উপলব্ধি
বৃষ্টির দেখা নেই আজ একমাস প্রায়। সূর্যদেবের রূদ্রমূর্তিতে আর ভাদ্র মাসের প্রচণ্ড গরমে নিস্তার নেই কারো। এসি স্যান্ত্রো টা করে অফিস যাওয়ার সময় রাস্তার দুধারের কৃষক গুলোর ভয়ানক অবস্থা দেখে খুব মন খারাপ হয় সুশান্তর, কিন্তু কী করবে বোঝে না ও। ও যা চাকরি করে তাতে সবার জন্য করতে গেলে চাকরি টা থাকবেনা, প্রাইভেট যব বলে কথা।
বাড়ি থেকে ওর অফিস পঞ্চাশ কিলোমিটার, রোজরোজ সাত সকালে উঠে ট্রেন ধরে ঝুলতে ঝুলতে যাওয়া ওর পক্ষে খুব চাপ হয়ে যায়, শুধু ওর বলা ভুল, এখন তো ওর সাথে আরো দুজনের চাপ জড়িয়ে আছে, বিপাশা আর মিমমিম। অত সকালে উঠে সুশান্তর জন্য খাবার রেডি করে, স্নানের জল বসিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে মেয়ে টাই উঠে যায়। এমনি ই সারারাত বেচারির ভাল ঘুম হয় না, মিমমিম এর অভ্যাস ভোর বেলা ঘুমোন,সারারাত মা কে জাগিয়ে রাখে। কষ্ট হয় খুব ওর জন্য, কিন্তু কী বা করবে ও,বাবাতো আর দুধ খাওয়াতে পারে না, মা কে জাগতেই হয়। বিপাশার জোড়াজুড়িতে সুশান্ত এখন পাশের ঘরে ঘুমোয়, বলে ওর নাকি ডিস্টার্ব হবে।
সেজন্যেই কষ্ট করেই লোন নিয়ে একটা গাড়ি কিনেছে, যাতে একটু দেরি করে অফিস যেতে পারে, আস্তে আস্তে লোনের টাকা শোধ করছে, তাই বুঝেশুনে খরচ ও করতে হচ্ছে। বাচ্চার খরচা ছাড়া বাকি খরচাপাতি অনেক দেখেশুনে করতে হচ্ছে এখন, বিপাশাও বোঝে, কোন ডিম্যান্ড নেই বউটার।
আজকে রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে, খুব দরকার ছাড়া কেউ বের হয়নি, ঠা ঠা করছে মাঠ প্রান্তর। গাড়ি চালাতে চালাতে হাল্কা মিউজিক শুনছে সুশান্ত, বরাবর ই তাই পছন্দ ওর, হঠাৎ দূর থেকে অশ্বত্থ গাছ টার নীচে জটলা দেখতে পায়।
তাকিয়ে দেখে যে গাছের ছায়ায় একজন মানুষ কে ঘিরে চাষি, মুটে আর শ্রমিক ধরণের বহু লোকজন। ওই সুন্দর দেখতে ভদ্রলোক টি যত্ন সহকারে ওদের কে ঠাণ্ডা জল, ফলের রস দিচ্ছে, আর তারা তৃপ্তি সহকারে তা পান করছে।
সুশান্তর খুব ভাল লাগল দেখে। যাক অন্তত কেউ তো ওদের জন্যে ভেবেছে, ও না পারুক। তবে ভদ্রলোক কে খুব পয়সাওয়ালা মনে হলনা দেখে, মন টা নিশ্চই খুব বড়। তবে রাজনৈতিক নেতা হলে আলাদা কথা, কিন্তু তেমন হলেতো আশেপাশে সাগরেদ আর মিডিয়ার থাকার কথা, তেমনতো কিছু চোখে পড়ল না। নিঃস্বার্থ ভাবে সত্যিই যদি করে তবে উনি ভাল মানুষ।
অদ্ভুত ভাবে আজকে আর একটা ভাল জিনিস হল। সুশান্তর অফিসের পিন্টু দা, চা দেয় ওদের। ওর মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা যোগার হচ্ছে না,অনেক দিন ধরে। আজকে এক সহ্রিদয় ব্যাক্তি ওদের অফিসে এসেছিলেন। পিন্টুদার কথা শুনে খুব অবাক হলেন। বললেন কত টাকা দরকার উনি দেবেন। ওনার মেয়ের বিয়ে পয়সার জন্য হচ্ছিলনা, তাই মেয়ে সুইসাইড করে।এখন ওনার টাকার অভাব নেই, বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন পিন্টুদার মেয়ে কে!
মন টা খুব ভাল আজকে ওর, বাড়িতে ফিরে মেয়ের সাথে অনেকটা সময় কাঁটাল, যদিও মেয়ে এখনো বাবা কী বোঝেনি, তবে আজকে খুব হেসেছে ফোকলা দাঁতে, মন ভরে গেছে সুশান্তর। আজ সারারাত বিপাশাকে উঠতে দেয়নি ও, নিজে বারেবারে উঠে দুধ বানিয়ে খাইয়েছে, একটা অদ্ভূত প্রশান্তি এসছে ওর মনে।
মেয়েও বাবার সান্নিধ্য অনুভব করতে শিখেছে।
ঘুমটা বেশ গভীর হল আজ , ভোরের দিকে হলেও, যত টা ঘুমিয়েছে আরামের ঘুম ঘুমিয়েছে, কোন বিক্ষিপ্ত চিন্তা মাথায় আসেনি ওর। মন টা ফুরফুরে আজ বেশ। অফিস যাওয়ার সময় আবার ওই ভদ্রলোককে দেখল কড়া রোদে দাঁড়িয়ে মাঠে কাজ করা লোকজনদের গাছের তলায় বসিয়ে ঠান্ডা জল আর সরবত দিচ্ছেন, মুখে আলতো হাসি।
অফিসে পৌঁছে অনেক কাজের মধ্যে ডুবে গেল, চাপও ছিল খুব, কারো সঙ্গে কথা বলার বিশেষ সময় হয়নি।অফিস থেকে বেরিয়ে লাগোয়া ঝুপড়িতে পিন্টু দার চায়ের দোকান। আজকেও দেখে পিন্টু দা মনমরা হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
'কি গো পিন্টু দা , সব ঠিক আছেতো এবার?আর কোন সমস্যা নেইতো?'
একঝলক তাকিয়ে নিয়ে পিন্টু দা বলল,'যদি সব ঠিক থাকতো তাহলেতো বেঁচে যেতাম গো, মেয়েটার বিয়া যদ্দিন না দিতি পারসি তদ্দিন শান্তি নাই, শান্তি নাই! '
'সেকিগো? সব তো ঠিক ই হয়ে গেল, কেন ভদ্রলোক তোমার সাথে যোগাযোগ করেননি?'
'তুমি কী বলতেস গো দাদা আমার কিসসু মাথায় ঢুকতিসেনা, যাও, ওপরে গিয়ে ঠান্ডা ঘরে বস, এই গরমে এখানে দাঁড়ায়ে থেক না দাদা।'
আহারে, বেঁচারা পিন্টু দা চিন্তায় চিন্তায় পাগলই হয়ে গেছে, বিয়ের টাকার ব্যাবস্থা হয়ে গেল সেটাও মাথা থেকে আউট হয়ে গেছে! খারাপই লাগছে!
ওপরে গিয়ে দেখে অনির্বাণ চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
'কীরে, সকাল সকাল চা নিয়ে বসে পড়েছিস?একাউন্টস রিপোর্ট টা বানানো কম্পলিট?'
'ধুর শালা ছাড়তো, তুইও দেখি বিগ বসের মত ঘাড়ের ওপর নজরদারি চালাচ্ছিস, দাঁড়া, সবেতো এলাম, একটু জিড়িয়ে নি!'
'কী সুখরে তোর, এদিকে কত লোকের কত কষ্ট জানিস?'
'কেন আবার কার কষ্টে তুই সকাল সকাল মন খারাপ করে অফিসে ঢুকলি? বাড়িতে সব ঠিক ঠাক তো?'
'ওরা ঠিক ই আছে। পিন্টু দার কথাই ভাব, কাল এত কিছু হয়ে যাওয়ার পর ও লোকটার মাথায় কিছুই ঢোকেনি, ধরে বসে রেয়েছে যে এখনো মেয়ের বিয়ের যোগার হয়নি! মাথাটাই গেছে!'
'কাল কি হয়ে যাওয়ার পর বলছিস? আমিতো সেটাই বুঝলাম না!'
'তোরা অদ্ভুত কিন্তু! কাল ওই ভদ্রলোক এসে বললেন না যে পিন্টুদার মেয়ের বিয়ের জন্য সব খরচ দেবেন উনি!'
'কোন ভদ্রলোক বল তো? আমিতো সারাদিন অফিসেই ছিলাম,সেরকমতো কিছু দেখিনি বা জানি না!'
'কাল যে দুপুরের দিকে একজন এলেন, পিন্টুদার কথা শুনে বললেন যে ওনার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেননি টাকার অভাবে, এখন তার আর্থিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে তাই পিন্টুদার মেয়ের বিয়ের সমস্ত খরচ উনি দেবেন। ভুলে গেলি?'
'না রে আমি তেমন কিছু শুনিনি, বুঝতে পারছিনা কিছু।'
'এই বিকাশ দা, এদিকে শোন একটু!'
'বল বল কী বলবি জলদি, হাঁড়িমুখটা এখুনি চলে এল বলে!'
'কাল তুমি সারাদিন অফিসে ছিলে তো?'
'হ্যাঁ, সারাদিন ই কাল অফিসেই ছিলাম, কোথাও বেরোই নি এই গরমে।'
'কাল যে একজন এসছিল, পিন্টুদার মেয়ের বিয়ের সমস্ত খরচা সে দেবে বলল, তুমি তো সামনেই ছিলে তখন, তাই না? আর দেখ পিন্টুদা সব ভুলে গেছে, মাথাটাই গেছে। কিছুই মনে করতে পারল না বেচারা।'
'কী যে বলছিস আমি বুঝতে পারছি না,কাল সেরকম হেভি কোন ক্লায়েন্ট অফিসে আসেই তো নি,সারাদিন কেমন সুখা গেল দেখলি না? কার কথা বলছিস কে জানে!'
এবার সুশান্তর অস্বস্তি হতে আরম্ভ হল, দুচারজন আরো অন্য কলিগ দের ডেকে জিজ্ঞেস করলে তারাও এক ই কথা বলল। তবে ও কী দেখল আর শুনল!
সারাদিন কাজের ফাঁকে বারেবারে শুধু এই চিন্তা ঘুরঘুর করল। বাড়ি ফিরে দেখল বিপাশার ও শরীরটা ভাল নেই, মাথা ধরেছে।
'আসলে কী বলত কাল সারারাত মিমমিম এত্ত জ্বালিয়েছে যে একটুও ঘুমোতে পারিনি,ভোরেও না, তাই মাথাটা খুব ব্যথা করছেগো!'
'কিন্তু কাল তো তুমি ঘুমোলে, আমি আর আমার মেয়ে কাল কত খেললাম, দুধ বানিয়ে খাওয়ালাম! তোমার অন্য কারনে মাথা ব্যাথা হয়েছে, গ্যাস ট্যাসের জন্য, ওষুধ খেয়েছতো?'
'গ্যাস হয়না তো আমার! তুমি যে কী বল না, তুমি আবার কখন দুধ বানিয়ে খাওয়ালে, ও কী কৌটোর দুধ খায় নাকি? তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছ। যাও হাতমুখ ধুয়ে নাও,চা দিই।'
মাথা দপদপ করছে সুশান্তর, ধপ করে সোফায় বসে পড়ল মাথায় হাত দিয়ে।
কীসব হচ্ছে ওর সঙ্গে! সবাই কি প্ল্যান করে ওকে মিথ্যে কথাগুলো বলছে? কেন এমন করবে,কীসের শত্রুতা ওর সাথে! বুঝে পাচ্ছেনা কিছু ও। সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে! বিপাশাকে চা খেতে খেতে আবার জিজ্ঞেস করল যে ও কী মজা করছে ওর সাথে! কিন্তু বিপাশা মিমমিমের মাথার দিব্যি দিয়ে বলল যে ও সত্যিই বলছে।
সারারাত বিক্ষিপ্ত ঘুম হল সুশান্তর, বারেবারে শুধু ওই অচেনা লোকটার কথা মনে পড়ছে,কে সেই লোক টা! যে লোক টা পিন্টুদার মেয়ের বিয়ে দেবে বলল! ওর স্পষ্ট মনে আছে,বাকি কেউ দেখেনি এ কেমন করে সম্ভব!আর মেয়েকে খাওয়ানোর ঘটনা টা।
আজকে অফিস যেতে একটু দেরি ই হয়ে গেল, ঘুম টা ঠিকমত হয়নি তাই উঠতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। শরীর টাও কেমন একটা লাগছে, ড্রাইভ করতে এনার্জি পাচ্ছে না। হঠাৎ ব্রেক চাপল সুশান্ত,একটা সিগারেট খেয়ে তারপর আবার স্টার্ট করবে। ও নেমে পড়ল,পাশেই ওই বড় গাছ টা,যেখানে কদিন ধরে সেই সুন্দর দেখতে ভদ্রলোক টি চাষিদের ঠান্ডা জল আর সরবত খেতে দেন। আজ অবশ্য নেই।
সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া ছাড়তেই দুজন লোক এসে বসল, খেটে খাওয়া লোকই। উফ আফ করে জিড়িয়ে নিচ্ছে,আর গামছা দিয়ে ঘাম মুছছে।সুশান্ত বলেই ফেলল,' আজ ওই ভদ্রলোক আসেননি? তোমাদের জল খাওয়াতে?'
লোকদুটো অবাক দৃষ্টি তে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল ওর দিকে। একজন বলল,' কুন লোকির কতা বলতিসেন বাবু?'
'এই যে রোজ যে লোকটি তোমাদের জল সরবত দেয় এই সময়,আমি রোজ অফিস যাওয়ার সময় দেখি!'
দুজনে হাসতে থাকল ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে। সুশান্তর ভাল ঠেকল না।
'আমাগো কতা কেউ ভাবে না বাবু, কেউ না,ভাদ্দরমাসের গরমে মাঠে কাজ করি, খাইটে খাই, শরীর খারাপ আমাগো হইলেও কেউ খুঁজিবার নাই, আমাগো জল দিবে কার অত ঠেকা লাগিসে!'
'তবে তোমরা জান না,এখানে আমি দেখি একজন মানুষ কে,তোমাদের মত কত লোক ঘিরে থাকে ওনাকে, উনি যত্ন কিরে সবাইকে জল দেন। আমি কি ভুল দেখি?'
'আপনি অন্য কুনোখানে দেকিসেন বাবু, এইখানে এমন কেউ আসেনাই, আমরা বিশ বসর এই মাঠে কাজ করতাসি।'
সিগারেট ফেলে দিল সুশান্ত। গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিয়ে সোজা চলে এল অফিস। কিছুক্ষন থাকার পর দেখল ওর খুব অস্বস্তি হচ্ছে,একদম ভাল লাগছেনা,কী হচ্ছে ওর! পাগল হয়ে গেল নাকি ও!চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকল চোখ বুঁজে।
কিছুক্ষন পর ঘারে হাত পড়ল কারো,চোখ খুলে দেখে বিকাশ দা।
'কি হয়েছে রে তোর,শরীর ঠিক আছেতো?'
'আমি কি পাগল হয়ে গেলাম বিকাশ দা?'
'সেকিরে,এমন কেন বলছিস?'
গত কদিন ধরে যা যা হয়েছে সব খুলে বলল সুশান্ত।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল বিকাশ দা সব শুনে।
'শোন,তুই ইমিডিয়েট কোন সাইক্রিয়াটিস্ট কাম কাউন্সিলর এর সঙ্গে মিট কর,মনে হচ্ছে তোর খুব ওয়ার্ক প্রেসার হচ্ছে,তার ওপর সদ্দ বাবা হয়েছিস। আমরা তো কেউ ডাক্তার নই,তোর সমস্ত প্রব্লেম খুলে বল, উনি তোকে হেল্প করতে পারবেন।'
'তাহলে বলছ আমি সত্যি পাগল?'
'ধুর বোকা, তোরা শিক্ষিত হয়ে এমন কথা বলছিস? তোর পেটের অসুখ হলে ডাক্তারবাবুর কাছে যাস না? আজকাল এটা কোন সমস্যাই না,উল্টে অনেক রিলিফ পাবি, কত লোকে কাউন্সিলিং করে ভাল আছে!আমি যাব তোর সঙ্গে?'
'থ্যাংকস দাদা, তোমার যেতে হবে না,আমি যাব ডক্টর এর কাছে,আজ ই। আমি আর চেপে রাখতে পারছি না।'
'হুম! ইটস নট আ ভেরি বিগ প্রবলেম মিঃ ব্যানার্জি। ইনফ্যাক্ট আমাদের অনেকের সঙ্গেই এই জিনিস হতে পারে, আপনি,আমি,আরো অনেকে।
তবে যার এই জিনিস হবে তাকে অবশ্যই ভাল মনের মানুষ হতে হবে,হি অর শি শুড বি আ ভেরি কাইন্ড হার্টেড হিউম্যান বিইং।
হাঁ করে তাকিয়ে আছে সুশান্ত,ওর উল্টো দিকে বসে ডক্টর আর.এন.বসু,কনসালটেন্ট সাইকোথেরাপিস্ট কাম কাউন্সিলর। শিলিগুড়ির নামকরা ডক্টরস দের একদম ওপরের দিকে যার নাম।
'কিছু বুঝলেন না তো? বোঝার কথাও নয়।ওকে লেট মি এক্সপ্লেইন ইউ!
