#শপি_অডিও_স্টোরি
#গল্পের_শিরোনাম:_রইল_না_পাঁচিল
#লেখকের_নাম:_ডাঃ_পরমেশ_ঘোষ
#বাচিক_শিল্পীর_নাম:_ডাঃ_পরমেশ_ঘোষ
হিমাংশু আর দীপ্তির মধ্যে পাঁচিলটা রয়ে গেছে। পঞ্চাশতম বিবাহবার্ষিকীর আগেই দীপ্তি পালাবার সুযোগ পেলো বিবাহিত জীবনের কারাগার থেকে।
প্রতি শুক্রবারে দীপ্তি টেবিল-টেনিস খেলে। এই শুক্রবারটা একটু আলাদা; কারণ হিমাংশু ব্রিসবেনে ছেলের বাড়ীতে গেছে।
টেবিল-টেনিস খেলোয়াড় লখিন্দর জিগসা ক’রলো, ‘দীপ্তি! বাড়ীতে স্বামী না থাকার সুযোগে, তুমি কি আমাদের সঙ্গে একটু ঘুরে আসবে?’
‘কোথায় যেতে চাও আর তোমার সঙ্গে আর কে কে থাকবে?’, দীপ্তি ব’ললো।
‘স্ত্রী বেহুলাকে নিয়ে আগামীকাল Qantas ফ্লাইটে শ্রীলঙ্কা যাচ্ছি।’, ব’ললো লখিন্দর।
দীপ্তি ছুটে গেলো কম্পিউটারে। Qantas ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ারকে ফোন ক’রে লখিন্দরের ফ্লাইটেই ওর সীট বুক ক’রলো।…..
পরদিন ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো দীপ্তির বাড়ীর দরজায়। লখিন্দর ট্যাক্সি থেকে নেমে দীপ্তিকে লাগেজ তুলতে সাহায্য ক’রলো আর ওর স্ত্রী বেহুলার সাথে পরিচয় ক’রিয়ে দিলো। দীপ্তি একটু অবাক হ’য়ে দেখলো যে বেহুলার মুখ অবিকল দীপ্তির মুখের মতো। ….
বেন্টোলা বীচে বেহুলা-লখিন্দর সমুদ্রের দিকে অনেকটা গিয়েছিল। দীপ্তি সাঁতার জানেনা ব’লে তীরে বসেছিল ওদের ফেরার অপেক্ষায়।
কুড়ি মিনিট পরে, বিধ্বস্ত লখিন্দর হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে এলো- ’বেহুলাকে বাঁচাতে পারিনি, নীচের ঢেউয়ের উল্টো টানে ওকে নিয়ে গেছে’।
লখিন্দর সিংহলী ভাষায় বোঝালো লাইফগার্ডদের,- কী ঘটেছে তার বর্ণনা দিয়ে। তারা প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চেষ্টা ক’রেও বেহুলার দেহের কোনো সন্ধান পেলো না।
লাইফগার্ডরা ব’ললো. ‘এই মামলায় একটি রিপোর্ট লিখতে হবে; নামগুলো বলুন’।
একটু দ্বিধা ক’রে, লখিন্দর ব’ললো, ’যাকে, আমরা সাগরে হারিয়েছি, তার নাম সানদুন। কলম্বো থেকে ক্যান্ডি যাওয়ার সময় ট্রেনে প্রথম দেখা ওর সাথে, তখন থেকে ও আত্মীয়ের মতো হ’য়ে গেছে। কিন্তু আমরা ওর ঠিকানা জানি না।’
তারপরে লখিন্দর নিজের পরিচয় দিয়েছিল, আর দীপ্তিকে ওর স্ত্রী বেহুলা হিসাবে পরিচয় দিয়েছিল।
লাইফগার্ডরা ওখান থেকে চলে গেল। দীপ্তি লখিন্দরকে জিজ্ঞেস ক’রলো, ’এর পরে কী হবে?’
লখিন্দর কেঁদে ব’লেছিল, ’জানিনা আমি! তুমি আমার বেহুলা হবে? বাঁচাবে আমাকে বিপত্নীক হওয়া থেকে?’
দীপ্তি কখনও ধারণাও ক’রতে পারেনি যে এই দুর্দান্ত শক্তিশালী খেলোয়াড়টির মন এত স্পর্শকাতর। লখিন্দরের ঠোঁটে চুমু খেলো দীপ্তি; তারপর পিছিয়ে এসে ব’ললো, ’এ আমরা কি ক’রছি, লখিন্দর? বেহুলা এইমাত্র চলে গেছে; কিংবা হয়তো এখনও যায়নি!’
লখিন্দর ব’ললো, ‘আর কোনো পাঁচিল নেই আমাদের দুজনের মধ্যে। বাড়ীতে একটা টেবিল-টেনিস বোর্ড লাগাবো; প্রতিদিন খেলবো দুজনে।’
লখিন্দর আর দীপ্তি ক্যান্ডিতে ফিরে এলো। শুরু হ’লো দীপ্তির নতুন জীবন। এখন থেকে সারা জীবন, ওকে বেঁচে থাকতে হবে শ্রীলঙ্কার নাগরিক হ’য়ে, লখিন্দরের প্রিয়তমা স্ত্রী বেহুলা হ’য়ে, যাতে লখিন্দরকে বিপত্নীক হ’তে না হয়।
লখিন্দরের অনুরোধে, দীপ্তি গেস্ট রুম থেকে চলে এলো ওর শোবার ঘরে। লখিন্দরের নির্দেশে, বেহুলা এতদিন যা জামাকাপড় প’রতো দীপ্তি তা প’রতে শুরু ক’রলো, যাতে প্রত্যেকে, এমনকি লখিন্দরও বিশ্বাস ক’রতে থাকে যে একই বেহুলা এখনও বাড়িতে রয়েছে।