মল্লিকা রায় / বারাসাত
ফোন নম্বর 9330781877
এটাই আমার গুগুল পে ও ফোন পে নাম্বার। বারাসাত উ:24 পরগণা আমার বসতবাটি, স্বামী মৃত, লেখালেখিই বর্তমান সময় যাপন, ইতি পূর্বে শপিজেন থেকে আমার একটি বই 'একের ভেতর তিন' তিনটি উপন্যাস সংকলন প্রকাশিত হয়। এছাড়া দীর্ঘ 12 বছর ধরে ষান্মাষিক পদক্ষেপ সাহিত্য...More
মল্লিকা রায় / বারাসাত
ফোন নম্বর 9330781877
এটাই আমার গুগুল পে ও ফোন পে নাম্বার। বারাসাত উ:24 পরগণা আমার বসতবাটি, স্বামী মৃত, লেখালেখিই বর্তমান সময় যাপন, ইতি পূর্বে শপিজেন থেকে আমার একটি বই 'একের ভেতর তিন' তিনটি উপন্যাস সংকলন প্রকাশিত হয়। এছাড়া দীর্ঘ 12 বছর ধরে ষান্মাষিক পদক্ষেপ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই আনন্দ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে আমার পরবর্তী গল্প সংকলন। এটিই আমার হোয়াটস এপ নাম্বার।
লগইন করতে ফোন নাম্বারে কোড সিস্টেম চালু করুন।
Book Summary
তিস্তা নামের মেয়ে
মল্লিকা রায়
জনারন্যে চলতে চলতে ঝিঁমিয়ে পরেছি খানিক। লেখার তাড়ণাটা খোঁচা মেরেই চলেছে অথচ উপন্যাসের মত ফাটাফাটি কোন কাহিনী উঠে আসছে না আর। সেই একঘেয়ে"তুমি আমার আমি তোমার" গোছের প্যনপ্যনানি ছেড়ে অন্যরকম কিছু ভাবতে চাইছি অথচ এখনও পর্যন্ত ধারাবাহিক তেমন জমাট কাহিনীর কথা মনেই পরছে না। অতএব ছোট একটা গল্প এইমাত্র মাথায় এল এর আগে সুনামীর বিপর্যয়ে কাগজে পড়েছিলাম খবরটি। মাথার বরাতে যা আছে বড়জোর একটি ছোট গল্প হতে পারে।
সময়টা সত্তরের দশক । দেশজুড়ে চলছে বন্যা ও সুনামীর মহা মড়ক। ঠিক তখন বর্তমান সময়ের মত লক ডাউন ছিল না ঠিকই তবে লক আউট অর্থাৎ কালো বাজারের সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভিক্ষের মড়কে গোটা দেশ বিদ্ধস্তপ্রায়। আমরা সরকারি চাকরীর সুবাদে যৎকিঞ্চিৎ একটা মাসোহারা পেতাম তাই দিয়ে কোনরকম দিন গুজরান ও হতো আবার এই কঠিন দুর্বিপাকে কিছু আর্তের সহায়তাও হত। আমরা ক'জন স্বেচ্ছাব্রতী হয়ে লেগে গিয়েছিলাম আর্তমানবতার কাজে। উত্তরাধিকারসূত্রে পৈতৃক ধনসম্পদের ঐশ্বর্য না পেলেও প্রয়োজনাতিরিক্ত বিষয় আশয় থাকায় পেছনের অবশিষ্ট দিনগুলির কথা মনে হয়নি কখনো।
আমরা একসাথে জনা সাতেকের দলটি একপ্রকার নির্ঝঞ্ঝাটেই ছিলাম। আমি ঝষি আর হৃশিকেষ ছাড়া বাকি সবাই গলগ্রহ, অর্থাৎ সঙ্গের তিনিকে বাগদান পর্ব সেরে নিয়েছেন ইতি পূর্বে। কর্মসূত্রে ট্রান্সফার নিয়ে গিয়ে পড়েছিলাম ঐ অজ গ্রামটিতে। এক মধ্যবয়সী ব্যবসায়ীর একটি দশ বাই বারো ঘরটিতে।
