তুমি রবে নীরবে
শুভময় মণ্ডল
আমি বুঝিনা, কেন ভূতের নাম শুনলেই লোকে ভয়ে শিউরে ওঠে? সৌভাগ্যবশত, তেনাদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার বারংবার মুলাকাত হয়েছে এবং তার প্রতিটির স্মৃতিই বেশ মধুর। কখনও তাঁরা আড়ালে থেকে অফিসের কাজে সাহায্য করেছেন, কখনও অন্যরূপে এসে বিপদাপন্ন আমায় উদ্ধার করেছেন।
সেসব কাহিনী আগেই বলেছি। আজ বলবো - আমার সাম্প্রতিকতম সাক্ষাতটির কথা।
কর্মসূত্রে আমি ওড়িশার বহরমপুরের বাসিন্দা। দূর্গাপুজোর পঞ্চমীতে ফিরছি চেন্নাই-হাওড়া মেলে। সেদিন আমি বেশ অসুস্থ - সকাল থেকেই রক্ত আমাশয় হচ্ছিলো। অগত্যা স্যালাইন ওয়াটারের দুটো বোতল, আর কিছু বিস্কুট নিয়ে ট্রেনে চড়লাম।
হাওড়ায় সোয়া তিনটেয় পৌঁছালাম। সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে, শহরতলীতে আমার পুরানো বাসায় দৌড়ালাম। এত সকালে বাড়িতে ঢোকা নিয়ে একটু চিন্তা ছিলো। তাই খোলা পেয়ে, রঞ্জনদার চায়ের দোকানে গিয়ে ঢুকলাম।
শরীরের অবস্থার কথা শুনে, রঞ্জনদা আমায় কয়েকটা গ্লুকোজ বিস্কুট খাওয়ালো। বললো - সারারাত কিছু খাও নি, বিস্কুটটা খেয়ে একটু চা খাও। যদি বেগ আসে তো আমার বাড়িতেই যাও, কোন অসুবিধা নেই। ওখানে গিয়েই এখন রেস্টও নিতে পারো।
সত্যিই তার হাতের সেই অমৃত স্বাদের চা খেয়ে, যেন গায়ে বেশ জোড় ফিরে পেলাম। বললাম - আমি নিজের ঘরেই যাচ্ছি। শুলেই ঘুমিয়ে পড়বো, সারারাত ঠিকমত ঘুম হয়নি তো। তুমি পারলে শোভনদার ওষুধের দোকান খুললে, একবার খবর দিও।
আমি ঘরে এলাম। খানিক পরেই রঞ্জনদা এসে, আমায় দুটো ট্যাবলেট দিয়ে বললো - শোভনদার দোকান খুলতে অনেক দেরী, হরিমোহন ডাক্তারকে বলে, অ্যপোলো থেকে ওষুধটা নিয়ে এলাম। খেয়ে নাও, দেখবে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
তারপর সে দোকানে ফিরে গেলো। সবে তখন সকালের আলো ফুটছে। রঞ্জনদা আরও কিছুক্ষণ থাকলে ভালো হতো হয়তো, কিন্তু তার দোকান খোলা আছে ভেবে বাধা দিলাম না।
আমার হবু স্ত্রী তখন, কয়েক মাইল দূরেই থাকতো - মানে হবু শ্বশুরবাড়ি কাছেই ছিল। তাই ওকেই ফোনে নিজের শরীরের অবস্থা জানালাম। আগে জানাইনি, অকারণ চিন্তা করবে বলে।
কিন্তু এখন, এই শারীরিক অবস্থায়, প্রায় খালি পেটে ওষুধগুলো খেতে সাহস হচ্ছিলো না - যদি এতো হাই পাওয়ারের ওষুধ খেয়ে, আরও খারাপ করে শরীরটা!
সে এলে তাকে সব কথা বললাম। চুপচাপ কথাগুলো শুনে সে, আমার মাথায় হাত দিয়ে জ্বরটা মেপে বললো - গা তো বেশ গরম। ভালোই জ্বর বাঁধিয়েছো! আর কোন কথা নয়, তুমি বাড়ি চলো।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমায় তখন, তার বাড়ি যেতে হলো। পরে, নিজের বাড়িতে পুজো দেখতে চলে গেলাম। একাদশীর দিন সকালে ফিরলাম। রাতে আবার চেন্নাই মেল ধরে ফিরবো ওড়িশায়।
প্রথমে শ্বশুরবাড়িতেই গেলাম সরাসরি। বিজয়ার প্রণামাদি সেরে বললাম - যাই, একবার রঞ্জনদার সাথে দেখা করে আসি। শুনে আমার হবু শ্বাশুরি মাতা অবাক হয়ে বললেন - সে তো মহালয়ার আগের দিনই মারা গেছে। তার সাথে দেখা কি করবে?
আমি স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম।