• 28 May 2020

    ফেকুবাবুর কবিতা গুচ্ছ

    হরেক রকম পদ্য

    0 181

    ।।প্রজাতন্ত্র দিবসে একটি খোলা চিঠি ।।

    কলমে ঃ আশিস বসু

    “ শর্ৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে

    তোমার গফুর, মহেশ এখন কোথায় তারা আছে

    তুমি জাননা, কেমন কোরে কোথায় আছে তোমার

    আমিনা “ ?

    পাঠিয়ে ছিলেন ভূ-পেন বাবু বহু বছর আগে,

    এদের কথা নতুন করে কারও মনে জাগে ?

    আজকের এই প্রজাতন্ত্রে দিচ্ছি নতুন খবর

    মানব জাতির বিবর্তনে সম্পর্ক আজ কবর ।

    ছিলাম মোরা দুই জনাতে স্বাধীনতার আগে

    ধর্ম, লোভের তীব্র স্রোতের ভাঙন জোড়া লাগে ?

    একটু বাতাস বয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ পরে, সেদিন গুলো

    স্মৃতি থেকে গেছই আজ সরে । তারপর যা ঘটছে শুনি,

    খবর আর ফেস বুকে , দ্বেষ হিংসা , জাতি দাঙ্গা

    পদ্মা গঙ্গা জুড়ে । ভাবছ তুমি তোমার মহেশ এখনও

    আছে সাথে ? আজও মহেশ বিক্রি হয় চোরাপথে রাতে ।

    আজ আমিনা কোথায় আছে আমি কি জানি ছাই ?

    হাত বদলে হয়ত আছে আবুধাবি বা দুবাই

    শোষণের তীব্র স্রোতে খাচ্ছে সে আজ খাবি

    তারই মাঝে হয়ত পেল বেঁচে থাকার চাবি ।

    তোমার গফুর বেঁচে আছে গ্রাম ও গ্রামান্তরে

    জীবন আজও বাঁধা তার রাজনীতি অন্দরে ।।

    ধর্ম নিয়ে খেলছে যারা বিভেদের রাজনীতি

    প্রজাতন্ত্রে করবে নাকি সেলাম বা প্রণতি ?

    --------------------------

    ।।হর্ষবর্ধনের দেশ সেবা ।।

    হর্ষবর্ধন বেজায় রসিক, খোলা মনের ব্যাক্তি

    গোবরা তাহার যোগ্য অনুজ,মনে তাহার ভক্তি

    বিনি তাঁদের মামাতো বোন,এটাই তাদের শক্তি ।

    এক বাড়িতে, এক হাঁড়িতে সদাই থাকেন মেতে

    কখন আবার সবাই মিলে উৎসাহে যান তেতে ।

    সবাই মিলে যুক্তি করেন দেশের সেবার জন্য

    একটা কিছু কোরতে পারলে হবে জীবন ধন্য ।

    হর্ষ বাবু বলেন ডেকে -- শোন গোবরা, বিনি

    পথের ধারে পড়ে মোদের আড়াই কাঠা জমি ।

    মোদের এই দেশ সেবাতে বলবে সবাই ধন্য

    এই জমিতেই গড়ব কিছু গরীব গুলোর জন্য ।

    বিনি বলে বানাও মন্দির জীবন হোক ধন্য

    সেখানেই রোজ দুবেলা দেব দেবতার পরমান্ন ।

    এমন করেই দেশের জন্য মানব সেবা হোক

    গরীব যেন খেয়ে বাঁচে পেয়ে দেবতার ভোগ ।

    বাগড়া দিয়ে গোবরা বলে মন্দিরে ভোগ দিলে

    হিন্দুরা সব আসবে খেতে অন্যরা যাবে চলে ।

    যখন মোরা ঠিক করেছি করব মানুষ সেবা

    সব ধর্মের সুযোগ হবে এটাই হোক ভাবা ।

    ভাবতে ভাবতে সকাল হতে নেমে আসে নিশা

    হটাৎ হেঁকে হর্ষ বলেন পেয়ে গেলাম দিশা ।

    ওই জমিতেই গড়ব মোরা সুদৃশ্য পায়খানা

    সব ধর্ম মিলবে সেথায় সবাই দেবে হানা ।

    (স্বর্গত স্রধেয় শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী দ্বারা অনুপ্রাণিত )

    --------------------------

    ।। আমি এক ফেসবুক কবি ।।

    আবসর শেষে বড়ছেলে দিল স্মার্ট ফোন মোর হাতে,

    একি হেরিলাম মনোহর যাম স্মরণীয় এই প্রাতে ।

    ছুটিলাম আমি ফোন খানি নিয়ে ছোট্ট নাতির পাছে

    হেঁসে বলে সে ফেঁসে গেছ দাদু আমার বরাত কাছে ।

    তোমাকে শেখাতে লাগবে প্রণামী আমার পকেট ভরে

    ডেলি রেটে দেবে না প্যাকেজে শিখবে এটা নাও স্থির করে ।

    শিক্ষা আমার শুরু হোল ভাই দর কশাকষি পরে

    স্ক্রিন টাচ করে ফোন খুলতেই ঘাম গেল মোর ঝরে ।

    দাদু তুমিতো এতদিন ধরে কবিতা ভরালে খাতায়

    এবার থেকে লিখবে কবিতা ফেস বুকেরই পাতায় ।

    শুরু হোল মোর সাহিত্য চর্চা ফেস বুকেরই ফ্লোরে

    সদস্য হনু কত যে গ্রুপরেই কাজ গেল মোর বেড়ে ।

    প্রতিযোগিতায় নাম দিতে দিতে হইনু বড়ই ক্লান্ত

    ভিন্ন গ্রুপের ভিন্ন সনদ মনকে করিল শান্ত ।

    প্রতি রাতে লিখি একটা কবিতা তিনশ গ্রুপের জন্য

    সকালে ছাড়ি সবার গ্রুপে করে সবে ধন্য ধন্য ।

    কাগজে লিখিয়া এতদিন ধরে চিনিত না মোরে কেউ

    ফেস বুক পেজে তাই আমি আজ তুলিয়াছি কত ঢেউ ।

    আমার অনেক বোন বান্ধবী কথা বলে রাতদিন

    লেখাপড়া নিয়ে সদাই ব্যস্ত কেটে যায় সাত দিন ।

    কবি আমি আজ ফেস বুক মাঝে অনেক নাম আমার

    সাহিত্য দিয়ে জীবনের শেষে গড়েছি নতুন খামার ।।

    ------------------------------

    ।।আজব কল ।।

    “ কল করেছেন আজব রকম

    চণ্ডীদাসের খুড়ো “

    সুকুমার রায় সবাই পড়েন

    বাচ্চা থেকে বুড়ো ।"

    একটু শুনী কলের কথা

    কেমন আজব কল ?

    বুড়ো হয়েও ছুটবে তুমি

    সামনে পেলে ফল ।

    আধুনিক এই জীবনটাতে

    ছুটছে সবাই গতিতে

    তাল হারিয়ে অনেকে আবার

    পড়ছে শক্ত মাটিতে ।

    বাবুল বোসের চাকরী আবার

    কর্পোরেট যে কোম্পানি তার

    চোখের সামনে সদাই ভাসে

    কম্পিউটারের মনিটর ।

    দেখতে দেখতে চোখটি তাহার

    হারায় দৃষ্টিশক্তি যে তার

    পঁয়তাল্লিশে আউট হয়ে

    জীবন হল প্রায় জেরবার ।

    জীবন বাবুর চাকরী ছিল

    বড়বাজারের গদিতে

    বছর ষাটে করে রিটায়ার

    পড়লেন তিনি নদীতে ।

    অমিত বাবু ছিলেন আবার

    সরকারেই লোক

    কাজের সময় পার্টি ছিল

    তাই ছিল না ক্ষোভ ।

    তাইতো তিনি রিটায়ারের

    বছর বিশেক পরে

    আজও ছোটেন দেশ বিদেশে

    আসেন তিনি ঘুরে ।

    জান কি ভাই রহস্য এর

    আছে কারো জানা ?

