• 26 December 2020

    ছোট গল্প

    বড় সাহেবের কাঁঠাল খাওয়া

    0 119

    বড় সাহেবের কাঁঠাল খাওয়া

    তখন এগারো বারো ক্লাশে বাংলার স্যার ছিলেন অসাধারণ বাগ্মি ও স্বনামধন্য খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষক শ্রীযুক্ত বেচারাম মন্ডল মহাশয় l সেসময় ক্লাশের আমরা ক'জন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম ওনার ক্লাশের l বস্তুত স্কুলে কামাই করার প্রবণতাও ছিল খুব কম l সেটার কারণও ওই স্যারের ক্লাশ সঙ্গে নোটস্। খাতা পেন নিয়ে হাঁ করে বস্তুত গিলতাম স্যারের লেকচার l এত অনর্গল ও সাবলীল ভাষায় তিনি তথ্যের গভীর মর্মবোধ আমাদের সমুখে তুলে ধরতেন যে বিষয় জলের মত সহজ হয়ে যেত l নোটস্ তৈরী করে নিতাম নিজেরাই l প্রসঙ্গক্রমে একটি বিষয় আজও আমার স্মৃতির গভীরে প্রচ্ছন্ন রয়ে গেছে বস্তুর কথা প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় l একটি চ্যপ্টার আলোচনা করতে গিয়ে " বড় সাহেবের কাঠাল খাওয়া " গল্পটি তিনি আমাদের পরিবেশন করেছিলেন নিজস্ব কায়দায় বেশ মনে আছে আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব তারই সামান্য অংশ l

    ** এক বিদেশি মার্চেন্ট সংস্থার কর্ণধার মিঃ বোনাপার্টের কেবিনে এসিস্যেন্টের ভূমিকায় কাজ করতেন একজন ভারতীয় নেহাত বাঙালী সাদাসিধে এক ভদ্রলোক l তিনি হিন্দিতে কিছুটা সরগর হলেও ইংরেজি ভাষায় বেশ কাঁচা ছিলেন l এমনিতেই ভূড়ি ও ঘুম সর্বস্ব বাঙালী দেখলেই সাহেব বিরক্ত হয়ে উঠতেন l এক্ষেত্রেও তাই হল,ভদ্রলোক সাহেবের কথা বোঝেন না আবার সাহেবও ভদ্রলোকের ভাষা বোঝেন না l কিন্তু সর্বদাই বাঙালীটিকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপে অতিষ্ট করিয়া তুলিতেন l অফিসে ঢুকে তিনি লক্ষ্য করতেন কেবিনের দরজা সর্বদা খোলাই থাকত l চেঁচিয়ে উঠে তিনি অর্ডার দিতেন " shut the door " বাঙালী এসিস্ট্যন্ট চুপ করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতেন l সাহেব আরও উত্তেজিত হয়ে আরোও চেঁচিয়ে কথাগুলো রিপিট করতেন l ভদ্রলোক সাহেবের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতেন l পরেরদিন এক দোভাষী সহযোগি বন্ধুর কাছ থেকে কোনরকম হিন্দী তর্জমায় বাক্যটি শিখে ভদ্রলোককে কেবিনে ঢুকে অর্ডার দিলেন " there was a brown crow" [ দরওয়াজা বনধ্ করো ] সঙ্গে সঙ্গে এসিস্ট্যন্ট দরজাটি বন্ধ করে দিলেন l টিফিন আওয়ার্সে সাহেব বেরোবেন তখনও সমস্যা বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বললেন " threr was a cold day " " "দরওয়াজা কোল দো " আর কোন অসুবিধা থাকার কথা নয় খোদ বাঙালী সহযোগীর l
    কিন্তু পরের দিন অফিসে এসে বুঝলেন সাহেবের বিরক্তি ওকে ডিমোশন করে নামিয়ে দিয়েছেন দুই ডিগ্রী নিচে l কথায় বলে বাঙ্গালী কিছুতেই শিখবে না আদপ কায়দা l শুরু হল কূট চালের শলা পরামর্শ কিভাবে যব্দ করা যায় সাহেবকে তলে তলে চলতে থাকল তার প্রকৌশল পর্ব একত্র হল সমস্ত বাঙালীর কূট মাথা যব্দ করতেই হবে সাহেবকে l
    কেনা হল বিশাল এক কাঁঠাল l গন্ধে মঁ মঁ করে উঠল সংস্থার সমস্ত কেবিন গুলো l পাঁচ সাতজনের একটি দল বিশাল এক প্লেটে দুটি কাঁটা চামচ আর একটি হেইসা সাইজের কাঠাল হৈ চৈ করতে করতে এনে হাজির করল সাহেবের সমুখে l চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠল সাহেবের " what's this "? না না ব্যট নয় সাহেব কাঁঠাল বাঙালীদের এক বিশেষ জাতীয় fruit l কাঁটা চামচে খেয়ে দেখেন স্যার খুউব ভালো লাগবে good by l চলে গেল দলটি l আড়ালে লক্ষ্য করতে লাগল সাহেবের কর্মকান্ড l ফ্রেঞ্চ কাট চিকনের মত শৌখিন দাঁড়ি মুখ ফ্যঁকাশে হয়ে এল কিন্তু হারাহারির পর্ব চলবে না l সাহেব বলে কথা প্রেস্টিজ আছে না l তার ওপর ভেতো বাঙালীর গর্দভ দল l বেশ কিছুক্ষণ ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে এদিক ওদিক করে দেখে একসময় তুলে নিলেন কাঁটা চামচটি ও গায়ের জোরে বসিয়ে দিলেন কাঁঠালের গায়ে l
    ছিড়ে খুড়ে রসাল বীজটি পুরে দিলেন মুখে আহ্ কি সুমিষ্ট ফল l একের পর এক কোয়াগুলি গপাগপ মুখে চালান দিয়ে উত্তজিত সাহেব বাঙালীর জাতীয় ফলের রসে তখন মগ্ন l দরজা খুলে ঢুকে পড়ল দলটি হাতে তালি দিতে দিতে " happy birthday to you,happy birthday dear sir happy birthday to you"
    . এরপর সাহেবের অবর্ননীয় দুর্দশা দেখে সকলে হেঁসে উঠল একত্রে l ফ্রেঞ্চ কাট শৌখিন দাঁড়িতে কাঠালের আঠা লেপ্টে মাখামাখি হয়ে একশা l আঠাও ছাড়ে না দাঁড়িও ছাড়েনা l অবশেষে কেঁদেই ফেললেন সাহেব l
    " please leave me alone "ওরা সমবেত চেঁচিয়ে উঠল " আরো? আরে না না সাহেব আর খাবেন না প্লিজ l
    এখানেই শেষ হয়েছিল স্যারের গল্প l কিন্তু আমাদের ক্লাশরুমটায় আজও গমগম করে স্যারের সেই শৈল্পিক বাচনভঙ্গীর পর্বটি l

    সমাপ্ত




    মল্লিকা রায়


Your Rating
blank-star-rating
Sorry ! No Reviews found!