ভালবাসার পথের ধারে
বিনতা শহরতলির রম্য পরিবেশে গাছগাছালির ছায়ায় ঘেরা একটা বৃদ্ধাশ্রমে থাকে, যেখানে প্রতিদিন ফলের গাছে ভীড় করে আসে নাম না জানা কত পাখি আর হাস্নুহানা,গন্ধরাজ,বকুলের গন্ধে ভরে ওঠে বাতাস।আছে একটা পুকুর,সেখানে সাঁতার কাটে রাজহাঁস,ওড়ে মাছরাঙা,বক,শালিখ,চড়ুই। সকাল ,বিকেল বাগানে পায়চারি করে আর পুকুর ধারে বানানো বেঞ্চিতে বসে ওরা প্রকৃতিকে উপভোগ করে।কাছেই দেবমন্দিরে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি।
বিনতার একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকে।বউমা ও এক নাতি আছে।নীতার একসময় ভরা সংসার ছিল।কম বয়সে একান্নবর্তী সংসারে বিয়ে হয়েছিল।স্বামী উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে। শ্বশুর শাশুড়ি,দেওর ননদ মিলে প্রায় পনের জনের সংসার।বাড়িতে দোল, দুর্গোৎসবের অনুষ্ঠান হোত।তখন আরো আত্মীয় স্বজনে বাড়ি গমগম করত।রান্নাঘরে পাতা উনুন ছিল।ওরা জায়েরা মিলে মিশে রান্না করত।একজন মহিলা ছিল গৃহস্থালি কাজে সাহায্য করার জন্য।এত বড় রান্নাঘর ,একদিক বাটনা বাটা,কুটনো কাটা ,আটা মাখা এসব কাজের ফাঁকে সবাই মিলে গল্পগুজবে হইচই করে সকালটা পার হয়ে যেত।ছেলেমেয়েরা স্কুলে আর পুরুষরা অফিসে চলে গেলে সব কাজ সেরে চলত উল বোনা,বড়ি দেওয়া,গল্পের বই পড়ার ধূম।আর ছিল রেডিওতে, অনুরোধের আসরের গান আর নাটক শোনা,মাঝেমাঝে জায়েরা মিলে সিনেমা দেখতে যাওয়া।বিনতার শাশুড়ির নিয়ম মেনে সব কাজ ঘড়ি ধরে করার অভ্যেসটা পুত্রবধূদের মধ্যে সঞ্চাচিত হয়েছিল।তাই এর মাঝেই ছেলেমেয়েদের পড়ানোটাও ওরা নিজেরাই করত।
এরপর সময়ের পথ ধরে শ্বশুর, শাশুড়ি গত হন।পুরনো বনেদী বাড়ি ফ্ল্যাটে হস্তান্তরিত হয়।ভাইয়েরা ছড়িয়ে যায় সুবিধা মত জায়গায়। নীতার স্বামী মনোরম পরিবেশে বাগানসহ সুন্দর একটা বাড়ি কিনে সল্টলেকে চলে আসে।বিনতার খুব বাগানের শখ। বাড়ির সামনে নানা রকম ফুলগাছ আর পিছনদিকে আম,জাম,পেয়ারা এসব ফলের গাছ লাগানো হোল।মালী এসে সপ্তাহে দুদিন করে বাগানের পরিচর্যা করত।কত যে রঙবেরঙের ফুলে ফুলে ভরে যেত বাগানটা।আর সন্ধ্যাবেলা ব্যালকনিতে বসে তখন ওরা গল্প করত,ফুলের গন্ধে ভরে যেত পরিবেশ। মাঝেমাঝেই দেওর ননদরা সপরিবারে এসে হইহই করে কটা দিন কাটিয়ে যেত।বিনতার ভাই বোনেরাও এসে খুব আনন্দ পেত এমন সুন্দর পরিবেশে।পিছনের বাগানে গাছে বাসা বেঁধেছিল পাখিরা।ভেসে আসত ওদের কাকলি।
একেক সময় মনে হোত যেন ওরা কোন বনের কাছে বেড়াতে এসেছে।
এই বাড়িতে থাকতে থাকতেই ছেলে অনির্বাণ স্কুল পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়।একসময় স্বামী অনিরুদ্ধ রিটায়ার করে। এতদিনে ওরা দুজন যেন বাড়িটার সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করার আর
নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবার অফুরন্ত সময় পেল।এবার যেন ওদের দ্বিতীয় মধুচন্দ্রিমা শুরু হয়।
সকালবেলা দুজনে বাগানের মধ্যে মেঠো পথে মর্নিং ওয়াক করে।কানে ভাসে পাখিদের কলতান,একঝাঁক টিয়া আকাশে উড়ে যায়। খেজুর গাছটাতে কাঠঠোকড়া ঠোট দিয়ে ঠুকে আওয়াজ তোলে।কটি পায়রা বকবকম করতে করতে ইতিউতি ডানা ঝাপটায়।বাগানের মধ্যে একজায়গায় পাখিদের জন্য জলের ব্যাবস্থা করা আছে।পাতার ফাঁকে ফাঁকে মিঠে রোদ এসে ছুঁয়ে যায় দুজনকে।ওরা সামনের বাগানে এলে ফুলের গন্ধে আর গোলাপ,চন্দ্রমল্লিকা,ডালিয়ার রঙে মন আনন্দে ভরে যায়। প্রতিবেশীরাও মাঝে মাঝে এই বাগানে এসে সময় কাটিয়ে যায় একরাশ ফুলের মাঝে।ছেলের জন্য একদিক সাজিয়েছে জিম করার আর ব্যাডমিন্টন খেলার জায়গা।ও বন্ধুদের নিয়ে এখানে খেলে ছুটির দিনে।
এভাবে অনেকগুলো বছর প্রকৃতির মাঝে কাটিয়ে দেয় ওরা।বছরে একবার করে ঘুরতে যার সপরিবারে এদিক ওদিক।ইতিমধ্যে ছেলের বিয়ে হয় ধুমধাম করে।ছেলে অনির্বাণ চাকরি নিয়ে সপরিবারে জার্মানিতে চলে যায়।
বছর দুয়েক আগে হঠাৎ একটা কার্ডিয়াক এটাকে অনিরুদ্ধ মারা যায়। বিনতার আকাশ থেকে প্রেমের তারা খসে পড়ে।ও চেষ্টা করেও মনে করতে পারেনা অনিরুদ্ধর এতটুকু খারাপ ব্যবহার প্রায় পঞ্চাশ বছরের বিবাহিত জীবনে। অনিরুদ্ধ শুধু তার প্রতি নয়, পরিবারের সবার প্রতি,সন্তান,ভাই বোন, শ্বশুর বাড়ির লোকজন সবার প্রতি যত্নশীল ছিল।প্রতিবেশীদের সাথেও ছিল হৃদ্যতা।
মাত্র বাইশ বছর বয়সে ঐ সুপুরুষ স্বল্পভাষী মানুষটার সাথে বিয়ে হয়েছিল সম্বন্ধ করে।যেদিন দেখতে এসেছিল অনিরুদ্ধ দুজন বন্ধুর সাথে,সেদিন প্রথম দর্শনেই প্রেম হয়েছিল দুজনের।
বিনতা ছিল সুন্দরী,একঢাল চুল পিঠ ছাড়িয়ে কোমর ছুঁত।মায়াবী দুটো চোখ,সামান্য চাপা নাক,ফর্সা রঙে একটা গোলাপী শাড়ি,হালকা প্রসাধনে গোধুলি আলোয় প্রথম দেখাতেই অনিরুদ্ধের মনে ছায়াপাত করেছিল।
ওর স্পষ্ট মনে আছে বাসর ঘরে সবার অনুরোধে ও গেয়েছিল,"আমার পরাণ তাহা চায়, তুমি তাই---" ।অনিরুদ্ধ ওর এই নতুন পরিচয় পেয়ে এতটাই বিমোহিত হয়েছিল,ওর মুখ দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছিল।সবার প্রশংসায় বিনতার লজ্জারাঙা মুখ আরো রক্তিম হয়ে ওঠে।সেদিন অনিরুদ্ধ শুনিয়েছিল নিজের কবিতা:
"কে তুমি ডাক দিয়েছ
তুমি আজ হাসলে বলে হাস্নুহানা গন্ধ ছড়ায়,
তুমি যে ডাক দিলে তাই, কাকলি ছন্দে হারায়।
তুমি যে মন ছুঁয়েছো দখিনা তাই বয়েছে,
তোমারই নাম ধরে কি বাঁশরী গান ধরেছে?
ধীরে ঐ মর্মরিত পাতারা পলাশ বনে,
স্থিতধী কোন্ মরমী হৃদয়ে আঘাত হানে?
জলধি ঢেউয়ের দোলায় তীরে যে মিশল এসে,
আকাশের সঙ্গে তারই বিরহের অবকাশে,
চিরদিন অপলকে দুনয়ন দেখে তাকে,
কত না গভীর মায়া আঁচলে ঢেকে রাখে!
তোমারই রূপের মোহে ভ্রমরা মাতাল হোল,
দীঘল ঐ আঁখির পাতে ফুলেরা রঙ ছড়ালো,
তোমাকেই দেখবে বলে পাখিরা পথ হারালো,
সজনী সলাজ হয়ে বাতায়নে মুখ লুকালো!
কি যেন জাগলো মনে,ভুলেছি যে কুল মান,
তোমাকে নিবিড় মনে ভেবেছি আজ দিনমান!
নদী তাই ছুটলো যেন, হয়েছে পাগলপারা,
পারাবত কোটর দ্বারে সাথীকে দিচ্ছে সাড়া!
মালতী কুঞ্জবনে সহকার বৃক্ষশাখায়
ঢলেছে প্রেমসোহাগে, আপনার গন্ধ বিলায়!
আকাশের প্রেমিক বুকে চন্দ্রিমা মুখ রেখেছে,
সোহাগী জোছনা সুখে বনে কি তাই মিলেছে?"
অনিরুদ্ধর স্মৃতি বিনতার মনের মণিকোঠায় চির অম্লান।
অনিরুদ্ধ যখন ওকে একা রেখে চলে গেল তখন একমাত্র ছেলে পরিবার নিয়ে জার্মানিতে বসবাস করে।বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে চলে এসেছিল একাই। ক'দিন থেকে সব কাজ সেরে ফিরে গিয়েছিল।একা এতবড় বাড়িতে মন বসত না আর নীতার। চারদিকে অনিরুদ্ধর স্মৃতি ওকে পাগল করে দিত।দেওর ননদরা,তাদের ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে এসে যেত ওর একাকিত্ব ঘোচাতে।একসময় ওর একান্ত আপন ফুল,পাখিরা ওকে আবার আগের মত সঙ্গ দিয়ে ভরিয়ে রাখতে লাগলো। বাগানে শিউলি,বেলি,জবা,টগর সাঁঝি ভরে তুলে এনে পূজো করত আরাধ্য দেবতার।খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিল অনিরুদ্ধ ঠাকুরঘরটা।সব জায়গায় যেন অনিরুদ্ধর হাতের ছোঁয়া।সেই তো প্রতিদিন বাগান থেকে ফুল, তুলসী পাতা এনে সাজিয়ে রাখত বিনতা পূজো করবে বলে।
অবসর সময় বসে অনিরুদ্ধর কবিতার খাতায় একের পর এক কবিতা পড়ত আর স্মৃতিচারণ করত পঞ্চাশ বছরের দাম্পত্য প্রেমের।
কিন্তু দিন বদলে যেতে সময় লাগেনা।ছেলে ফোনে মাকে বলতে লাগল,আমি এতদূরে থাকি।একা একা তোমার এভাবে থাকা নিরাপদ নয়। বাড়ি বিক্রির জন্য চাপ দিতে লাগল।বিনতা এই আপন জগত,ফুল,পাখিদের আত্মীয়তা ছেড়ে যাবার কথা ভাবতেও পারত না। কিন্তু ছেলে এবার মনস্থির করেই এসেছিল।বিনতার কথা শোনেনি।ক'দিন থেকে চড়া দামে ঐ সাধের বাগানবাড়ি বিক্রী করে দেয়।তার আগে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটা গেট টুগেদারে র আয়োজন করে।নিজের সিদ্ধান্ত আত্মীয়দের জানায়।মায়ের জন্য একটা শান্ত সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে বৃদ্ধাশ্রমের ব্যাবস্থা করেছে বলে জানায়।ওর জায়েরা বিনতাকে অনেক যত্ন করে নিয়ে যেতে চায় নিজেদের কাছে।বিনতার ভাই বোনরাও তাই চায়।ওরা বিনতাকে সত্যিই মন থেকে ভালবাসে।বিনতার উদার নম্র ব্যবহার,সবার জন্য দুহাত উজার করে যত্ন করা,ওরা ভুলতে পারেনা।
কিন্তু বিনতা কারো গলগ্রহ হতে চায়নি।
ছেলের সিদ্ধান্ত মেনে চলে আসে এখানে ওর মত আরো অনেক বিনতা,সুজাতা,বিশাখা,অজন্তার কাছে।
বিনতা জীবনের ভালবাসায় ঘেরা একান্নবর্তী পরিবার দেখেছে,স্বামীর অগাধ প্রেম দেখেছে,আত্মীয় প্রতিবেশীর হৃদ্যতা দেখেছে।সে নিজে ভাল বলে জীবনের খারাপ দিকগুলো ওর চোখে পড়ত না।গ্লোবালাইজেশনের ফলে ছেলের দূরে চলে যাওয়া মেনে নেয়,ছেলের উন্নতির কথা ভেবে। কিন্তু বোঝেনি ওর মেধিবী ছেলে কেরিয়ারিষ্ট হতে গিয়ে লাভ লোকসান যতটা বুঝতে শিখেছে,আপনজনদের মনের আভাস পেতে শেখেনি।ওদেরই হয়তো মানুষ করার কোথাও ভুল ছিল!
জীবনের শেষ কটা দিন ওর মত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের সাথে কাটিয়ে দিতে মন্দ লাগেনা এখন আর ।ব্রাহ্ম মূহুর্তে উঠে পূজা ও ধ্যানে ডুবে যায়।এটা ওর দীর্ঘদিনের অভ্যাস।ভোর হতেই দূরে মন্দিরে ঘন্টাধ্বনি বেজে ওঠে।পবিত্র হয়ে ওঠে মনের আঙিনা।
এর মধ্যেই ওর জায়ের মেয়ে অনিন্দিতা,যে ওর খুব আদরের,একটা ছেলেকে নিয়ে ওর সাথে দেখা করতে আসে।সঙ্গে আনে তার মায়ের হাতের তৈরী পিঠে ,পুলি,নারু।ও অন্ততঃ মাসে একবার জেঠিমার কাছে আসবেই।এবার নিয়ে এল প্রেমিক অপূর্বকে জেঠিমার সাথে আলাপ করাতে।দুজনে প্রনাম করে ।বিনতা আদরের নন্দাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। অপূর্ব জার্নালিস্ট,একটা নামকরা পত্রিকায় চাকরি করে আর গল্প,কবিতা লেখে।দুজনে বাবা মাকে জানিয়েছে ওদের সম্পর্কের কথা।একটা শুভদিন দেখে দুই পরিবার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবে।কথাবার্তা বলে আর ভদ্র ব্যবহার দেখে বিনতারও অপূর্বকে বেশ পছন্দ হয়। অনিন্দিতা জেঠিমার কাছ থেকে চেয়ে তার জেঠুর কবিতার ডাইরী নিয়ে যায় কদিনের জন্য দুজনে মিলে পড়বে বলে।ওরা যেন এক ঝলক টাটকা হাওয়া বয়ে এনে বিনতার মন ভরে দিয়ে যায়।
ক'দিন পরে ছিল বিনতার জন্মদিন। অনিন্দিতা ওকে ফোনে জানায় আজ তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে আমরা আসব। বৃদ্ধাশ্রমের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সব আয়োজন করে।বিকেলে ও আর অপূর্ব দুজন নামী কবি ও সাহিত্যিক ,টিভির সাংবাদিক আলৈকচিত্রীদের নিয়ে উপস্থিত হয়।বৃদ্ধাশ্রমের সব আবাসিকদের উপস্থিতিতে বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের হাত দিয়ে প্রয়াত অনিরুদ্ধ মিত্রের কাব্যগ্রন্থ "ওগো মোর প্রিয়া"র আবরণ উন্মোচিত করে। বিনতাকে মধ্যমণি করে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অপূর্ব ও অনিন্দিতা বিশিষ্ট অতিথিদের সাথে বিনতার পরিচয় করিয়ে দেয়।বয়স্ক মানুষগুলো এই আনন্দযজ্ঞে সামিল হয়ে ওদের দুজনকে দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেন।সবকটা খবরের চ্যানেলে এই সুন্দর প্রয়াস সম্প্রচারিত হয়।
অনিন্দিতা জেঠিমাকে বলে এটা আমাদের দুজনের পক্ষ থেকে তোমার জন্মদিনের উপহার।দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসজল চোখে।ওদের যেন মনে হয় অলক্ষ্যে অনিরুদ্ধ এসে দাঁড়িয়েছে এই সন্ধ্যায় ওদের পাশে।অদূরের মন্দির থেকে ভেসে আসে সন্ধ্যারতির শব্দ।পবিত্রতা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
অনিন্দিতা আর অপূর্ব অন্য সবার সাথে ফিরে যায়।ওদের পথের দিকে চেয়ে বিনতা প্রাণ ভরে ওদের আশীর্বাদ করে আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে যেন ঘরে ঘরে জন্মায় এমন অসংখ্য অনিন্দিতা আর অপূর্ব!
শিখা রায়