    পেনশন তাঁর তিরিশ হাজার

    খুড়োর কলের খানা ।।

    ------------------

    ।। পরিত্যক্ত মাতা ।।

    ভাই বোনেদের বলল ডেকে পালের গোদা হুলো

    দূরে দূরে থেকে সবার জীবন কেটে গেল

    জীবনের এই শেষ কটা দিন থাকতে পারি যদি

    এসো সবাই আনন্দতে কাটাই জীবন-নদী ।

    সারা জীবন কষ্ট কোরে বানিয়েছ ফ্লাট, বাড়ি

    একদিন না হয় সেই বাড়ীতেই করি হুড়োহুড়ি

    আমার বাড়ি তোমার বাড়ি সবার বাড়ি ঘুরি

    বছর ধরে এক এক জনের অন্ন ধংস করি ।

    ছোট বেলায় যেতাম মোরা পরীক্ষারই শেষে

    অনেকটা দিন কাটিয়ে দিতাম খেলে এবং হেসে

    বছর কয়েক এই ভাবেই তো গেছে মোদের কেটে

    তারপর তো জীবন যুদ্ধে মরলে সবাই খেটে ।

    হুলোর মামা বলল শুনে দিয়োনা মোরে ফাঁকি

    আমরা আছি শেষ বয়সে বেড়াতে চলো টাকি

    আছে সেথায় তোমার আমার বসত ভিটেখানা

    দেখাতে পারি যদি সেথা যাও আমার হদিস জানা ।

    সবাই মিলে রওনা দিল সঙ্গে মামা মামী

    দেখল সবাই পড়ে আছে পরিত্যক্ত জমি

    জঙ্গল আর আগাছায় ভরা ভাগ্যের পরিহাসে

    নাতি-পুতিদের দেখে সে আজ করুন চোখে হাসে ।

    বলল ভূমি তোমরা এলে ধন্য যে আজ আমি

    আজ তোমাদের দেখতে পেল নিঃসঙ্গ জমি

    ইছামতীর নদীর ধারে পড়ে আছি একা

    কতকাল পর তোমারা এলে গড়লে মিলন রেখা ।

    পারতো যদি থাকতে মাতা পুত্র কন্যা সাথে

    বাজত বাঁশি মধুর সুরে জোৎস্না ভরা রাতে

    ফলে ফুলে ভরিয়ে দিত ইছামতীর এই বাঁকে

    কিন্ত হেথা একাকিনী ক্রন্দনে মুখ ঢাকে ।।

    -------------------

    ।। শিশুর আবেদন ।।

    দেখেছ কি ফেসবুকে ধ্বংসের কারবার

    আয়লান শুয়ে আছে সমুদ্রের পাড় ।

    দেখনি কি ভিডিওটা তুমি ফেসবুুকে ?

    শিশু বুকে শিশু ছোটে কান্নাভেজা মুখে ।

    বিশ্বের সেরা ছবি তুলেছ তো তুমি

    ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদে সুদানের ভূমি ।

    মৃতপ্রায় শিশু পড়ে জরাজীর্ণ বুকে

    পিছনে শকুন বসে লালসার চোখে ।

    স্বার্থের বেড়াজালে কাশ্মীর স্তব্ধ

    বোমা গুলি ধোঁয়া আর বুটের শব্দ ।

    কবে যুদ্ধ হবে শেষ, পাবে ফিরে প্রাণ

    ছোট শিশু স্কুলে যাবে পেয়ে পরিত্রাণ ।



    Asish Basu


Your Rating
blank-star-rating
Sorry ! No Reviews found!