গল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা, প্রবন্ধ ও কবিতার ফেরিওয়ালা...
Book Summary
তিতলি ___________
রজত দাস
.
"বলি কটা বাজলো ? কখন বাজার গেছ সে খেয়াল আছে ? কখন রান্না হবে আর কখন খাওয়া হবে ? বাজারে গেলে আর বাড়ি ফেরার কথা হুঁশ থাকে না..." একনাগাড়ে বন্দুকের ঝাঁক ঝাঁক গুলির মত শব্দগুলো ফোনের ওপার থেকে আসছিল । আবীরের এসব যদিও নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, তাই সেভাবে আমল দিলো না । ভোলা মাছওলার কাছে পার্সে মাছ কিনে কাটাচ্ছিল । কল'টা কাটতেই সেই মাছ কাটাতেই আবার মনোনিবেশ করল । ফোনটা পাঞ্জাবির পকেটে গুঁজে রেখে দিতে উদ্যত হল । জ্বালাতনের শেষ নেই । ফোনটা রাখবার সময়ে আবীর লক্ষ্য করল কল লিস্টে মায়ের চার পাঁচবার মিসডকল রয়েছে লাল বর্ণের অক্ষরে । এতক্ষন দেখেনি সে । সকাল আটটা নাগাদ মায়ের কল এসেছিল । দেখতে দেখতেই ফোনে কল ঢুকে গেল । উফ্ ! আবার কে ফোন করল ? চোখের সামনে ফোনের পর্দায় ভেসে উঠলো । মিতা কলিং... আবার ? আবীরের এবার বাজারের থলে ফেলে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে । রোববার এমনিতেই ওর দশটার আগে সকাল হয়না । সাড়ে দশটায় বাজারে আসার পর থেকে শেষ কলটা নিয়ে বার সাতেক মিতা ফোন করে ফেলেছে । এটা ধরলে অষ্টম কল । আবীর কলটা রিসিভ করল । কিছু নিশ্চয়ই আবার ফরমাশ হবে...
"বলো, আবার কি হল ?"
"কটা বাজে দেখেছ ? এখনও পর্য্যন্ত বাজার করেই চলেছ... তিতলিকে কে নিয়ে আসবে ?" তিতলির কথা শুনতেই আবীর ফোনটা কেটে দিলো, আর কোনো কথা না বলেই । তিতলিকে ওর মা সকাল সাড়ে আটটার সময়ে নাচের স্কুলে রিকশায় করে গিয়ে দিয়ে আসে । দেড় ঘন্টা নাচ শেখার পর ওকে নাচের দিদিমণির বোনই আবার আবৃত্তি শেখায় দেড় ঘন্টা । সাড়ে এগারোটার মধ্যে প্রতি রোববার আবীর তিতলিকে নিয়ে আসতে পৌঁছে যায় । এখনই সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে । আবীর এখনও বাজার শেষ করে উঠতেই পারে নি । স্কুলের বন্ধু সায়কের সঙ্গে বাজারে দেখা হয়ে গিয়েই আজ সব গন্ডগোল হয়ে গেল । আবীর মিতালীর ফোনটা কেটে নাচের দিদিমণি সুলগ্নাকে ফোন করল ।
"হ্যালো, দাদা বলুন । আজ তিতলি আসেনি কেন ?"
"মানে ? তিতলিকে তো ওর মা আপনার কাছেই সকালে দিয়ে এসেছে ! আমি এখনও আনতে যেতে পারিনি বলে ফোনটা করলাম ।"
"না দাদা । আজ তিতলি আমার কাছে আসেনি । আপনি ওর মাকে ভাল করে জিজ্ঞেস করে দেখুন...।" সুলগ্নার ফোনটা শেষ হতেই আবীরের মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল । সকালে মিতা অন্য রোববারের মতই সাড়ে আটটায় মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল । এটা ঘুম চোখে হলেও আবীর দেখেছিল । সে তড়িঘড়ি কাউকে কিচ্ছু না বলে বাড়ি ফেরার পথ ধরল । এ বছরে তিতলি দশ পেরিয়ে এগারোতে পড়েছে । নানারকম চিন্তা করতে করতে সে আনমনা হয়ে হেঁটে বাড়িতে ঢুকলো । বাজারের থলেটা ডাইনিংয়ে নামিয়ে দিয়ে পায়জামা পাঞ্জাবিটা ছেড়ে জিন্স টিশার্ট পরে নিয়ে আবার বের হবার মুখে মিতালীর মুখোমুখি হয়ে গেল । যতটা সম্ভব মুখে উৎকণ্ঠা চেপে বৌকে জিজ্ঞেস করল,
"তুমি তিতলিকে আজ ঠিক কোনখানে ছেড়ে এসেছ ?"
"মানে ? আজ ও হঠাৎ উল্টোদিকের দোকানটার সামনে গিয়ে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না ধরেছিল ।
ওকে আইসক্রিম খাইয়ে টাকাটা মেটাচ্ছিলাম ।
তখন ও বলল আমায় আর যেতে হবে না । বলে রাস্তা পেরিয়ে ও নাচের স্কুলের গলিতে ঢুকে গেল... স্পষ্ট দেখেছি । কেন কি হয়েছে বলো...!" মিতালীর গলায় উৎকণ্ঠার সুর ।
"মিতা, তিতলি আজ নাচের স্কুল যায়নি...
এরপর....