• 05 April 2021

    সমুদ্রগামী মেয়ে

    গল্প

    0 199

    সমুদ্রগামী মেয়ে

    মৌসুমী মণ্ডল দেবনাথ


    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেধাবী ছাত্রী রিনি রায়। উচ্চমাধ্যমিকে পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের তৃতীয় স্থানের অধিকারীনি। দরিদ্র হলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এই মেয়েকে ভাইবাতে লুুফে নিয়েছে। মেধাবী ছাত্রীর বিশেষ স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশুনো চালাচ্ছে রিনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও পাশে দাঁড়িয়েছেন রিনির।


    সেই রিনি আজ কাঁচাহলুদ রঙের উপরে সবুজ ছাপা একটি শাড়ি পরে তার মা বিমলার সঙ্গে মায়ের কাজের বাড়িতে এসেছে। আজ সরস্বতী পুজোতে মাকে একটু কাজে সাহায্য করার জন্যে। বিমলা অবশ্য কাজকে ভয় পায় না। সে ভাবছিল অন্য কথা। কাজের বাড়িতে বৌদি অনেকদিন বলেছে একটিবার মেয়েকে নিয়ে যায় যেন। তা মেয়ে ক্লাশের জন্যে আর ফুরসতই পায় না। আজ ছুটি বলে আসতে পারলো।

    ভালোই হয়েছে মনে মনে ভাবলো বিমলা। মেয়েটা কিছু ভালোমন্দ খেতে পাবে। আজকাল শরীর ভালো যায় না বলে জোর করে একটা বাড়ির কাজ ছাড়িয়ে দিয়েছে রিনি। এটা তার ফাইনাল ইয়ার। ইতিমধ্যেই বিশ্বের নামকরা বেশ কয়েকটা কম্পানিতে রিনি ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ দিয়ে সার্ভিস পেয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত ইউনিভার্সিটিতে সবকিছুতেই তারই হাইয়েস্ট স্কোর। মাকে সে বলে দিয়েছে আর দুটো মাস পর থেকে সে যেন সব বাড়ির কাজ ছেড়ে দেয়। ইনফোসিসে জয়েন করবে হায়দরাবাদে। মায়ের আর কাজ করার দরকার নেই।



    বিমলার মেয়েকে দেখে বৌদি বললেন, "এই বুঝি তোমার মেয়ে বিমলা? কী মিস্টি মুখটা রে! এই এইদিকে আয় তো। কি পড়িস তুই? শুনেছি কলেজে পড়িস? "

    রিনি মাথা নিচু করে বললো, "আজ্ঞে মানে …"


    "আরে লজ্জা পাওয়ার কি আছে রে? তুই যে কলেজে পড়ছিস এটাই তো বড়ো কথা। পাসে পড়িস তো?এতে লজ্জার কী আছে! কি কি সাবজেক্ট তোর?"


    রিনি বললো, "আমার বি.ই ফাইনাল সেমিস্টার, কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ছি। যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। আর তিন মাস পরে হায়দরাবাদে ইনফোসিসে জয়েন করবো। ওখানে দুমাস ট্রেনিং পিরিয়ডের পরে পোস্টিং দিলে মাকে সঙ্গে নিয়ে যাব। মা কিন্তু তখন আর কাজ করতে পারবে না। "


    আইভি মানে বিমলার মালকিন বৌদির চোখ কপালে।

    "আরে বলিস কি রে! তোর মা তো কোনও কিছু বলতেই পারে না। "


    আজ বিমলা কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিল কে জানে! সক্কালবেলাতেই বৌদি বললেন, "বিমলা এখন থেকে তোমার মেয়ের যাবতীয় দায়িত্ব আমরা নিলাম। মানে তাকে ভালো ঘরে বিয়ে দেয়াটেয়া, গয়নাগাঁটি সবকিছুর। কিন্তু একটি ছোট্ট শর্ত আছে। "


    বিমলা যেন হাতে চাঁদ পেলো। কি শর্ত জানতেই আর চাইলো না। মেয়ে ছাড়া তার ইহজগতে আর কেউ নেই। কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়ে বৌদি একটা বড় টিফিন ক্যারিয়ারে ভাত, ডাল, সব্জি, মাছ, মাংস দিয়েছেন। সঙ্গে একগাদা নতুন কাপড়, সাবান, শ্যাম্পু, দামি ক্রিম কী নেই! এ যেন প্রখর গ্রীষ্মে না চাইতেই মেঘ। বিমলা ভাবছে বৌদিমার দয়ার শরীর। কী ভাগ্য করেই না সে এই কাজের বাড়িটা পেয়েছে!


    আইভি রোজই বিমলার কাছে তার মেয়ে রিমির খোঁজ নেন। আর নিত্যনতুন জামাকাপড়, খাবার দাবার পাঠিয়ে দেন। বিমলা ও বাড়িতে যতক্ষণ কাজ করে বৌদির মুখে শুধু রিনি আর রিনি। এমনকি মাসের কত তারিখে রিনির পিরিয়ডসের দিন সেই তারিখটিও কথায় কথায় জেনে নিয়ে একদিন অনেকগুলো প্যাডের প্যাকেট বিমলার হাতে দিয়ে দেন।

    তিনটি মাস বড়ো সুখে কাটলো মা, মেয়ের। একদিন বিকেলে বৌদি বিমলার হাতে একটি ময়ুরকণ্ঠি রঙের কাঞ্জিভরম সিল্ক শাড়ি কিনে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, পরশু ভোরে রিনিকে এই শাড়ি পরিয়ে রেডি করে রাখিস। এখন তো ওর বি.ই ফাইনালও হয়ে গেছে। কাজেই টানা ছুটিও আছে। ওকে নিয়ে আমরা ক'দিনের জন্যে ঘুরতে যাবো কোভালমে সমুদ্র দেখতে । তোমাকে এখন আর কিছুদিন কাজে আসতে হবে না। তোমার তিনমাাসের আগাম মাইনে আর চাল, ডাল বিস্কুট, শুকনো খাবার সব দিয়ে যাব। তাছাড়াও একমাসের একস্ট্রা মাইনেও দিয়ে যাব।"

    বিমলার চোখ ছলছল করে এলো। বাপ মরা মেয়েটার খুব সমুদ্রের নেশা। শান্ত মেয়েটির খুব ইচ্ছে ছিল একটিবার সমুদ্র দেখতে যাবে। কিন্তু সে তো জানে মায়ের অবস্থা! মুখ ফুটে কিছুই বলে না কোনওদিন। যাক, নতুন এই কাজের বাড়িটি সে কত পুণ্যিতেই যে পেয়েছে, ভেবে হাতজোড় করে কপালে ঠেকায়।


    একদিন পরে ভোরে স্নান করে রিনি খুব সুন্দর করে সাজলো। চোখে নীল লাইনার, ঠোঁটে ম্যাট ওয়াইন কালারের লিপস্টিক, গালে একটুখানি হাইলাইটার ... শ্যাম্পু করা চুলগুলো খোলাই রাখলো। যেন এক আকাশ কালো বর্ষা-মেঘ। মেয়েকে এমন চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সাজে কখনও দেখেনি বিমলা। অনেকদিন বাদে একটা সুখী দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।

    বৌদি বলেছেন আজ ভোরের প্লেনেই ওরা মেয়েকে নিয়ে উড়ে যাবেন ত্রিবান্দম, তারপর সেখান থেকে আরেকটি গাড়িতে যাবেন কোভালম। জন্মের পর থেকে কখনও মেয়েকে ছাড়া থাকেনি সে। খুব কষ্ট হচ্ছে আজ ভিতরে তার। নিজেই নিজের মনকে প্রবোধ দিল, থাক ক'টা তো দিন। মেয়েটার সমুদ্র দেখার সাধটুকু তো মিটবে। আর তাঁরা তো মেয়েকে একদম তাঁদের বাড়ির মেয়ের মতো করেই নিয়ে যাচ্ছেন। চিন্তার কী আছে!



    বড়ো রাস্তার মোড়ে অ্যাত্তবড়ো একটা সাদা ধবধবে গাড়ি এসে দাঁড়ালো। খুব ইচ্ছে ছিল মেয়ের সঙ্গে ক'টা নারকোলের নাড়ু দিয়ে দেবে কাগজের ঠোঙাতে। কিন্তু বৌদি বলে দিয়েছেন, "কোনও চিন্তা নেই বিমলা, আমরা যা খাবো তোর মেয়েও তাই খাবে। আর ওর জন্যে এক সুটকেস জামাকাপড়ও আমরা সঙ্গে নিচ্ছি। তোর দাদাবাবু জানিস তো খুব পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করেন।"

    তা মেয়েকে ছাড়তে যেতে গিয়ে বিমলা যে এমন কান্না জুড়বে তা সে নিজেও তো জানতো না। কান্নাপর্ব থামাতে বৌদি শেষে নিচে নামলেন। বিমলির পিঠে হাত রেখে বললেন,"এত কাঁদছিস কেন? যাচ্ছে তো বেড়াতে। এমনভাবে মা যদি কাঁদে মেয়ে কি শান্তিতে সমুদ্র দেখতে বেড়াতে যেতে পারবে?"