খাওয়া দাওয়া সবই প্রায় তেনার দয়াতেই জুটে যেত মাসিক কিছু অতিরিক্ত ভাতার মাধ্যমে। সেবার ই রাজ্যে বন্যার প্রকোপ প্রায় মহামারি রুপ নিল। ধর্মভীরু ও সেকেলে অর্থাৎ পুরাতন ভাবধারায় আচ্ছন্ন গ্রামটিতে রাত্রি তো দূরস্ত দিনেও মানুষের হাজারো ধর্মভয় ও ছুৎমার্গ দেখে প্রথমে আমরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু গ্রামের জনা পাঁচেকের সঙ্গে মেলামেশা করতেই আমরা বেশ আস্বস্ত হলাম যাক্ কয়েকজন তো আছেন। মোটামুটি ওনাদের নির্ভরতায় আমরা বস্তুত ছুটির দিনগুলোতে একসাথে চা ও বিলিতি পাত্তির আড্ডা জমিয়ে তুলতাম। ওই মানুষগুলোর অর্ধাঙ্গিনীরাও বেশ সুরসিকা ছিলেন। গ্রামের ছ্যুৎমার্গ কাটিয়ে বেশ সহজ ভাবেই গল্প ও রসিকতা করতেন। যদিও ব্যাপারগুলো অন্য কেউ করলে ততক্ষনাৎ বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় উন্মত্ত হয়ে উঠতেন ওনারাই। গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে একটু সমীহ করে চলত প্রায় সকলেই। যাই হোক আমাদের ক'জনের ব্যপারে বৌদিরা যে সরসিক ও দরাজ হৃদয়ের অধিকারী সে ব্যপারে আর সন্দেহের অবকাশ রইলো না। এবং বেশ কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের টিমটা বেশ হৈ চৈ ফেলে দিল গ্রাম জুড়ে। আমি আর ঋষি একটু গম্ভীর গোছের থাকাতে মাঝে মধ্যেই হৃশিকেষ কৌস্তভ অর্ণব মিত্তিররা বেশ অস্বস্তিতে পরত। বিশেষত আমি বাড়াবাড়ি দেখলেই গলা ঝাড়া দিলে ওরা চুপ হয়ে যেত। এমনি সময়ের আসন্ন দুর্যোগে ভেঙে পরল গোটা গ্রামের আর্থিক পরিকাঠামো ব্যবস্থা। বাড়িওলার ব্যবসায়ির চাল আটা ডালের গুদোম এমনকি গোটা সিন্দুক ভেঙে ব্যপক লুটতরাজ হলে আমাদের কাছে কেঁদে লুটিয়ে পড়লেন ভদ্রলোক। সামলানো গেল না বন্যাত্রাণ দিয়েও। ত্রাণ নিয়েও শুরু হল কালোবাজারী। ঠিক দুদিন পরে বিষাক্ত সায়োনাইড খেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন স্বামী স্ত্রী। থমথমে অবস্থা। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। ওনাদের জ্যেষ্ঠ্য পুত্রের আশ্বাসে আমরা অন্যত্র উঠে যাবার প্ল্যন বাতিল করলাম।
সেইসময় বিশেষত জলবন্দী অবস্থায় আমরা বেশ আতঙ্কে ছিলাম। ওরা তবু বাড়ির একান্তজনের সঙ্গে নিবিড় সময় কাটাচ্ছিল ফোনের মাধ্যমে আমি অসহায় প্রাণীর মত কেবল দাদাকে ফোন করে বড়জোর জল ঘর পর্যন্ত পৌঁছেছে কিনা খবর নিতাম।
বিরক্ত হয়ে দাদা একসময় জবাব দিয়ে দিত ", আগামী দু'দিনের মধ্যে আর ফোন করিস না যেন "।
