বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

খোঁজ (পর্ব-১)

যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ারিং পাশ ক’রে পিনাকী কোনো কোম্পানীতে যোগ দেয়নি, কারণ বাজারে চাকরী নেই। পিনাকী ব্যবসা শুরু ক’রেছে, ‘সেবা’- নামে একটা কোম্পানী খুলেছে; ওর মূল দক্ষতা কম্পিউটারে; ছোটোখাটো ব্যবসাদারের পে-রোল, ইনভেন্টরী ম্যানেজমেন্ট, ইনভয়েসিং, দেনা-পাওনা ম্যানেজমেন্ট, সর্ব্বোপরি সাইবার সিকিউরিটি আর ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনে। এই কোম্পানীর মালিক পিনাকী, আবার একমাত্র কর্ম্মচারীও পিনাকী; তবে স্থানীয় পুলিশ ইনস্পেক্টর শৈলজা পিনাকীর বন্ধু হিসেবে প্রায়ই পিনাকীর অফিসে থাকে; যেদিন মিস্ প্রণতি দেব পিনাকীর সঙ্গে প্রথম দেখা ক’রতে এলো সেদিনও শৈলজা ছিল ওর চেম্বারে। সুন্দরী তরুণী মিস্ প্রণতি দেবের কাছ থেকে কাজ আদায় করার জন্যে শৈলজা ব’ললো, ‘আপনি যা চাইবেন তাই ক’রে দেবে পিনাকী। আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট – যা চাইবেন, তাই পাবেন। কাজ ক’রতে যা খরচ হবে, সেইটুকুই আমরা আপনাকে বিল ক’রবো’। 
মিস্ প্রণতি দেব জানালো যে, ও একটা মোটা মাইনের চাকরি পেয়েছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না- গভর্নেস হিসাবে এই চাকরি করার মধ্যে কোনোরকমের ঝুঁকি আছে কিনা। কারণ এই চাকরির সঙ্গে ওকে মেনে নিতে হবে কিছু অসাধারণ শর্ত। প্রণতির কাছে এই চাকরীটির প্রধান আকর্ষণ এখানকার মাইনে – সপ্তাহে দু-হাজার টাকা, তার উপর থাকা-খাওয়ার কোনো খরচ নেই। এর আগে প্রণতির মাসিক বেতন ছিল পাঁচ হাজার টাকা। নিয়োগকর্তা তিমির তরফদার প্রথমেই দেড় হাজার টাকা সাপ্তাহিক বেতনের চাকরীর প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু শর্ত্ত ছিল - প্রণতিকে তার আজানুলম্বিত কেশরাশি বিসর্জ্জন দিতে হবে। প্রণতি তাতে রাজী হয়নি; তখন তিমির ব’লেছিল এখানে কাজ ক’রতে হ’লে চুল ঘাড়ের নীচে নামানো চলবে না; এর জন্যে সপ্তাহে দু-হাজার টাকা দিতেও তিমির রাজী। তখন শর্ত্ত মেনে নিয়েছিল প্রণতি।
চুল ছোট করা ছাড়া আরও কিছু সর্ত্ত আছে পোষাক-আশাক, চলাফেরা ও কথাবার্ত্তার ব্যাপারে যেগুলোতে প্রণতির একটু অস্বস্তি লাগছে। প্রণতির সন্দেহ- আপাতদৃষ্টিতে তিমির তরফদার যতটা হাসি-খুশি ভালো মানুষ মনে হয়, ও ততটা আস্থাভাজন নয়; ও কিছু লুকোচ্ছে প্রণতির কাছ থেকে। সপ্তাহে দু-হাজার টাকা মাইনে কম কথা নয়; প্রণতি রাজী হ’য়ে গেলো, তবূ ভাবলো পিনাকীর মত এক প্রাইভেট গোয়েন্দার নজরদারী থাকলে ও নিরাপদে কাজ ক’রতে পারবে; তখন পিনাকী পরামর্শ দিলো,- যদি কোনো প্রয়োজন হয়, প্রণতি টেলিফোন ক’রে জানালেই পিনাকী পৌঁছে যাবে তিমির তরফদারের জমিদার বাড়ীতে।
***
পনেরো দিন পরে, পিনাকী প্রণতির টেলিফোন পেয়েছিল, প্রণতি তাকে অনুরোধ ক’রেছিল জমিদার বাড়ীতে এসে প্রণতির সঙ্গে দেখা করার জন্যে। পিনাকী এলে, মিস্ দেব ওকে কয়েকটি অস্বস্তিকর ঘটনার কথা জানিয়েছিল,- ’-
(১) মিস্টার তরফদার মিস্ দেবকে কাজের সময় ওর নিজের জামাকাপড় প’রতে বারণ ক’রেছিল; ওকে দেওয়া হ’য়েছিল কয়েকটি পুরোনো কিন্তু নতুনের মতো সালওয়ার কামিজের সেট। এই বিশেষ পোশাক প’রে, একটি খোলা জানলার দিকে পিঠ ক’রে, সামনের রুমে বসে ওকে ছাত্রকে পড়াতে হ’তো। মিস্ দেবের সন্দেহ হ’য়েছিল যে জানালার বাইরে থেকে কেউ ওকে দেখছে; কিন্তু জানালার দিকে দেখা ওর বারণ ছিল। তাই পরের দিন থেকে, মিস্ দেব ওর রুমালে একটা ছোট আয়না লুকিয়ে রাখতো; সেই আয়না দিয়ে মিস্ দেব দেখতে পেয়েছিল যে ওর সন্দেহ অমূলক নয়; একজন লোক পিছনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে তাকিয়ে ছিল, জানলা দিয়ে দেখার চেষ্টা ক’রছিল।
(২) আর এক দিন, মিস্টার তরফদার মিস্ দেব আর মিসেস তরফদারের সামনে বসে, অনেক মজার মজার গল্প বলেছিল; শুনে মিস্ দেব হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়েছিল। কিন্তু, আশ্চর্য্যের কথা এই যে মিসেস তরফদার এতে একটুও হাসেননি।
(৩) এই বাড়ী সম্পর্কে আরও কিছু ব্যাপার প্রণতির অস্বস্তিকর লাগতো। লাল্টু নামের যে ছ-বছর বয়সের শিশুটির দেখাশোনা করার ভার মিস্ দেবকে দেওয়া হ’য়েছিল, সে ছোট জীবজন্তুদের উপর আশ্চর্য্যজনকভাবে নিষ্ঠুর ছিল।
(৪) এ বাড়ীর কাজের লোক মিস্টার এবং মিসেস পাকড়াশীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল না।
(৫) মিস্ দেব শুনেছে, যে বিরাট ড্যাশুন্ড (dachshund) কুকুরটি এই সম্পত্তির পাহারায় থাকতো, তাকে সবসময় ক্ষুধার্ত রাখা হ’তো। রাতের বেলা কুকুরটিকে মাঠে ছেড়ে দেওয়া হ’তো, এবং মিস্ দেবকে বলা হ’য়েছিল, অন্ধকার হ’য়ে যাবার পরে ও যেন বাড়ীর বাইরে না যায়।
(৬) এছাড়া মিস্টার পাকড়াশী, একমাত্র যার উপরে ছিল কুকুরটিকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব, প্রায়ই মাতাল হ’য়ে থাকতো।
(৭) মিস্ দেব একদিন অবাক হ’য়ে দেখলো,- ওর নিজের লক করা ড্রয়ারে রয়েছে একটি চুলের গোছা, যা ওর নিজেরই চুলের গোছারই মতো। মিস্ দেব তখন ওর নিজের সুটকেশ চেক করে দেখলো, ওর নিজের কাটা চুলের গোছা সুটকেশেও রয়েছে। তাহ’লে ড্রয়ারে রাখা চুলের গোছাটি কি অন্য কোন মহিলার? কিন্তু মিস্ দেবের নিজের চুলের মতো ঠিক একই অস্বাভাবিক রঙের এই চুলের গোছাটিরও।
(৮) মিস্ দেবের কাছে সবচেয়ে রহস্যজনক মনে হ’তো বাড়ীটির সেই অংশটি, যেখানে মনে হয় কেউ থাকতোনা, আর ঐ জায়গাটা কোনো কজে লাগতো না। জানালাগুলো ছিল হয় নোংরার জঙ্গল, নয়তো বন্ধ। একবার মিস্ দেব দেখলো মিস্টার তরফদার বাড়ীর এই অব্যবহৃত অংশের দরজা থেকে বেরিয়ে আসছে বেশ বিচলিত অবস্থায়। পরে, মিস্টার তরফদার ব’লেছিল যে ঘরগুলিকে ফটোগ্রাফিক ডার্করুম হিসাবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু মিস্ দেবের সে কথা বিশ্বাস হয়নি।
(৯) খুব মাতাল হ’য়ে থাকলে, মিস্টার পাকড়াশী বাড়ীটির রহস্যজনক অব্যবহৃত অংশের দরজার চাবি ঐ দরজাতেই ছেড়ে যেতো। সুযোগ বুঝে, একবার মিস্ দেব চুপিসাড়ে ভেতরে ঢুকলো। বাড়ীর ভিতরটা বেশ ভীতিকর; মনে হ’লো, লক করা একটা দরজার অন্য পাশে যেন একটা ছায়া চলছে। ভয় পেয়ে মিস্ দেব দৌড়ে পালাতে গেলো; কিন্তু পালানো হ’লো না; মিস্ দেব ধরা পড়লো সেখানে অপেক্ষমান মিঃ তরফদারের বাহু-বন্ধনে। কিন্তু. মিস্টার তরফদার ওকে তিরস্কার ক’রেনি; বরং, ওকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা ক’রেছিল। যাইহোক, মিস্টার তরফদারের অতিরিক্ত ভালোমানুষি সন্দেহ জাগিয়েছিল মিস্ দেবের মনে; তাই মিস্ দেব ব’লেছিল যে ও কিছুই দেখেনি। এক মুহুর্তের মধ্যে, মিঃ তরফদারের ভরসা দেওয়া হাসিমুখ বদলে গিয়েছিল যেন রক্তচক্ষু ক্রুদ্ধ মূর্ত্তিতে।
 
