মানসিক হাসপাতালের নোংরা,স্যাঁতস্যাঁতে,ঘুপচী ঘরটাতে দু'হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে বসে আছে সে।পরণের কাপড়টা শতচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।দীর্ঘদিনের অযত্নে চুলে জটা লেগেছে।মেঝেতে আরশোলা আর ইঁদুরের সঙ্গে দিব্যি সহাবস্থান তার।হঠাৎ যেন কারো পায়ের শব্দে মুখ তুলে তাকায় সে।চোখের নীচে গাঢ় কালো কালির পোঁচ,হলদেটে দাঁত বের করে দেওয়ালের দিকে চেয়ে খলখলিয়ে হেসে ওঠে।ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করে কাউকে উদ্দেশ্য করে বলে "এত দেরি করে এলে কেন?আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।আর তারা এল না?ও এসেছিস,আয় আমার বাছারা,মায়ের বুকে আয়।তুমিও এখানে বোসো দেখি,বোসো।অনেক কথা আছে তোমাদের সাথে।"মূহুর্তের মধ্যে নিশ্তব্ধ ঘরটা এক পাগলিনীর খলখল হাসিতে আর দুর্বোদ্ধ কথায় গমগম করে ওঠে।
আজ এঘরে খাবার নিয়ে আসতে সন্ধ্যে হয়ে গেল শীতলার।দূর থেকেই ওঘর থেকে ভেসে আসছে দুর্বোধ্য টুকরো টাকরা কথা আর খিলখিল হাসির শব্দ।সারাদিনটা এ ঘরের বাসিন্দা চুপচাপ বসে থাকে।কাউকেই তেমন বিরক্ত করে না।তবে সন্ধ্যের পর থেকেই নাকি তার কাছে অশরীরীদের আসা যাওয়া শুরু হয়।অনেকেই দেখেছে তাদের।গায়ে কাঁটা দেয় শীতলার।দ্রুত পা চালায় সে।একবার ভেবেছিল ঘুরে চলে যাবে,থাক আর খাবার দিয়ে কাজ নেই।কিন্তু কি এক অমোঘ কৌতুহল তাকে টেনে নিয়ে চলে ঐ রহস্যময় ঘরটির দিকে।লম্বা করিডরের হলদেটে নিস্তেজ আলোতে চারিদিকে এক আলোছায়ার রহস্যময় পরিবেশ।করিডরের শেষপ্রান্তের ঘরটির কাছাকাছি আসতেই আলোগুলো অদ্ভুতভাবে জ্বলতে নিভতে শুরু করে।খাবারের থালাটে শক্ত করে ধরে প্রাণপনে ছুট লাগায় সে।ঘরটির কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ সবকিছুই স্বাভাবিক,নিস্তব্ধ।নাকি ঝড়ের আগের পূর্বাভাষ?সমস্ত শক্তি একত্রিত করে গলা তুলে হাঁক মারে শীতলা "তোমার খাবার এনেছি গো মেয়ে"।গরাদের সামনে আসতেই গলা দিয়ে এক তীক্ষ্ণ চিৎকার বেরিয়ে আসে তার,হাতের খাবারগুলো সমেত থালাটা মেঝেতে ছিটকে পড়ে ঝনঝনিয়ে।জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে শীতলা।