স্কুল থেকে বেরিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে চোখ যেতেই মনামী দেখলো সন্দীপ দাঁড়িয়ে আছে ।
কি জন্য এসেছে আবার ??!! মনে মনে ভাবলো মনামী
সে কলিগদের বাই বলে এগিয়ে গেলো সন্দীপকে না দেখার ভান করে ।
মনামী
কে ? !!
একি !! তুমি !!??
হ্যাঁ আমি
আরো কিছু বলার বাকি আছে নাকি ?
আছে, তুমি দুদিন ধরে টেক্সট করছোনা, ফোন ধরছোনা
হ্যাঁ , কারন আমার মনে হয় ইটস ওভার,,, তাই
কিন্তু আমার বলার আছে
ওওওও !!!!!, তাহলে তোমার বাবা যা বলেছেন সেটা শেষ কথা নয় ?? !!
না ।।
আমরা কি সামনের ওই কফিশপে বসে কথা বলতে পারি ?
পারি, তবে আমার হাতে বেশী সময় নেই।
কফিশপে গিয়ে জানলার ধারে মুখোমুখি দুটি চেয়ারে বসে, দুটো কোল্ডকফির অর্ডার দিলো সন্দীপ
যা বলার তাড়াতাড়ি বলো .......
একজোড়া ঠান্ডা চোখ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো সন্দীপ মনামীর দিকে
মনামী কেমন যেনো লজ্জা পেলো, যদিও ওর খুবি রাগ হচ্ছিলো
আচ্ছা তুমি কি আর কোনদিন কথা বলবেনা আমার সাথে ?
সম্পর্কটাই যখন হচ্ছেনা তখন আর কথা বাড়িয়ে কি লাভ বলো ?
দাঁড়িপাল্লায় মেপে লাভ ক্ষতির হিসাব করতে আমি আসিনি এখানে, একটা সিক্রেট বলবো বলে এসেছি ....
কিন্তু তোমার বাবাতো লাভ ক্ষতির হিসেবই কষছেন ? সরকারী চাকুরে ছেলের জন্য ঠিক কত পণ নেবেন ?
মনামী প্লিইইইইইজ
কেনো ? আমার বাবাকেও তো এই কথাগুলো শুনতে হয়েছে বলো?
আমি আমার বাবার তরফ থেকে স্যরি বলছি, বিশ্বাস করো আমি এর কিছুই জানতামনা, তোমার বাবা মা তোমাকে কি দেবেন সেটা তাদের ব্যাপার, কিন্তু বাবা যে কিছু চাইবে সেটা আমি জানিইইইইনা , ইনফ্যাক্ট আমি জানার পরেই আপত্তি জানিয়েছি ।
আমার বাবা দিতে রাজি, ভালো জামাই সস্তায় পেয়ে যাচ্ছে , এত ভালো ছেলে নাকি পাওয়া যায়না , সেই তুলনায় তোমার বাবা নাকি কিছুই চায়নি কিন্তু আমার আপত্তি আছে, আমি পণ দিতে দেবোনা । তোমার বাবা যেখানে বলবে তুমি সেখানে বিয়ে কোরো ।
এটাই তোমার শেষ কথা ?
এই কদিন কথা বলে তোমার কি মনে হোলো আমি খুব বাজে ছেলে ? দিন পনেরো আগে আমি তোমায় দেখতে গেছিলাম, দেখেই আমার তোমাকে ভালো লেগেছিলো, দিন দশ হোলো আমরা কথা বলছি, তুমি জানো এই কদিনে আমি মনে মনে কত স্বপ্ন দেখেছি? কতকি ভেবে রেখেছি? দুদিন তোমার সাথে কথা না হওয়ায় আমার একটুও ভালো লাগছেনা, আর তুমি এত সহজে না বলে দিচ্ছো?
মনামীর কেনো জানিনা মনটা ভারী হয়ে যাচ্ছিলো, সেও তো মনে মনে অনেক কিছুই ভেবে রেখেছিলো, বিয়ে মানে একটা মেয়ের কত স্বপ্ন থাকে । সন্দীপকে ওর বেশ ভালোই লেগেছিলো, সহজ সরল ভালো মনের মানুষ । প্রথমদিকে ওর বাড়ীর লোক কিছুই বলেনি, কিছু দিন পর ওর বাবা ওদের বাড়ী গেলে সন্দীপের বাবা কিছু নগদ টাকা দাবী করেন, মনামীর বাবা গররাজি হয়ে ফিরে আসে,। এই কথা জেনেই কঠোর আপত্তি জানায় ও এবং বাবাকে বলে ছেলের বাড়ীতে জানিয়ে দিতে যে এই বিয়ে সে করবেনা ।
কি হোলো মনামী ? চুপ করে আছো কেনো?
আমার কিছু বলার নেই তাই
সন্দীপ হঠাৎ মনামীর হাতটা ধরে নিয়ে বলে, এই কথাটা তুমি আমার দিকে তাকিয়ে বলো? আমি জানিনা ভালবাসা কাকে বলে, তবে এইকদিনে আমি এইটুকু বুঝেছি তোমায় ছাড়া আমার চলবেনা, তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী আর বিয়ে করলে তোমাকেই করবো না হলে আর কাওকে নয়। এই কথা আমি বাড়ীতেও জানিয়ে দিয়েছি । বাবাকে আমি একটু ভয় পাই, সন্মানও করি তাই তর্ক করতে পারবোনা তবে বাবা এই বিয়ে না মানলে আমি আর বিয়েও করবোনা ।
অবাক হয়ে দেখছিলো মনামী সন্দীপকে, সত্যি তো ওকে তো কিছু বলার সুযোগই দেয়নি ও, সেইদিন থেকেই কথা বলা বন্ধ করে দেয়। মনে মনে মনামীও তো ওকেই বর বলে ভেবে নিয়েছিলো ।
বলো কি বলবে তুমি ?
তোমার কি আমাকে পছন্দ? এই পণের ব্যাপারটা না হলে আমাকেই বিয়ে করতে তো নিজের ইচ্ছায়?
করতাম
ভালবাসো কি একটুও ?
লজ্জায় মাথা নিচু করেনিলো মনামী
বলো প্লিজ ? এর ওপর সব কিছু ডিপেন্ড করছে ....
বাসি
হাতটা আরো জোরে চেপে ধরলো সন্দীপ , মন চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করি ?
কিইইই বলছো?
ঠিকই বলছি, আজ শুনছিলাম বাবা মাকে বলছে " ছেলে তো আর পালিয়ে বিয়ে করছেনা যে পণ নেবোনা" তখনি আমার মনে হোলো তাইতো, আমরা যদি দুজন দুজনকে পছন্দ করি , ভালবাসি তাহলে আমরা বিয়ে করে নিতেই পারি ।।
তোমার বাবাও পণ দিতে পারবেনা আর আমার বাবাও পণ নিতে পারবেনা ।।
মনামীর বেশ ভালোই লাগলো ব্যাপারটা
সত্যি ছেলেটা হয়তো ওকে ভালোবাসে ।
তুমি একটা পাগল
তোমার জন্য
তাহলে তোমার বাবার মাকে বলা কথাটাই ছিলো তোমার সিক্রেট কথা যা আমায় বলতে চেয়েছিলে ?
না
তাহলে??!!!
সিক্রেটটা ছিলো এই যে
আমি তোমায় ভালোবাসি .....