বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

আগমণীর সুরে সুরে


     বর্ষার অবসানে শরৎ আগমন আপনও মাধুরী নিয়ে, শরতের আনন্দে আমরা নিজেকে সুন্দর সাজিয়েনি, কারণ শরৎ নিজে বড় সুন্দরী উপরে নীল আকাশ সাদা মেঘের ভেলা বলাকারা সারি বেঁধে উড়ে যাচ্ছে আর নিচে ধরিত্রীর বুকে সাদা কাশফুল দোলা লাগিয়েছে। শিউলি স্বমহিমায় বিছিয়ে দিয়েছে ফুলের সৌরভ আমরা দিঘীতে শতশত পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়েছে। শরৎকে নিয়ে নব আনন্দে মেতে উঠি, জগৎজননী মায়ের আগমনী বার্তা আমাদের কাছে ধ্বনিত হয় ।

মহালয়ার ভোর থেকেই আমরা মায়ের আগমনী বার্তা শুনতে পাই "বাজলো তোমার আলোর বেণু" 

এই শারদীয়া পুজোকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকের ঘরে  আনন্দের উৎসব সকলেই মেতে উঠে  শারদীয়ার আগমনী সুরে।

এই শারদীয়ার উৎসবে আত্মীয়-স্বজন যে যেখানে থাকে সবাই একত্রিত হয়ে শারদীয়াকে বরণ করে নিয়ে চারদিন আনন্দিত থাকে, এর মধ্যে থাকে স্নেহ, ভালোবাসা,আশীর্বাদ, প্রেম।

প্রকৃতির শোভাই জানান দেয় মা দশভূজার আগমনী বার্তা।

সপ্তমী, অষ্টমী ,নবমী, দশমী চার দিন আমরা মাকে বরণ করে ধুমধামের সঙ্গে পূজা করি।


শরতের মাধুর্য আনন্দ অব্যক্ত। শরৎকালে দুর্গাপূজো হয় বলে শারদীয়াপূজো নাম। গরীব, বড়লোক সকলেই  পুজোতে আনন্দ করে নতুন কাপড় জামা পরে। এই শরৎকালের দেবীর আহ্বানের জন্য একটি বছর সকলেই অপেক্ষা করে।বহু মানুষের রুজি রোজগার এই পুজোকে কেন্দ্র করে এই শরৎকালে শারদীয়া পূজো য় সকলেই আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে ।


স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে এলাম কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে,নতুন যৌবনের ছোঁয়া লেগেছে শরতের আগমনে।মনের অজান্তে  কখন আমি মন দিয়েছি অজয়কে বুঝতে পারিনি, কিছুদিনের মধ্যেই এম টেকে পড়তে অজয় বাইরে গেল ,ও খুব ব্রিলিয়েন্ট ছেলে আমি একলা হয়ে পড়লাম, আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে পারিনি বিয়েও করিনি শুধু তার পথ চেয়ে,

অজয় বলেছিল! শরৎ এলে ঠিক মিলন হবে।

   **********************


হঠাৎ সেদিন শিলিগুড়ি স্টেশনে সিঁড়ি থেকে নামতেই অজয়ের সাথে দেখা! 


অজয় বলল রঞ্জনা তুই এখানে  ? 


আমি,মামা বাড়ি এসেছিলাম!

অজয়! লন্ডন থেকে ফিরলি খবরটাও দিলি না, যাক ফিরেছিস শেষে আমি তো ভাবলাম তুই এ্যংলো বিয়ে করে দেশে আসবি।


বাহ্, তুই একথা বলছিস! তোকে ছাড়া কাউকে ভাবি না!

কাল ফিরেছি আসলে কাকার হঠাৎ একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে ।


কবে! হয়েছে জানাস নি তো!!


সময়ই পেলাম কোথায়! কোনরকমে  ফ্লাইটে সোজা এখানে, বাবা একা হয়ে গেছেন।


অজয় অনেক দিন পর দেখা হলো,সেই তিন বছর আগে গেছিস, ভাবলাম চিনতেই পারবি না।


চিনতে পারবো না! তুই ভাবলি কি করে! মাঝে ক'টা বছর ভুলে যাবার মতো কিছু?


ভুল হয়ে গেছে রাগ করিস না!!

আমার ছোট ভাইয়ের বাড়ি এসেছিলাম সকলকে পুজোর জামা কাপড় দিতে, আজ বাড়ি যাচ্ছি ।


এই রঞ্জনা পুজো আসছে তোর ছুটি তো, এবারের পুজো একসাথে কাটাবো ! পুরুলিয়া যাবি?

 

বাবা, তুই লন্ডনে থেকে ও পুরুলিয়ার কথা মনে রেখেছিস !

 

ঐ সময় কতো রকম জীবনের স্মৃতি , আবেগ ছিল বল! বসন্ত উৎসব, সন্ধ্যে বেলায় আদিবাসীরা মাথায় হাঁড়ি নিয়ে তালে তালে কোমর ধরে কেমন নাচগান করতো- মহুয়া ফুলের গন্ধে যেন নেশা লাগতো, আমরা আনন্দিত হতাম ! 


হ্যাঁ ঠিকই , ওদের ছৌ নৃত্য ও কি সুন্দর ওরা পুরো দুর্গাপূজো কে ছৌনাচের নাচের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করে কি সুন্দর ডিগবাজি দিয়ে ভল্ট খেয়ে নাচতো তাই না?


হ্যাঁ ঐ জন্যই যাবো বলছি!চল


তুই যেদিন আমাকে ছেড়ে বিদেশে গেলি আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম , ঐ শিউলি গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ভেবেছি আমার অজয় অনেক দূরে।

অজয় জানিস, ঝুরঝুর করে শিউলি ফুলগুলো পড়তো হাত ভরে ফুলগুলো নিচে পড়তো  ঐ ফুলগুলো তোর কথা মনে করিয়ে দিতো চোখের জল বাঁধ মানতো না।

তোকে এত ভালবেসে ছিলাম আমি নিজেও তখন বুঝিনি বুঝতে চেষ্টাও করিনি দুজনে একসাথে সময় কাটিয়েছি পড়াশোনা করেছি। পরে বুঝলাম ওটা ছিল আমাদের দুজনার প্রকৃত 'ভালোবাসা'।


অতীতের স্মৃতি কতো মধুর , রঞ্জনা

শরতের সোনাঝরা রোদ্দুর নীল আকাশের নিচে আমরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিউলি তলায় যেতাম  দূর""""" থেকে বকুল ফুলের সুবাস ভেসে আসতো আমরা দুজনে গাছের ডালে দোলনায় বসে দুলছি , কতো স্মৃতি মধুর গল্প ।

যাওয়ার আগে যেদিন আমার হাত ধরে আর ছাড়তে চাইছিলি না,,,,,,,আজ ও মনে পড়ে আমার।



শরৎকাল খুব পছন্দের মহালয়ার দিন ভোরবেলায় অপেক্ষা করতাম মহালয়া শুনবো। ওই  সুন্দর সুন্দর গান কি ভালো লাগতো,রেডিওতে চন্ডিপাঠ ও খুব প্রিয় গান

 "বাজলো তোমার আলোর বেণু" ।

সত্যিই যেন চারিদিকে আলোয় ভুবন ভরে গেছে আগমনী সুরে সুরে ভরে উঠছে।


আমার তোর ঐ দিনটা খুব বেশি মনে পড়ে পুজোর ছুটির আগে কলেজে একটা আগমনী অনুষ্ঠান হয়েছিল এই গানটাই তুই গেয়েছিলি কি ভালো লেগেছিল , খুব মিষ্টি তোর গলা,হল সবাই মেতে উঠেছিল।


তুই এবার আমাদের বাড়ির পুজোতে আয় সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেবো। বাড়ির সবাই দেখতে চায়,তোর গান শুনতে চায়। 

 

এই বললি পুরুলিয়া যাবি!


সে তো একদিন যাবো!


এখনই থেকে সবাইকে দেখাবি? আবার গান গাইবো ,ওরে বাবা আমি পারবো না এখন প্র্যাকটিস নেই।পাগল নাকি?

 

এখন মানে! এবার আসল কাজটা সারতে চাই, তুই একেবারে আমার হয়ে যাবি।।



        ******************




রঞ্জনা পুজোর সময় তুই যখন শাড়ি পরে পাড়ার  বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াস আমার কাছে আসিস না , আমার খুব হিংসে হয়, কি সুন্দর তোকে দেখায়, শুধু দুর থেকে প্রাণভরে দেখি, তোকে মন্দিরের দেবী প্রতিমার মত লাগে, আমি প্রতিমার মুখখানির সাথে মিলিয়ে দেখি

একই মনে হয় ।



সেটা তোর চোখে! 

 

আজ তোকে দেখে আমার কি ভালো লাগছে!  বুকের ভেতরটা শান্তিতে ভরে যাচ্ছে তোর কথাগুলো শুনে আবার সেই  শিউলি তলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।



দেখি তুই যখন বলছিস আমারও ইচ্ছে এই শরতের আমি তোদের বাড়ি আসছি। 


 আমি তো বেশিদিন থাকছি না কারন এবছর আর ছুটি পাব না, বাংলায় দুর্গাপুজো আমার খুব ভালো লাগে এখানেই থাকতে ইচ্ছে হয় ,লন্ডন থেকে পরের বার দিল্লিতে চলে আসবো, ওখানে চিত্তরঞ্জন পার্কে একটা ফ্ল্যাট কিনেছি জানিস তো !


আমার ও তাই ইচ্ছা এবার এক

জায়গায় থাকি।তবে শহরের আনন্দ খুব একটা ভালো লাগে না। গ্রামাঞ্চলে প্রতিমা যেন প্রাণবন্ত ,মা যেন চিন্ময়ী।


কি বলছিস তুই ! একবার দেখ ।


ওখানে বিশাল বড় করে পুজো হয়  সব বাঙালিরা একসাথে মিলে করে, পুজো চারদিন খাওয়া দাওয়া হয় নানা অনুষ্ঠান হয় শুনেছি দারুন হয়।


 অজয় আমার ট্রেনের টাইম হয়ে গেল!

 

বললাম ঠিক আছে, রঞ্জনা ওই কথা রইল এবার তুই আমদের বাড়ি আসছিস! আমি প্রতীক্ষায় দিন গুনবো সেই আমাদের পুরানো স্মৃতির দিনগুলোকে আর একবার যদি নতুন করে কাছে পেতে পারি  আর তোর সেই গানখানি  একটু শোনাস ।


দুর--পাগল সে এখন আর অভ্যাস নেই ভুলে গেছি চর্চাই নেই গানের, বাবা-মার বয়স হয়েছে,

সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছি ।





হঠাৎ ট্রেনের সিটি বেজে উঠলো ,

আসি আবার দেখা হবে।। 


রঞ্জনা গান কিন্তু শুনবো! গানের আবার বয়স কি! তুই তো একা থাকিস গান গুলো একটু প্র্যাকটিস করে নিস এই ক'দিনে।  তোর কন্ঠের গান,,, ,,,,

" বাজলো তোমার আলোর বেণু"


       **********************




পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু