মনির ছোট সংসার ভালোই চলছিল । মনি, মনির স্বামী মিতুল ও তাদের ছোট মেয়ে মিতি। সংগে শ্বশুর, শাশুড়ি । মধ্যেবিত্ত পরিবার । বেশ হাসি, কান্না, ঝগড়া আবার ভালোবাসায় চলে যাচ্ছিল। কিন্তু মিতুল হঠাৎ হার্টএটাক করে মারা যায় । পরিবারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি । সবাই খুব হতাশ হয়ে পড়েছিল । কিন্তু মিতুল এর অফিস থেকে জানানো হয় যেহেতু তাঁর স্ত্রী শিক্ষিত সেহেতু তাঁর স্বামীর চাকরি টা মনি করতে পারবে। মনি একটু স্বস্তি পেল। একমাত্র মেয়ে, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি কে নিয়ে পথে বসতে হবে না । তাই সে কিছুটা নিশ্চিন্ত । এভাবে একবছর কেটে গেল । তার মেয়ে এখন পাঁচ বছরে পা দিল । কিন্তু মনি ইদানিং নিজেকে খুব শূন্য অনুভব করে । সে রাতে ঘুমাতে পারে না । (প্রেম তো আর বলে আসে না এটা হঠাৎ চলে আসে) মনি তার এক অফিস কলিগের সাথে প্রেম হয়ে যায় । কেউ কাউকে একদিন না দেখে থাকতে পারে না । তাদের মনের অজান্তেই শারীরিক ভাবে অনেক এগিয়ে যায় দুজনে। মনি মনে মনে চিন্তা করে সে যদি এখন তার অফিস কলিগ কে বিয়ে করে তাহলে তার বৃদ্ধ শ্বশুর, শ্বাশুড়ির, কে দেখাশোনা করবে। তার ছোট্ট মেয়েটি কে, সে মানে তমাল কি নিজের মেয়ের মতো মেনে নিবে? সে কিছুই ভাবতে পারে না । মনি চিন্তা করলো সে এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসবে । সে তমালকে ডেকে সব বুঝিয়ে বলল । তমাল সব শুনছিল কিছু বলল না । মনি জানে তমাল অত্যন্ত অভিমানী ছেলে । তারপর থেকে তমাল মনি কে দেখলেও না দেখার ভান করতো । কথা বলতো না । কিন্তু মনি ভিতরে ভিতরে খুব কষ্ট পাচ্ছিল। হঠাৎ মনি শুনতে পারল তমালের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । সে ইচ্ছে করলে তখনও বিয়ে টা আটকাতে পারত । কিন্তু মনি তা করেনি কারণ তার পিছুটান আছে যা সে কিছুতেই নষ্ট হতে দেবে না। আজ তমালের বাসর রাত। মনি কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে । মনি কে তার শ্বশুর জিজ্ঞেস করলো মা তোমার চোখে কি হয়েছে ? মনি বললো বাবা আমার চোখে এলার্জি হয়েছে তাই এমন ফোলা লাগছে । মনি জানে আজ রাতে সে ঘুমাতে পারবে না । সমস্ত কামনা তার আজ জেগে উঠেছে তাই সে দোকানে গেল এবং কিছু ঘুমের ঔষধ কিনে নিয়ে আসলো । রাতে দরজা বন্ধ করে খেয়ে নিল। ঘুমের মধ্যে মনি স্বপ্ন দেখলো তমালের সাথে সে বাসর ঘরে । অফিস বন্ধ ছিল তাই সে অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠলো । যথারীতি তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিল । কিন্তু মনের ভিতর যে গুমোট কষ্ট সেটা সারাজীবন তাকে বয়ে বেড়াতে হবে । মনির কাছে সব শূন্য মনে হতো । কোন কিছুই তাকে স্পর্শ করতো না। সে এখন শুধু তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে । সে বড় হলে ডাক্তার হবে । মনির এখন রাতে ঘুমের ঔষধ ছাড়া ঘুমাতে পারে না । তার ঘুমের ঔষধের ডোজ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে । (সমাপ্তি)। চলবে ।