***
 
পিনাকী আর শৈলজা এসে খোঁজ ক’রে দেখলো কাউকে বাড়ীর নিষিদ্ধ ঘরে বন্দী রাখা হ’য়েছে কিনা। মিস্ দেবকে নিয়োগ করার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হ’য়ে গেলো,- ’ তরফদারের মেয়ে চামেলীর বয়ফ্রেন্ড রাস্তা থেকে সামনের ঘরের জানলা দিয়ে দেখতে চাইতো চামেলীকে। চামেলীর সঙ্গে মিস্ দেবের চেহারার অনেকটা মিল ছিল ব’লেই মিঃ তরফদার মিস্ দেবকে অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের প্রলোভন দেখিয়ে এই কাজে নিযুক্ত ক’রেছিল যাতে চামেলীর বয়ফ্রেন্ডকে বোঝানো যায় যে, তরফদারের মেয়ে চামেলীই বাচ্চাটিকে পড়ায়, কিন্তু ওর বয়ফ্রেন্ডকে দেখতে আর আগ্রহী নয়।
পিনাকী, শৈলজা এবং মিস্ দেব মিস্ চামেলী তরফদারের গোপন ঘরে প্রবেশ ক’রে দেখে ঘরটি খালি। কিছু পরে মিঃ তরফদার এসে মনে করে যে এই তিনজন তার মেয়েকে পালিয়ে যেতে সাহায্য ক’রেছে।

 

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু