর ঝিনুকেরও এক কথা যদি ছেলেরা হতে পারে তো মেয়েরা কেন নয়?

 

ঝিনুক : শোনো মা আমি ডিসিশন নিয়েই নিয়েছি।আমি একজন গোয়েন্দাই হব।

মা : বলি বাড়িতে থেকে গোয়েন্দাগিরি করে হচ্ছেনা? আবার বাইরে গিয়ে লোকের জীবনও অতিষ্ঠ করতে হবে?

ঝিনুক : উফ মা! তুমি এইসবের কিচ্ছু বুঝবে না।

মা : আমার বুঝে কাজ নেই। আর এই সব কি?সমস্ত বই খাতার ওপর কি লিখে রেখেছিস?

ঝিনুক : অ্যানা মায়ার্স। এটা প্রফেশনাল নেম। যখন ডিটেক্টিভ হয়ে যাব তখন এই নামটাই রাখব নিজের।

(বলেই একটা হিরোসুলভ আচরণ করলো)

মা : এ আবার কেমন নাম? আনা! তা বলি ক আনা? (বলেই হেসে ফেললো ঝিনুকের মা)

ঝিনুকের রাগ তখন দেখে কে!

 

"ভর দুপুরবেলায় মা মেয়ের ঝগরাতে টিভিতে কান পাতাও দায়।বলি রোববারটাও কি একটু শান্তি পাবনা?আরে এ তো দেখছি মা মেয়ের অত্যাচারে আমাকে বাড়িছাড়া হতে হবে" বললেন ঝিনুকের বাবা।

 

হঠাৎ তেড়েমেড়ে বেরিয়ে এল ঝিনুক। "বাবা তুমি মা কে বারণ করো,সারাদিন আমার গোয়েন্দা হবার ইচ্ছে নিয়ে কথা শুনিয়ে যায়,আমায় খোটা দেয়"।

-"কে কথা শোনায় আমার ঝিনুক রানীকে?এত বড় বুকের পাটা কার শুনি?

- "মামা" (আনন্দে আপ্লুত ঝিনুক মামাকে আসতে দেখে)

- "কে বকছে আমার ঝিনুক কে?"

- " কে আবার তোমার ওয়ান অ্যান্ড অনলি বোন"

- "ও স্বাতী? দাঁড়া ওর খবর আমি নিচ্ছি।তুই চিন্তা করিস না"

- " হ্যাঁ আরও মাথায় তোলো।এই তুয়িই আমার মেয়েকে লাই দিয়ে মাথায় তুলছিস" (ঝিনুকের মা ভেতর থেকে ওদের কথা শুনে বাইরে এসে বললো)

- " আমার ভাগ্নি আমার যত ইচ্ছে মাথায় তুলবো"

- " হ্যাঁ তারপর যখন মেয়ে হাতের বাইরে বেড়িয়ে যাবে বুঝবে। বলে কিনা গোয়েন্দা হবে! মেয়েমানুষদের কখনও এরম কাজ করতে কেউ দেখেছে?"

- "কেউ দেখেনি তো দেখবে এবার (ঝিনুক)

- "এই তুই চুপ কর। গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে দু বছর একটা চাকরি করবি তারপর ভালো ছেলে দেখে তোর বিয়ে দিয়ে দেব"।

- "তোমার ভালো ছেলের মুখে ঝাটা!" (বলেই চলে গেল ঝিনুক)

- "দেখেছো মেয়ের মুখের কথা"

- " তুই তোর মেয়ের হাতেই জব্দ বুঝলি স্বাতী" (মামা)

- "তা যা বলেছো " (ঝিনুকের বাবা)

বলেই হো হো করে হেসে ফেললো ঝিনুকের মামা আর বাবা। ঝিনুকের মা মুখ বেকিয়ে " ওই হেসেই যাও এইদিকে মেয়ের পাখনা অলরেডি গজিয়ে গেছে।বুঝবে বুঝবে" বলে চলে গেল।


এতো দুই বছর আগের কথা।এখন ঝিনুকের গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট। মামার কাছে প্রপার ট্রেনিং নেওয়া শুরুও করে দিয়েছে সে। কিন্তু এর মধ্যে ঝিনুকের মামার সাথে ঘটে গেল একটা ছোট দুর্ঘটনা।রাতে ড্রাইভ করে ফেরার পথে ধাক্কা লাগে একটা গাড়ির সাথে। সেরম সিরিয়াস কিছু না হলেও বাঁ হাতে বেশ চোট লেগেছে। প্লাস্টার করতে হয়েছে তাই এখন কাজে যেতে পারছেন না সুব্রত বাবু। বিয়েও করেননি। তাই ঝিনুকের বাড়িতেই রয়েছেন তিনি।

তবে ৩/৪ দিন কাটার সাথে সাথেই তিনি বাড়িতে বসে হাঁপিয়ে উঠলেন। তাই ঠিক করলেন কোথাও থেকে ঘুরে আসবেন।তার ছোটোবেলার বন্ধু অনিতের বাড়ি যাবেন বলেই ঠিক করলেন। অনেকদিন ধরেই বলছে।

কিন্তু ঝিনুক মামাকে একা ছাড়তে কিছুতেই রাজি নয়।তাই ও মামার সাথেই যাবে।মা প্রথম প্রথম বারণ করলেও পরে রাজি হয়ে যায়। অনিতকে ফোন করে বলতেই অনিত উচ্ছসিত হয়ে যায় "আরে হ্যাঁ চলে আয়।আর তো ২ দিন পরেই গরমের ছুটি পরে যাবে।আমিও বাড়িতে থাকতে পারবো।জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে।আর তোর ভাগ্নিও আসবে তো?ভালোই হয়েছে আলাপ হয়ে যাবে এই সুযোগে"।

২ দিন পর শুরু হলো ওদের যাত্রা। অনিতের বাড়ি সেই হলদিয়ার মহিষাদলে। ট্রেনে করে যাওয়ার রিস্ক নিল না ঝিনুক।মামাকে সে বাড়ির গাড়িতে করেই নিয়ে গেল।সকাল সকাল বেড়িয়েছিল ওরা।৪/৫ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেল গন্তব্যস্থলে।

 

অনিত - এতক্ষণে আসার সময় হলো?

সুব্রত - আরে রাস্তায় জ্যামে পড়ে গেছিলাম।

অনিত - ছাড় আর অজুহাত দিতে হবেনা।ভেতরে আয়।

ওরা অনিতের বাড়িতে ঢুকলো।

 

অনিত পরিবার বলতে আছেন অনিতের বাবা আর স্ত্রী। অনিতের ছেলে বাইরে চাকরি করে।

সেইদিন সন্ধ্যেবেলায় অনিত আর সুব্রত মিলে দেদার আড্ডাতে মেতেছে। ঝিনুক আর কি করবে। বড্ড বোর হচ্ছিল।যতটা আনন্দ ও করবে ভেবেছিল তার কিছুই এখানে হচ্ছেনা।তাই ঝিনুক তার ফোনে মুভি দেখছিল। তবে অনিতের স্ত্রীর সাথে আলাপ হলেও অনিতের বাবার সাথে আলাপ হয়নি ঝিনুকের তাই অনিতের বাবা শুভঙ্কর চৌধুরীকে দেখা মাত্রই ঘর থেকে বেড়িয়ে এল ঝিনুক। কিন্তু শুভঙ্কর বাবুকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিল।তাই দেখেই অনিত বললো,

 

অনিত - আরে বাবা এত দেরী হলো যে?সেই কোন সকালে বেড়িয়েছিলে। তোমায় এত ক্লান্ত লাগছে কেন?

শুভঙ্কর - আর বলিস না রাজবাড়ীতে আবার একটা বিপদ ঘটে গেছে।

 

(রাজবাড়ীর কথা শোনা মাত্রই ঝিনুকের মন ঝিলিক দিয়ে উঠলো। ছোট থেকেই রাজবাড়ী, পোড়োবাড়ি এইসবের প্রতি ভীষণ ইনটারেস্ট ঝিনুকের। ওর মতে, এইসব বাড়ি নাকি এক একটা রহস্যের ভান্ডার)

 

অনিত - বিপদ! আবার কি বিপদ?

শুভঙ্কর - কয়েকদিন আগে নারায়ণ দেব রায়ের বড় ছেলেটা নিখোঁজ হয়েছিল না? আজ সকালে নাকি তার লাশ পাওয়া গেছে রেললাইনের ধারে!

অনিত - সে কি!

শুভঙ্কর -  হ্যাঁ। নারায়ণ আর ওর ছোটো ছেলে গেছিল লাশকে আইডেন্টিফাই করতে। তবে অদ্ভুত জিনিস কি জানো? সবাই ওই লাশটাকে নারায়ণের বড় ছেলের বললেও নারায়ণের এক কথা ওই লাশটা নাকি ওর ছেলের নয়। ওর ছেলে নাকি বেঁচে আছে!

আরে এইসব শুনতে শুনতেই তো বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গেল। (এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সোফায় বসে পড়লেন শুভঙ্কর বাবু)

ঠিক তখনই ঝিনুক এসে টুক করে একটা প্রণাম করে নিল শুভঙ্কর বাবুকে। তিনি একটু অবাক ভাবে ঝিনুকের দিকে চাইতে অনিত নিজেই ওর পরিচয় দিলেন। তারপর তিনি সলজ্জ হেসে ঝিনুককে আশীর্বাদ করলেন। হঠাৎ ঝিনুক জিজ্ঞেস করলো, ''আচ্ছা, ওই রাজবাড়িতে যাওয়া যাবে?

শুভঙ্কর বাবু একটু অবাক হলেন তারপর বললেন,''হ্যাঁ নিশ্চয়ই, ওইখানে অনেক মানুষই যায়, কিন্তু এই সময় না গেলেই মনে হয় ভালো। দেখো কি করবে তবে যদি যেতে চাও তাহলে কাল সকালে অনিতকে বলো নিয়ে যাবে।আর ওখানে গিয়ে আমার নাম বলবে।আমি আর ওই বাড়ির মালিক যিনি নারায়ন আমরা বাল্যবন্ধু " এই বলে শুভঙ্কর বাবু উঠে গেলেন।  তারপরে ঝিনুক ওর মামার দিকে তাকাতেই তিনি ভালোই টের পেলেন তার ভাগ্নির মনে কি চলছে। তিনি ইশারা করে ঝিনুককে বারণ করলেন। কিন্তু এমন সুযোগ ঝিনুক কিছুতেই ছাড়তে রাজি নয় তাই ও অনিতকে মানিয়ে নিল। অনিত নরম মনের মানুষ,তাই ও ঝিনুকের কথা ফেলতে পারলো না।সবাই মিলে ঠিক করলো যে কাল সকালে ওরা খেয়ে নিয়েই রাজবাড়ী উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।

 

পরেরদিন সকালবেলা ------

পথে হাঁটতে হাঁটতে ঝিনুক জিজ্ঞেস করলো,

ঝিনুক : আচ্ছা অনিত মামা এই রাজবাড়ীটা কত দিনের পুরোনো?

অনিত : তা অনেকদিনের।আমি তো জন্মের সময় থেকে এই রাজবাড়ী দেখে আসছি।

ঝিনুক : ওই বাড়িতে কারা কারা থাকে?

অনিত : এই বাড়িতে একটা লোক তার মেয়েকে নিয়ে থাকে। শুনেছিলাম লোকটা ওই নারায়ণ দেব রায়ের বন্ধু। উনি নাকি লিজে এই বাড়িটা ওদের দিয়েছিলেন। নারায়ণ দেব রায় ও তার বড় ছেলে বিদেশে থাকতো।

বড় ছেলেটি লন্ডনে পড়তে গেছিল। তার নাম অনিরুদ্ধ। ছেলেটি ব্রিলিয়েন্ট। তবে ওখানে একটি মেয়ের প্রেমে পরে এবং বিয়েও করে। কিন্তু বেশিদিন তা স্থায়ী হয়নি।

ঝিনুক : কেন?

অনিক : বউটা দুবছরের মাথায় মারা যায়।তখন ওদের ১১ মাসের একটা বাচ্চাও ছিল। তবে এ ঘটনা ৫ বছর আগের। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসে অনিরুদ্ধ।ততদিনে নারায়ণ দেব রায়েরও রিটায়ারমেন্টের সময় হয়ে গিয়েছিল।তিনি তার ছেলে আর নাতির সাথেই থাকেন। কিন্তু কয়েক মাস আগেই উনি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার ওনাকে একটু হাওয়াবদলের পরামর্শ দেন। তারপরেই হঠাৎ করে তার পুরানো বংশ চিহ্নের কথা মনে পড়ে এবং সপরিবারে এখানে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

ঝিনুক : আচ্ছা তুমি তো খালি বড় ছেলের কথা বলছো। ছোট ছেলেও আছে নিশ্চয়ই?

অনিত : হ্যাঁ আছে কিন্তু ও থাকা না থাকা সমান।

ঝিনুক : এরকম কেন বলছো?

অনিত : ও একদমই অপদার্থ একটা ছেলে। কোনো কাজের নয়। কাজের থেকে অকাজ বেশি তার। আর সর্বোপরি নারায়ন দেব রায়ের মনের মতো একেবারেই নয়। তাছাড়া ছোটো ছেলেটি বেশিদূর পড়াশোনাও করেনি।ওর নাম সুদীপ্ত। সে এখানেই থাকে। তবে ছেলেটির গুণের মধ্যে আরো একটি বড়ো গুণ হলো তার দাদাকে হিংসা করা।

ঝিনুক : হিংসা?

অনিত : হ্যাঁ। ছোট ছেলের হিংসার কথা সবাই জানতো। বড় ছেলে অনিরুদ্ধ সব দিক থেকে এগিয়ে ছিল ছোট ভাই সুদীপ্তর থেকে। যেমনি দেখতে সুন্দর তেমনি পড়াশোনায় ভালো আর তেমনি উচ্চপদের চাকরি। আর সেখানে ছোট ভাই সুদীপ্ত একটা  প্রাইভেট জব করে। তবে সুদীপ্তর অনিরুদ্ধর প্রতি এত হিংসা হওয়ার আরও একটা কারণ ছিল।

ঝিনুক : কি কারন?

অনিত : ওই যে বললাম নারায়ন দেব রায় তার বন্ধু ও মেয়েকে এই বাড়িতে লিজে থাকতে দিয়েছিলেন। এই তিন মাস মত হল নারায়ন দেব রায় ওই মেয়েটির সাথে নিজের বড় ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন।কানাঘুষো শোনা যেত যে ওই মেয়েটির সাথে সুদীপ্তর একটা গোপন সম্পর্ক ছিল কিন্তু নারায়ন দেবরায় অনিরুদ্ধর সাথে মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দেওয়ায় নিজের ভালোবাসা খুইয়ে সুদীপ্তর হিংস্রতা আরো বেড়ে গেছিল।

ঝিনুক : বুঝলাম। আচ্ছা ঐ লোকটি আর মেয়েটির নাম কি?

অনিত :  লোকটির নাম জানিনা ঠিক, তবে মেয়েটির নাম সুচন্দ্রা। মেয়েটিকে ভীষণ সুন্দর দেখতে।কোনো ফিল্মের নায়িকার থেকে কম নয়। তবে মেয়েটি কেমন যেন একটা। কারো সাথে বেশি কথা বলত না। সবাইকে কেমন যেন এড়িয়ে চলত। সব সময় নিজের চারিদিকে যেন একটা অদৃশ্য পাঁচিল তুলে রাখতো।

শুভঙ্কর : বাবা তুই দেখছি খুব ভালো মতন নোটিস করেছিস মেয়েটিকে। কি বউদিকে বলব নাকি?

অনিত : আরে না না কি যে বলছিস। এখানের কমবেশি  সবাই ওই মেয়েটিকে একটু বেশি নোটিস করে। আরে বুঝিস না পাড়ায় কোন সুন্দরী মেয়ে থাকলে যা হয় আর কি ।

ঝিনুক : আচ্ছা ওরা কতদিন ধরে ওই বাড়িতে আছে?

অনিত : তা আছে। বছর সাত আটেক তো হবেই।

ঝিনুক : আচ্ছা ওরা.....

আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল ঝিনুক কিন্তু মামা বলল ''হয়েছে হয়েছে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে নিয়েছিস। এবার সামনে দেখ ওই যে রাজবাড়ী দেখা যাচ্ছে ''।

অনিত বলল ''তোর ভাগ্নি তোর মতনই হয়েছে বলতে হবে। খালি একের পর এক প্রশ্ন পুরো গোয়েন্দাদের মতো ''।

''ও তো গোয়েন্দাই হবে বলে পণ করে বসে আছে ''বলল মামা।

অনিত বললো''বাহ সে তো বেশ ভালো কথা। আর ওর সাথে কথা বলে যা মনে হল ও ভালো গোয়েন্দা হতে পারবে ''।

''ইয়েস তুমি একদম ঠিক কথা বলেছো অনিত মামা '' বলল ঝিনুক।

এই সমস্ত কথা বলতে বলতেই ওরা রাজবাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। রাজবাড়ীর মেন গেটের সামনে একজন দাড়োয়ান দাঁড়িয়ে।তাকে গিয়ে অনিত নিজের পরিচয় দিতেই সেই দারোয়ানটা আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিল। ভেতরে ঢুকেই ডান দিকে একটা বড় বাগান চোখে পড়ল। সেই বাগানের মধ্যে একটা টেবিল আর চেয়ার রাখা। আর চেয়ারে বসে আছেন নারায়ন দেব রায়। যথেষ্ট চিন্তিত অবস্থায়। এমনও দেখে মনে হচ্ছে যে কাল সারারাত মানুষটি ঘুমাইনি। আমরা গিয়ে লোকটির সামনে দাঁড়ালাম। আমরা আসতেই তিনি চোখ তুলে তাকালেন। তারপর অনিত সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুব্রত সান্যাল এর পরিচয় পেয়েই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। সুব্রতর দুহাত ধরে অনুরোধের ভঙ্গিমায় বললেন ''আমায় তুমি বাঁচাও বাবা। এখানে কেউ বিশ্বাস করতে চাইছে না যে অনিরুদ্ধ বেঁচে রয়েছে। সবাই ভাবছে কাল ট্রেন লাইনে যে লাশ পাওয়া গেছে সেটা নাকি অনিরুদ্ধর। কিন্তু আমি জানি সেটা আমার ছেলের নয় হতে পারে না। পুলিশও আর আমার কথা মানতে চাইছে না। তারাও এটা অ্যাক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এবার আমার ভরসা শুধু তুমি। আমি তোমার অনেক কাজের কথা শুনেছি। তোমার কাজ নিয়ে অনেক সুনাম আছে। তুমি আমায় হেল্প করো। আমায় ফিরিয়ে দিও না প্লিজ। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনো।ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই '' এই বলে ভদ্রলোক থামলেন।তার চোখ ছলছল হয়ে উঠলো।  সুব্রতও ওনাকে সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দিলো।

'' কিন্তু তার আগে যে আমার অনেকগুলো বিষয়  জানার আছে ''বলল সুব্রত।

'' বেশতো তাহলে চলো ভেতরে। ভেতরে গিয়ে তুমি যা জানতে চাও সব বলবো '' বলল নারায়ন দেব রায়। তারপর উনি পথ দেখিয়ে আমাদের নিয়ে গেলেন রাজবাড়ীর অন্দরে। আমরাও ওনাকে অনুসরণ করে চলতে লাগলাম।





পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু