#ধারাবাহিক_গল্প
গল্প- #প্রণয়_থেকে_পরিণয়
পার্ট- 2
লেখিকা- #অঙ্কিতা_চ্যাটার্জী
সুরেন একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো," দাদীসা নেই আর এটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যে আরও একটা কথাও আছে।।"
তখনই জাহ্নবী এসে বললো," আর সেটা হলো এই যে তুমি তোমার সূর্পনখাকে খুব ভালোবাসো যা বাড়ির কেউ মানছে না।।"
সুরেন বললো," আরে ভাবী সূর্পনখা না ওর নাম স্যানিরিটা!"
জাহ্নবী এবার বললো," অনেকটা একই, বরং সূর্পনখা নামটা হলেও হয়তো তুমি তাকে পেতে You Know That Very Well, পাপা কখনো তাকে মেনে নেবেন না, স্যানিরিটা জোনস কখনো চৌহান পরিবারের পুত্রবধূ হতে পারবে না।।"
সুরেন হতাশ হয়ে বললো," ও শিক্ষিত, ও আমাদের বাড়ির সব কিছু মেনে চলবে তাও তোমরা কেউ ওকে মানছো না, ভাবী ও খুব ভালো একজন মেয়ে।।"
এতোক্ষন সব কথা চুপ করে শুনছিলো রিষভ, এবার ও বললো," ওর যোগ্যতা থাকলেও ওর একটা যোগ্যতা নেই এ বাড়ির পুত্রবধূ হওয়ার আর সেটা তুই ও জানিস ভাই।।"
সুরেন বললো," আজকাল কার দিনে এসব কেউ মানে না, ও হিন্দু নয়, so what? তা বলে আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না ?"
রিষভ বললো," না , পারবি না, ওকে বিয়ে করলে ও কি আমাদের বাড়ির মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবে ? আর যদি পারেও ও কি পূজা করতে পারবে ? ও কি আমাদের ধর্মকে গ্রহণ করবে ? কখনো না আর এটা উচিত ও নয়, ওকে ভুলে যাওয়া টাই বেটার বলে আমি মনে করি, ভালোবাসাতে কারো আপত্তি নেই কিন্তু অন্য ধর্মের কাউকে আমাদের বাড়িতে মানবে না এটা জানার পরও তাকে ভালোবাসাটা তোর উচিত হয় নি, সব ব্যাপারে দিলের নয় কিছু ব্যাপারে দিমাক এর ও ব্যাবহার করতে হয়।।"
সুরেন বললো," তুই যদি আমার জায়গাতে থাকতিস ?"
অন্যদিকে,,,,,
শান্ত শিষ্ট নয়, সবার সাথে মিশতে পারে অনেক বকবক করতে পারে, নিজে কিছু করতে চায়, সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করে যদিও সবক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়,এমন একজন মেয়ে হলো রিদ্ধিমা।।
জ্ঞান হওয়া থেকে সে নিজেকে তার আশ্রমে অর্থাৎ অনাথ আশ্রমে পেয়েছে, সে কে ? কি পরিচয় কিছুই জানে না, এই পৃথিবীতে চলতে গেলে যে একটা সারনেম দরকার হয় তা খুব ভালো করে টের পেয়েছে রিদ্ধিমা।।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আশ্রমে থাকলেও তারপর আর জায়গা হয়নি সেখানে, তাই তো এখন সে পি.জি হিসেবে থাকে কলকাতার এক স্থানে, আর সকাল বিকেল কিছু টিউশন পড়াতে যায়, তাতে অবশ্য ওর টেনে-টুনে হয়েই যায়।।
বাড়ির থেকে বেরোবে তখনই কাকিমা অর্থাৎ যার বাড়িতে P.G থাকে তিনি বললেন," যাচ্ছিস তার আগে কিছু খেয়ে নে।।"
রিদ্ধিমা হাসিমুখে বললো," নতুন কলেজে যাবো আমি, কিছু ড্রেস কিনে আনি তার সাথে দুটো খাতা তারপর বাকি সব আর আমি খেয়েছি তো।।"
কাকিমা অর্থাৎ মিসেস সেন বললেন," দুটো রুটিতে কি হবে বল তো ?"