    একথা শুনে বিমলি একটু শান্ত হল। সত্যিই তো বলছেন বৌদি। রিনিটা কেমন যেন রাজকন্যের মতো গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো। গরীবের ঘরে জন্ম হলে কি হল, মেয়ে রূপে গুণে যেন মা দুগ্গা। গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে রিনি বলে উঠলো, "মা চিন্তা কোর না এইতো কদিন বাদেই চলে আসবো। দেখো তোমার জন্যে কত্ত ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে আসি। একটা পঞ্চমুখী শঙ্খও নিয়ে আসবো দেখো। "

    ওরা তিনজন তিরুবনন্তপুরম এয়ারপোর্টে নামতেই লাউঞ্জ থেকে একজন কোঁকড়ানো চুলের শ্যামল রঙের ছেলে হাতে তাদের নাম লেখা প্লেকার্ট নিয়ে এসে ইংরেজিতে বললো "হ্যালো আই অ্যাম অ্যালবার্ট নায়ার। আর ইউ মিস্টার দীপঙ্কর মুখার্জি, মিসেস আইভি মুখার্জি এন্ড মিস রিনি রায়?? "

    সম্মতি পেতেই সেই ছেলেটি তাঁদেরকে সঙ্গে করে জিনিসপত্রের ট্রলিটি ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেল বাইরেই দাঁড়ানো একটি গাড়ির কাছে। সুটকেসগুলো পিছনের ডিকিতে উঠিয়ে দিয়ে এবার ওদেরকে গাড়ির দরজা খুলে দিল।

    ওরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। রিনির একটু খিদে খিদে ভাব হচ্ছে। কিন্তু লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। আইভি যেন মনের কথা পড়তে পারেন। কী সুন্দরী দেখতে! ফর্সা টুকটুকে। স্ট্রেট করা চুল ব্রাউন রঙে হাইলাইট করা। পরনে একটি হাল্কা গোলাপি শিফন শাড়ি। গলায় বড়ো বড়ো গোলাপি পাথরের বিডসের মালা। কিন্তু চোখ থেকে একবারও ঢাউস সানগ্লাসটি খোলেননি। বললেন, "কিরে ক্ষিদে পেয়েছে? এই নে খা।" বলে একটা প্যাকেট বড় বেতের ঝুড়ি থেকে বের করে দিলেন। সঙ্গে একটা মিনারেল ওয়াটারের পাউচও। রিনি দেখলো প্যাকেটে বার্গার, চিকেন ফ্রাই, সন্দেশ এইসব রয়েছে। আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলো, "মাসি আপনারা খাবেন না? "

    বছর পঁয়তাল্লিশের আইভি হেসে উঠলেন। "অ্যাই মাসি ডাকবি না। দিদি ডাকতে পারিস। "

    সত্যিই তো এমন সুন্দরী একজন মহিলাকে তার বোকার মতো মাসি ডাকাটা ভুলই হয়েছে — ভাবছে রিনি। ড্রাইভার শাকাহারী বলে কিছুই খেলো না। ওরা তিনজনেই খেয়ে নিলো চলন্ত গাড়িতেই।

    জানালার বাইরের রাস্তাটা কী অপূর্ব সাপের গায়ের মতো মসৃন রাস্তা! পথের ধারে ধারে পাহাড়। পাহাড়গুলোতে কী বড়ো বড়ো পাথর! একটার উপরে আরেকটা পাথর কেমন ব্যালেন্স করে আছে। দেখলে মনে হচ্ছে এই না গড়িয়ে পড়ে। আর কত কত বোগেনভিলিয়া ফুল। কেউ যেন পরম যত্নে নিজের হাতে রাস্তাটা সাজিয়ে দিয়েছে। এখানে আকাশের রঙটা চরম নীল। সাদা মেঘের দল ভেসে বেড়াচ্ছে আপনমনে।


    আইভিদি বললেন, "এই পাহাড়ের নাম জানিস রিনি? "

    রিনি মাথা নাড়লো...

    বললো " হ্যাঁ।নীলগিরি পাহাড়।"


    রাস্তা দেখতে দেখতে দুটো ঘন্টা যে কখন কেটে গেলো। এবার একটু জনবসতি আসতে লাগলো। ছবির মতো সব কটেজ। মানুষজন। দোকানে দোকানে টকটকে লাল রঙের কলার কাঁদি ঝোলানো। অজস্র মেয়েরা মাথায় ফুলের মালা লাগিয়ে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছে। এখানকার বাড়িঘর খানিকটা চীনের প্যাগোডা স্টাইলের মতো। ভীষণ সুন্দর, ছিমছাম। রিনি বইয়ে পড়েছে কেরালায় চাইনিজ সাম্রাজ্য ছিল একসময়। তারই ফলশ্রুতিতে মার্শাল আর্ট বা এইধরণের প্যাগোডা স্টাইলের ঘর হয়তোবা। সঘন নারকেল বনের পাশে পাশেই কলাগাছের কী অন্ধকার বন। এত্ত ঘন জঙ্গল যে সূর্যালোকও ভিতরে পৌঁছায় না। আহ! কী সবুজ! হঠাৎই একটা পাহাড়ের বাঁক ঘুরতেই কী ঘন নীল একটা কাস্তের মতো রেখা দেখা গেলো! আরও কাছে যেতেই বোঝা গেল এটা আসলে একটা আর্চের মতো সোনালি বীচের গায়ে হেলান দেয়া ঘন নীল সমুদ্র। আর তার গা ঘেঁষেই পাহাড়, নারকেলের বন। সোনার পাতের মতো বেলাভূমিটা যেন এক টুকরো চাঁদ। যার উপরে আছড়ে পড়ছে আরব সাগরের লোনা সফেদ ফেনার ঢেউয়েরা।

    রিনি আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। চিৎকার দিয়ে আইভিকে বলে উঠলো, "দিদি, সমুদ্র !"


    গাড়িটা এসে একটা বিশাল হোটেলের সামনে দাঁড়ালো। খানিকটা দূরেই দেখা যাচ্ছে একসারি ছোট্ট ছোট্ট কটেজ।

    পাশাপাশি দুটো রুমেরই সঙ্গে একটা করে সমুদ্রমুখো ছিমছাম ফুলে ফুলে ছাওয়া ব্যালকনি প্রচণ্ড বাতাসে ডানা মেলে উড়ছে যেন। বিছানায় ধবধবে সাদা চাদর বালিশ টানটান করে পাতা। বেডসাইড টেবিলে ভায়োলেট আর সাদা অর্কিড সাজানো। সুদৃশ্য টেবিল ল্যাম্প ও একটা টেলিফোন রাখা। আরেক দিকের বেডসাইড টেবিলে রেড ওয়াইন আর স্কচের বোতল, ব্যানানা চিপস আর কোকোনাট কুকিজের প্যাকেট, গ্লাস, জলের বোতল ইত্যাদি রাখা। দেয়ালে লাগানো টিভিতে মালয়ালম ভাষায় কোনও একটি প্রোগ্রাম চলছে। ঘরগুলোতে কোথাও থেকে খুব সুন্দর জুঁই ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে।

    আইভি ডানদিকের ঘরটা দেখিয়ে বললেন, "এখন থেকে এটাই তোর ঘর। যা, ফ্রেস হয়ে স্নান করে নে। সমুদ্র দেখতে যাবি না? "

    রিনি ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো।

    এই প্রথম আইভি চোখ থেকে চশমা খুললেন। রিনি অবাক হয়ে দেখলো কী সুন্দর দুটো চোখ! কিন্তু চোখের তলায় কালি পড়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই কালি বহুরাত জাগরণের ফল।

    দাদাবাবু বললেন আইভিকে, ওকে বাথরুমটা বুঝিয়ে দিয়ে এসো। আইভি শান্ত গলায় বললেন, "হ্যাঁ, দিচ্ছি।" কিন্তু বাথরুমটা কোথায়! এতো একটা কাচের দেয়াল! গ্লাসডোরটা ঠেলে আইভি ভিতরে গিয়ে অত্যাধুনিক বাথরুমের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, "এবার আমি যাই রে। স্নানটান করে ফ্রেস হই। "

    আইভি স্নান সেরে ফ্লাস্ক থেকে একটু স্কচ ঢেলে কুকিজ দিয়ে খেতে লাগলেন। তারপর একটা জিনস আর টপ পরে বেরিয়ে গেলেন সমুদ্রের দিকে।

    রিনি স্নান সেরে সুটকেস খুলে আতান্তরে পড়লো। কোনটা পরবে। সবই তো স্লিভলেস ফিতে দেয়া শর্ট ফ্রক বা টপ ও শর্টপ্যান্ট। এসব পরে কী করে সে বাইরের মানুষের সামনে যাবে! এখন তো টাওয়েল দিয়ে বানানো একটা অদ্ভুত হাউসকোট পরে আছে। এটাই বরং ভালো, বেশ শরীর ঢাকা পোশাক। আইভিদি হোটেলের দেয়া এই পোশাকটা স্নান করে পরতে হয় বলেছে। কি মুশকিলে যে পড়েছে এখন।

    এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো। আইভিদি নিশ্চয়ই ভেবে রিনি দরজাটা খুলে দিলো। সামনে দাদাবাবু দাঁড়িয়ে। দরজাটা ছেড়ে রিনি বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালো।

    "হাই ডিয়ার, এনি প্রব্লেম? "

    বলে রিনির কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। বললেন, "ইশ! চুলটা মোছওনি ভালো করে। শুকনো ড্রেস পরবে তো। একটি স্তনের উপরে আলতো করে চাপ দিয়ে বললেন একদম ভেজা। ঠান্ডা লেগে যাবে তো। এই ভেজা জামাটা খোল তো আগে। রিনি লজ্জায় ভয়ে দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে দাঁড়িয়ে আছে। কোনমতে বললো, "আমি পরে নেবো। আপনি চিন্তা করবেন না। "

    আরে চিন্তা না করলে হবে আমার? আফটার অল তুমি আমার বাচ্চার উড বি মা হতে যাচ্ছো। আমি কিন্তু চাই আমার বাচ্চা তোমার মতোই দেখতে হোক। এসব ব্যাপারে আমি খুব লিব্যারেল। সারোগেট মাদার হলেও মা আফটার অল মা তো। চলো হানি লেটস ট্রাই ফ্রম নাও। আমি আর থাকতে পারছিনা।

    রিনির চোখ বিস্ফারিত! "এসব আপনি কী বলছেন দাদাবাবু! আমি তো এসবের কিছুই জানি না। আমি বাড়ি ফিরে যাব। মায়ের কাছে যাব। "

    চিবিয়ে চিবিয়ে বছর পঞ্চাশের দীপঙ্কর বললো, "আর ইউ ম্যাড? এসব ন্যাকামি বন্ধ করো। "

    বলেই একটানে বাথকোটটা খুলে ফেললেন রিনির।

    "ওয়াও,কী সুন্দর দেখতে তুমি! আই হোপ ইউ আর স্টিল ভার্জিন। ভার্জিন ছাড়া এত সুন্দর বডি হতেই পারে না। আমি আইভিকে বলেছিলাম ভার্জিন ছাড়া আমি কাউকেই আজ অব্দি অ্যালাও করিনি।"

    রিনি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। দীপঙ্করের পা জড়িয়ে ধরে বললো, "আমাকে ছেড়ে দিন দাদাবাবু।"

    রিনির পাখির মতো শরীরটাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিলেন দীপঙ্কর। রিনি বাঁচার জন্যে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে। কিন্তু এত শক্তির কাছে হেরে যাচ্ছে। কোনও মতে হাতড়ে হাতড়ে ফ্লাওয়ার ভাসটা পেলো হাতে। ততক্ষণে শরীরের ভিতরে ওঠানামা করছে একটি কামুক শক্ত লিঙ্গ। লোভী জিহ্বা লেহন করছে সারাটা শরীর। কামড়ে ধরছে স্তনের বোঁটা। ধর্ষণে ধর্ষণে শরীর অবশ হয়ে আসছে রিনির। তবুও কোথা থেকে সব শক্তি জড়ো করে লোকটার মাথায় ফ্লাওয়ার ভাসটা দিয়ে সজোরে আঘাত করলো। একটা বিকট চিৎকার করে দীপঙ্কর নামের জঘন্যতম লোকটা ছিটকে পড়লো। খোলা চুলে দরজা খুলে হাতে ফ্লাওয়ার ভাসের টুকরোটা নিয়ে হোটেলের গেট দিয়ে নেকেড পায়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রগামী মেয়ে। রাস্তা পার হয়ে অবাক ভীড়ের একরাশ চোখের সামনে সোনালি বালিতে পায়ের ছাপ ফেলে ফেলে এগিয়ে চললো সমুদ্র দেখতে আসা সেই মেয়ে। অজস্র ঢেউয়ের সমাপতনকে জীবনের কাছে জমা রেখে চলে গেল সমুদ্রের বুকের ভিতরের আরেক সমুদ্রকে দেখতে...



    Mousumi Mondal Debnath


Your Rating
blank-star-rating
Sorry ! No Reviews found!