উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে সুধীর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্স নিয়ে পড়াশোনা করতে এসেছে। বাবা মা পড়াশোনা না জানা একদম সাদাসিধে মানুষ, বিশেষ কিছু বোঝেন না তাই ছেলেকে গ্রামের লেখাপড়া জানা একজনের সঙ্গে পাঠিয়েছেন। যাইহোক কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা একটা হল। উত্তর কলকাতার একটা পুরোনো বাড়ির ছোট একটা ঘর ঠিক হয়েছে। ঘর বলতে চিলেকোঠার একটা ঘর। যদিও ভাড়ার ব্যাপারে কিছুই বলেননি বাড়ির মালিক। শুধু বলেছেন- তুমি ওসব চিন্তা কোরো না। নিশ্চিন্তে থাকো। তাই সুধীর আর কিছু বলেনি, কারণ এখন যেন তেন প্রকারেণ একটা থাকার আস্তানা তো চাই। অতএব এখন যা পাচ্ছে তাতেই থাকুক, পরে না হয় অন্য ভালো জায়গা খুঁজে চলে যাবে।
প্রথম রাতটায় নতুন ভাড়া বাড়িটায় তার সঙ্গে আসা গ্রামের সেই দাদা থেকে গেল। পরদিন সে সকাল সকাল সব বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। খাবারের ব্যবস্থা এখনো করে উঠতে পারেনি সুধীর, বাড়ির মালিক অবশ্য বলেছেন বাইরে খাওয়ার কোনো দরকার নেই ,তাদের কাছেই যেন খেয়ে নেয়। এই আদেশ সানন্দে গ্রহণ করেছে সুধীর। তাই দুপুরের খাবারটা মালিকের ঘরেই করে নিল । সুধীরের মনের ভেতর এক অজানা উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। কলকাতায় এসেছে, তারপর প্রথমবার বাড়িছাড়া। দুপুরের খাবার খেয়ে নিজের ঘরে এল, তারপর বাড়িতে একটা ফোন করে বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে নিল। তারপর নতুন ফোনটা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে লাগল। ভালো রেজাল্টের জন্য এই ফোনটা ওর জ্যেঠু দিয়েছে। যদিও ওর জ্যেঠু কে কখনো দেখেনি, শুধু শুনেছে তারা নাকি অনেক বড়লোক।ছোট থেকে সুধীর যাই চাইতো ওর জ্যেঠু সব কিছুই পাঠিয়ে দিত। বলা যায় ওদের বাড়িতে জ্যেঠুর কারণেই এত স্বচ্ছলতা। যাই হোক এর আগে সুধীরের ফোন ছিল না, বাড়িতে একটাই ছোট সাধারণ ফোন ছিল, শুধু কথা বলা যেত সেটায়। আর এই নতুন ফোনে তো ছবিও তোলা যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত খুশি নতুন ফোন পাওয়ায়। নতুন ফোন নিয়ে খুশি মনে ছাদে গিয়ে কয়েকটা ফটো তুলল। তারপর ঘরে এসে একটু ভাতঘুম দেওয়ার জন্য শুয়ে পড়ল। এদিকে কাল থেকে কলেজ। সুধীরের ইচ্ছে হচ্ছে আজকের দিনটা এক্ষুণি কেটে যাক। আর যে কলেজ যাওয়ার জন্য তার ধৈর্য ধরছে না।
বেলা পড়ে গিয়েছে, সূর্য পশ্চিমে ডুবু ডুবু করছে, আর সুধীর তখনো অঘোরে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে হল যেন কেউ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সুধীর ধড়ফড় করে উঠে বসল। চোখ কচলে চারদিকে খুঁজে ও কাউকে পেল না। ভাবল মনের ভ্রম হয়তো। এমনসময় নীচে থেকে মালিকের ডাক শুনতে পেতেই এই ভাবনাটা এখানেই সাঙ্গ করে সে চোখ মুখ ধুয়ে নীচে গেল।
নীচে গিয়ে বাড়ির মালিক সুদেব বাবুর সঙ্গে গল্প করে একেবারে রাতের খাবার খেয়ে নিয়েই নিজের চিলেকোঠার ঘরে এল। ঘরে এসে আবারো বাড়িতে ফোন করে কথা বলে নিয়ে সুধীর শুয়ে পড়ল। চোখটা লেগেছে ঠিক সেই সময়ই হঠাৎ সুধীরের মনে হল ছাদে কেউ পায়চারি করছে। ঘুমটা ভেঙে গেল তার। রাতের বেলা বাড়ির মালিক তো ছাদে আসবেন না, তাহলে কে! গ্রামের ছেলে, তাই ভয়ডর একটু কম। প্রথমে ভাবল হাঁক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে কে! কিন্তু না পরক্ষণেই ভাবল নতুন জায়গায় এভাবে হাঁকডাক না করে বরং নিজে গিয়েই দেখে নেবে। যেমন ভাবা অমনি সে দরজা খুলে বাইরে ছাদে বেরিয়ে এল। অমাবস্যার রাত হবে হয়তো, একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিছুই দেখা যায় না। ফোনের আলো টা জ্বালিয়ে এদিক ওদিক দেখল বার কয়েক। না তো কেউ নেই। তাহলে যে এসেছিল সে হয়তো চলে গিয়েছে- এই ভেবে ঘরে ডুকতে যাবে ওমন সময় হঠাৎ পিঠে শীতল একটা হাতের স্পর্শ পেল। ....