• 21 December 2020

    ছোট গল্প

    কোলাপুরী

    0 115

    কোলাপুরী

    নববর্ষ। সবকিছুতে নূতনত্ব চাই। ছোট থেকেই কেন জানিনা কোলাপুরীর চটির বড় শখ আমার। পায়ে গলালেই কেমন রাজা বাদশার মত মনে হয়। সঙ্গে যদি হয় চোস্ত পাঞ্জাবী শেরওয়ানি। ওহ্ বদলে যায় হাঁটা চলা। বিল্টু কি এমন বড়লোক অথচ কোলাপুরির সঙ্গে গরদের চোস্ত পাজামা পাঞ্জাবী পরেই দখল করে নিল পাড়ার সব সুন্দরীদের।
    আমার খালি পেটে চচ্চড়ির ডাটা চিবুতেই কেটে গেল যৌবনের মূল সময়টা অথচ লোকে বলে আমি নাকি বিল্টুর চেয়ে বেশি সুন্দর।ধ্যুৎ চচ্চড়ি ভাতে কি আর যৌলুস বাড়ে? পাঞ্জাবী নয় একখান আছে বাপের শম্ভুদা বলেছে কেটেকুটে সাইজ করে দেবে।
    আর কোলাপুরির কি হবে?
    ক্ষয় হতে হতে একপাটি ওপরের কভার গেছে ছিড়ে
    আসলে ফুটপাতের লেবেল ছাড়া কম দামি চপ্পল কিনে তাতে কার যেন চুরি করা লেবেল সেঁটে মিথ্যে বলেছিল বাপ খাদিমের সবচে দামি চপ্পল " দেখতে অবিকল অমনিই। যাক্ ওটি আমার খুব প্রিয় ছিল, বছর সাতেক চুটিয়ে ব্যবহার করার ফলে আয়ুর প্রায় টানাটানি অবস্থা।
    পাঁচ ছ'বার সেলাই করার পর অবশিষ্ট জায়গা নেই আর শতচ্ছিন্ন। কিন্তু খুব লাকি।পায়ে গলিয়ে বেড়োলেই কেল্লা ফতে। সমস্যা যত কঠিনই হোক সমাধান হবেই হবে।
    দোকান,বাজার,হাতাহাতি,মারামারি হলে ওটা পায়ে গলিয়ে সমুখে দাঁড়ালেই সব চুপ।একযুগ বয়স প্রায় কোলাপুরিটি প্রথম থেকেই আলমারির তলায়,খাটের তলায় কখনো ঘরের কার্নিশের বড় বাসনের তলায় লুকিয়ে রাখতাম। বাড়িতে যে কি উৎপাত এরটা ওর ওরটা তার কাকিরটা জেঠুর পায়ে,ঠাম্মিরটা দাদুর উহ্ সে যে কি অরাজগতা ভাবা যায় না।
    প্রথম কিছুদিন সকলের সাথে ওকে লাইনে জায়গা দিয়েছিলাম। ওমা কখন যে বড় কাকা হেইসা গোদা পায়ে ঠেসে ঠুসে জোড় করে ঢুকিয়ে বেড়োলেন দেখতেই পাই নি। মায়ের ঘরে ঢুকে সে কি কান্না। পরে দেখি আমার পা ছেড়ে উনি তখন বড় কাকার পায়ের খাপে খাপ ।
    সারাদিন নাওয়া নেই খাওয়া নেই মন খারাপ।
    কলেজ গেছি পুরোনো পাটিটি পরে। বর্ষাকাল বাড়ি ফিরে দেখি উদোম ভিজছে আমার পয়ার চপ্পলজোড়া। রাগে গজগজ করতে করতে গামছায় মুছে উনোনের পাশে রেখে শুকিয়ে তবে শান্তি। মা চেঁচিয়ে বাড়ি মাত। " ওরে জুতো রান্নাঘরে তুলিস নি অমঙ্গল হবে, সাতঘাটের নোংরা "
    বললুম,"ধ্যুৎ বাবা, এ কি যে সে জুতো? আমার পয়ার চপ্পল "তাওয়ায় তখন চটিজোড়া সেঁকা হচ্ছে। আর মাত্র তিনদিন বাকি ইয়ার্কি নাকি। পাল্লা দিতে হবেনা বিল্টুর সাথে?
    ভয় এমনই জাঁকিয়ে বসেছিল রাতে মাথার কাছে ও দুটোকে নিয়ে শুতাম পাছে অন্য কেউ পা গলায়। ঘুম ভাঙলে ঢিমে আলোয় আছে কি নেই পরখ করতাম। বলা যায় না যদি চুরি হয়ে যায় যা কু নজর শুরু হয়েছে।
    সক্কাল সক্কাল সবার আগে উঠেই পায়ে গলালুম। বাহ্ এক্কেবারে খাপে খাপ। এক্কেবারে নতুনের মত।সেই চাকচিক্য সেই নূতনত্ব। যাক্ চিন্তা নেই।
    ভোররাত্রির আধো আলোয় ঝকঝক করছে আমার সাধের কোলা। ফিটিংস শেরওয়ানির সাথে রাম্পে হেঁটে যাওয়ার মতো একটা ইভেন্ট সঙ্গে বিল্টু। বছরের শুভারম্ভে এ সুযোগ হাতছাড়া করার নয়। মুখিয়ে পাড়ার সুন্দরীরা। যেনতেন জিততেই হবে হোক্ বিল্টুর দামী জুতো আমার ভ্যনজোড়ায়ও কোটিওয়াটের প্রাণশক্তি। চপ্পল পুরানো হলেও ধরে কার বাপের সাধ্যি! দামের লেবেলে শ্রেনীদ্বন্দের ছাপ পড়ে থাকবে পায়ের তলায়।

    মল্লিকা রায়



    মল্লিকা রায়


Your Rating
blank-star-rating
Sorry ! No Reviews found!