বন্যার সাথে সাথে শুরু হল ব্যপক কলেরা মহামারী ঘরে ঘরে মৃত্যু উৎসব। আমাদের দায়িত্ব পরেছিল প্রতিটি বাড়িতে ব্লিচিং ফিনাইল গ্যমাক্সিন ও আর এস মেডিকেটেড পানীয় জল ইত্যাদি বিলি করা। এছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনগুলোর খোঁজ খবর রাখা। কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ল ঋষি আর কৌস্তভ আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম আমরা। অনির্দিষ্টকালের ছুটি ঘোষণা করা হল অফিস আদালত স্কুল কলেজ সর্বত্র। দিনরাত যত্ন সেবা করে সুস্থ করে তুললাম ওদের। জল তো নামল কিন্তু দেশ জুড়ে খাদ্যশষ্যের মন্দায় হু হু করে বেড়ে উঠল সংকট। সন্ধ্যের দিকে আমরা তিনজন হাঁটতে হাঁটতে হাটের দিকে গেলাম উদ্দেশ্য অনেকদিন আমিষ পরেনি পেটে মাছ মাংস যদি সস্তায় পাওয়া যায়। বিশেষত গ্রাম ঘেষা শহরটিতে সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে লোকে সারা সপ্তাহের আনাজপাতি,মাছ,মাংস ইত্যাদি কিনে রাখে কিন্তু মহামরীর প্রকোপে বহুদিন কোন হাঁট বসেনি ফলে একঘেঁয়ে নিরামিষে শরীর মন তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিল I অতএব দীর্ঘদিনের রসনার জড়তা কাটিয়ে একটু মাছ মাংসের তাড়ণায় হাটের উদ্দেশ্যে রওয়াণা আর কি ! মোটামুটি সপ্তাহের আমিষ সব্জী সংগ্রহ করে কিছুটা এগোতেই হাটের শেষ প্রান্তে ক্রমশঃ আলো আঁধারের আবছায়ে কিছু মানুষের জটলা ও কৌতূহল দেখে এগিয়ে গেলাম। বেশ ভীড়। ঠেলেঠুলে ঢুকে দেখি কিছু মহিলা মুখ ঢাকা ঘোমটা টেনে তাদের ছোট ছোট মেয়েগুলোকে সঙ্গে করে নিয়ে বসে আছেন চুপচাপ। বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল জানতে চাইলাম ওরা এভাবে বসে আছে কেন। মেয়েটির বয়স প্রায় এককুড়ি ওর মা হাঁউমাঁউ করে কেঁদে হুমড়ি খেয়ে পরল আমাদের পায়ের ওপর। বুঝলাম ওরা মেয়েদের বেঁচতে এসেছে। বিষন্ন মনে পেছন ফিরে বেড়িয়ে চলেছি হঠাৎই পেছন থেকে দৌড়ে এসে দুই পায়ে আছাড় খেয়ে পরে মাথা ঠুকতে থাকা মহিলাটি জানাল এসব ওদের শবর জাতের বাঁধাধরা নিয়ম কুন পাপ লাগে না" । অবশেষে জোরাজুরি মেয়েটিকে কিনে না নিলে পরিবারের চারজনকেই বিষ খেয়ে মরতে হবে কারণ চাল কেনবার একরত্তি পয়সাও ওদের নেই উপরন্তু মেয়েটির বাবা কলেরায় আক্রান্ত। বাবুর দেওয়া টাকার গুচ্ছ ফেরত দিয়ে চুলের মুঠি ধরলেন মেয়েটির হিড়হিড় করে টেনে নিতে নিতে বলতে থাকলেন ", চল্ তোকে শনিযমের দুয়ারে বলি চড়াবো"
রক্ত হিম হয়ে গেল আমার...........