রিদ্ধিমা বললো," এই অনেক, আমি আসছি।।"
রাস্তায় যাবার পথে মন্দির দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি করে মন্দিরে গিয়ে প্রনাম করলো, আর বললো," হে ভগবান! তিনদিন পর থেকে আমি কলেজ যাবো, এতোদিন স্কুলে ছিলাম তাও ঠিক ছিলো কিন্তু এবার তো কলেজ খুব ভয় করছে, তুমি আমার সাথে থেকো মা।।"
"চৌহান ম্যানশন",,
রিষভ বললো," থাকতাম না, আমি কখনো এমন কিছু করিনি যার জন্য আমার পরিবারকে ছোটো হতে হয়, আমি তার নাম তার পরিচয় জানার পর থেকেই তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতাম আর যদি ভালোও বাসতাম তা নিজের পরিবারের জন্য বিসর্জন দিয়ে দিতাম, আমি এমন কোনো মেয়েকে ভালো বাসবো না যার কোনো পরিচয় নেই।।"
জাহ্নবী বললো," কখনো ভালো বাসতেও তো পারো ?"
রিষভ বললো," I Can Control My Emotions."
সুরেন বললো," তাহলে আমি এবার কি করবো ?"
রিষভ বললো," বড়ো পাপা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন, আমি জানি না এসব।।"
বেশ কিছুক্ষণ পর রিষভ পুনরায় বললো," সুনয়না আর রাগিনী কোথায় ?"
জাহ্নবী বললো," সুনয়না তো ড্রাইভিং শিখছে, পাপার অর্ডার এটা আর রাগিনী দরজা বন্ধ করে কাঁদছে।।"
রিষভ বললো," কী ? এখনও কাঁদছে ?"
রিষভ রাগিনীর রুমে তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো কিন্তু ভেতর থেকে দরজা বন্ধ, এবার রিষভ বললো," রাগিনী দরজা খুলবি না ?"
রাগিনী কোনো কিছু না বলে চুপ করে থাকলো, রিষভ পুনরায় বললো," কারো সাথে কথা বলতে হবে না তোকে, আমার সাথে কথা বল শুধু, একবার দরজা টা খোল প্লিজ।।"
এবার রাগিনী দরজা খুলে রিষভকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।। রিষভ ওর মাথাতে হাত বোলাতে বোলাতে বললো," কেউ চিরস্থায়ী নয় রাগিনী, এক না একদিন সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হয়, আজ দাদীসা গিয়েছেন, তাকে যেতে হতো, তুই যদি এভাবে কাঁদলে দাদীসা কষ্ট পাবেন তো !"
রাগিনী কাঁদতে কাঁদতে বললো," আমি দাদীসা কে ছাড়া থাকতে পারবো না ভাই।।"
রিষভ বললো," কষ্ট তো হবেই কিন্তু আমি আছি তো, যেমন তুই সব কথা দাদীসার সাথে শেয়ার করতিস সেভাবে আমার সাথে শেয়ার করবি এবার থেকে।।"
অন্যত্র,,,
রিদ্ধিমা দুটো ড্রেস কিনলো কলেজের জন্য, তারপর টিউশন পড়িয়ে চলে আসলো।।
"চৌহান ম্যানশন",,,,,,
রাত্রে খাবার সময় সবাই একসাথে খেতে বসেছে, এটাও একটা নিয়ম তাদের, খাবার খাওয়ার সময় সবাইকে এক সাথে খেতে হবে।।
আজ সবাই বসেছেন দীর্ঘ 13 দিন হয়ে গেলো রিষভের দাদীসা মারা গিয়েছেন তার স্থানটা ফাঁকা থাকে, বাড়ির প্রধান রাজনাথ চৌহান তাই তিনি টেবিলের প্রধান চেয়ারে বসেন এবং বাকিদের ও স্থান আছে, কিন্তু তার দুই পাশে বসে সুনয়না আর রাগিনী, খুব ভালোবাসেন তাদের।।
খাবার দেওয়ার পরও রাগিনী না খাওয়াই রাজনাথ চৌহান বললেন," রানী খাবার খাচ্ছিস না কেনো ?"
চলবে,,,,,,,,,
( প্লিজ গল্পে নিজেদের রেসপন্স দিন, আপনার গল্প পড়ছেন কি না বা আপনাদের ভালো লাগছে কি না সেটা বুঝতে পারছি না, আপনারা বলুন যে গল্প ভালো লাগছে না কি খারাপ লাগছে ?
কিছু ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।। )
নমস্কার 🙏🏻