ডিজিটাল আসক্তি: আমাদের মনোযোগ কোথায় হারাচ্ছে?
বর্তমান সময়ে, হাতে থাকা স্মার্টফোনটি শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সকালের অ্যালার্ম থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগের শেষ দৃশ্য—সবখানেই আমাদের চোখ স্ক্রিনে আটকে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ডিজিটাল নির্ভরশীলতা কি আমাদের অজান্তেই এক নীরব আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে?
একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো আজ এই ছোট পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। একটি পারিবারিক আড্ডায়, নৈশভোজে অথবা ভ্রমণেও অনেকেই আছেন যারা মুহূর্তটি উপভোগ না করে, সেই মুহূর্তের ছবি তোলা, আপলোড করা অথবা নোটিফিকেশন চেক করায় ব্যস্ত থাকেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের সরাসরি সংযোগ কমে যাচ্ছে, বাড়ছে স্ক্রিন টাইম।
এই আসক্তির সবচেয়ে বড় শিকার হলো আমাদের মনোযোগের ক্ষমতা (attention span)। সোশ্যাল মিডিয়ার দ্রুতগতির ফিড, শর্ট ভিডিও এবং ইনস্ট্যান্ট বার্তাগুলির কারণে আমাদের মস্তিষ্ক অতি দ্রুত উদ্দীপনা খুঁজতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে, যখনই কোনো দীর্ঘমেয়াদী বা গভীর মনোযোগের প্রয়োজন হয়—যেমন বই পড়া, গভীরভাবে কোনো কাজ করা, বা ধৈর্য ধরে কারও কথা শোনা—তখনই আমরা অস্থির হয়ে উঠি। সৃজনশীলতা এবং চিন্তাশক্তির গভীরতা এই অস্থিরতার শিকার হচ্ছে।
তবে এর সমাধান ফোন ভেঙে ফেলা বা প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণ বর্জন করা নয়। সমাধান হলো সচেতনতা এবং ভারসাম্য (Balance) প্রতিষ্ঠা করা।
১. ডিজিটাল 'ডি-টক্স' (Digital 'De-tox'): দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বা সপ্তাহে একটি দিন রাখুন যখন আপনি ফোন বা ল্যাপটপ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকবেন।
২. মনোযোগের সময়সীমা: কাজ বা পড়াশোনার সময় নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন।
৩. বাস্তবে সংযোগ: প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকার সময় ফোনটি দূরে সরিয়ে রাখুন এবং সেই মুহূর্তটি উপভোগ করুন।
মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি আমাদের সেবক, প্রভু নয়। যদি আমরা সচেতনভাবে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তবে আমাদের মূল্যবান মনোযোগ এবং জীবনের আসল আনন্দটুকু হারাতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি স্ক্রিনের ঝলকানিতেই মগ্ন থাকব, নাকি জীবনের প্রকৃত রং আর মানুষের উষ্ণতাকে অনুভব করব।
আমাদের মনের ভাব, কল্পনাশক্তি, বুদ্ধিদীপ্ততা, ভালোবাসা, অনুভূতি সবকিছু কে প্রকাশ করে ফুটিয়ে তুলতে হবে সবার চোখের সামনে। জীবনে অনেক কিছু করার আছে। জীবনে অনেক কিছু দেখিয়ে দেওয়ার আছে। জীবনে যেমন হতাশা থাকবে ঠিক তখনই "ভালোবাসা" হলো সেই মহৌষধি যা পারে সবকিছু কে এক লহমায় দূর করে মনের সুপ্ত বাসনাকে জাগ্ৰত করতে, জীবনটাকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে শিখতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে। নিজের জন্য সময় বের করতে হবে। প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্র যেমন থাকবে তেমনি সমুদ্রের ঢেউ এ পা ভিজিয়ে নিজের জীবন কে সুন্দর চিন্তার সঙ্গে উপভোগ করতে হবে। যা দেখে শিখবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবেই হবে।
কলামটি কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।