আমাদের দুটো সত্ত্বা থাকে,একটা আমরা বাইরের জগতের সঙ্গে ডিল করি, ধরুন মুখোশ। আর একটা আমাদের ইনার ওয়ার্ল্ড, যেটা আপনার আসল চেহারা। বাইরের লোকেরা কিন্তু আপনার ভেতরের চেহারাটা দেখতে পায়না। আর আপনার ভেতরের চেহারাটা বাইরে বেরোনর সময় একটা মুখোশ পড়ে নেয়।
এই যে আপনি মানুষ গুলোকে দেখছেন, তাদের বাস্তবে কোন এক্সিসটেন্স ই নেই। আসলে আপনি আপনার সাবকনসাস মাইন্ডে ওদের জন্য খুব চিন্তা করেন। কিন্তু বাস্তবে সেগুলো করে উঠতে পারেন না, সে আর্থিক কারনেই হোক বা পরিস্থিতির কারনে।
যেমন ধরুণ আপনার স্ত্রীর কথাই বলি, আপনি কষ্ট পান ওনাকে সারারাত না ঘুমিয়ে জেগে থাকতে দেখে, কিন্তু আপনি ওর হয়ে কিছু করতে পারেন না, তাই আপনার বিবেক আপনাকে ওই কাল্পনিক আপনাকে তৈরি করেছিল যে কিনা আপনার স্ত্রীর হয়ে ওর কাজ গুলো করে দিচ্ছে। বা আপনার অফিসের সেই চা ওয়ালা,তার জন্য আপনি চিন্তা করেন, ভাবেন যদি ওর মেয়ের বিয়েটা আপনি দিতে পারতেন!
আর তাই কাল্পনিক সে লোকটির চরিত্র ক্রিয়েট করেছেন। বা ধরুন রাস্তার পাশের সেই ভদ্রলোক টি যাকে আপনি জল দিতে দেখেন,আসলে ওই লোকটির বাস্তবে কোন অস্তিত্ব ই নেই,ওটা আপনি নিজেকেই দেখেন,প্রতিদিন রোদে কাজ করা লোকগুলোকে দেখে কষ্ট হয় আপনার খুব তাই না মিঃ ব্যানার্জি?'
'হ্যাঁ তাতো সত্যিই হয়!'
"'আপনার মত লোক কটা হয় বলুন তো? বড্ড ভাল মানুষ আপনি। সবার জন্য ভাবেন। অন্তর টা আপনার শিশুর মত কোমল, এই সমাজের খারাপ দিক গুলো অর্থাৎ হিংসা,রাগ,প্রতিশোধ, ইগো এসব আপনাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আপনিতো ভাগ্যবান! আপনি মন থেকে সব্বার ভাল চান।
'এভাবেই কি চলতে থাকবে? সবাই তো আমাকে পাগল ভাববে?'
'না তা কেন? উপায় আছে তো! কিছু কাজ আপনাকে করতে হবে, যাতে আপনি এগুলোর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন! '
'যেমন? কি করতে হবে আমায়?'
' আজ রাতে স্ত্রীর সাথে জেগে কাটান, বাচ্চাকে খাওয়াতে না পারলেন, ওকে সঙ্গ দিন, ওর পাশে থাকুন। সাপোর্ট করুন! সপ্তাহে একদিন অফিস যাওয়ার সময় রাস্তায় দাঁড়ান, বা ছুটির দিন একটা জলের জার নিয়ে কৃষক দের কাছে চলে যান এটুকুতো করাই যায়, মনের শান্তি হবে তো!
আর পিন্টু দার মত কত লোক আছে, কারো ছেলেমেয়ে পড়াশুনো করতে পারে না অভাবে, চিকিৎসা হচ্ছে না, এরকম একজন দুজনের পাশে দাঁড়ান, এইটুকু তো আপনি করতে পারেন! আপনার পাড়ায় দেখুন খোঁজ করে, নিশ্চই আছে। এদের জন্য কিছু করাটাই কিন্তু আপনার মেডিসিন মিঃ ব্যানার্জি, ট্যাবলেট নয়!
আপনার ভেতরের মানুষ টাকে বাইরে আনুন,দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। '
সুশান্ত আর এখন নিজেকে বা অন্য কোন চরিত্রকে দেখে না ভুল করে, নিজেই সেই চরিত্রটি হয়ে যায়, সুযোগ পেলেই। খুব ভাল আছে ও এখন।।