।।প্রজাতন্ত্র দিবসে একটি খোলা চিঠি ।।
কলমে ঃ আশিস বসু
“ শর্ৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে
তোমার গফুর, মহেশ এখন কোথায় তারা আছে
তুমি জাননা, কেমন কোরে কোথায় আছে তোমার
আমিনা “ ?
পাঠিয়ে ছিলেন ভূ-পেন বাবু বহু বছর আগে,
এদের কথা নতুন করে কারও মনে জাগে ?
আজকের এই প্রজাতন্ত্রে দিচ্ছি নতুন খবর
মানব জাতির বিবর্তনে সম্পর্ক আজ কবর ।
ছিলাম মোরা দুই জনাতে স্বাধীনতার আগে
ধর্ম, লোভের তীব্র স্রোতের ভাঙন জোড়া লাগে ?
একটু বাতাস বয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ পরে, সেদিন গুলো
স্মৃতি থেকে গেছই আজ সরে । তারপর যা ঘটছে শুনি,
খবর আর ফেস বুকে , দ্বেষ হিংসা , জাতি দাঙ্গা
পদ্মা গঙ্গা জুড়ে । ভাবছ তুমি তোমার মহেশ এখনও
আছে সাথে ? আজও মহেশ বিক্রি হয় চোরাপথে রাতে ।
আজ আমিনা কোথায় আছে আমি কি জানি ছাই ?
হাত বদলে হয়ত আছে আবুধাবি বা দুবাই
শোষণের তীব্র স্রোতে খাচ্ছে সে আজ খাবি
তারই মাঝে হয়ত পেল বেঁচে থাকার চাবি ।
তোমার গফুর বেঁচে আছে গ্রাম ও গ্রামান্তরে
জীবন আজও বাঁধা তার রাজনীতি অন্দরে ।।
ধর্ম নিয়ে খেলছে যারা বিভেদের রাজনীতি
প্রজাতন্ত্রে করবে নাকি সেলাম বা প্রণতি ?
--------------------------
।।হর্ষবর্ধনের দেশ সেবা ।।
হর্ষবর্ধন বেজায় রসিক, খোলা মনের ব্যাক্তি
গোবরা তাহার যোগ্য অনুজ,মনে তাহার ভক্তি
বিনি তাঁদের মামাতো বোন,এটাই তাদের শক্তি ।
এক বাড়িতে, এক হাঁড়িতে সদাই থাকেন মেতে
কখন আবার সবাই মিলে উৎসাহে যান তেতে ।
সবাই মিলে যুক্তি করেন দেশের সেবার জন্য
একটা কিছু কোরতে পারলে হবে জীবন ধন্য ।
হর্ষ বাবু বলেন ডেকে -- শোন গোবরা, বিনি
পথের ধারে পড়ে মোদের আড়াই কাঠা জমি ।
মোদের এই দেশ সেবাতে বলবে সবাই ধন্য
এই জমিতেই গড়ব কিছু গরীব গুলোর জন্য ।
বিনি বলে বানাও মন্দির জীবন হোক ধন্য
সেখানেই রোজ দুবেলা দেব দেবতার পরমান্ন ।
এমন করেই দেশের জন্য মানব সেবা হোক
গরীব যেন খেয়ে বাঁচে পেয়ে দেবতার ভোগ ।
বাগড়া দিয়ে গোবরা বলে মন্দিরে ভোগ দিলে
হিন্দুরা সব আসবে খেতে অন্যরা যাবে চলে ।
যখন মোরা ঠিক করেছি করব মানুষ সেবা
সব ধর্মের সুযোগ হবে এটাই হোক ভাবা ।
ভাবতে ভাবতে সকাল হতে নেমে আসে নিশা
হটাৎ হেঁকে হর্ষ বলেন পেয়ে গেলাম দিশা ।
ওই জমিতেই গড়ব মোরা সুদৃশ্য পায়খানা
সব ধর্ম মিলবে সেথায় সবাই দেবে হানা ।
(স্বর্গত স্রধেয় শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী দ্বারা অনুপ্রাণিত )
--------------------------
।। আমি এক ফেসবুক কবি ।।
আবসর শেষে বড়ছেলে দিল স্মার্ট ফোন মোর হাতে,
একি হেরিলাম মনোহর যাম স্মরণীয় এই প্রাতে ।
ছুটিলাম আমি ফোন খানি নিয়ে ছোট্ট নাতির পাছে
হেঁসে বলে সে ফেঁসে গেছ দাদু আমার বরাত কাছে ।
তোমাকে শেখাতে লাগবে প্রণামী আমার পকেট ভরে
ডেলি রেটে দেবে না প্যাকেজে শিখবে এটা নাও স্থির করে ।
শিক্ষা আমার শুরু হোল ভাই দর কশাকষি পরে
স্ক্রিন টাচ করে ফোন খুলতেই ঘাম গেল মোর ঝরে ।
দাদু তুমিতো এতদিন ধরে কবিতা ভরালে খাতায়
এবার থেকে লিখবে কবিতা ফেস বুকেরই পাতায় ।
শুরু হোল মোর সাহিত্য চর্চা ফেস বুকেরই ফ্লোরে
সদস্য হনু কত যে গ্রুপরেই কাজ গেল মোর বেড়ে ।
প্রতিযোগিতায় নাম দিতে দিতে হইনু বড়ই ক্লান্ত
ভিন্ন গ্রুপের ভিন্ন সনদ মনকে করিল শান্ত ।
প্রতি রাতে লিখি একটা কবিতা তিনশ গ্রুপের জন্য
সকালে ছাড়ি সবার গ্রুপে করে সবে ধন্য ধন্য ।
কাগজে লিখিয়া এতদিন ধরে চিনিত না মোরে কেউ
ফেস বুক পেজে তাই আমি আজ তুলিয়াছি কত ঢেউ ।
আমার অনেক বোন বান্ধবী কথা বলে রাতদিন
লেখাপড়া নিয়ে সদাই ব্যস্ত কেটে যায় সাত দিন ।
কবি আমি আজ ফেস বুক মাঝে অনেক নাম আমার
সাহিত্য দিয়ে জীবনের শেষে গড়েছি নতুন খামার ।।
------------------------------
।।আজব কল ।।
“ কল করেছেন আজব রকম
চণ্ডীদাসের খুড়ো “
সুকুমার রায় সবাই পড়েন
বাচ্চা থেকে বুড়ো ।"
একটু শুনী কলের কথা
কেমন আজব কল ?
বুড়ো হয়েও ছুটবে তুমি
সামনে পেলে ফল ।
আধুনিক এই জীবনটাতে
ছুটছে সবাই গতিতে
তাল হারিয়ে অনেকে আবার
পড়ছে শক্ত মাটিতে ।
বাবুল বোসের চাকরী আবার
কর্পোরেট যে কোম্পানি তার
চোখের সামনে সদাই ভাসে
কম্পিউটারের মনিটর ।
দেখতে দেখতে চোখটি তাহার
হারায় দৃষ্টিশক্তি যে তার
পঁয়তাল্লিশে আউট হয়ে
জীবন হল প্রায় জেরবার ।
জীবন বাবুর চাকরী ছিল
বড়বাজারের গদিতে
বছর ষাটে করে রিটায়ার
পড়লেন তিনি নদীতে ।
অমিত বাবু ছিলেন আবার
সরকারেই লোক
কাজের সময় পার্টি ছিল
তাই ছিল না ক্ষোভ ।
তাইতো তিনি রিটায়ারের
বছর বিশেক পরে
আজও ছোটেন দেশ বিদেশে
আসেন তিনি ঘুরে ।
জান কি ভাই রহস্য এর
আছে কারো জানা ?
পেনশন তাঁর তিরিশ হাজার
খুড়োর কলের খানা ।।
------------------
।। পরিত্যক্ত মাতা ।।
ভাই বোনেদের বলল ডেকে পালের গোদা হুলো
দূরে দূরে থেকে সবার জীবন কেটে গেল
জীবনের এই শেষ কটা দিন থাকতে পারি যদি
এসো সবাই আনন্দতে কাটাই জীবন-নদী ।
সারা জীবন কষ্ট কোরে বানিয়েছ ফ্লাট, বাড়ি
একদিন না হয় সেই বাড়ীতেই করি হুড়োহুড়ি
আমার বাড়ি তোমার বাড়ি সবার বাড়ি ঘুরি
বছর ধরে এক এক জনের অন্ন ধংস করি ।
ছোট বেলায় যেতাম মোরা পরীক্ষারই শেষে
অনেকটা দিন কাটিয়ে দিতাম খেলে এবং হেসে
বছর কয়েক এই ভাবেই তো গেছে মোদের কেটে
তারপর তো জীবন যুদ্ধে মরলে সবাই খেটে ।
হুলোর মামা বলল শুনে দিয়োনা মোরে ফাঁকি
আমরা আছি শেষ বয়সে বেড়াতে চলো টাকি
আছে সেথায় তোমার আমার বসত ভিটেখানা
দেখাতে পারি যদি সেথা যাও আমার হদিস জানা ।
সবাই মিলে রওনা দিল সঙ্গে মামা মামী
দেখল সবাই পড়ে আছে পরিত্যক্ত জমি
জঙ্গল আর আগাছায় ভরা ভাগ্যের পরিহাসে
নাতি-পুতিদের দেখে সে আজ করুন চোখে হাসে ।
বলল ভূমি তোমরা এলে ধন্য যে আজ আমি
আজ তোমাদের দেখতে পেল নিঃসঙ্গ জমি
ইছামতীর নদীর ধারে পড়ে আছি একা
কতকাল পর তোমারা এলে গড়লে মিলন রেখা ।
পারতো যদি থাকতে মাতা পুত্র কন্যা সাথে
বাজত বাঁশি মধুর সুরে জোৎস্না ভরা রাতে
ফলে ফুলে ভরিয়ে দিত ইছামতীর এই বাঁকে
কিন্ত হেথা একাকিনী ক্রন্দনে মুখ ঢাকে ।।
-------------------
।। শিশুর আবেদন ।।
দেখেছ কি ফেসবুকে ধ্বংসের কারবার
আয়লান শুয়ে আছে সমুদ্রের পাড় ।
দেখনি কি ভিডিওটা তুমি ফেসবুুকে ?
শিশু বুকে শিশু ছোটে কান্নাভেজা মুখে ।
বিশ্বের সেরা ছবি তুলেছ তো তুমি
ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদে সুদানের ভূমি ।
মৃতপ্রায় শিশু পড়ে জরাজীর্ণ বুকে
পিছনে শকুন বসে লালসার চোখে ।
স্বার্থের বেড়াজালে কাশ্মীর স্তব্ধ
বোমা গুলি ধোঁয়া আর বুটের শব্দ ।
কবে যুদ্ধ হবে শেষ, পাবে ফিরে প্রাণ
ছোট শিশু স্কুলে যাবে পেয়ে পরিত্রাণ ।